মিনতি সবই বৃষ্টিশ্বাসে


বৃষ্টিপাত হলে খুব ভালো লাগে; বৃষ্টির জলগুলো পাতায় লটকে থাকে; গাছে হেলান দিলে জলগুলো মাটিতে ফুটে।হাওয়া-ভরে কচুপাতার
জলটুকু জড়িয়ে রাখো নিশ্চুপ দেহে।

বৃষ্টিকে বলি আকাশে ফিরে যেতে পারো, নিজের জায়গায় গিয়ে করো বাহদুরি।আমি এখন রোদবন্ধুর সাথে বাড়ি ফিরছি।

কারণ, বৃষ্টিপাত হলে আমাদের সম্পর্ক অর্ধাংশ দূরে সরে যায়, যেমন টিনশেড ঘর রোদবৃষ্টি জড়াজড়ি পিপাসায় জল টানাটানি

বৃষ্টিফুল কে-না ভালোবাসে; মিনতি সবই বৃষ্টিশ্বাসে
আমাদের সম্পর্ক অর্ধাংশ দূরে সরে যায়;
অবিশ্বাসে

 

 

অকর্মা সিরিজ


ডামাডোল বিহীন, শাওন-ভাদরে আমাদের যৌথদিন
ভাবছি মৃতস্মৃতি পুরো আধুনিক
হারানো আয়ুষ্কাল
আমি কি জানতাম! খোশ আমদেদ বলছে তার ভেজাচুল
চাল-ঘরের গ্রীল! বুক চিপা জামায় উড়ে না-আসা পার্বণ

প্রশান্তি মর্মকথা আমাদের ঘিরিয়া রাখছে কিয়ৎ পরিমান
পথের রূপ শেষ না-হতেই কে লাগাল চুম্বনসহ বুক-লক
যত বাহাদুরি করো মুই কেবল স্তনে আঁচড় ফোটাই নখ!
আমার ফিরে আসা,কেমন-কেমন লাগে আহ্!মন-হুতাশন

গোপনে আসা-যাওয়ার মূলপথে বাঁধলাম ঘর!
তুই কি তার অর্থ বুঝিস?... খুব দরকারী
ফিরে আসা ডেডলাইনের পর একখানা দাঁড়ি!
একসাথে চলছি তবু অনুভূতি-টনুভূতি অনগ্রসর

একই বাসস্টপ কিন্তু প্রতিদিনের সকাল ভিন্নরূপ
আজ তার দেখা পেলে কাল দেখি সে আসে নাই
আমরা শুধুই তিন!...উড়াই সরব সিগ্রেটের-ছাই
বাকি যতকথা আমার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিলোপ

সকালে বাসস্টপে দাঁড়াই তুই-আমিসহ একটুকরো পাথর
পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গনারী চশমার ফাঁক জুড়ে হাসে সাইডস্ক্রিন
কত সেন্টিগ্রেটে কাঁপছি আমরা গত পরশু, তবে সাবধান
দেখা যাক শৈত্যপ্রবাহহীন দেহের হাইব্রিড কি এবেলার...

বাসে যেতে যেতে প্রাত্যহিক নাস্তা হাতে বানানো স্যান্ডোইচ
সুইট-ক্রিসপ্ তোর নিত্যদিনের তালিকায়! তার বিফবার্গার
মিনারেল ওয়াটার ক্যান-কোকাকোলা
মায়া জাগে পরস্পর!
কাল নিশ্চুপ ছিল হাসির টোল! যেন মধুচাক
স্পর্শ-আচঁ!

মিনিট বিশেক পর নেমে যাবি তুই
তিনস্টপ পর নাড়াবে হাত কৃষ্ণাঙ্গিনী
আমি ঠিক পরের স্টপে পায়ের শব্দগুনি
এভাবে প্রতিদিন কাজের রাস্তা মাড়াই

ছুটির দিনে ঘরে বসে মাকে ফোন করি
মা আমার প্রতিটি ক্ষণের স্পন্দন-আপন
মাকে দূরে রেখে সুখটাও খুব করুণ
মা বলে,
ফিরে আয় খোকা তাড়াতাড়ি

গোপন স্পৃহাগুলো প্রকাশ করিনি
 

আমাকে বিদ্রুপ না-করাই ভালো; তারপর বলো কতটুকু বুঝলে হেলানো দেয়াল ভুলে? বিদ্রুপ ছুঁড়ে দাও,

দেখো; কে বেশি দুঃখে মিশে থাকে; কে বেশি খুঁজে হারানো পদচিহ্ন।

আমি তো আছি; না-চাইলেও পাশাপাশি যতদিন রোদফল হাঁটাহাঁটি করবে দেয়ালে-দরজায়-জানালায় সেদিন,

কানোর ফাঁকে লুকানো রবে চাওয়া-পাওয়ার গ্লানি;

আমার কিছু কাঙ্খা ছিল গোপন রাখিনি

এ জীবন! খুবই প্ররোচনাময়; গোপন স্পৃহা প্রকাশ করিনি
করাত কলের পাশে একাই ধরে রাখি জল;
আঙুলের গ্লানি

 

আঙুল ফোটানো রোগ
 

সে কথা ঘাসফুল-সবুজপাতা-গোলাপ আর মৌমাছিকে বলতে চেয়েও পারিনি, কেউ শুনেনি কথা; নিজেই নিজেকে বলি;

মাকে কতটুকু ছুঁয়েছে আধুনিকতা।

যা আমি ছুঁতে চেয়েছি কথা-সময়-চিরতা কিন্তু পাইনি; যা চাই তাও পেয়ে যাই ঝটপট, এমন বিশ্বাসের দানায়

আমিও ভুলে যাই রঙরূপ মনোবল খুঁটে খায়।

কেউ শুনেনি কথা! সে-ও হাসে আঙুল ফোটানো রোগে মধ্যমাঙুলি যেন একাই প্রতিদ্বন্দ্বী দশাঙুলি ত্রাসে

মন খারাপের এমন ধারণা আমাকে শিখিয়েছে আধুনিকতা
আসা-যাওয়া ওম্-শীতঘুমে ভালো থেকো আমাদের ব্যস্ততা

 

এক কাপ চা


আজ সবাই সহর্ষ সঘন রাতে কোন জল পান করে, কোন জলে বেশি আশা
জাগে
কতটুকু জলপানে মিটেছে পিপাসা।আর তুমি জলের পরিবর্তে আমাকে ঋণী করে ফেলেছো এককাপ লাল চায়ের কাছে। ভাললাগা অতিশয় প্রচলপ্রবাদভালবাসা হতাশাযোজক ভিন্ন অনুভব হতে পারে, ভিন্ন অনুভব যেতে পারে বলা?

সে বোধটুকু জানা নেই, স্মরণে আসেনি কভু মনে পড়ে অবেলায় গেয়ে-ওঠা তোমার সুরেলা গানের কলি, গলার স্বতঃস্ফূর্ততা

তাই চায়ের কাপে কবেই হারিয়ে ফেলেছি লোভ আর লাল ধোঁয়ার নিয়ড়ে

খুঁজছি পুরনো স্মৃতি আর চোখের ভাষা মূলতঃ চায়ের স্বাদটুকু আমার
অ্যালকোলাহলের আকাঙ্ক্ষা জাগায়নি বলে আজও ঋণী আমি ওই এক কাপ

চায়ের নিকট

 

 

শাদা পাথর


শাদা পাথর সেও বোকা, কারো হাত ধরে
সেও মূল্যবান সম্পদ হয়ে শৌখিন মানুষের
ড্রয়িংরুমে সেজেগুজে বসে থাকে কাচের দেরাজে
বালি মাটির সাথে মিলেমিশে পায়ে পায়ে হাঁটে--
হাঁটাহাঁটি করে বাহ্ ! ইটের পর গাঁথা ইট সারিবেঁধে চলে
আর রড-সিমেন্টের কথা পুরোপুরি আধুনিক
শেষ দেখা এরকম হবে যেমন নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা
দেয়ালে দেয়ালে আরে ওই নিমন্ত্রণের দিনে

তোমারও সংস্কার হবে গোপনে যেমন ইট-বালু-সিমেন্টে
শাদা পাথরগুলোকে পাহারা দিচ্ছে সমগোত্রীয় জেনে

বাড়ি নাম্বার ৩২


বুঝতে শিখেছি ঘরের লগ্ন বারান্দায় আর জানতে শিখেছি
এমন বাসনায় বাকিটাও পোড়াও ! হাঁটতে-হাঁটতে একটি বাড়ির
স্মৃতি নিজের মতো করে খুঁজি; মুঠো খুলে দেখি রহস্য-স্মৃতি
হাতের তালুতে খলবল করছে ভয়াবহ দাগের চিহ্ন; যা দেখে
পূর্ণ-দিবসে তুমিও জন্মাতে পারো হা-করা বুকের স্বাদ কিছুটা
জিজ্ঞাসাবাদ... তোমাকেই বলতাম গোপন বেদনার কথা

যত অপেক্ষা ওই দুঃখিত পথের আড়াল
তাকে দেখি সন্নিকটে এলে অশ্রুপতনের দায় ফেলে সেও বলে
শত অপেক্ষায় দাঁড়ানো আমি বত্রিশের বোবা চার দেয়াল

গ্রহণ প্রশ্নে আমিও পরাজিত

আমাকে না পোড়ালে ভালো এরকম আশায় লুকিয়ে রাখি
গোছা গোছা গন্ধ পুরনো গামছায়, ঠান্ডা জড়াবে দেহে
এযুগে এসে ভাঁটফুলে ফুটে আছো এ-আশা পুরাটাই ভুলে গেছি
খোঁজাখুঁজি; পাতার আড়ালে ছায়া মনমরা হয়ে থাকতে পারে না
এরকম রূপকথা হাঁশফাঁশ ছাড়াই ভেবেছি; লোহা--পিতল-ষ্টীল
শেষ-মেষ কার শাসন মেনে ফেলেছি দীর্ঘশ্বাসে
চারদেয়ালের আলোতে মিশে

দীর্ঘতর ভাবনা বলছি ইশারা করো না, গ্রহণ প্রশ্নে আমিও পরাজিত
পাথরে পাথর ঠুকে বাজাচ্ছি পুরনোস্মৃতি পোড়ালেও পুরোটা অক্ষত

বেদনাশ্লোক


জন্মকথা কেউ মনে রাখে না, স্মরণে এলে বেদনাশ্লোক
ফেরাতে পারিনি অবুজ দুঃখ... ফেরারি মানুষের মুখ

তোর নিকট যাবো না যত ইচ্ছে আয়ু বাড়াক
মালেকুল মউত ডানে-বামে দেখে না-চোখ
একদিন মৃত্যুকথা লিখবো হাড়ে, লিখবো বুকে পোড়া

রুগ্ন কথা তোর আয়ু বাড়ুক দ্বিগুন, বাড়ুক মোহের তাড়া



আমার দিকে ছুটে আসছে ঘাসফড়িং সূর্যাস্তেও আগে
মৃত্যুর জন্য বর্ষাঋতু প্রিয়
সেদিন বৃষ্টিজল ছিটাবে না কেউ অঙ্গে

শীত


চোখের কাছে কাঁদতে নেই তোমাদের দুর্মরজল

শীতটা একদম সইতে পারছে না আলাভোলা শরীর
ভাব মনে,না-মিশতে মিশতে শীতের গুণাগুণ
যতটা চেপে ধরেছে বলবো না ভীষণ আকুল

ছিল না দাবী-দাওয়া আশনাই আঁশাফল
তুমি কিছু একটা বলো র্দুলঙ্ঘ্য কানের দুল

চোখের কাছে কাঁদতে নেই তোমাদের দুর্মরজল
নিত্যদিনে যারা শীতপ্রিয়, শয্যাসহা তাও গরমিল

আমার যত ক্রোধ ছয় তলায়


দুলছে যত ছায়া ______________ বিষণ্ণ আবছায়া
________
অদৃশ্য জীবনের গ্লানি দেখি চোখে
হাতের রেখা শিখি _____________ ভাগ্যই নেই দেখি
________
ফ্রেমে বাঁধা কার প্রাণ; কার বাঁধা শিঁকে
কতটা ফাটে রোদ ______________কথায় যত ক্রোধ
________
বুঝি না কেন সংশয় হাত বাড়ালে
আড়ালে অশ্রু ফেলে_____________স্বান্ত্বনা খুঁজে নিলে
_________
তৃষ্ণা মিটে না কভু বৃষ্টির জল গিলে
আঁধারে যত স্মৃতি_______________ দুঃখ নয় দুর্গতি
______
তারপর কিছুই তো রইলো-না বাকি
স্মৃতি বয়ে যায়______________মায়ায়; কান্নায়
_______
আমার যত ক্রোধ ওই ছয় তালায়

দাগ

জলে কচুরিপানার সাথে সাঙ্গ দিয়ে ফুটছে দেখো
লাবণ্যময়ী শাপলাটাও
সাতার শিখবো বলে নেমেছি জলে--
বয়সটাও ছিল কোমলচিত্ত চাঞ্চল্য বনের বাদর
আমার সাথে নিমজ্জিত হতো বৃষ্টির জল
তার স্পর্শে প্রথম তৃপ্ত অনুভব করে
ডুবে থাকি জলে--

বাতাসে পূরবীর সুর, বৃষ্টির ঝংকারে
খুলে পড়ছে আমার পলিমাটির শরীর
এ সবের মত্ততায় সরে যাচ্ছে
লাজের আঁচল

ইদানীং অনুতাপিত হই, কেননা পরিস্থিতি আমাকে
সরিয়ে রাখতে বাধ্য করেছে; তাতে ভুল ভেবো না
লাবণ্যময়ী...
শাপলার ঝংকারে ঝংকৃত বৃষ্টি আর পলিমাটির শরীর
দ্রোহ কথার মোহ ধরে ফিরে যাবো
তোমাদের
দিকে

 

 

পাপড়ি


মিশে যাচ্ছো অনেক দূরে, স্তব্ধতায় -গোপনে
স্পর্শ-লোভে-প্রাপ্তি কিছুই পাইনি কুশলচক্রে
তিনটি পাপড়ি সাবলীল ভঙিমায় নাড়ালে একাকি
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারে না অনুভূতি... এতোদিনে
তারাও জেনে গেছে-
একই বৃন্তে ঘুরে নিজ গৃহকোণে মৃত প্রায় আমি

বলছি পরাগ রেণু, কোথায় পাবে এতো এতো
মৌমাছি?
সে কথা শুনলে তুমি হাসো
হাসতে হাসতে কিছু একটা বলো
কাঁধে রেখে হাত, বাকিটুকু থামাও

নিজের তাগিদে বীথি ছড়ালে আশে-পাশে চিরদিন
আমাকে কোন দোষে জড়াতে চাও? ফেলে আসা দিন


বিবৃতিগুচ্ছ ৩

তাকে পেলাম; শূন্যে জড়ো-করা ছায়ায়
প্রকাশ এটুকু... সুকীর্তি অন্য কিছু নয়
দু-চারটি অনুনয়, বিনুনয়
আমাকে চিনে রাখে বনবাড়ি থেকে হেঁটে আসা
রূপবতী নিমপাতা, মেথিশাক-ডাঁটা
এই ধরো-- তালু হাতে আমাকে ক্ষুদ্রাকৃতি করো
দেখো, তিন দিনের সবুরে ফুটে কয় দিনের মেওয়া

নিজ দখল যে উইড়্যা যায়, পিঞ্জিরার কাছে আত্না

নিজের ভেতর অজস্র বিস্মরণ; সেও অধরা
বেঁচে থাকার শোক, আশা-কৃতি যেন কাল সামাজিক

গত শীতে আমারও প্রস্তুতি ছিল ঘনায়মান সন্ধ্যাভাব
ঝাঁক রোদ টেনে সন্ধ্যাকে হত্যা করতে পারেনি বলে
দুঃখ পেল চোখ ও নোখ
সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণে আমার বে-ভোলা স্মৃতিরা যেন
রক্তাক্ত ছায়া মোড়ানো কফিন

তাকে পেলাম; রহস্য-বনের ধারে উলটানো পাতায়
জন্ম-মৃত্যু এমন নিয়মে বাঁধা; ছুঁতে মন চায়...
প্রাণ খুইল্যা দিলেই বাঁচি জীবিতদের আত্নায়‌‌
 

সংকটের দিন

আমি কি ছিনিলাম তারে
কলবে যে নাম জিকির করে
আলিফ-মীম-নুনের ঘরে
সংকটেনি পাইমু ধারে
ও-মন জিগাইছ-নি তারে ।।


আমার হিসাব তোলায়-তোলায়
যে মহাজন দিলের কোটায়
চোখের ছায়া ভাসে আয়নায়
পড়শির ছায়া আরর্শিনগরে
ও-মন জিগাইছ-নি তারে।।


ধন-জন-বাড়ি-গাড়ি নিত্য দেখি কাড়াকাড়ি
একদিন যে চলে যাব, হয়ত বা তাড়াতাড়ি
আমি যদি অনলে পুড়ি, তুমি হইয়ো কাণ্ডারী
শেষ বিচারে কে করবে পাড় আমারে
ও-মন জিগাইছ-নি তারে।।


সদায় ভাবি কোন কর্মেতে রইলাম পড়ে মশগুল
এ-কোল, ও-কোল দুইকোল গেল; আরো যত ভুল
পইরা এখন বেফানায় আলিফ-মীম-নুনের তলায়
কোন পথে যাইমু আমি, আমার নিজের ঘরে
পুলসেরাতের পাড়ে... ও-মন জিগাইছ-নি তারে।।

 

গন্তব্যহীন পথ


অনেকেই বলে যা হবার তাই হবে,বলি কী হবে ভেবে 
তোমার সন্দেহের চেয়ে দেহের প্রতারণা রাজকন্যার মতো
শ্বাসের ভেতর অতি সহজে ক্রমবিকাশ টেনে নিচ্ছে শ্বাস
-হৃদয়? কেউ কী জানে; হাসির আওয়াজেও কিছু রহস্য--
কিছু গোপন ইচ্ছে থাকে ...যা প্রকাশ্যে লাজুক হলেও
শাখা-প্রশাখাগুলি মনে রঙ মেখে গোপনে গোপনে বেড়ে ওঠে
হাটে-মাঠে-ঘাটে সংসার সমাজবোধ স্বপ্নের ভেতর ঢুকে।

আমার হাসি-ইচ্ছে দুটিই ছিল ফুটপাতে, পার্কে ...কিন্তু ভিনদেশে
অজানা বাসস্টপে দাঁড়াই ম্যাপ দেখে গন্তব্য খুঁজি বাসের অপেক্ষায়
ইচ্ছেকে চুপ হতে বলি। কখনো মটরওয়েতে নেমে লংড্রাইভের ফাঁকে
উঁচাউঁচা দালান বিস্ময় জাগায়, মরা ডালপালা হাত বাড়িয়ে জানায়
বরফের দেশে তীব্র-প্রাণ-শক্তি নিয়ে আজও আমরা এত অসহায়


নিষেধ


কোন কথা আর সহজে বলতে পারি না
কেউ কিছু বললে কান পেতে শুনি
যা কিনা তুই ভাবতে পারিস্ প্ররোচনা
দুঃখের ধর্ষকামে তুই পড়ে যাস্ ধাঁধাঁয়
তখন নিজেকে বিব্রত মনে হয়

কথা বলার আগে মনেই থাকে না
কোন কথাটি আগে বলতে হয়
কোন কথাটি শুনলে তোর কেঁদে ওঠে হৃদয়
কোন কথাটি বলতে মানা ছিল
তোর সাথে মিশবার ইচ্ছায়...

তোর অনুপ্রবেশ জেনে; মন কিছুই মানলো না কৌশলে
কোন কথাই আর সহজে বলতে পারি না জলে-অনলে


 

অদৃশ্য


না-দেখা দৃশ্যর ভেতর সবই সুন্দর!

তুমি কি জানো? শোকপাখি আর স্মৃতিফুলের ঘ্রাণ
শুঁকে নেবার কোলাহল; অস্ফুট থাকার প্রথম কৌশল
যে হাতে ছড়াচ্ছে মলা-ঢেলা আঁশটে গন্ধ; অন্যহাতে
থেমে গেছে একান্ত জিজ্ঞাসা-বিব্রতবোধ; অসংখ্য ক্ষতে

অদৃশ্য ছুঁলে কেঁপে ওঠে ভূমি-তমালের ডাল
দুর্ভোগ শেষে তুমি ভেজা হাতে মরা জল

সে হাতে সবই সমাধান; কড়কড়ে পাউন্ডের ঘ্রাণ
দীর্ঘশ্বাস বুকেচাপি দেয়ালে পিঠঘেঁষে অনর্গল গাই গান
তোমরা দু-চোখ ভরে তাকাও; জলে মুখ লুকাও; এতো জল

এতো-এতো মুখ রেখে,
তাকে যে ঠকানো গেল না রসানো জলে

যশ


যশহাতে আথারে-পাথারে আর বলবো না
প্রাণবহ্নি নাচো বাতাসে গেঁথে রাখো ঘ্রাণ
গলা-পচা-গন্ধ দেখে প্রত্যক্ষ করো চোখে
অন্যসব রেখে খুলে দেখো স্মৃতিবিধুরতা

কিন্তু তুমি! হতে পারে কীনা এই ভেবে কবেই
সরে যেতে যেতে পূর্ণ করেছো অগ্নিদগ্ধমুখ
ক্রমঈর্ষাবশে ইচ্ছেগুলোকে ত্রাণতহবিল ভেবে
বহুবার বিসর্জন দিতে চাচ্ছো বুকে... আক্রোশে

ভাব


শীতরাতে


স্বতঃস্ফূর্ত ঘুম কেনো জানি একা শুতে পারে না পুরনো গল্পের
ভেতর, পারিপার্শ্বিক নারী! জানতে না বুঝি? খরা-দেহে কষ্টফুল
কিভাবে খেয়ে ফেলছে হৃদয়; আহ্! রাত্রিপোহানোর তাবৎ মহিমা
মনে হয় শীতহীন সহস্র রাতে... ভ্যাপসা গরমে সচরাচর
ঘুমোতে পারে না নাক টেনে টেনে মিশে যেতে থাকে চাওয়া,লালায়
বারবার জেগে ওঠা গোপনস্মৃতি চাপা পড়েনি উল্টো বহু ছলাকলা
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনে, ঠিক কতটুকু দূরে প্রায়ান্ধকারে
পান করা যাবে স্বপ্ন-টপ্ন ছাড়া তামাক-চুরুটসহ আপাদমস্ত দেহ-বর্ণমালা
অন্ধকার ঘরে নীরব প্রত্যাশা অনবরত ফিরে, দেহের চাওয়া মানে বোধ
বোধে-উভয়চর, প্ররোচনা! উদাসীন রূপ ধরে বিচানায় পায়চারি করো
মশারির উপরে কাঁথা-বালিশ-মাথা, জরাঘুমে তাকে চিনিনি অথচ
উষ্ণশ্বাসে...ম্পর্শে সবই সুন্দর! ইশারা নির্ভর; খাপে বিনয় ধরি না চেপে
শুধু একদিন ঘুমের ভেতর নিজের আগ্রহকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরেছি
কিন্তু অসহায় সীমানা পেরিয়ে ফিরছে কঙ্কালের মতো দেহের কাণ্ডকলাপে

ভান ধরা জল


লোভ, জেগে আছো জলে কৃষ্ণচূড়ার ডালে
এ-মালিকানায় কে হলো ব্যাকুলতায় নরম-ছরম
সে যা বোঝাল, মর্মকথা উৎকন্ঠা ওফ্
পালাতে পারি না
সত্য কথা শুনতে শেষ পর্যন্ত কারোই ভাল লাগবে না
তাই আমতা-আমতা জটিলরহস্যে এই প্রথম তোমার
সামনে মিথ্যে বললাম, বিশ্বাসভঙ্গের দায় খুলে নিতে পারো
কিন্তু চাপা দাঁতের ফাঁকে এতো জল রেখে মাটি টিপে টিপে
বানাতে পারো না জল পাত্রের ছায়া

তুমি তো জানো, কারো বুকে দৃষ্টি এঁকে নেয়া চোখের ব্যাপার
দৃষ্টি যাবে না কারো বন্ধনের নেশায়, এমন সুযোগও নেই আজ
দু
চোখের ফাঁকে... উত্তরদিগন্তে রাত্রি অভিপ্রায় আজিকার নয়
তবু উদাস দৃষ্টি ছেনে ভাব জল সরিয়ে তারা আজ কার বাড়ি যায়

পাহারা


ঘুমানোর জন্য নিঃশব্দ জায়গা খুঁজে
দীর্ঘ বাসনার ঠিক পূর্বে আমিও ঘুমাই

এরকম দিনে তুমিও জেগেছো; সত্যি কি তাই
রাত্রি যত বাড়ে আহা! আমিও সাজি রাত্রি সাজে

দেহের ভেতর সারাক্ষণ ক্ষরণ...বেফানা শরীর
শব্দ শুনলে ঘুমোতে পারি না, তাও কী কল্পনা

জীবন কেটে যাচ্ছে তিক্ত অচেনা স্বাদে তাও বলবো না
এতো যে বলো এড়াতে পারবে না দায়; র্নিঘুম রাত্রির

ঘড়ির কাঁটার শব্দ শুনে গুনে রাখি ঘুমের জরা
সারাক্ষণ আমাকে ঘিরে রাখে সুমধুর পাহার

 

অচেনা ভয়


যেভাবে আছি বেশ ভালোই শুধু দেখাশোনা
কি আর বলিব পাশাপাশি বুঝে নিলেই হবে
নানান প্ররোচনায় ভাল থাকাটুকু বিগত দিনের
যা কিছু ভাঙার তাই ভাঙবে এরকম প্রশ্নে তোমার
হৃদয় হেসে-খেলে যায়
শূন্যলোকে মুখোমুখি দাঁড়ালে ঠার বোঝে স্তম্ভিত হই নতুনমুখে
অজ্ঞাত স্থানে দাঁড়ালে গন্তব্য ভুলে যাই নির্বাসনবশে
দু
জনের নিজস্ব অধিকার করাত কলের পাশে

তারপর?... যেভাবে আছি চুপিসারে ভালোই আছি
অপেক্ষা কেটে গেলে বুঝতে পারি না-ফোটা পাথর
হতাশার চোখে থাক্ আরো কিছু দিন বেদনাবিধূ
তুমি সহজে ফিরবে না জেনে দৃষ্টি মেলেছে কল্পনা
সেও সমরূপে ফিরছে না জেনে চেনা মুখগুলি আজ
লজ্জা ও ভয়ের কাছে বড় অচেনা

পাত্র খুলে পড়ে যায় সব


পাত্র খুলে পড়ছে সব সম্ভবত স্বাদ-আহ্লাদ সাথে কিছু গোপনতা, আমিও
জানি না কতটুকু পাবে ঘ্রাণ তার সাথে মিশে থাকা ক্ষমতা অক্ষমতা।
অপেক্ষা কেবল রয়ে যায় পাত্রের গায়ে,ফলে যদি চলে আসে গ্রহণের স্বাদ
খুলে যাওয়া পাত্রের আগে, আমি সেই স্রোত বেয়ে অনুসরণ করে যাব
আলপথ বেয়ে। তাই সহসা গলে যায় তৃষ্ণার্ত ঠোঁট অপেক্ষা কেবল থাকে
শেকড়-বাকড়ে। সবাইতো সময়ের কাছে নতি স্বীকার করে, আস্তে আস্তে
বয়সও বাড়ে;
আমি পড়ে থাকি একা ভুলের ঘোরে ভূগোলের পরে

ওহো তুলোমেঘ

 

আজ তুমি দীর্ঘশ্বাস কুড়াও বরফজলে

ওহো তুলোমেঘ একটু পরে এসো, উড়ে এসো

ঘনরঙে ছুটে এসো; এসো ধুলোকণা সেচে

বাতাস ঘুরে এসো; দেহকোষ বেয়ে এসো

স্বপ্ন উড়ে যাও বরফের মায়ায়

রোদজলে হেঁটে এসো, খোলা আকাশের নিচে

এসো হাসিমুখে...

না-ছুঁলে আমিও হিম হই আশা-শিহরণে

 

 

কোন পথ ধরে যাব


অচেনা পথে ঘুরে-ফিরে আসি ফেরার কৌশল জেনে প্রত্যাবর্তনে খুঁজি
স্মৃতিপথটুকু ক্লান্ত পালকের কাছে তার চিরায়ত মন্ত্রে আপ্লুত করে দেয়
হৃদপিণ্ডসহ তৃষ্ণার্ত গহব্বরে, তাই শীতপাখির মতো খুঁজি ভোরের রোদ
পোহাবার ডানা
যে-পথ ধরে চলে গেছে কথা অরণ্য সবকিছু গ্রাস
করেছে
এখন শাদা পোশাকের দল ভাবি দৃশ্য যখন বার বার ফিরে
আসে তাই ওই পথ ধরে হেঁটে যাবো গ্রহণের আগে ও পরে

নিদ্রাপাঠ


শ্বাসের ভেতর আড়াল হয়ে যাও যেমনি নিঃশ্বাসের অতলে ডুবে থাকে
প্রশ্বাসের ছায়া,
বিরহের করুণ সুর
ভাবনার গহ্বরে জেনেছি তুমি হবে
আতশি কাচ।তা না হলে তোমার সামনে দাঁড়াতে এলে আমার মুখ কেনো
আটকে যেতে চায় শিকে, নিমগ্ন হতে চায় প্রতিটি কোষ যেন খুলে পড়বে
এখনি তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ হতে ভাঁজে। আর এখন তুমি আড়াল
হতে শিখেছো মেঘের কাছাকাছি হেঁটে, তবুও স্মৃতি যত দুলছে দূরবনে;
দূরের বাতাসে।একসময় নিকটে ছিলে, এখন আড়াল হলে সময়ের ব্যবধানে।
তাই কথার ইঙ্গিতে যতটুকু প্রাজ্ঞতা শিখেছো,
তারচে
বেশি অজ্ঞতা রেখে
দেয়া যাবে কথার তোড়ে নয় গূঢ় নিদ্রাপাঠে

 

আমি আর ছায়া

আমি আর ছায়া একই স্মৃতি মাড়িয়ে একসাথে হাঁটি
আমি আর ছায়া জঙ্গলবাড়ির আশীর্বাদে ধূলি ও খুঁটি

সে আর আমি আগুন পোড়ানোর গল্প লিখে যাই

সুখের পেছনে হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত আমি আর ছায়া

ছায়ায় হাত দিয়ে দেখি; সে আর আমি একই কায়া!

 

 

 

দূরত্ব


স্নানঘর সম্পর্কে আমার কৌতূহল খুব কম আর জল পড়ার শব্দ শুনতে
কার না ভালো লাগে; কখনো বৃষ্টির শব্দ ঘুম পাড়িয়ে দেয়,
অনিচ্ছায়

কখনো বৃষ্টি আর জল পড়ার শব্দ নৈঃশব্দে বাজে

যখন ভাবি বালতি আর মগের জল-ব্যবধান আড়াই ফুটের বেশি হবে না
আর ঝরনার চোখগুলো আমার দিকে চেয়ে আছে টলমল চোখে, কিন্তু জল
আর আমার দূরত্ব মাত্র দেড় ফুট তারচে
বেশি হবে না