মনের বাইপাস-সার্জারী


আমাকে গ্রহণ করো স্বেচ্ছায় কারণ কালো চশমাটা খুঁজে পাচ্ছি না আজ,
তাকে পেলেই হতো সকল আয়োজন। হতো আমাদের কান্নারও ভোজ। কিছুই হল না আজ! কিছুই হল না কাজের কাজ
তবুও জানি কান্নাকাটি করাই মনের কারুকাজ! পাখিরা কি কান্নার ভাষা বুঝে? পাখিরা শুধু বনে ঘুরে, ডালে ঘুমায়, পাতার গান শুনে। কেনো যে অন্ধকার রাত্রি আমায় নিয়ে ঘুমোতে চায় না; খোলা জানালা ফাঁকে ফাঁকে ঢলে পড়ে সিম্ফনি কি যে করি... অন্ধকার-সিম্ফনি যদি পারো করে নাও মনের বাইপাস-সার্জারী

কখনোই আমি কালো চশমাটা পরিনি, সকল দৃশ্য যেন প্রাণহীন লাগে
হয়ত আমাকেও পরে নেবে অন্ধকার-সিম্ফনি,
তাই প্রস্তুতি পর্বটা আগে

 

সঙ্গী

আমাকে তাড়া করে গড়িয়ে নামছে সন্ধ্যা
খিড়কি দরজার ফাঁকে
ফলে কার্নিশ ছুঁয়ে নামছে এক পশলা রোদ
গোপনে নেমে গেছে তখন রোদের ছায়া
তারপরও রয়ে যায় অপেক্ষাসহ স্মৃতি-স্বপ্নকথা
যার জন্য গুনে রাখি প্রহর; আঙুলের রেখা
সে তো শাদাপরী

সন্ধ্যে নামার আগে ফিরলে না তাড়াতাড়ি
যেভাবে পাখি ফিরে নিজের বাড়ি

কারো তাড়ায় আমি মিশে যাই দূরের ছায়ায়
যদি ফিরে এসো আমরাও মিশে যাবো
রাত্রিদিনে তারায় তারায়


বৃষ্টিপাত

তুমি নীল আকাশে চেয়ে থাকো অবিরত
আমি মেঘের গর্জনে কান পেতে বসি
বরষা এলো তবু--- এখনো বৃষ্টিপাত হয়নি
তাই দরজার পাশে দাঁড়ানো পূর্ণিমার চাঁদ
পেখম মেলে
যদি ঘুম ভেঙে যায় তারা গুনে রাখো হাতে
দেখবে তারায়-তারায় উড়ে যাবে মেঘ
রোদের আড়ালে; আবার বৃষ্টিপাত হলে



হিমতার সুর

দুঃখগুলো সংক্রমিত হলে হিমতা দেহ
বেয়ে ওঠে বত্রিশ প্রকার হাড়ের যন্ত্রণা
এক-একটি করে জ্বলে উঠে গ্লিসারিনের তাপে
যদি ইচ্ছে হয় বলো যন্ত্রণাসহ গ্লিসারিন পাঠাবো
পায়রার ঠোঁটে

এতে যদি তোমার দ্বিমত জাগে ক্ষতি নেই
হিমতার ঠোঁটে ফিরে এসো... পাবে
পাবে নির্জনে---
একান্ত আপন সুরে

.............................................................................................

গালভরা হাসির টোল


সারাদিন অনেক কথা বলি- আমার শ্বেতাঙ্গিনী বন্ধুটির কান শোনে, চোখ দেখে, নাক টের পায়, জিহবায় স্বাদ নিতে নিতে বোবামুখ সব সহ্য করে রাখে ঠোঁটে! তাঁকে শিখাইনি আমি, মন পিষে নেয়ার কলা-কৌশল। ইচ্ছে করে আমিই মন পুষে অনন্তকাল কৃষ্ণ হয়ে বাঁচি শ্বেতাঙ্গিনী রাঁধার ঘোরে... । কাজ শেষে গালভরা হাসির টোল চোখে লেগে থাকে...

সেও রেখে-মেখে যায় তিন কিলোমিটার দূরত্ব! হয়ত আগামীর
এমন ভাবা ঠিক কি-না,
কে জানে... পরিত্যক্ত অসুখ যে আমার

 

সমুদ্র সৈকতে একদিন


সমুদ্র পাড় ঘেঁষে হাঁটছো... ভাবছো স্বপ্নহীন কাকে বলে,
বলছো সব অনুভূতি অন্যরকম লাগে বাতাস তুমি কী জানো
পায়ের আওয়াজে ঘুঙুরও কীভাবে হাঁটে, চুল তোমাকে নিয়ে এক সাথে উড়ে, চুলগুলো কীভাবে জড়িয়ে মড়িয়ে যাচ্ছে নাকমুখ, চোখে; দু-একটা ঢুকছে দাঁতের ফাঁকে। অথচ কথা ছিল এক সাথে ঘুরে বেড়াবো, হাতে হাত রেখে ফিরবো মর্মরিত হাওয়ার তাড়া খেয়ে।

সমুদ্র স্নান শেষে তুমি সমুদ্র সৈকতের কাছে দাঁড়ালেও সমুদ্রের বুকের অজানা দুঃখগুলো দেখতে পারবে না; সব দুঃখ বুকচাপা তার অনাধিকাল বেঁচে থাকার স্বার্থকতা। তুমি কি জানো, সমুদ্র বুকে কতজন ফেলে গেছে তাদের স্মৃতি-স্বপ্ন; হাসি-কান্না; হয়তো জানো কিংবা জানো না- সেই একদিন সমুদ্র স্নান শেষে আর দেখা হলো না।

 

আড়াল থাকো না প্রিয়বেদনা


পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে দেহের খলবল ক্রমশ বাড়ছে
গতি-কৌতূহল নাচিয়ে তুলছে বাঁধা ও ভীতি, আমাকে তাতিয়ে রাখছে সব অনুভূতি আমি অনুভূতি পাঠ নিতে জানি, কিন্তু প্রতিশ্রুতি আমাকে ধাক্কা দিলেই সব নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে অনুভূতির আঘাতে! গাছের ছায়া আর খাড়া রোদের ভেতর জমিয়ে রাখি অশ্রুবিন্দু, ভয়ভীতি খলবল হয়ত কমে যাবে

আমার ভেতর আমাকেই চাষ করি; যাহা কেউ জানলে না
আমার ভেতর তোকেও পুষি;
আড়াল থাকো না প্রিয়বেদনা

 

স্নান ঘরে একা


একা ভেবেছি... একা ভেবেই জেনেছি
স্নানঘরে লাজ খুলে গেলে, জলের শব্দে
হারানোর কিছুই নেই জল ছাড়া
কেউ জানে না দেয়ালে কেন জলপড়ার শব্দ
কানে বাজে, কেন ঈর্ষায় পুঁতে রাখি জলসহ
রহস্যময় ছায়া

মগ-বালতি নীরবে পড়ে থাকে দেহের লোভে
স্নানঘরের কোণায়
শীত কাঁপুনিতে ঝরনার গরমজল হাত, মুখ-
চুলসহ সারা গতরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, গড়িয়েও যায়
যত দুষ্টতা লুকিয়ে রাখে চোখ আর আয়নায়

অস্থি

সব কিছুর ভেতর পরস্পর চোখাচোখি, আমি
কেবল দেখি; দেখার ভেতরও হয় কান্নাকাটি
না-দেখাও ভাল... একটি স্বাভাবিকতা থাকে
যেমন বৃষ্টিদিনে, কালোমেঘ, মদমাংসের ঘ্রাণ
আমার নীরবতা বাগানবাড়ি খেলা করে মাঝরাতে
স্বভাবদোষে
আপাত আমি সাইপ্রাসে দাঁড়িয়েছি স্পেনিসশাকে
সবজি ক্ষেতে অসহায় ডাঁটাশাক মাটি-গর্জন-শোকে

তুমি কখন দাঁড়িয়েছো জানতে পারিনি, দেখেছি শীতে
তোমার স্বাভাবিকতা দেখে ব্যথা জেগেছে অস্থি-প্রীতে

 

নিত্য ধূপ জ্বেলে


একান্ত বিশ্বাসে সেও লেগে আছে জলে শৈবালে
মিশেল ফুকো
র মতো সত্যপথের ধ্যান কুড়াবার
বদলে শূন্যতা-বিষব্যথা জাগে শুষ্ক দেহের ছালে
আততায়ীচোখ আমাকে স্লো করে রাখে ধূম্র প্রতীক্ষায়
নোখে-আঙুলে সুতরাং দাঁড়িয়ে থাকার ছলে বুকের
ক্ষত ছ্যাঁৎ করে ওঠে কোর্তায় তোমাদের জামার পকেটে
দেহ থেকে ক্ষয়ে যাচ্ছে ভ্রমজাল,গা-মাছির জলে তৈরি
হচ্ছে বাসনাফুল কৌশলে;
নিত্য ধূপ জ্বেলে

কুড়ি বছর পর


কিসে যেন রেগে গেলে... তার মানে
হারানো কান্নাও হতে পারে গোপনে
আরো তিন-তিনটি বছর পর...
সবই বুঝি মৃদু ত্রুটি কাঁচা মাংশের ঘ্রাণে
ওই মুখ!
বর্ণিত হবার লোভে লাজুক বাগানে
মনে ও বনে

এসব ঘটনাপ্রবাহ কুড়ি বছর পর কবিকে চেনে
শেষ দিবসে আমি যখন কিছু কথা জমিয়ে রাখি
কাঁধেপিঠে ধূলির নগরে
কাঁপা হাতের আড়াল থেকে সর্বস্ব দাও
অতি-গোপনে

ব্দ


ছায়ার নিচে সে যদি রোদ কুড়ায়
তবে সেলাইকলের টানাটানা শব্দগুলো
বাদ যাবে কেন, কলঘরের একটানা শব্দও
কুড়াক
নৈঃশব্দ জানে না সোনামুখী সুইয়ের ছিদ্রকথা-
সুতোহীন দীর্ঘশ্বাসে যতটা থেকে যায়; ওড়াটাই
শুকনো পালকে জ্বররুগ্নতা...
সেও যদি উড়তে পারে তবে বালুচরে না-হেঁটেও
চোখের ভেতর জেগে উঠবে চর- তারপর
নিঃশ্বাসে মশলার ঘ্রাণে লোভ বাড়ে; কলকব্জা-হাড়ে
দগ্ধপাঁজর জুড়ে চুম্বনের হাসি পাবে,
মাংশ খোললে

 

আশা বেশি দিন বাঁচে না


নিঃশ্বাসের ছিঁপি খুলে পড়ুক পুরো বছরের স্মৃতি
ইচ্ছার কোল জুড়ে হাত টেনে ধরো প্রকাশ প্রীতি
যে পশমে লেগেছে সাবানফেনা জলকষ্টেও মাতি

ধুয়ে-মুছে সঞ্চয় করেছি ক্লেদ; পুরো আলোমূর্তি

অপেক্ষার বসন আমাকেও করেছে হৃত-বিহ্বল
অনেক উদ্বেগ মুখস্থ করিনি তবুও শতবৃষ্টিজল
কৈশোরকাল বেশজটিল পড়শি ছায়ার আড়াল

কৈশোরস্মৃতি; প্রবেশ করো তুমি দেহ সমান্তরাল

আমাকে পাবে নতুন রূপে; নতুন পতনের দ্বারে
দিন দাও, মাস দাও, বছর দাও, মন দাও ভরে

.............................................................

শুকনো পাতা


শুনে ভীষণ ভালো লাগে যখন দেখি
তোর চোখের কাছে জমা বহুকালের
আহত স্মৃতি
বলছে তারও রয়েছে চারচোখা ইর্ষার বাতি
ভাবছি পরস্পর কিছুই ঘটেনি; যতটা এগুলে
তোর গতির চাইতে বাড়তি অনুভূতি
বিগত দিনের ব্যথা এখনিই ভুলে যাবার কথা
তাতে কতটুকু দূরে দাঁড়ানো ফলধরা ব্যর্থতা
কিছুই জানলি না-
কিন্তু কী আশ্চর্য! এমন ভালো লাগার সাথে
লুপ্ত ছিল তার টান-টান গভীরতা
তুমিও চিনে রাখো শুকনো

আয়না


আয়না নিজের সৌন্দর্য যাচাই করতে শিখায়
আয়না নিজেকে জানতে, জানাতে শুদ্ধির পথ দেখায়
এ-বিশ্বাসে সংকোচ ছাড়াই আলোড়িত! বিলোড়িত কল্পনা
মর্মগ্রহণতা তোমার চোখে... চোখ রেখে যদি বলি-
চোখ মনের আয়না

লুকোচুরিতে হারাতে চাই না বলে এতটা নৈট্য
এতটা সৌহার্দ্য ছুঁতে পারা গেল; কিন্তু প্রতিসত্য
প্রতিদিন আয়নার মুখ দেখার কথা মনেই থাকে না
এরূপ কথা বা রচনা অন্য একটি হাওয়ায় উড়ে গেল
তুমি কারো এসেন্সটুকু ভুলে খুলে নিলে

সারাদিনের পাপগুলো যখন মনের আয়নায় খুলে খুলে দেখি
পাপে-তাপে আয়না আর নিজের ছবির কাছে দুর্বল হতে থাকি

মৃত আত্নার বয়ান

সেও এক তরতাজা আহত পেইনফুলগাছ!
যেন শুকনো হাতের দশ প্যাচে মোড়ানো
শলাকার কাঁটা...
বুকের কাছে বড় আদরে গেঁথে আছে খুব

ডান-স্তনের ঠিক নিচে... হাড়ের ভেতর
আমাকে চিপা দিয়ে রাখছে পিঠ বরাবর
তার ঠিক নিচেই তো জানি হিয়ার ঘর!

কেউ কি চুরি করে ঢুকে গেল তাহার ভেতর
তিনদিন একাধারে ব্যথা, কেন যে সারে-নি
আরো তিনদিন পর চেকআপ্ করবে ডাক্তার

এই তিন দিন ধরে মৃত্যুর কথা বেশি মনে পড়ছে
খুব বেশি মনে পড়ছে আজ অন্ধকার, আমার কবর

আমি তো জানি না, মৃত্যুটাই কখন
আমাকে করে নেবে চির আলিঙ্গন