একসাথে মিশে থাকার প্ররোচনা


ছায়ার ভেতর আজো আমি বেঁচে আছি! তা যদি জানতে চাও জিজ্ঞাসা করতেই পারো সংকোচ ছাড়াই
জিজ্ঞাসা করলেই কিন্তু ভেবো না একসাথে মিশে থাকার প্ররোচনা; কারণ একসাথে মিশে থাকার মানে আলো-বাতাসের শ্বাসে নিজের ভেতর নিজেকে খোঁজা...। ফোনালাপে ফাঁকে তোমরাই ভিনদেশী বলে সম্ভোধন করো! হাসির ছলে বলো প্রবাসী। তোমাদের বারবার বলি আমাকে প্রবাসী বলো না, বুকে ব্যথা পাই

ক্লান্ত পা-দুটি আজো আমাকে নিয়ে চলে উজানে,পূবালি হাওয়ায়
স্বীকার করি আমিও হয়েছি ভিনদেশী বর্ষায়,
অন্যচোখের আভায়

দেহপোড়া গান


যদি শুকনো পাতায় স্মৃতি মেলে ধরো
আমি তবে স্বর্ণলতা গাছের মর্মর গিলে
তৃণলতায় বসে গেয়ে যাব গান

দেখবো কার মুখ থেকে বেরোবে লোনাজল
কারা পুড়ে গেছে আগে

কার জন্য তোমার দেহ পোড়ে অবিরত

কান্নাকাটি জুড়েছিল তবে কার লাভস্টোরি


পথে পথে ছুটিয়ে বেড়ায় যে স্মৃতি, বাউরি বাতাসের ভেতর কান্নাকাটি জুড়েছিল তবে কার লাভস্টোরি! কেনো যে নিঃসঙ্গতা ঘুমায়নি সারারাত; প্রকৃত সত্য বাহন কি চিনে রাখে কেউ? জটিল জীবনকথা আর অঝোর-শ্রাবণ; তোমাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখার টান-তেষ্টা নাই বলে পৃথিবীর বেঁচে থাকা ঠিক কি-না কে জানে? আমার সকল আয়োজন অল্পকালেই বেঁচে ছিল কারো কারো হাসিফুলের ছায়ায়। তোমার ছায়া ভরে আমার কাঙ্খা উড়ে যায় দূরে
যদি কখনো সাহায্য চাও, বলো ধন্য হবে পরানখানি



এখনও আমি স্মৃতিভার নিয়ে মিলামেশা করি, লেখার টেবিলে
ও-হাসিফুল,
তুমি ঝরে পড়ো আধো-আধো চেনা দৃশ্যে-মুকুলে

পা


পা ডুবিয়ে রাখি কাদায় টেনে নাওফলে
ধারে কাছে জমেছে শ্যাওলা; খুঁড়ে দাও তল
সাতরঙাজলে
ডরভয় জাগে তবু কেটে ফেলি জল
চুলে বেণী বাঁধা নেই, তবু বেড়ে ওঠতে দেখি
হাত পায়ের নোখ
যদি টেনে নাও জলে বাঁধা পড়বে তল
তাই গোপনে ডুবিয়ে রাখি কাদা-জলের ফাঁকে
তোমার অর্ধেক পা

 

আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি
 

চাইলেই সব কিছু হাতের নাগালে আসে কি? যেমন, নোনা জলের স্বাদ আফালি-বাতাসের ঘ্রাণ বুকটান। ধ্যানে বসে রাশি গুনলেই দেখি কোমল বুকের ভেতর কে যেনো বসে আছে আনমনে; চোখের পরতে গুছিয়ে রাখছে শেষ বারের মতো কারো দৃষ্টি অনুভব; তিনকোঁচা শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রাখছে খরাস্বপ্ন পাথর ফুলের ঘ্রাণ।কঙ্কনের শব্দ টনটন করে বাজলেই আমার বুকে গাঁথে তীর ও ধনুক। আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি!



আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি! সে-কি তা জানে?
চোখের ভাঁজে লুকানো যত স্মৃতিকথা এখন আর পড়ে না মনে

বিরামহীন বুক


কার ইশারায় শঙ্কিত হওপুঁতে রাখো হাড়গোড় অন্তিম হিমে আমি
পাহাড়ের গা ধরে হেলেদুলে খাড়া হতে থাকি তুমি মুখ ঢাকতে গিয়ে
দৃষ্টি খুলে রাখো দূরে চোখ তুলে ধরো দেখো কতটুকু গুঁড়ো গুঁড়ো
বৃষ্টি হলে রাত্রি কৌতূহলে রাড়ে যদি ফিরে এসো একসাথে ডুবে যাব
ঝরনার জলে দেখবো কত স্মৃতিচিহ্ন জমা রেখেছো বিরামহীন বুকে

 

বুক খোলা দেহের ত্রাস
 

সার সত্যকথা নিজেদের বিশ্বাস, জানে কি ভরা-ছায়া-মরা-গাছ; একান্ত ব্যথা বিশ্বাস নিজের সাথে মানিয়ে নেয়া কি সহজ? হাড়ের সম্পর্ক বেমানান বলবো না, হতে পারে দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ দৃষ্টিভ্রমসহ কঠিন কাজ। স্বতই আমি পাঠ নিচ্ছি বুক খোলা দেহের তাস! সকল সঙ্গ করিয়াছি ত্যাগ; সকলিই জানতে চায় নদী কেনো এতো-এতো বাঁক নেয়? ক্ষণমুহূর্ত প্রহর নিজ জিজ্ঞাসার ভেতর নিঃশব্দতা প্রিয়বোধ ঘাসফুলে বেঁচে থাকে আশা, ইচ্ছেমৃত্যুসহ জানার হৃদয়
 


ফিরতে ফিরতে আর ফেরলো না বাঁকানো সার সত্যকথা নিজেদের বিশ্বাস
কথা ও ঘটনা তুমিও কি জেনেছো?
কেনো হয় বুক খোলা দেহের ত্রাস!

বিষফল


তলিয়ে যাবার ভয় নেই, তবুও জলকলহের আগে
কুটে-কুটে তুলে নাও আরো কিছু জল; জ্বলে পুড়ে
তাপভষ্মদেহতোমাকে ছুঁলে বৃষ্টি শুকিয়ে হবে মৃতদেহ কংকাল
তাই রোদফুল কুড়োতে যাব কি না ভেবে জাগে কৌতূহল
আমাকে জাগিয়ে তোলে শতবর্ষের বেদুইন সকাল
হাতে তুলে রাখি আধোজাগা স্বপ্ন;
তুমি ফিরবে না কেবল

ঘোরবৃষ্টিদিনে চোখে জল নেই;
দিকে দিকে ছড়িয়েছে বিষফল

 

আমার সাথে মিশে যাচ্ছে দিন বদলের হাওয়া
 

মনে মনে সেও মিশেছে যেন দিন বদলের হাওয়া কেনো যে আমাকে তাড়াতে চাচ্ছো বলো? বিষয় স্থিরতা

অ-ঘুচানো অসারতা এসো, বাঁধন টুঁটে ছাপিয়ে ধরি চেনা অচেনা গন্ধ, সবরকম হাহাকার আমাকে জাগাতে চাও তুমিসহ শত-শত আঘাত; তাড়াতে চায় কিছু কথা, কিছু ঋণ ইচ্ছের হাত! কান পাতলেই শুনি মরা সুখে কে যে মন টেনে ধরেছে আশায়। সবুজ ঘাসের ভেতর নিজেদের ইচ্ছেকে পাশাপাশি রেখে সংগোপনে বলি সুখদীর্ঘ যাপনের কথা



আমার পাশ ঠেলে পাড় হতে চাচ্ছো তুমিসহ নিজেরি জীবন-ধারাপাত
এতো এতো চেনা জানার ভেতর কেনো জাগছো না তুমি ইচ্ছের হাত

 

২০শে জুলাই ২০০৫


তোর কান্নার জলকণাগুলো থরথরিয়ে কাঁপছে
চশমার ফাঁকে
চুষে নিতে পারেনি মোলায়েম গালের তিল
আমি কখনো তোর কান্নামুখ দেখতে চাইনি
তাই অশ্রু ছাড়া আর কিছু গোপন করিনি

তবে আজ কেন তোর চোখে গড়িয়ে পড়বে জল
মুছে দিতে মানা করলে, ছুঁড়ে দিলে অসংখ্য ফরিয়াদ

 

দেহ মিনার ছুঁয়ে দেখো
 

আমাকে তাড়াতে চাও ঘুরানো কথায়! নীলিমায় কেনো যে বাঁধো না অন্ধসময়, তবুও সুরে, বে-সুরে বাজো দেহের মায়ায়। বেঁচে থাকা মানেই কি আশা-যাওয়া-ভালোবাসা-টাসা; ছায়ায় রোপণ করা কিছু স্নিগ্ধমোহ তুলে রাখার ছলটাও হতে পারে আত্নঘাতি সিদ্ধাস্ত, স্থির অবসাদ! তবুও জটিল হাওয়াদের আঘাত কি করে যে ছুঁয়ে দেখে বোবামন, দেহের মিনার! এই যে অতীতটা কেনো যে মিশে আছে চার পায়ে হয়তোবা ভালোলাগা গেল বর্ষা জলে। মনধূসরতা ছুঁয়েছে কি ঘাসপাতা, তারও পূর্বে পেয়েছো তো নরম মাটির ঘ্রাণ



আমাকে তাড়াতে পারো জন্মাবধি, তাড়াতে পারবে কি কবরে?
দেহ মিনার ছুঁয়ে দেখো সরলতায় আমি হারাইনি বেশি দূরে

উষ্ণফুল


দেহের উষ্ণফুল! এতো দিন মনে হতো
সেও দ্যুতিময়; হয়তো সীমিত আকরে
অভিজ্ঞতাগুলো ঠুকে রাখে স্থিতমনে আর-
চুপিচুপি আবিষ্কার করে কীভাবে
দেহে উষ্ণফুল ফুটে

কিন্তু তুমি পূর্ণতা সন্ধানে দেহের আকর গিলে পড়ে গেলে ফাঁদে
অপূর্ণতা ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে যাচ্ছে দেখো শেষ বিকেলের রোদে

 

সময় ফেরানোর চেষ্টায়


অপেক্ষা আর সময়ের মুখোমুখি সংঘর্ষ... সে-তো বারোমাসি ফল। অপেক্ষা-অনিশ্চয়তা অধিক নীলাক্রান্ত হতে দেখে মনে হল অপেক্ষা তো সময়েরই প্রেম। সময়ের ফাঁদে পড়ে রাধামন উচাটন... যাই হউক 'প্রেম মন্দ কিছু নয়' দুটি মনের গূঢ়ভাব কোলাহল। প্রিয়পরাজয় তাকেও ছুটি দিয়েছি অনিচ্ছাভ্রমে আগতযৌবনে; ভালোই আছে সে অনাথ মন



তুমি অপেক্ষা করো, আমি চেষ্টায় আছি দেখি ফিরেনি সময়
মন তুমি কেনো চাও না,
ফিরে আসুক আবার প্রিয়পরাজয়

 

স্বস্থি


শীত রাতে তোমার খোটা খেতে খেতে
স্বস্থি এমন সর্বভূক হলো
যত ভাবছি ততই ভাল লাগছে, কলঙ্ক!

ভাবছি নামমাত্র চোখ বন্ধ করে, পার্কে

প্রকাশ্যে আমার জিজ্ঞাসা শ্বাসরূদ্ধ হলে
বলার অপেক্ষা, কিছুই থাকে না...
কথকতা তাও অকার্যকারিতা

শীতরাতে তোমার খোটা খেতে খেতে
শীতের তীব্রতা সেও চায় দেওয়ালে শোতে

দূরে ঠেলে দিয়ো না আঘাত


নাহ্ চোখের ভেতর আর বিশ্বস্ত থাকা গেলো না! তবুও বন্ধচোখে আস্থা খুঁজি, খুঁজি সংশয়।হঠাৎ ছুটে আসা কান্নারা সতর্কভাব নিয়ে আশা জাগায়। বললাম-- ধার দাও, যতটুকু চাও, ভালো থাকা আমার। না-হলে যত্নে-প্রযত্নে কান্নাদের প্রাণ ফোটাও। আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ো না আঘাত। তোমার নাম ধরে বাঁচি! তুমি জলফুল কি-না কে জানে...
 


না-বললেই কি দূরে ঠেলে রাখা যায় দ্বিধা... দেয়াল ঘেঁষা বই-পত্তর

পাশে দাঁড়ানো নারী ইচ্ছায় জাগে কি, জাগে না; ভালোবাসা-টাসার

 

সংঘ্ষ


অসাড় হাওয়ায় কী অদ্ভুত কাণ্ডে এসব ঘটল
কাল ওই ধাক্কাটা সহসা বেগে ব্যথা পেল
কী অলক্ষণে তা স্থানচ্যুত হল
শেষ পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে পায়ের সাথে
জোড়ায় জোড়ায় শব্দগুলো উপরে উঠল
শরীরে হাত দিয়ে ধাক্কাটা অনুভব হয়নি
কোথায় হারালো-
যে যাই বলো; সেদিন কেনো এমন হল
ধাক্কাটা বুকের ভেতর ঘূর্ণির মতো নাড়াল

শেষদেখা, হালকা থাকো আশায়


শেষ দেখা! বিকেলের দিকে একা একা হাঁটছে বাতাসের আঁচে; আশা দিলেই তো হাসে এমনই ভাবখানা, আমার ব্যাখ্যা কখনো চেয়ো না, কারণ সকল কথারা মিথ্যে হয় নেপথ্যভাষায়।প্লীজ! আর আমাকে আগের মতো দূরে থাকতে বলো না। ডরে আমি আর ঈর্ষাকথা হবো একটানা চুপচাপ, বলি ইচ্ছারা দুশ্চিন্তা করো না; হালকা থাকো সকল আশায়। আমার যত ভয় খুলে রাখছি তে-ভাগায়... খালি বিছানায়



আমাকে বুকে রাখো, যদি কল্পনায় পাল্টাতে পারো আক্ষেপ
অনুভব করো জলঠোঁটে,
যদি সরে যেতে-যেতে বাড়ে সন্তাপ

 

বিচরণ


দূরত্ব মেপে দেখো নির্জনতা আগে-পিছে
তারচে
কম হলে কার কী যায় আসে
যতটুকু মিশ্রণ হলে নিরাপদে থাকা যায়
দ্রবণে নয় কিন্তু দ্রাবকের আসে-পাশে
আরো বেশি হলে ভালো, দেখবো তোমার
দেহের ভাঁজে কার দেহ লুকায়? ভয় নেই
রক্ত চুষে বেড়াবে রক্ত কণিকায়

এই যে টিপ দিলাম রিমোটকন্ট্রোল


বাল্বের পাওয়ারটা শূন্যের ঘরে রেখে বালিশে মাথা পেতে যখন ঘুমোতে যাই রিমোটকন্ট্রোলহীন ভাবে স্মৃতিরা অন্ হয়ে যায়, মনে হয় বুকে ভেতর জ্বলছে 'হাজার ভোল্টের তার'... চন্দ্রিমারাতে আমার ছায়া আমাকে নিয়ে চলে, আমি একা-একা হারাতে চাই ছায়াহীন রাতে... কিন্তু পারি না। শোকোচ্ছ্বাসের ভেতর যে কান্না জমে, আমি তাদের ভালোবাসায় বশ করি, বসাই কোলে-কাঁখে। স্ববশে আসা যত কথা... দীর্ঘশ্বাসেরও একটি ঘ্রাণ থাকে



দীর্ঘশ্বাসের ঘ্রাণ আর ঘরভর্তি অন্ধকার না-হলে; ঘুমোতে পারি না
এই, এই যে টিপ দিলাম রিমোটকন্ট্রোল। বন্ধ হও,
বন্ধ হও কান্না

দৃষ্টি


চেয়ে থাকলে চোখের সৌন্দর্য বাড়ে না
দৃষ্টির অধীরতা নিয়ে কাঁপছে ভুরু
দৈনন্দিন চোখে লুকিয়ে থাকে অশ্রু
সন্তাপ; অর্থহীন উন্মাদনা
চোখ তুলে দেখবে না কেউ
জল গলে গলে কেন বাড়ছে জলের ফেনা
না-দেখার উত্তাপে কতটা বাড়ছে পরস্পর কল্পনা