|
|
|
|
|
অধরা মাধুরী (বর্ণময় অন্তরালে ) ধারাবাহিক উপন্যাস
পর্ব-৯ |
|
|
গোধূলী প্রেম...
গোধূলীর
ধূসরে ও লালে রঙ্গিন মাতাল দুই মন
মেতেছে
দূরের অধরা,
আমি ভাল আছি কিনা জানাতে আমি এই চিঠি লিখছিনা!
আমি ভাল আছি। আমি ভাল বন্ধু হতে পারি একথা আজ আমি আর মানিনা। কত মাস পরে এই প্রথম
আমি তোমাকে লিখছি আর তুমি কিনা আমাকে তোমার পরম আরাধ্যের আসনে বসিয়েছ! ভুল করেছ তুমি।
অপাত্রে দান কি একেই বলে? আমি তোমাদের কোনও খবর রাখতেই পারিনা। আমি কেন তোমার কোনও
চিঠির উত্তর দিইনি? আমি বাকরুদ্ধ আজ প্রায় নমাস হল। তবে আমি ভাল আছি এখন। কথা বলতে
পারিনা... নিজের কষ্টের জ্বালা আছে তবে তা আমি মেনে নিয়েছি। ঈশ্বর আমাকে কন্ঠ
দিয়েছিলেন, তিনিই ফিরিয়ে নিয়েছেন তার দান। দিলে আবার তিনিই দেবেন। চিকিতসার উপকার
কি হচ্ছে বুঝিনা আমি। আমি যে আর কথা বলতে পারিনা সেটা আমি জানি। জানিনা কথা বলতে
পারলে এই দীর্ঘ অন্তরালের মধ্যে ফোন করতাম কিনা! হঠাত মনে হল, বেলা পড়ে এল এবার
সাঁঝের পালা। আমার জীবনের সাঁঝবেলাতে আমি রোজ প্রার্থনার সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাই
সকলের তরে। সেই এক ভাল লাগা আমার। তোমরা ভাল থাক এই চাওয়া কেন স্বীকৃত হয়না আমার!
জানিনা। দেখ, তোমার জানিনা বলার রোগ আমাকেও পেয়ে বসেছে।
পা বাড়িয়ে ভেতর থেকে বাইরে এস
|
|
|
পর্ব-১০
|
|
|
অনেকদিন পরে সুবুদ্ধি আবার কাজ শুরু করেছে। দিন মাস ঘুরে প্রায় দু’বছর। কথা বলছে। আগের মত দিনে দশ বারো
ঘ জীবনের এই নবপর্যায়ে হঠাতই পেছন ফিরে দেখা একদিন। ইন্টারনেটে ‘অধরা’ বলে একটা ইয়াহু গ্রুপ তৈরী হয়েছে। স্রষ্টা নব আলোকে বাংলার পাঠকবর্গের একাংশ। তাদের একটা মে’ল শ্রী ও’কে ফরোয়ার্ড করেছে। শ্রী কি ঐ ইয়াহু গ্রুপের মেম্বার! একটা টেক্সট মেসেজও করেছে –“তোমার অধরাকে পাঠালাম, মে’ল খুলে দেখ”। প্রায় মিনিট কুড়ি কেটে গেছে তার পর - সেই মে’লটা সামনে খোলা এখন সুবুদ্ধির। মে’লটার মধ্যে কি আছে সে’টা নিয়ে সে আদৌ চিন্তিত নয়। কারা এরা তাও জানার কোনও ইচ্ছে নেই তার।
অধরা – এই নাম এখন সাধারণের মুখে মুখে আ ন্তর্জালে ঘুরছে আর তার পরম স্রষ্টা তাকে ভুলতে বসেছে! হঠাত সেক্রেটারী মিসেস প্যাটেল বলল, “স্যার আপনার মিটিং আছে সুদর্শন কুমারের সঙ্গে একটু পরেই – আপনি কিন্তু...” সুবুদ্ধি হাসল, কিছু বললনা। ইনি হলেন মিসেস ওফেলিয়া প্যাটেল, সুবুদ্ধির অফিসের গার্ডিয়ান। শ্রী তাকে বিশেষ ভাবে ট্রেইন করেছে যাতে সে গলা তুলে কথা না বলে। সুদর্শন কুমার মোটেই সুদর্শন নন। সেটা তিনি নিজেই বলেন আর হা হা করে হাসেন। ইনি হলেন এক বিরাট মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর ইন্ডিয়া হেড। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – বিহারের এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সুদর্শন – এখন মধ্য চল্লিশের কর্পোরেট দাদা। তবে সুবুদ্ধি কে খুব সন্মান করে আর মাঝে মাঝেই বলে – আপনি স্যার আমাদের কিছু শেখান। সুবুদ্ধি হাসে।মিটিং শেষ করে গাড়িতে উঠতে গিয়ে অধরার মুখটা মনে পড়ে গেল। সারা রাস্তা এক অস্বোয়াস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরল সন্ধ্যেবেলা। অধরা ইয়াহু গ্রুপে অনেকেই কিছু না কিছু পোষ্ট করে রোজ। কি লেখে এরা? কেন তারা এই নামটাকে বেছে নিল! এর মধ্যে কারা সব আছে! কত প্রশ্ন ঘুরতে লাগল সুবুদ্ধির মনে। ভাবল একবার মানবী অধরাকে ফোন করে বলে যে তার নাম আজ পৃথিবীব্যাপী এক শব্দ কিন্তু সেটা ব্যঙ্গ করা হবে বলে মনে হল ওর। কারন সুবুদ্ধি জানে অধরা কি অবস্থার মধ্যে আছে। শ্রী বাড়ি ফিরে দেখল সুবুদ্ধি একা বারান্দায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। পিঠে একটা হাত রেখে বলল, কখন ফিরেছ! সুবুদ্ধি কিছু বললনা - ইশারায় বোঝালো খেয়াল নেই।চা’ বানিয়ে ট্রে’ট্রলী ঠেলে আনার সময় শ্রী খেয়াল করল সুবুদ্ধি খুব উদাস। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বসে আছে সুবুদ্ধি। শ্রী নীরবতা ভাঙ্গল। ‘কি হয়েছে তোমার!’ ‘কিছুনা...’ বলেই মনে হল ওর নিজের - সে কার কাছে গোপন করতে চাইছে যে তাকে আয়নার মত জানে ও চেনে – গোপন করতে আদৌ চাইছে কি! না কি ভাবছে শ্রী কেন বুঝতে পারছেনা সুবু কেন ভাল নেই এখন – শ্রী তো সব বোঝে! আলতো স্বরে প্রশ্ন করল সুবুদ্ধি , আচ্ছা তুমি কি অধরা ইয়াহু গ্রুপের মেম্বার? শ্রী একটু হেসে জবাব দিল, ধূর আমি কি জানি নাকি এরা কারা। কত লোকের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তারা সব নতুন নতুন ইয়াহু বা গুগল গ্রুপ তৈরী করছে আর মে’ল বক্সে যত মে’ল আই ডি সেভ করা আছে তাদের পাঠাচ্ছে। আমি তোমাকে ঐ মে’লটা ফরোয়ার্ড করলাম ঐ নামটা দেখে... ডিলিটও করে দিয়েছি পরে। কিন্তু তুমি এত উদাস কেন আজ সুবু? একটানা কথাগুলো বলে শ্রী থামল। কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে না তাকিয়ে শ্রী ওকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। স্বগোতক্তির সুরে বলল সুবুদ্ধি, ওরা কি আর কোনও নাম দিতে পারলনা! এই বার শ্রী তাকাল খুব নরম কঠোর চাউনিতে সুবুদ্ধির দিকে। বলল তুমি কথা বল সুবু – এই ভাবে একা একা না ভেবে কথা বল। কি হয়েছে ঐ গ্রুপটার নাম অধরা হওয়াতে? অধরা তো একটা বাংলা শব্দ – অভিধানে আছে আর সেই শব্দ যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। তুমি কি এত ভেবে চলেছ বলত! সুবুদ্ধির মনে হল শ্রী খুব ঠিক কথা বলছে। শ্রী কি আজ একটা কিছু বোঝাতে চাইছে সুবুদ্ধি কে। “সুবু তুমি ঠিক কি চোখে দেখ অধরাকে - তোমার জীবনে দ্বিতীয় নারী’র প্রবেশ ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই বলবনা, তোমার ফ্যান ফলোইং আমার জানা আছে ভালই, ভালই লাগে অনেকের চাওয়ার মানুষ সুবুদ্ধি সেনশর্মা শুধু এই শ্রী’তেই মজে রইল। আচ্ছা তুমি অধরা কে ভালবাস? তুমি কি তাকে চাও?” সুবুদ্ধি মুখ তুলে চাইল। নীরবে। শ্রী আরও বলে চলল,“অধরা আমার স্কুলের জুনিয়ার মেয়ে, ওর মধ্যে অনেক গুণ ছিল। ও তোমাকে আগে থেকে চিনতনা, তাই না? তোমার লেখা পড়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। সেই থেকে তোমাদের একটা বন্ধুত্ব তৈরী হয়েছিল। ওর লেখা চিঠিগুলি আমিই তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। তুমি ওকে নিয়ে বা ওকে কেন্দ্র করে লিখছ তাও জানি। ওকে লেখা শেষ চিঠিও তুমি আমাকে পড়িয়েছ। কিন্তু আজ তুমি ওকে নিয়ে এত উতলা কেন বুঝতে পারছিনা। তুমি মাঝে এত অসুস্থ ছিলে যে যোগাযোগ রাখতে পারনি। তাই বলে এই রকম মুখ কাল করে বসে থাকার কোনও মানে হয়!” পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শ্রী বলে “সুবু আজ চল ড্রাইভে যাই। অনেক দিন হল নিউ এয়ারপোর্ট রোডে যাইনি। ব্যঙ্গালোর থুড়ি বেঙ্গালুরু শহরটা চোখের সামনে কেমন পালটে যাচ্ছে। চল না...” শ্রীর নজর পড়ল সুবুদ্ধি দূরের আকাশে তাকিয়ে আছে। “ওহ এতক্ষণ আমি যা কিছু বললাম সে সব তুমি...” শ্রী সুবুদ্ধি কে চেনে তার থেকেও বেশী। কাছে এসে বলল, ‘তুমি কি কিছু বলবে সুবু?’ শ্রীর কাঁধে হাত রেখে সুবুদ্ধি চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। অনেকক্ষণ পরে শুভার ‘মাআআ বাপিইই’ ডাক শুনে বর্তমানে ফিরে দুজনে ওরা বারান্দা থেকে ঘরে এল। শুভা ফিরেছে কলেজ থেকে। তারপর বাবা মা আর মেয়ের সারাদিনের খাস গল্প – খাওয়া দাওয়া শেষে সুবুদ্ধি বলল আজ আমি একটু লিখব। শ্রী বলল, ‘বেশ, কিন্তু বেশি রাত করনা’। মেয়ে বলল আমি টিভি দেখবে। শ্রী কেমন দলছাড়া হবার মত থতমত হয়ে বলল ‘আজ আমি তোমার পাশে বসে থাকব’ - সুবুদ্ধি বিশেষ হাসি বলল – মোষ্ট ওয়েলকাম...
ইণ্ডিয়া টুডে টা নিয়ে অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করার পরে শ্রী দেখল সুবু একটা শব্দও লেখেনি। চোখ বুজে কলম ধরে বসে আছে। গাল বেয়ে বেয়ে নামা যাওয়া লোনার দাগ শুখিয়ে আছে গালে। বড় ক্লান্ত লাগল সুবুদ্ধিকে। শ্রী ওর গলা জড়িয়ে বলল – এই কি হয়েছে! সুবুদ্ধি কঁকিয়ে ওঠার মত করে শুরু করে নিজেকে সামলে নিল। ‘শ্রী জান আমি কখনও এত অসহায় বোধ করিনি। অধরা কেমন আছে জান? খুউব খারাপ।’ শ্রী কেবল ‘কেন’ শব্দটা উচ্চারণ করার ফাঁকটুকু পেল। ‘ওর স্বামী আজ অনেক দিন হল কিছু করেনা। তুমি ওর চিঠিগুলো পড়, বুঝবে। আমি কেমন নির্বিষ হয়ে গেছি জান – আগে হলে এত দিনে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম।’ ‘কি করতে?’ শ্রী’র এই কথাটা বেশ আলাদা লাগল কানে। সুবুদ্ধি উঠে দাঁড়াল। শ্রী কে বোঝাবার চেষ্টা করল। ‘তুমি কি অধরাকে ভালবাস সুবু?’ ‘আমি তোমাকে ভালবাসি শ্রী’ - ‘তবে তুমি কি ওকে করুণা কর?’ ‘না’ ‘তুমি এই অসময়ে ওর পাশে দাঁড়াতে চাও?’ ‘হ্যাঁ।’ সংক্ষিপ্ত পরিস্কার উত্তর সুবুদ্ধির। ‘কি ভাবে?’ ‘জানিনা।’ ‘তুমি অধরা’র ফোন নাম্বার জান?’ ‘ফোনের মধ্যেই ছিল, বছর দুয়েক কোনও কথা হয়নি’ ‘এখনতো সাড়ে দশটা বাজে - ফোন করলে কথা বলা যাবে’ ‘যাবে হয়ত, কিন্তু...’ ‘কিন্তু কি?’ ‘ওর স্বামী আবার পছন্দ করবে কি না...’ ‘আরে আমি কথা বলব... সারপ্রাইজ দেওয়া হবে – ও তো জানে যে আমি তোমার স্ত্রী’ ‘হ্যাঁ জানে - শুধু জানেইনা সে তার শ্রী দিদির নামে গর্বে একদম মাখামাখি...দু’বছর তো কোনও যোগাযোগ নেই...তাই...’ ‘অধরাও খুব গুণী মেয়েছিল আমাদের স্কুলে। ঐ টুকু মেয়ে কি সুন্দর সুরবোধ আর সুরের জ্ঞান...কি ভাল গান গাইত...পুরো তালিম নেওয়া গলা। ওর মাও খুব ভাল গাইতেন।ওর বাবাতো মহাগুণী মানুষ ছিলেন। তোমার মনে আছে আমি তোমাকে আমাদের স্কুলের কত গল্প করেছিলাম বিয়ের পর পর...তবে অধরার নামটা বোধহয় আসেনি কখনও – ও আমাদের থেকে অনেক জুনিয়ার ছিল... জান আমাদের স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের মেয়েদের মধ্যে একটা দারুন বণ্ডিং ছিল। সেই ২০০০ এর রি-ইউনিয়ানের সময় আমি কলকাতায় ছিলাম আর সেটা জানতে পেরে বৈশাখী আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। গিয়ে দেখি কত সব চেনা মুখ। বেশির ভাগই এসেছিল তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে - আমি একা গিয়ে ছিলাম। শুভার পরীক্ষা ছিল বলে তুমি যাওনি সে’বার কলকাতায়। আমি গিয়েছিলাম দাদু’র বার্ষকীতে। বৈশাখীকে আমি বারো বছর পরে দেখলাম সে’দিন। বনানী এসেছিল কানাডা থেকে। ইন্দ্রা আমেরিকা থেকে। আমাদের মনেই হয়নি যে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। তবে অধরাকে আমি দেখিনি সেদিন। কে জানে – ও হয়ত খবর পায়নি...’ ‘নাহ, ওর খবর পেলেও আসার উপায় নেই। ওর স্বামী ওকে কোথাও যেতে দেয়না। অধরা সেই ১৯৯১ থেকে গৃহবন্দী...’ ‘কি? কি বলছ তুমি? ওর মত একটা ডানপিটে মেয়ে – এক্কেবারে ডাকাবুকো যাকে বলে সে কিনা গৃহবন্দী! তোমার লেখায় আমি এক আধবার পড়েছি এরকম একটা আভাষ তুমি দিয়েছ কিন্তু সেটা আমি ভেবেছিলাম সাহিত্যের খাতিরে...’ ‘শ্রী তুমি জান... আমি বানিয়ে বলিনা... লিখিনা... যার জন্য বাজারী সাহিত্য করা আমার হয়ে উঠলনা! অধরা ভাল নেই...ওর কোনও চাওয়া নেই...পাওয়া নেই... ওর কিছু বলার নেই... ওর কথা কেউ শোনার নেই...শী ইজ আ চেইন্ড বার্ড ইন আ কেজ বা তার থেকেও খারাপ কিছু...’ ‘ইউ মীন অধরা ইস আ কেস অফ ডোমেষ্টিক ভায়োলেন্স...?’ ‘জানিনা এর মধ্যে আরও কত কি ঘটেছে...’ ‘দাঁড়াও... এখনতো অনেক রাত... কাল সকালেই আমি কথা বলব ওর সাথে...’ ‘দেখো ও যেন কোনও আঘাত না পায়...’ ‘এই যে মশাই আমি একটা মেয়ে – আমার ঐ অভিজ্ঞতা নেই কারণ আমার স্বামী একজন মানুষ কিন্তু আমার কাছে অনেক কেস আসে যা শুনলে তুমি কানে আঙ্গুল দেবে...বুঝলেন সুবুদ্ধি সেনশর্মা!’ ‘ঠিক আছে চল – শোবে চল’ - সুবুদ্ধি কিছুটা হালকা বোধ করল। সকালে চায়ের টেবলে সব চুপচাপ। শুভা’র কাপে চামচ নাড়ার শব্দে পেপারটা রেখে শ্রী বলল – ‘এই অধরার নাম্বারটা দাও’ - সুবুদ্ধি নিজের সেল ফোনটা এগিয়ে দিল। ওপার থেকে গলা শুনে শ্রীর চোখের ভাষায় সুবুদ্ধি বুঝল কি মিষ্টি লাগছে অধরার গলাটা... “আপনি কথা বলছেন আবার...কি ভাল যে লাগছে!” শ্রী হ্যেলো বলারও সুযোগ পায়নি এতক্ষণ – ‘এই আমি শ্রী বলছি...’ একটু সময় লাগল অধরার... “ও দিদি বল... বল... বল, তুমি? আমার যে কি ভাল লাগছে...তোমরা সবাই ভাল তো... কত বছর পরে তোমার গলা শুনছি...এই প্রথম টেলিফোনে...” ঝরণা ধারার মত বয়ে যায় অধরার কণ্ঠ... শ্রী’ই ওকে থামায়...”শোন তোর সাথে আমার একটু কথা আছে...দুপুরের দিকে ফোন করব...কথা বলতে পারবি তো...? “হ্যাঁ সেটাই বরং ভাল হবে দিদি...” শেষের দিকে উচ্ছ্বছলতা থিতিয়ে যেতেই শ্রী বুঝল ধারে কাছে কেউ এসেছিল কিম্বা ও হয়ত এক প্রাকৃতিক উচ্ছ্বলতা থেকে ওর নিষেধের গন্ডীর মধ্যে ফিরে গেল... সুবু জান অধরা কিন্তু এখনও সেরকমই প্রাণবন্ত আছে – ফোনে তো তাই মনে হল... সুবুদ্ধি বলল তুমিতো কথা বলবে...তখন বুঝবে সে কেমন আছে...
|
|
|
পর্ব-১১
|
|
|
|
|
|
অফিস থেকে ফিরে
শ্রী আজ চুপ চাপ কাজ করছে রান্না ঘরে। মেয়ে গেছে বন্ধুর বাড়ি – জন্মদিনের নিমন্ত্রণ
রক্ষা করতে। সুবুদ্ধির আজ চেম্বার অফ কমার্সের মিটিং আছে। এখন সাড়ে সাতটা বাজে। শ্রী
মাঝে মাঝেই ঘড়ি দেখছে। মিসেস প্যাটেল একটু আগে ফোন করে জানিয়েছেন মিটিং দেরী করে
শুরু হয়েছে। তাই সুবুদ্ধির ফিরতে দেরী হবে। মিটিং এ থাকলে সুবু ফোন স্যুইচ অফ করে
রাখে। তাই কোনও উপায় নেই জানার কখন ফিরবে সে! সুবু কে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অবধি
নেই! যা গেল দু’বছর ধরে!
সময় মত অফিসে বেরিয়ে গেল দুজনেই। মেয়েকে কলেজে ছেড়ে শ্রী অফিসে যায়। গাড়ীতে একটা
অস্বোয়াস্তিকর নীরবতা ভাল না লাগলেও শুভা চুপ করেই নেমে গেল কলেজের সামনে। দুপুরে
লাঞ্চের রিমাণ্ডার বা ওষুধ খাওয়ার রিমাইন্ডার সবই সময় মত করে গেল শ্রী। সুবুদ্ধি
বুঝতে পারছে শ্রী কোনও একটা ব্যাপারে প্রিঅকুপায়েড আছে কিন্তু বিকেলে নিজেই ফোন করে
বলল আজ আমরা বাইরে খাব। শ্রী’র শীতল উত্তর ‘না’ – সুবুদ্ধি বেশ ভাবনায় পড়েছে, কি
হয়েছে এমন যে শ্রী তাকে বলতে পারছেনা!
বেশ রাত হয়ে গেল শুতে শুতে। বিয়ের পরে অনেক বার হয়েছে শ্রী ঘুমোচ্ছে আর সুবু তার
ঘুমন্ত রূপ এক মনে চেয়ে চেয়ে দেখেছে। মাঝের দুই দশক কেটে গেছে তা’র পর এই প্রথম সুবু
দেখল শ্রী কেমন ক্লান্তিহীন নিদ্রামগ্ন...শ্রী কে ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ কবে দেখেছে
তা’র মনে নেই। আজ ও খুব ক্লান্ত তাই বোধ হয় নিয়মের ব্যাতিক্রম আজ। সাধারণত শ্রী ঘুম
থেকে ওঠে সবার আগে আর ঘুমোতে যায় সবার শেষে। অনেকক্ষণ ধরে দেখল শ্রী’র ঘুমন্ত
সুন্দর রূপ...
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল শ্রী’ বসে আছে চা নিয়ে... খবরের কাগজটা এগিয়ে দিতে দিতে
বলল – "নতুন কিছু লেখা শুরু করলে নাকি কাল রাতে?" খবর কাগজটা মেলে ধরে সগোতোক্তি
করেই বলে সুবুদ্ধি – "নতুন লেখা আর বেরোবে কি?" শ্রী’র কান এড়ায়নি কথাটা – "মানে...তুমি
আর লিখবেনা?" – নীরবে কাগজটা পাশে রেখে শ্রী’র দিকে তাকিয়ে রইল। "চা ঠান্ডা হল
যে..." –
|
* প্রথম পাতা *