মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন কি?-৯
'মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন কি' নয় নয় করে ৯ এ পা দিল। খুব জানতে ইচ্ছে করে, মুখ্যমন্ত্রী কি এর একটি কথাও পড়েছেন বা শুনেছেন! লেখক জানেন না। আপনারা কেউ কিছু জানেন কি?
মুখ্যমন্ত্রীর বেশ ভাল সময় এখন
যত্র তত্র সবাই কথা শুনছে যখন
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটি
পলিটব্যুরোও যথারীতি
সবাই শুনেছে ও বুঝেছে
মুখ্যমন্ত্রীর মনে কি আছে
বিরোধীরা চুপচাপ বসে না থেকে
টুকটাক মুখ চালিয়ে যেতে যেতে
সমুদ্র ঘুমিয়ে পড়ল যেন রাতারাতি
বিরোধের ঢেউ গুলো বাসি কাঁঠালের ভুতি
প্রবাদের নিয়মের কথা মনে পড়ে কি
শান্ত সমুদ্রের তলায় সুনামি জন্ম নিচ্ছে কি!
কে জানে! ঠিক কি হতে যাচ্ছে এই রাজ্যে? কোন দিকে আমরা আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে চলেছি ! কে জানে। কে জানে? সত্যি কে জানে! কে জানে, বলতে পারেন?
সাধারণ মানুষের কি সত্যি কি তা জানার কোনও অধিকার আছে? সাধারণের শুভেচ্ছা ও সমর্থনের কি কোনও প্রয়োজন আছে এ’ রাজ্যের শাসকদের? সাধারণ মানুষের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা আছে কি শিল্পায়নের নবজুগের পথিকৃতদের?
চারিদিকে নানান রকমের তথ্যের চুলোচুলি চলছে। মনে হল এই তথ্যই বুঝি ঠিক যে, খুবই স্বল্প সেই চাষের জমি নেওয়া হবে যা কাজে লাগিয়ে শিল্পায়ন হবে। বেশ প্রভাবিত হব হব বোধ করছি ঠিক তখন নজরে পড়ল বর্তমান পত্রিকায় বরুন সেনগুপ্ত মহাশয়ের লেখা। তিনিও বেশ তথ্য দিয়ে জারিয়ে লিখেছেন মানে বামফ্রন্টের আদ্যশ্রাদ্ধ করেছেন। একটা গেল গেল রব তুলেছেন তিনি। সেটাও বেশ বোঝা যায়। কেন এই বরুনামৃত! কিন্তু গোল বাধাল আনন্দবাজার। নজর পড়ল আনন্দবাজারের প্রথম পাতার নিচের দিকে অনেকটা জায়গা নিয়ে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের আরেক তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। সেখানেও চাষের জমি নেবার স্বপক্ষেই বেশ তীব্র যুক্তির অবতারনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ধর্ম্মযুদ্ধোপবাসী কৃষি জমি বাঁচাও সংঘের একমেবামাদ্বীতিয়াম মমতাময়ী মায়ের সঙ্গে মিটিং হওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কিছুটা নরম হওয়ার কথাও মিডিয়া বেশ ফলাও করে তুলে ধরেছে! বেশ! কিন্তু কি হচ্ছেটা কি? কি করে হবে এই এত বড় শিল্পায়নযজ্ঞ? জমির হিসেবটা এখনও কেন গোলমেলে?
মেদিনিপুরে এশিয়ার বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী হবে। টাটারা সেখানে ষ্টীল প্ল্যান্ট করবেন। জিন্দালরাও এগিয়ে এসেছেন। হিন্দুজা এবং আরও বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী আসছেন বিনিয়োগের ভাঁড়ার নিয়ে। এদের জমি দিতেই হবে।
চাই উর্ব্বর চাষের জমি।
সেকথা বুঝিতে যেন না ভ্রমি।
যেখানে অফুরান জল আছে।
যে জায়গা কলকাতার কাছে।
যেখানে সর্বপ্রকার পরিকাঠামোর জোগান বা উপোযোগী ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে বিনিয়োগকারি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সন্তনাদির ভাল শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। তবে কি পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিতে সমতা আসবেনা? তবে কি লালমাটীর জেলা গুলিতে কোনও দিনও কিছু হবেনা?
তবে রাজ্যের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নতির কথা বলছেন কেন বুদ্ধবাবুরা? সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নের কোনও জবাব আছে কি? গত পরশু সিপিএম এর রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধবাবু সর্ব্বসম্মত সমর্থন পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর রচিত পথেই পশ্চিমবঙ্গের শিল্প বিপ্লব আসবে। আসুক। গত কাল পলিটব্যুরোর বৈঠকেও তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। যাক। আজ থেকে তিন দিন কেন্দ্রীয় কমিটির সভায়ও সেই ডঙ্কাই বাজবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যেটা নিয়ে ঘোর মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে সেটা হোল যে সাধারণ মানুষের ভোটে জিতে শাসক বামফ্রন্ট লালবাড়ীর তখৎ-এ-তাজ এ বসলেন সেই সাধারণ মানুষ কি একটু পরিষ্কার করে জানতে পারে যে বুদ্ধবাবুর শিল্পায়নের জয় রথের ঘোড়দৌড় কোন কোন এক, দুই বা তিন ফসলী জমির উপর দিয়ে সদম্ভে ছুটবে! সেই জমির মোট সঠিক পরিমান কত? শিল্পায়নের জন্যে উৎসর্গীকৃত সেই মোট জমি পশ্চিমবঙ্গের মোট চাষের জমির কত ভগ্নাংশ! শিল্পায়নের ফলস্বরূপ প্রকত কাজের হাত কাজ পাবে আর কত চাষী প্রান্তিক শ্রমিকে পর্যবসিত হবেন বা হবেন না! টাটা বা অন্যান্য বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির সাথে কি কি শর্তে চুক্তি হয়েছে তা কি সাধারণ মানুষ জানতে পারে বা পারবে?
এক কথায় বলতে গেলে, এই শিল্পায়নের একটা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ খতিয়ান বা একটি সৎ শ্বেতপত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকার সব দৈনিকগুলোতে তাড়াতাড়ি প্রকাশ করবেন কি? এতে কি লাভ হবে?
অনেক কৌতুহলী সন্দেহের নিরসন হয়ে যাবে। এক জন সৎ মানুষ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে বুদ্ধবাবু আরও অনেক মানুষের ভালবাসা পাবেন। সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্ভব নয়। সেটা তো জানাই আছে। সাধারণ মানুষের মনকে আর কলুষিত হতে না দিলেই ভাল হয়। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে এবং সাধারণের হয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন চাই। শিল্পায়নে পশ্চিমবঙ্গের হৃত সন্মান ফিরে আসুক তা সর্বাগ্রে চাই। তার জন্যে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সামর্থকেও কাজে লাগাতে চাই। আমরা সবাই আমাদের রাজ্যকে ভালবাসি। কিন্তু রাজ্য সরকারের সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশ করার এই অনীহা বা বিলম্বকে মোটেই পছন্দ করছিনা। বুদ্ধবাবুর কাছে বিনীত অনুরোধ - আপনার সরকারের কাজের খতিয়ান, প্রগতির হিসাব নিকাশ সাধারণ মানুষকে জানান। তাতে ভাল হবে আমাদের রাজ্যের। এই ব্যাপারটা একটু গুরুত্ব দিয়ে বুঝলে রাজ্যের শিল্পায়ন ও প্রগতির রথের পথে পুস্পবর্ষণ না হোক অফুরন্ত শুভেচ্ছা থাকবে। প্রবাদের নিয়মটাকে একেবারে ভুলে না গিয়ে শান্ত সমুদ্রের তলায় সুনামির জন্ম হওয়ার আগেই বিপুল বাঙ্গালী জনসমুদ্রের আশীর্বাদের ঢেউ গুলোকে আপন করে নিন।
মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন কি?
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
জানুয়ারী ২, ২০০৭মুম্বাই