নদী ও নারীর কাছে যাব


কোথায় যাব? কার জন্য হবে দীর্ঘ অপেক্ষা। সে কি 'নারীরূপাকার ছায়া'...
কোথায় যাব আজ? জিন্সপ্যান্ট-জুতা একটি হলেই হল; জানিনা চেহারার সাথে কোন কোর্তাটা মানাবে; আয়নায় দেখিনা মুখ কতদিন হল ! শার্ট পরা ছেড়েছি বছর দশেক হবে। কেনো ছেড়েছি জানিনা। এই যে বোতাম লাগানো আর খোলা আমার ভাল্লাগে না

আজ কোথায় যাব? ভাবতে ভাবতে কোথাও যাওয়া হল না
আজ নদী ও নারীর কাছে যাবো, তাদের কাছে মিলে স্বান্ত্বনা

নির্বাসন লিপি
 

.

পাতাঝরা দিনে জল থেকে উঠে প্রথম প্রণাম
মৃদু বাতাসে লাফিয়ে ওঠা কিছু মাটির ঘ্রাণ
ঢলা হাতের শ্বাস নাকে-মুখে টেনে
মায়ের কোলে প্রতিদিন ঘুমপাড়ানি গান
-মা তোমার আঁচলে বাইন্ধা রাখছি
প্রাণ, জন্মের ঋণ

.
কি আশ্চর্য! স্মৃতিকথা; বিগত বছরের
আশা ও ব্যর্থতা
রূপছদ্মবেশ তার কাছে আছে
বিগত দিনের মতো জমা
আমারও আছে; থাকবে নিজের সন্দেহ
সে সব দুবারের বেশি কখনো ভাবিনি
বিব্রত-শ্বাসরোধি
তাকে চিনিনি... কিছু বলতে গিয়েও পারিনি
সেদিন তোমার বারণ শুনে হারালাম ভয়!
কিছুই জিজ্ঞেস করিনি

.
তোমার শাড়ির আঁচলে আমার কিছু দেনা বাকি
পেয়েও যেতে পারো নিদিষ্ট দিনে অনির্দেশে
মর্ম ও রীতি
কিন্তু পার্থক্য যা দেখি বির্তকের হাতছানি
স্পর্শমাত্র আকর্ষনহীন, আততায়ী; অস্থায়ী
সঙ্গমক্লান্তি
স্কুল জীবনের স্মৃতি মানে, রাফ-খাতায় আঁকা
একটি ফুলে; দুটি পাতা কেবল তুমি আর আমি
আমাকে যদি প্রশ্ন করো রূপ বৈচিত্রের সৌন্দর্য কী?
কিছু না ভেবেই বলবো ভোরের আলো-
যা চোখ খুলে দেখি, যা লক্ষ্য করি...
কারণ, স্পর্শের আগে দেখার আনন্দ-ই বেশি

.
যদি প্রশ্ন করো এমন ঠান্ডার দেশে দেহের উত্তাপ
কেমন; বলছি শোন তবে এক্স-ওয়াই-জেড
তীব্রতার ভেতর নড়ছি-চড়ছি কখনও নিরুদ্দেশ
আর কী কহিব তুমি প্রাজ্ঞনারী; দেহের বিপ্লব
নিজেও জানি না কেন প্রত্যেকবার তোমায়
দ্বিতীয়দর্পনে রাখছি, লিপষ্টিক, আইলিনার
মাশকারা...
আর কত কি?
পারফিউম কোন ব্যান্ডের তাও জানিনি

.
মাকে দূরে রেখে ক্ষুদ্র মনে জমছে কথকতা
বাল্যসখা আশা- মতো আনন্দ দেয়
যেমন আনন্দ মায়ের বুকে মাথা রাখলে
দোয়া-মায়া-মমতা লুকানো মায়ের আঁচলে
-মা তুমি দোয়া করো, ভালো থাকা সারাক্ষণ
আর কটা দিন যাক, তারপর সব ঠিকঠা
শীতে-প্রীতে পুড়ছি আমি ওহো কার্তিক-বর্ষা-শ্রাবণ
ব্যর্থতাই কি জীবন? জিজ্ঞাসা না-করাই ভালো
সে যে স্বেচ্ছায় হয়েছে নির্বাসন!

 

 

দেহ বৃন্দাবন

দেহের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে ধমনী-শিরাগুলো
ক্লান্ত লোহিত রক্তকনিকায় জমাট বাঁধা ছেড়ে
দেহ কোষে লেগে আছে আদিঋণে
সারাক্ষণ দেহের খেল্ দেখবো বলে নিজেকে
আগলে রেখেছি গোপনে আর স্মৃতি রুয়ে হৃদাশ্রমে
অনুধাবন করছি বুক শুকিয়ে সত্যি কী পুড়বে;পোড়া
অন্তবেদনায়... আমাদের সম্পর্ক বাধা নিষেধ ছাড়াই
চোরাগুপ্তা বিশ্বাসে অস্থি-মজ্জা স্পর্শ করে ত্রিকাল জলে
রক্তমাংশের উগ্র ঘ্রাণে

২.

তোমার হতাশার চোখ অবিরাম শরীর খুলে কী রকম
টেনে রাখছে লোকচক্ষুভীতা
কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণ বুক পাহাড়ে ওরনা টেনে; শেষ রাতে
ঘুমের ভেতর চেপে ধরি দাঁতে দাঁতে ধারালো কামড়
তৃষ্ণা মরে যায় কেউ হাসলে! শর্ত একটাই মনে পড়ে
কেবল দুপুরে দাঁত মাজি না বলে, বলছি জীবনভর
ব্যথা জাগাও; তবুও বলবো না স্তনফুলের মতো আগলে
রাখো আকর্ষ কেউ যদি না এসেও জাগায় দু’হাতের ছোঁয়ায়
উষ্ণ হতে কতক্ষণ? যত্ন করে রেখো গোপন মনে দেহ-বৃন্দাবন

 

বাসমতি ঘ্রাণ


কপাল বলে কথা! যা ভোলা যায় না
কখনো স্থির অথবা অভিশপ্ত অস্থির
ভাগ্য সেও পথিপার্শ্বে একার-
পথভোলা... অভিযুক্ত যাযাবর
যদি তিরস্কার করো, তাতেও অহংকার
ইর্ষা যথারীতি সদয়, হৃদয় পুড়বার
কারণ-
তোমার অঙ্গুরীর স্পর্শ তাজ্জব ব্যাপার!
ভেজা হাতে চাল ধোঁয়ার তরতাজা ঘ্রাণ
পাচ্ছি-
ধোঁয়া ওঠা বাসমতি ভাতের উপর

 

..........................................................................................

 

এসো তবে নেমে যাই শ্রাবণে, জলপতি ডালে


আমার ক্লান্তিরা ঝরে গেলেই মুক্তি পাবো কি-না কে জানে? পালাবদল যদি হয় তো হউক; একটু একটু করে নেমে পড়ুক পুরনো বাঞ্ছা; না -হলে কি-বা ক্ষতি এ-রাত্তির? এসো তবে নেমে যাই শ্রাবণে, জলপতি ডালে... আমাদের পাশাপাশি খাড়া হতে শিখুক মনোযোগহীন কথাবার্তা। ক্লান্তি না -আসা নীলব্যথা যদি আমাকে তুলে নিতো কৌটায়, প্রবাহিত যত বাঁকানো হাওয়ায়। বোকাসোকা অসুখটা হয়ত এমনিই সেরে যেতো

ক্লান্তি আসা, না-আসার অন্তরালে জীবন চলেছে
এসো- চুপিচুপি মিশে যাই ছায়ায়, গাছের নিচে

 

ভষ্মফুল কেঁপে উঠে ভয়ে


সকল নিয়ম আমার সাথে সর্দারি করে ! তাদেরই একজন দৃষ্টি -জঙ্গলে পেল কিছুটা আদর... অপরিচিতজন সফল হলো পুরনো আদলে; অপড়শিরে ডেকে বলিল; শোনো -- শুরু হলেই গো সমাপ্তির কথা আসে; সময়ফুল তাই বলে! নাকি অগোচরে খুলে দিয়েছো ভাঙন ! তাবৎ বন্ধকপাট? এই ভয়ে আমি যে হারাতে চাই না কারো চোখে চিরকাল; এ-লক্ষ্যে তার লাটিম ঘোরানো চোখটা দেখলেই ভষ্মফুল কেঁপে উঠে ভয়ে

একা থাকলেই কি? হতে হয় কারো মোহে বিলীন
ভায়োলিন না-বাজালেও চলে বাজাও মাউথঅর্গান

 

বাইসাইকেল বন্ধুর কথা


বাইসাইকেল প্রীতি যে দিন থেকে বড় হতে চললো। বন্ধু-প্ররোচণায় বাইসাইকেল আমাকে মাঠে নিয়ে যায়। কোলে পিঠে রেখেছে আদর করেছে। আদর এত তীব্র ছিল যে বাতাসের ধাক্কায় আমরা দুজন জড়িয়ে পড়লাম মাটিতে। বাইসাইকেল বন্ধুটির কিছু হয়নি, আমার হাঁটু কেটেছে পচা শামুকে। বাড়ি ফিরে মাকে কিচ্ছু বলিনি বাবা'র ভয়ে

আজ হাঁটুর কাঁটা দেখে মনে পড়ছে বাইসাইকেল বন্ধুর কথা
যদি ফিরে পেতাম শৈশব! হেসে-খেলে শেষ হত জীবনব্যথা

 

তোমার পায়ে রোদের নূপূর ঝরে


ঘুম জাগলেই পর্দায় জানালা ঠেলে দৃষ্টি বাহিরে তাকায়; সারাদিনের বর্ণগন্ধ জোড়াচোখ চাখে; চোখ কি তৃপ্তি পায়? আজ ভরা-রোদের, কিম্বা রোদভরা সকাল! হবেই-তো আলাদা অন্য সকালের চেয়ে কারণ রোদের দূরত্ব মাপলেই চোখে চোখে ঘুরে ঠিক দুপুর। আমি থাকবো কাজে, আমার পায়ে বাজবে কি রোদের নূপূর। রোদের হাত-পা ধরে উল্টাতে-পাল্টাতে গিয়ে দেখি রোদের তীব্রতা ছায়া হয়ে লাফিয়ে উঠছে ফতুয়ায়; নীল বোতামে

আমার হাতে দিনের শব্দ, তোমার পায়ে রোদের নূপূর ঝরে
পৃথিবীর পথে যেভাবে রোদ হাঁটছে,
ছায়া হাঁটছে যুগ যুগ ধরে

 

শেষ পরাজয়ে আমিও একেলা
 

সন্ধ্যা ঘনালে আমার সকল পথ সহজে বাঁক নিতে চায়, দেহগাছের মহিমায়। যেন মড়ক ধরেছে মিথাইলের ঝাঁঝসহ গ্রহণের ভাঁজে। রসায়নপাঠ কি আর কবিতা বুঝে? কবিতারা বুঝে কি, অণু ভাঙলে কেনো পরমাণু মিলে। এইসব বেহুদা কথা: বাস্তবতা মানে প্রাণবায়ুর ভেতর শাসিয়ে নেয়া; নৈকর্ট্য শৃঙ্খলা! মড়কে জিইয়ে রাখা বর্ণমালা আর বাক্যকৌশল যত ঠকিয়েছে... শেষ পরাজয়ে আমিও একেলা

সন্ধেভাষা কি মন বুঝে, ক্ষণ বুঝে অথবা রাত্রিকথা
ও-বর্ণ, ও-বাক্য,
তাকিয়ে দেখো আর নই একেলা

 

ভুল টার্মের হাত ধরে আসা ধারাবাহিকতা

যদি শরীর থেকে আলাদা করা যেত ঘুম; আলোর ভেতর ভালো থাকা যেত বেশ; তুমি বলতে থ্যাংক'য়ু বলতাম বেশ তো আছি শোনে যাও, দেখে যাও পরমায়ু ঘুমের আমেজ আমাকে কখনো জ্বালায়, পোড়ায় তবুও ভালো আজ সে হারালো কোথায়? ঘুম দূরে থেকে গেলেই বাঁচি ভাবতে পারো তুমি এ-জীবন! আহা পুরোটাই ভুল টার্মের হাত ধরে আসা ধারাবাহিকতা

একটাই জীবন, তাকে কি ছায়ার ভেতর বেঁধে রাখা খুবই কঠিন?
জীবনবাবুর মতো আমারও কাঙ্ক্ষাফুল 'নাটোরের বনলতা সেন'

 

বিয়োগ হলেই তো ফলাফল
 

তীব্র ভেদাভেদ আর জানার আবেগ কতবেগে চলে; ভাবলেই আমার দৃষ্টি সেলাই করতে চায় অর্ধেকচিন্তায়! দৃষ্টিপাঠে ঢোকবার কথা ছিল আরো কতো আগে; কিন্তু সময় আমাকে সহায়তা করেনি; কিংবা সময় আমাকে সে স্বাধীনতা দেয়নি! আর তুমি কি না চাও! আমাদের সময়ের উপর দিয়ে হেটে গেলেই তো ভালো; সহ্য করো না তুমি বিষাদ-চিরন্তন পরস্পর বিয়োগ হলেই তো পাবো ফলাফল

এমন ভেদাভেদ হয়তোবা কখনও বিব্রত আর বিভ্রান্তি ছড়াবে
দৃষ্টি সেলাই হলেও ফিরবো ডেরায় তুমি কি তখন পালাবে?

 

পাথর ভোলানো মন
 

হৃদয়ের সাথে পাথরের মিল দেখে, নিজেই হয়ে গেলাম এক কঠিন পাথর। বন্ধুগণ, পাথর কি মন বুঝে? পাথরের সাথে কি মন খুলে কথা বলা যায়?... তোমরাই সিদ্ধান্ত নাও। আমার সঙ্গ করো ত্যাগ অনেক কথা বলে ফেলা মনের স্বভাব, অনেক কথা ভুলেও যাই সহসা।এই যৌথমন, আমার পরিচয় করছে বহন। মনে না-থাকার স্বভাব। যদি পারেন একবার দয়া করে যান

না-বলার স্বভাবে হৃদয়ের সাথে পাথর-সম্পর্ক বড়ই মধুময়
কিছু আশা তার সমীপে পাঠাবো বলে লিখে রাখি হৃদপর্চায়

 

কৌশল জেনে


সৌন্দর্যের ইন্দ্রজাল বুনে নিরর্থক প্রহরগুলো আঁবুবাকু করে ধুলোর ভাঁজে প্রভাঁজে হয়তো শাদা জামার সরুপথ ধরে মৌন নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দিতে পারো মাংস আর লোমের মোড়কে লোভচোখ নুয়ে যাওয়ার আগে দেখি তোমার ভ্রু-কাঁপছে বিস্ময় নিয়ে মুহূর্তগুলো আঁকা যেত জলের গায়ে কিন্তু জলের স্মৃতি যত গোপন রাখতে চাই দেখ কেমনে ধেয়ে আসছে সব বুকে আর আর হুকে ক্লান্ত হলে মুখাবয়ব ধুয়ে নিতে পার বৃষ্টির জল কিংবা নোনতা জলে তবুও তোমার চোখে খুঁজি আশা আর কিছু দিবসের আলো ছলে কৌশলে