ফিরে দেখি ছন্দের তালে তালে...
দিন চলে গেছে – স্মৃতি নয় মন সতেজ – শরীরে ক্ষয়
ছুটে চলা দিন পিছে ফেলে এসে প্রাপ্তেষু হওয়া সেই জৈষ্ঠ্যের দিনে ছুটি শেষে স্কুল খুলে যাওয়া ধুলোভরা ডেস্কে নীলে ডোবা সাদা হাতার ধূসর সাহস বেঞ্চের দান খাঁকী হাফ প্যান্টের পেছনে অযত্নের এক মাস খুব ভাল ছিল সেই সব দিন গুলি টিফিনের ফাঁকে কবাডি বা ডাঙ্গুলি
চলে গেছে দূরে সেই সব দিন নতুন বই এর দোকানে লম্বা লাইন আহ...হ নতুন বই এর রোমাঞ্চ ভরা গন্ধ আজকের কিশোরের সেই নাক কি বন্ধ নতুন খাতায় নাম লেখা হ্যারিকেনের আলোতে কত যত্নের ধন সাজিয়ে রাখা সাদায় কালোতে
রবির পরে সোম নয় আসবে রবি এই সুখস্বপ্ন সোমবার যেন না আসে লালিত আশার যত্ন হতাশার শেষ আবার সপ্তাহ শুরু সামনে বিষ্ণু স্যার আমাদের গুরু রোজ প্রার্থনার সারিতে দাঁড়ানো মন দিয়ে বন্দনা গানে গলা মেলানো
দূরে কোথায় দূরে দূরে আজ সেই সব ঝাপসা স্মৃতি শ্লেট পেন্সিলে লেখা আর জল ন্যকড়ায় মোছার ইতি তার পর কে পায় আমায়, ফাউন্টেন পেনের মালিকেরে বল পেন ও মাইক্রো টিপ এর প্রাচুর্যে ভাসা তারও অনেক পরে
সেই মনে পড়ে খড়খড়ে ড্রয়িং খাতায় ক্রেয়নের আঁচড় তাই নিয়ে সুখী হঠাত পেলাম তেল ও রঙ পেন্সিলের জোর স্কেচ পেনের পসরা পেছনে ফেলে পাতায় বল পেনের ভর এর পর দীর্ঘকাল ব্যাপী স্থিতিশীল সময় কৈশোর ছিল বেঁচে-যৌবন হল অব্যয় শ্লেটে ও খাতায় অঙ্ক কষে কেরাণী টেবল তৈরী করার সাফল্য তারও অনেক পর এলো ক্যাল্কুলেটর ও কম্পুটারের বরমাল্য অবাক হয়ে দেখেছি এইসব যন্ত্রপাতির খেলা আর ভেবেছি চিমটি কেটে বুঝি আমি বেঁচে আছি ও সময়ের সাথে বদলাচ্ছি!
হঠাত মনে পড়ে স্কুলের লম্বা করিডর আলো আধাঁরিতে ডোবা সরু গলির খাঁজে একে অপরকে খোঁজা সে এক মোহিনী ধাঁধা ঘন্টা বাজলেই ক্লাস রুমে ফিরে আসা ঘামে ভেজা শরীরে পড়ুয়ার বসে থাকা
করিডরে বসে দুপুরের টিফিন ভাগ ছিল এক বড় সুখের সময় ফুরিয়ে যেত হঠাত যখন বন্ধুদের সাথে একটু জমেছে আঁঠায় ছুটির ঘন্টা বাজার সাথে সাথে ছুট ছূট ছুট কে পায় আমায় কালি মাখা লেপটানো জামার পকেট, কাদা মাখা বুট পায়ের তলায় খেলার মাঠে, কাঁঠাল গাছে নীচে এমনকি সাইকেল স্ট্যান্ডের আটচালায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকা আমদের সবার কাছে ছিল আনন্দের-এখনও মন ভোলায়
কোথায় গেল সেইসব দিন-যখন পৃথিবীর রঙ উজ্জ্বল ও ফ্যাঁকাশে মাসের দ্বিতীয় শনিবার সাজতো উদ্বেলিত হয়ে আমাদের স্কুল ক্যাম্পাসে কোথায় গেল সেই সব দিন যখন দুর্গা শঙ্কর ঘোড়ুই স্যারের পিটি ক্লাস করা সেই অপেক্ষা যেন প্রথম বর্ষায় ভেজা থেকেও বড় চাওয়া মন ভরা
সেইসব দিন যখন বাবার কোর্টের রাইটিং প্যাডকে ক্রিকেট ব্যাট সঙ্গে তাঁর কালো টাই আর ছাই রঙের মোজাকে বল বানিয়ে খেলা যেন খুশীর ভাঁড়ার রোদ জ্বলা দুপুরে কাবাডি বা খো খো খেলা যখন হচ্ছিলাম দুধে ভাতে বড় বাকিরা যখন ক্লাস রুমের গন্ডিতে বুক ক্রিকেট খেলেই বনে যেত তাবড় সেই সব দিন কোথায় হারিয়ে গেল যখন ষড়যন্ত্র নয় খুনসুটির লড়াই ছিল যখন ঝগড়া ছিল কিন্তু ছিল না কোন দ্বেষ বচসা ছিল হিংসা নয় ছিল না কোন ক্লেশ
সেই স্কুল পালিয়ে টিফিনের ফাঁকে ঘাস ছাঁটা ক্রিটেটাঙ্গনে অফ পিরিয়ডের দোহাই দিয়ে সামনের বাড়ির ড্রয়ীং রুমে অংশু কাকুর অনুমতি আর কাকীমার লুকানো আস্কারার চা বা সরবত হাত পা নেড়ে তিনজন আমরা চিল চিতকারে- ভারত জিতবে আলবত
স্কুল বাসের জানালার ধারে সীটের জন্য পৌণে চারটের দৌড় আর নীরব খোঁজ আজও মনে উজল সেই জেতা সিট ছেড়ে দেওয়া কুর্চি নামের মষ্টি মেয়েকে রোজ স্পোর্টস ডে, এন্যুয়াল ডে আরও কত দিন কেটেছে তাইরে নাইরে করে স্কুলের মাঠে বর্ষার কাদায় খালি পায়ে ফুটবল খেলে পায়ের পাতা ফালা ফালা মাইকে চটুল হিন্দী গান ও নাবালক ধারাবিবরণী কান ঝালাপালা
কোয়ার্টার্লি-হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার জোয়াল কাঁধে সেইসব দিন চাইলেও ফিরবে না তারা মন মাঝে স্মৃতি ভাসে সুর বাজে রিনরিন বাজার ফেরত পয়সা দিয়ে ঝালমুড়ি, ফুচকা, আলুর চপ কুলফি মালাই মায়ের থেকে লুকিয়ে পাওয়া কয়েকটা টাকা আর অনেক খুচরো বালাই
দশ পার করে বারোতে আসা কত রিভিসন টেস্ট লিখে লিখে খাতা শেষ শিখেছি কত দেখেছি শত ভাল বেসেছি ভাল বাসা পেয়েছি হয়নি নিঃশেষ হেসেছি কেঁদেছি লড়েছি জিতেছি বেঁচেছি আমাদের সেই সব দিন জুড়ে আজ মনে পড়ে ফাঁকা লাগে সবাই কোথায় আমি পড়ে আছি এ হৃদয়পুরে
ময়রার ছোলার ডাল ও কচুরী আর চিত্তর ঘুগনী ও টোস্ট সাথে মাঝে মাঝে অমলেট নাটকের মহড়া, রাসবিহারীর আড্ডা ও শেষ সাত নম্বর বাস ধরে বাড়ি ফেরা রোজ লেট রূপোলী লতা পাতার লোহার গ্রীল গেটের পিছে নীরব প্রতীক্ষা করা আমার মায়ের মুখ বাবার তীরষ্কার থেকে বাঁচাতে নিঃশব্দে ঘরে ঢোকা মমতাময়ীর আমার তাতে কি সুখ বহুকাল পরে মা গেছেন চলে শেষ কথা বলে তা’ ছিল আমারই নাম আমি তখন কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের মাথায় বিরাজেছি শ্রী গনেশায়ঃ ধাম ধিক্কার দেব নিজেরে তাও যে পারিনা – মা এসে বলেন – না বাবা ও কাজ করো না পাপ বোধ মানুষকে আরোও নামিয়ে দেয় –তুমি আমার ছেলে তুমি তলিয়ে যেও না
দুখে সুখে আশে জীবন বাঁধা জীবনে কত সুখ হলো সাধা কত শেখা কত আজানা ভুলে যাওয়া আবার জানা এই সব মিলে জীবনে প্রাপ্তি অনেক অপরাহ্নে মনে পড়ে কত কথা সাবেক ভালই ছিলাম ভালই আছি ভাল থাকা এক অভ্যাস স্মৃতি সততই সুখের তাই বুক ভরে নিই আশার নিশ্বাস যে যেখানে আছ ভাল থেকো ও ভাল রেখ মনের উড়ানে একটি চিঠি ভাসিয়ে রেখ সে চিঠি যেন রোজ আসে মোর কাছে বলে যেন ভাল আছ সবাই ভাল আছে...
দিন চলে যায় – স্মৃতি নয় মন সতেজ – শরীরে ক্ষয় স্মৃতির পাত্রে সুধা ভরা থাকে রসদ হয়ে জীবনের আঁকেবাঁকে শরীর তো যাবার জন্যই হয় শরীর ভাবায় না – মন অক্ষয়...
সুপ্রতীক অরূপ নভেম্বর ৩, ২০০৭ মুম্বাই
|