মনপুরের মাতাল চলে গেল...
বুদ্ধিপুরের মাকাল ছিল সে
বিল জলা নদী সবেতেই ডুবেছে
অকুতোভয় ছিল না সে
ছিল লোক দেখান সাহস
সংসারের জেলখানাতে এসে
মনপুরের মাতাল হলো করণিক – নাম পৃথিবী বিশ্বাস
প্রথম প্রথম সেই মাতলামি লাগতো ভাল মহূয়া মনার
আর এখন পৃথিবী ছাড়াই তার কেটে যায় দিন রায়
তিন পরিণত সন্তান জ্বলন্ত চিহ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়
মহূয়া মন চিল চিতকার দেয় কিসের ক্ষোভ
পৃথুলা বপু মেলেছে দু’পাশে অযত্নের শাখা
পৃথিবীর মাতাল মন একাই পাখা মেলে থাকে ভ্যাবলা হয়ে
উড়তে পারেনা বসতে পারেনা কি যেন বাধ সাধে
কোনও দিন একটা বিড়িও মুখে নেয়নি সে
মদতো দূরের কথা ভয়ে শিটিয়ে থাকা এই জীবনে
তবুও মন মাতাল ছিল কাল পর্যন্ত বাঁচার নেশাতে
নেশা কি বড্ড তাড়াতাড়ি কেটে গেল
ষাটের উপান্তে সময়ের দেনা বাড়ান আর কেন
মনপুরের মাতাল এখন একা একা চাঁদ দেখে
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায় তার
জীবনের কত হিসেব ওলট পালট
শিকড়হীন ভাবনা এখনও জ্বালায়
কোমরের ব্যথা হাঁটুর বাত
মাথা ভোঁ ভোঁ করে কান গরম
তবে কি রক্তচাপ বাড়লো
অনেকবার উঠে যেতে হয় হালকা হতে
নিস্ফল দাঁড়িয়ে ছুঁচোর কিচকিচ কিন্তু কিছুই হয়না
তবে কি শীর্ণ নদী পথে পলি চড়া পড়ল
ডাক্তার জানে মাতাল তার কাছে যাবেনা
মনপুরের মাতালকে কেউ বুঝতে চায়নি
তাই তার বড্ড অভিমান
মনপুরের মাতাল এইসব জ্বালা নিয়ে বেশ ছিল
অশীতিপর শাশুড়ির শেষ ইচ্ছে সে জামাই ষষ্ঠীর আদর করবে
এতদিন কেন চুপ করেছিলি মা
তোর মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম বলে
এত হিসেব করতে হল সারাটা জীবন!
তুই না মা –জানতিস না তুই মাতাল পৃথিবীর মা নেই
তোকেই পেতে চেয়েছিল সে মা হিসেবে
লয় তাল বিহীন মাতালকে একটুও ভালবাসা গেলনা!
আজ যাবার জন্য চাঁদের কাছে টিকিট নিতে
পোস্টপিসের চারতলার ছাদের ওপর এসে
জামাই ষষ্ঠীর নেমতন্ন মনে প'ল হঠাত
জামাই তো পাথরপ্রতিম সভ্য এ সংসারে
কেন এত ভুল হয় মা তোর বারেবারে
বুদ্ধিপুরের জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল লালার গদীতে
মনপুরের জমিটুকু আছে এই বিবেচনায়
অবসরের দিনরাত নাড়াচাড়া তুলসী বেদী আশপাশে
সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে শরীর ছাড়িবে এবার মন
মাতাল হবে আরে অচেনা খোলসের খোঁজে
এটা কত নম্বর জন্ম গেল
জানে কি তারা ছিটোন অন্ধকার
কৃষ্ণা চতুর্দশীর রাতে নিকষ কালো চারপাশে
বুদ্ধিপুরের মাকাল আর মনপুরের মাতাল
দুই নামই ঘুচে যাবে একটু পরে
সাংগ হবে বিরস গানের আসর
পরের জন্মে পৃথিবী কবি হবে
তাই গণদর্পণে শরীর দান করেছে
কবিদের শরীর থাকেনা
কবিদের কি মন থাকে!!!
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
ফেব্রুয়ারী ৩, ২০১০