কবি ও পুলিশ


সোজা পায়ে খালাসীটোলা থেকে বেরিয়ে
অনাদি কেবিন ও ডোরিনা ক্রসিংটা পেরিয়ে
কবি এঁকে বেঁকে যায় নৃত্যের তালে হেঁটে
কানে আখতারি বাই, মনে প্রেম, মদ পেটে
কপালে ঝাপসা চশমা ও কুঁচকানো জামার হাতা
বগলের উষ্ণতার ওমে অযত্নের অমূল্য ধন
লাল খেরো খাতা
সামনে মেট্রোর ভিড় ও পুলিশ, কি যে করে কবি
নটরাজ ভঙ্গিমায় রাস্তা পেরোতে ভোলেনা ভবি
পুলিশের মুখোমুখি কবি সটান সোজা
কবির ভিতরে কি যে চলে যায়না বোঝা
কিছুটা সামলে নিয়ে কবি এগিয়ে যায়
জড়ানো পায়ে এগিয়ে আসে, পুলিশ নিরুপায়
সুন্দর বাচনে কবি বলে
পুলিশ শোনে
সার্জেন্ট আসবে এখুনি
সে মুহূর্ত গোনে
কবির সদর্প প্রশ্ন
তুমি কি করতে আছ বাপু হে পুলিশ
আমার প্রেমকে কিনে নিতে চায় কোন এক ইবলিশ
আমার কবিতা বিক্রীর নয় খেলবনা
আব্বুলিশ
তুমি কিছু করনা ও দাদা
ও ভাই ফুলিশ
তখন সটান সোজা কবি দৃপ্ত পুরুষ প্রেমাস্পদ
পুলিশ ভয়ে না মোহে একেবারে গদগদ
কবির কথা পুলিশ বোঝেনা তবু সে সুখী ও নিরাপদ
কবির ভরসা ব্যথা দেবেনা টুপিওয়ালা এই আপদ
তখন মনে পড়ে প্রয়াত তুষারদাকে ও কবি যোগব্রতকে
তাঁদের শ্রদ্ধা জানায় কবি সিক্ত কণ্ঠে একটু ঝুঁকে
‘ওরে ও পুলিশ কবিদের দেখে তোর টুপিটা একটু খুলিস’
যদি টাল খেয়ে পড়ে যায় তবে কবিকে একটু ধরে তুলিস
কবিদের কেউ চেনেনা
কবিদের বুঝতে হয়না
কবিদের কেউ চেনেনি আজও
তাই কবিরা আজও বেঁচে আছেন
কবিদের কি করে নিঃশেষ করা যায় তা’ একটু ভেবে দেখবেন
এই কবিরাই যত নষ্টের মূল
এরাই হল বৌ ভিতু স্বামীদের শূল
এরা সব প্রেমাবেগের হাওয়া আনে
নিরস পতিকে বেয়াব্রু করে জানালার পর্দা ধরে টানে
কবিরা বজ্জাত কেবল প্রেম জাগায় প্রাণে
কবিদের ধরে পেটাও বলে ব্যর্থ স্বামীরা গান ভানে
সেই ষাটের দশকে শুরু, সত্তর আশি পেরিয়ে নব্বইয়ের দশক
শতাব্দী পালটে গেল, কবিরা শেষ হয়নি একুশের এক এর দশকে
কবিরা সাথী সুখে দুখে, কাঁদায় শুখনো ও ভিজে কত রাগাপ্লুত মনকে
বিগত দশকের সেই কবিরা আজও বেঁচে আছেন নিয়ে কত অব্যক্ত যন্ত্রণা
হেজে হাঁড়িকাঠ হয়েছেন তো? প্লিজ এই নিয়ে করবেননা কোনও মন্ত্রণা।


সুপ্রতীক অরূপ
অগাষ্ট ১, ২০০৭
মুম্বাই