ভাওয়াইয়া গান ও নারীর প্রেম
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়।
........................................... |
[৮-১১ জানুয়ারি ২০১০ সালের রাজ্য ভাওয়াইয়া সঙ্গীত প্রতিযোগিতা’র স্মারকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল এই প্রবন্ধটি !! -বিশ্বদেব]
স্মৃতি এবং শ্রুতি নির্ভর ভাওয়াইয়া গানের উৎপত্তিস্থল নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও হিমালয়ের পাদদেশের তরাই অঞ্চল জলপাইগুড়ি-কুচবিহার ছাড়াও রংপুর-দিনাজপুর এবং অসমের গোয়ালপাড়া অঞ্চলে ভাওয়াইয়া গান গ্রামীণ লোকের মুখে মুখে শোন যেত। বহুকাল লোকসঙ্গীতের এই অমূল্য সম্পদের কোনো লিখিত রূপ ছিল না। মুদ্রিত ভাওয়াইয়া গানের বয়সও কিঞ্চিতধিক শতবর্ষ। তার আগে ব্যক্তিগত খাতা-পত্রে ভাওয়াইয়া গানের যে লিপিবদ্ধতার সংবাদ আমরা পাই তাও খুব প্রাচীন নয়। ১৮৯৮ সালে জলপাইগুড়ির মুরলীধর রায়চৌধুরীর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রচলিত দুটি ভাওয়াইয়া গান প্রাচ্য ভাষাবিদ জর্জ আব্রাহাম গ্রীয়ার্সন তাঁর ‘লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া (১৯৩০)’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। প্রথম গানটি ছিল--‘পর্থম যৌবনকালে না হৈল মোর বিয়া’ এবং দ্বিতীয় গানটি ছিল--‘প্রাণ সাধু রে যদি যান সাধু পরবাস’। এই দুটি গানের আগে মুদ্রিত ভাওয়াইয়া গানের কোনো সংবাদ আমি অন্ততঃ পাই নি। এরপরে অবশ্য ‘রংপুর সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধে এবং গ্রন্থে ভাওয়াইয়া গানের মুদ্রণরূপ সামনে আসতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অনেকে এই গান নানাভাবে সঙ্কলিত করেছেন। ভাওয়াইয়া গানের প্রাচীনত্ব নিয়েও মতভেদ আছে। তবু হাজার বছরের বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের সময়কালেও এর অস্তিত্ব ছিল এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গে চর্যাপদের ভাষার অদ্ভুত সাদৃশ্য দেখে। ‘টালত মোর ঘর নাহি পরবেশী / হাড়িত ভাত নাহি নিতি আবেশী।’--এই ভাষা কি চর্যপদের ভাষা নয়? ভাওয়াইয়া শব্দের ব্যুৎপত্তিগত ব্যাখ্যায় ‘ভাব’ শব্দটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রংপুর এবং সংশ্লিষ্ট উত্তরাঞ্চলের শব্দ ‘ভাও’ (ভাব}-এর সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘ভাওয়াইয়া’ শব্দের উদ্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ভাব প্রধান এই গান সম্পর্কে আব্বাসউদ্দিনের মত হল--‘উদার হাওয়ার মতো এর সুরের গতি, তাই এর নাম ভাওয়াইয়া।’ এই গানে মূলতঃ প্রতিফলিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সুথ-দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষা বিরহ-মিলনের ইতিবৃত্ত। কেউ কেউ ধর্মীয় এবং দার্শনিক ভাবও প্রকাশ করেছেন। এই গানের মধ্য দিয়ে। সংখ্যায় তা অবশ্য খুবই নগণ্য। আঞ্চলিক ভাষা ও সুর এই গানকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। অথচ যে কোনো গানের সঙ্গে এই গানকে খুব সহজেই শোনামাত্র পৃথক করা যায়। বিলম্বিত সুরে টেনে গলা ভাঙার একক বৈশিষ্ট্যই ভাওয়াইয়া গানকে এই স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। জনজীবনের নানান খণ্ডচিত্র প্রতিফলিত হয় এই গানের মাধ্যমে। যেমন--প্রেম, বিবাহ, যৌতুক, নাইয়র, পারিবারিক বিরোধ-দ্বন্দ্ব, গৃহস্থালী, অতিথি আপ্যায়ন, সমাজ, নদী ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় এই গানের মাধ্যমে উঠে আসে। এই গানের অন্যতম প্রধান বিষয় হল প্রেম। আর বিষয় যখন প্রেম তখন বিরহ-মিলন ব্যথা-বেদনা আর্তি-আকুলতা থাকবে না তা তো হয় না! এইসব ভাব উদ্বেলিত করে নারী হৃদয়কেই বেশি। নারীর হৃদয়ভাবকে বাদ দিলে ভাওয়াইয়া গানের অন্তর্নিহিত প্রধান ভাব এবং সুরময়র্ছনা বলতে কি বিশেষ কিছু থাকে? নারীর প্রেম, প্রতিবাদ, মিলনাকাঙ্ক্ষা, আর্তির যে চিত্র ভাওয়াইয়া গানের ভাঁজে ভাঁজে সম্পৃক্ত থাকে তার আবেদন স্পর্শ করে সঙ্গীতরসিকদের হৃদয়ও। শুধু নিকষিতহেম প্রেমই নয়, দাম্পত্য প্রেমের পাশাপাশি অসামাজিক ও পরকীয়া প্রেমেরও অকপট ভাব প্রতিফলিত হতে দেখা যায় এই গানের মধ্যে। অজস্র গান আছে এইসব বিষয়কে অবলম্বন করে। ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরা রে’ কিংবা ‘ও মোর কালা রে’ ধরণের গানে বিবাহিতা পল্লীবালার যে আর্তি ও প্রেমকাতরতা ফুটে ওঠে তা দাম্পত্য প্রেমের গভীরতাকেই স্পষ্ট করে। কাজের সন্ধানে দূর দেশে থাকা স্বামীর বিরহে কাতর সদ্যবিবাহিতা নারীর আকুতি ফুটে ওঠে--‘কালা না বোঝে মোর পরনারীর বেদনা রে’ ইত্যাদি গানের মধ্যে। কৃষিসমাজের একেবারে নিম্নবর্গের মৈষাল-গাড়িয়ালরা মূলতঃ রাখাল। ভাওয়াইয়া গানের মর্মমূলে যে প্রেম-বিরহ-বিদনার গল্প আকাশ-বাতাসকে সচকিত করে তার নায়ক প্রধানতঃ এরাই--আর নায়িকা এদের ‘যুবা নারী’। এরাই ভাওয়াইয়ার রাধা-কৃষ্ণ। মানসাই-তিস্তা-ধরলা-তোরষা-জলঢাকা এদের যমুনা। ‘শিমিলা বৃক্ষ’ এদের সেই কদম্ব বৃক্ষ। এদের বৃন্দাবন ‘নিধুয়া-পাথার’ আর মথুরা হল ‘চিলামারীর বন্দর’। হ্যাঁ, এদের শুক-শারীও আছে--‘বগা-বগী’ বা ‘ডাহুক-ডাহুকি’। কৃষ্ণ যেমন মথুরায় গিয়ে আর ফেরে না, তেমনি ভাওয়াইয়ার ‘যুবা নারী’র মৈষালবন্ধু বা গাড়িয়ালবন্ধুও চিলামারীর বন্দরে গিয়ে ‘বান্ধা’ পড়ে! ‘বান্ধা’ পড়ে অসমের গোয়ালপাড়া, কামাখ্যা পাহাড়ে, ব্রহ্মপুত্র অথবা তিস্তার চরে কিংবা কোনো জোতদারের বাথানে। ‘যুবা নারী’র কাতরতায় গুমরে ওঠে চরাচর-- ‘বাথান বাথান করেন মৈষাল রে আব্বাসউদ্দিনের সেই বিখ্যাত গানেও আমরা পাই প্রেম-দাম্পত্য মিলনহীন নারী-পুরুষের তীব্র হাহাকার। চিরবিরহী ডাহুক-ডাহুকির নিয়তই যেন সমস্ত সমাজের পরাধীন মৈষালদের বিধিলিপি। পেটের টানে প্রেমিক বিদেশে গিয়ে কাজের ফাঁদে আটকে পড়ায় বাপ-ভাইয়ের শাসনে অবরুদ্ধ প্রেমিকার মর্মবেদনা ফুটে ওঠে আব্বাসউদ্দিনের গানে-- ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে ‘--এই কথা শুনিয়া বগী দুই পাখা মেলিল-- ‘ওরে ধর্লা নদীর পারে যায়া দরশন
দিল রে ভাওয়াইয়া গানের এই মর্মস্পর্শী চিত্র দেখে প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাঁর ‘গানের বাহিরানা’ গ্রন্থে যথার্থই লিখেছেন, ‘এইসব ছবি কালিদাসের বা রবীন্দ্রনাথের হাতে কোনো দিনই আসতে পারে না।....প্রকৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মিলনের সম্পর্ক যে জনসমাজের, তাদের কণ্ঠেই এই ধরণের গান জাগতে পারে।’ রিচার্ড ই ইটনের ‘রাইজ অফ ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার’ গ্রন্থ থেকে এই জনসমাজের একটা চিত্র স্পষ্ট হয়। ১৮/১৯ শতক পর্যন্ত বৃহত্তর রংপুর-কুচবিহার-দিনাজপুর অঞ্চলে ব্যাপক আকারে নতুন জনবসতি ও আবাদের পত্তন হতে থাকে। বন কেটে বসত এবং আবাদ করতে গিয়ে কোচ এবং রাজবংশী জাতি গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর (বিশেষ করে অকৃত্রিম বাংলা ভাষী) কৃষিজীবীরা মিলে মিশে যায়। এদের একটা বড় অংশ মুসলমানও হয়ে যায়। রাজবংশী ও কোচ সমাজের কৌম জীবনের ছাপ তাই ভাওয়াইয়া গনের ভাঁজে ভাঁজে পরিলক্ষিত হয়। সংষ্কৃতির ভেতর সমন্বয়ের মধ্যে সংঘাত বা দ্বন্দ্বের লক্ষণ এখনও ধরা পড়ে। মাহুত-মৈষাল-গাড়িয়াল সমাজের স্বাধীন বিচরণের আকাঙ্ক্ষা এবং দরিদ্র কৃষক কন্যার প্রণয়-প্রতিবাদ সে ইঙ্গিতই বহন করে। সমবেত কণ্ঠস্বরের মধ্যে একটি কণ্ঠস্বর যেমন প্রধান--তেমনই ভাওয়াইয়ার আবহে নারী হৃদয়ের বাসনা-বেদনা-বিদ্রোহও প্রধান স্বর। নারীর নিরন্তর আকুলতা এবং প্রণয়াকাঙ্ক্ষা ভাওয়াইয়া গানের প্রাণভোমরা। কৌম সমাজের সাম্য ও প্রকৃতিবাসের টান এই নারী হৃদয় থেকে এখনও সম্পূর্ণ উবে যায় নি। এ প্রসঙ্গে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ধারণা-- "নারীর স্বাধীন প্রেমকে রক্ষণশীলতার নিগড়ে বাঁধার চেষ্টা হলে ভাওয়াইয়ার নারী তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বাপ-ভাই যখন তাকে বাল্য বয়সে স্বামী নামক এক অচেনা লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে (এখন এ প্রথা আর নেই বললেই চলে) বিয়ে দেয়, সেই অভাগিনী তখন সেই বাপ-ভাই এবং স্বামীকে ক্ষমা করে না। তার মন পোড়ে তার বগার জন্যে--প্রেমিক কাজল-ভোমরা অর্থাৎ মৈষাল-গাড়িয়াল-মাহুতবন্ধুর জন্যে! মদাসক্ত স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত এই নারীর আশ্রয় তখন চ্যাংড়া দেবর-- ‘ও মোর ভাবের দেওরা এই নারীর কাছে--
‘স্বামী আমার যেমন তেমন এক ভাওয়াইয়া আলোচকের মতে --
'সমাজপতিদের চাপে যে নারীর আপনকীয়া প্রেম যেখানে অবরুদ্ধ,
সেখান থেকেই তা পাহাড়ের ঝর্ণার মতো পরকীয়া প্রেমের খাত বইতে থাকে। আর নিজের
প্রেমের কথাই সে বলতে থাকে রাধাকৃষ্ণের বরাতে। কিন্তু তার এই প্রেম
রাধাকৃষ্ণের লীলা নয়, এ তার ব্যক্তিগত ‘সোনার চান্দ’কে পাওয়ার তীব্র আকুতি।' কৌম সমাজের আপনকীয়া প্রেম যখন নিয়ম আর শাস্ত্রের চাপে প্রকাশিত হতে পারে না, তখন তার প্রেমিক কালা হয়ে যায় কৃষ্ণ, আরও পরে প্রেমিক কৃষ্ণ হয়ে যান প্রভু কৃষ্ণ! কিন্তু ভাওয়াইয়া নারীর প্রেম নিজেকে বদলাতে অস্বীকার করে। তার মৈষাল তার আপনকীয়াই--পরকীয়া নয়। কীর্তন পদাবলীর সঙ্গে এখানেই তার পার্থক্য। এ পার্থক্য কেবল সুর বা ভাষায় নয়, এখানেই ভাওয়াইয়া নারীর নিজস্ব স্বর ও আবেগের বিশিষ্ট গড়নটিকে প্রেমের অন্যান্য আখ্যান থেকে আলাদা করা যায়। রবীন্দ্রনাথ যদি বলেন, ‘আমার মন কেমন করে’--ভাওয়াইয়া নারী বলবে--‘সোনাবন্ধু বাদে রে কেমন করে গাও রে।’ প্রেয়সীর বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ যখন ভাবেন--‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’--তখন ভাওয়াইয়া নারী ভাবে--‘তুই কালা যেমন দান্তাল হাতি / মুঞিও নারী তেমন ভর যুবতী রে।’ জীবন্ত দেহ-মনের এমন সপ্রাণ প্রকাশের মধ্যে বিমূর্ততার কোনো সুযোগই নেই! শুধুই কি প্রেম? নারীর অন্তঃস্থিত অতলান্ত বিষাদসিন্ধুর সন্ধানও পাই ওপার বাংলার মুস্তাফা জামান আব্বাসীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ নামে একটি গানের সঙ্কলনে গ্রন্থিত একটি গানের মধ্যে। গানটিতে দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণায় অস্থির এক নারী বলছে--‘ও কাক, তোমার হাতে আমি এই চিঠি তুলে দিলাম। তুমি এই চিঠি মাকে দিও। কিন্তু মা যখন জলের ধারে যাবে, তখন এ চিঠি দিও না, মা জলে ঝাঁপ দিয়ে মরবে। মা যখন ভাত রাঁধে তখনো দিও না, মা অনলে ঝাঁপ দেবে। মা যখন শাড়ি পড়বে তখনো দিও না, মা সেই শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেবে!’ গানটির শেষে মেয়েটি বলছে,
‘যখন যাও মোর নিদ্রারে যাইবে ভাওয়াইয়া কেন এত মর্মস্পর্শী তা রসিকমাত্রেই বোঝেন। এই গানের কোথাও কোনো দুর্বোধ্যতা নেই। যা আছে তা অকপট প্রাণের আবেগ। তাই বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় না, শুধু মনের সঙ্গে কানটিকেও পেতে দিতে হয় ভাওয়াইয়ার ভাষা ও সুরের সম্মিলনে। লোকসঙ্গীত জনজীবনের অন্যতম সংষ্কৃতি। মানুষ তাই যুগে যুগে সংস্কৃতিরও বিবর্তন ঘটায়, সংষ্কৃতিতে পরিবর্তন আনে। যে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল নব-প্রস্তর যুগের শেষাংশে--তার আমূল পরিবর্তন এসেছে উন্নততর বিবর্তনের পথ ধরেই। মেঠো উঁচু-নিচু পথে গরুর গাড়ির ধাক্কা খেয়ে খেয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে উচ্চারিত গাড়িয়াল বন্ধুর কণ্ঠের ভাওয়াইয়া গানটি পিচঢালা মসৃণ পথে চলমান রিক্সায় বা ভ্যানগাড়িতে সেই একই আবহ বয়ে আনতে পারে না। পরিবশে ও প্রেক্ষপটের বিপুল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে ভাওয়াইয়া গানের মধ্যেও। চালু হয়েছে আধুনিক ভাওয়াইয়া গানও! তা কতটা সহনীয় বা গ্রহণযোগ্য সে বিতর্কে যেতে চাই না। কিন্তু ভাওয়াইয়ার আঙ্গিক যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখন আর মৈষালবন্ধু কিংবা গাড়িয়ালবন্ধু কোথায়? এখন তো সর্বত্র রিক্সা আর ভ্যানচালক। যাদের ?মুখে মুখে ফিরছে--‘ও টুনির মা....!’ প্রত্যন্ত গ্রামে অবশ্য এখনও হঠাৎ শোনা যায় উদাত্ত কণ্ঠের ভাওয়াইয়া গান। এখনো হয়তো কোন নারী তার প্রেমিকের কাছে আকুতি জানায়--‘কোন্ দিন আসিবেন কয়া যান কয়া যান রে!’ কিন্তু হয়তো সে প্রেমিক আর ভুটান বা জয়পুর কিংবা গুজরাট থেকে আর ফেরে না। সময়ের অতলান্ত খাদ থেকে হয়তো সে নারী গুমরে মরে--‘ও তোমরা গেইলে কি আসিবেন, মোর মাহুত বন্ধু রে!’ |
***