কথন ৪গুগল
রাগিব হাসান
http://www.ragibhasan.com
ব্রিন আর পেইজের কথা
সের্গেই
ব্রিন আর ল্যারি পেইজ গুগলের প্রতিষ্ঠাতা দুই টগবগে তরুণ। তাঁদের পরিচয় হয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করার সময়, আর ঐ সময়েই দুজনে মিলে পেইজর্যাংক নামের একটি অ্যালগরিদম লিখেন। পেইজর্যাংকের মূল লক্ষ্য ছিলো ইন্টারনেটের ওয়েবপেইজগুলোর সম্পর্ক বের করা, কোনো পেইজের গুরুত্ব বের করে ঐ অনুযায়ী একটা ক্রম বের করা। ব্যাস, এই পেইজর্যাংক অ্যালগরিদমটিই সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে গুগলের সূচনা করে দেয়। আগের সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোন কোন ওয়েবপেইজে অনুসন্ধিত শব্দগুলো আছে, তা বের করতে পারতো, কিন্তু ওয়েবপেইজগুলোর র্যাংকিং ভালো ভাবে করতে পারতোনা বলে সার্চের ফলাফল ভালো আসতোনা।
(ছবিতে
বামে
সের্গেই
ব্রিন,
ডানে
ল্যারি
পেইজ।
ছবিটি
২০০৬
সালের
গুগল
জিও
ডেভেলপার
ডে
তে
ডেভিড
ম্যাক্লুরের
তোলা,
এবং
ক্রিয়েটিভ
কমন্স
লাইসেন্সে
প্রদত্ত্ব)
গুগল
কথন ৫কর্মীরা যেখানে রাজা
গুগলের
কর্মীদের
সাথে
কাজ
করতে
করতে
অল্প
দিন
পরেই
যেটা
লক্ষ্য
করি,
সবাই
প্রচন্ড
কাজ
পাগল।
দিনে
৮
ঘন্টা
কাজ
করার
জন্য
গুগল
পয়সা
দেয়।
কিন্তু
গুগলের
কর্মীরা
অফিসে
থাকে
আরও
অনেক
বেশি
সময়।
কাজে
আসার
ক্ষেত্রে
ধরাবাঁধা
সময়
নেই,
যে
যার
মতো
সময়ে
আসতে
পারে।
অফিসে
প্রথম
দিনেই
আমার
বসকে
প্রশ্ন
করেছিলাম,
কয়টার
সময়
আসতে
হবে।
রিচার্ড (আমার
বস)
বললো,
তোমার
যখন
ইচ্ছা
তখনই
আসতে
পারো।
রিচার্ড
আসতো
সকাল
নয়টার
সময়,
আর
যেতো
বিকাল
ছয়টায়।
আমি
অবশ্য
নয়টায়
আসতামনা
প্রতিদিন,
যেতাম
সাড়ে
নয়টা
বা
দশটায়,
আর
বেরুতাম
অফিস
থেকে
সাড়ে
ছয়টা
বা
সাতটার
দিকে।
আমাদের
গ্রুপের
অন্য
সদস্য
ব্রায়ান
এগারোটার
দিকে
এসে
থাকতো
রাত
নয়টা
সাড়ে
নয়টা
পর্যন্ত।
কাজে
ডুবে
থাকার
এই
সাধারণ
প্রবণতাটার
পেছনে
কারণটা
কি,
বুঝতে
শুরু
করলাম
কয়েক
দিন
পর
থেকেই।
সিলিকন
ভ্যালিতে
কাজ
পাগল
মানুষদের
কষ্টের
ফসল
হিসাবে
অনেক
প্রতিষ্ঠান
গড়ে
উঠেছে,
কিন্তু
তাদের
মধ্যেও
গুগলের
কর্মীদের
অফিসে
পড়ে
থাকার
আপ্রাণ
চেষ্টাটা
বেশি।
আসলে
এর
পেছনের
সবচেয়ে
বড়
কারণ
হলো
অফিসের
পরিবেশটাকে
অসাধারণ
করে
রাখা।
শুরুতেই
বলা
যায়
অফিস
ও
তার
আসেপাশের
স্থাপনা।
আমার
অফিসটার
পাশে
ল্যান্ডস্কেপিং
করে
ফোয়ারা,
জলপ্রপাত,
আর
মিনি
সাইজের
লেক
বানানো।
ফুলের
বাগানে
গুগলের
লোগোতে
ব্যবহৃত
মৌলিক
বর্ণের
নানা
ফুল
সাজানো
আছে
বিচিত্র
নকশায়।
প্রথমবার
গেলে
পার্ক
বলে
ভ্রম
হতে
পারে।
অফিসের
ভেতরে
আবার
খাবারের
ছড়াছড়ি।
আগেই
বলেছিলাম
একবার,
অফিসের
প্রতি
১৫০
ফুট
পর
পর
একটা
মাইক্রোকিচেন
রয়েছে।
এর
মানে
হলো,
দুই
তিনটা
বিশাল
ফ্রিজে
ভর্তি
রয়েছে
খাবার
থরে
থরে -
স্যান্ডউইচ,
চকলেট,
কম
করে
হলেও
১০-১৫
রকমের
ফলের
রস,
ডাবের
পানি,
কোক/পেপসির
ক্যান,
স্পেশাল
মিনারেল
ওয়াটার,
আর
এনার্জি
ড্রিংক।
পাশের
টেবিলে
বাদাম,
চিপস,
ফল,
বীফ
জার্কি (মাংশের
শুটকি),
এরকম
অনেক
কিছু।
আর
কফি
তো
আছেই।
সবই
ফ্রি -
যার
যখন
ইচ্ছা
এসে
খেয়ে
যাচ্ছে,
বা
দু-হাত
ভর্তি
করে
অফিসে
নিয়ে
যাচ্ছে
ভুরি-ভোজনের
জন্য।
এতো
গেলো
কেবল
মাইক্রোকিচেনের
কথা।
প্রতিটা
অফিস
ভবনেই
রয়েছে
একটা
করে
ক্যাফে।
পুরো
গুগলপ্লেক্স
এলাকাতে
ভবন
১৬টা,
তার
মানে
বুঝতেই
পারছেন,
ক্যাফের
সংখ্যাও
১৬।
আর
ক্যাফেগুলো
মোটেও
গতানুগতিক
নয়,
একেকটা
ক্যাফে
একেকটা
ধাঁচে
সাজানো।
যেমন
আমার
অফিসের
ক্যাফের
নাম "অফ
দা
গ্রিড",
ওখানে
একটু
অন্য
রকমের
বিচিত্র
প্রকারের
খাবার
দিতো।
নিজের
ইচ্ছে
মতো
সালাদ
বানিয়ে
নেয়া,
সব্জ্বীর
নানা
রান্না,
আর
মাংশের
কিছু
আইটেম।
প্রায়
দিনেই
অদ্ভুত
সব
খাবার
আসতো,
যেমন
ক্যাঙ্গারুর
বার্গার,
হরিণের
মাংসের
কাবাব,
এরকম।
সপ্তাহে
একদিন
বারবিকিউ
হতো
বাইরে,
ঐ
যে
লেক
আর
জলপ্রপাতের
কথা
বলেছি,
তার
পাশে
চাদর
বসিয়ে
পিকনিকের
মতো
করে
খাওয়া
চলতো।
আর
সকালে
প্রতিদিন
থাকতো
ডিমভাজি
সহ
নানা
রকমের
নাস্তা,
বিকেল
৩টার
সময়
আবার
বিকালের
নাস্তা
দিয়ে
পেট
পুজার
ব্যবস্থা
থাকতো।
পাশের
ভবনেই
ফাইভ
নামের
ক্যাফে,
প্রতিটা
খাবারে
ঠিক
৫টা
করে
উপাদান
দিয়ে
তৈরী।
আরেকটা
ক্যাফে
ছিলো
ইউরোপীয়
খাবারের।
আরেকটা (প্যাসিফিক
ক্যাফে)
হলো
চীনা,
জাপানি
সুশি
ও
অন্যান্য
খাবারের।
বিল্ডিং
৪৪এর
ক্যাফেটা
ছিলো
স্লাইস -
ওখানে
রয়েছে
দুর্দান্ত
ফলের
রস
আর
স্মুদি (লাসসি
টাইপের)।
তবে
সব
কিচ্ছুকে
ছাড়িয়ে
যায়
গুগলপ্লেক্সের
কেন্দ্রস্থলের "চার্লিজ
ক্যাফে"।
গুগলের
প্রথম
শেফ
ছিলো
চার্লি,
তবে
বেতনের
বদলে
শুরুতে
গুগলের
শেয়ার
পেতো
বলে
চার্লি
এখন
মিলিয়নিয়ার
হয়ে
রিটায়ার
করেছে,
তার
নামেই
এখন
রয়ে
গেছে
ক্যাফেটা।
বিশাল
ফুটবল
মাঠের
সাইজের
ঐ
ক্যাফেতে
৫টা
সাবক্যাফে
ছিলো -
নমস্তে
হলো
ভারতীয়
খাবারের,
পাশেরটা
জাপানী
খাবার
আর
ইতালীয়
খাবারের
ক্যাফে,
তার
সামনেরটা "ইস্ট
মীটস
ওয়েস্ট"
অর্থাৎ
ফিউশন
ধাঁচের।
এছাড়াও
ছিলো
মেক্সিকান
খাবার
আর
গতানুগতিক
মার্কিন/ইউরোপীয়
খাবারের
দুটো
সাব
ক্যাফে।
এগুলোতে
প্রতিদিন
দুপুর
আর
সন্ধ্যাতে
ভীড়
হতো
প্রচন্ড।
পুরোটা
অবশ্য
প্রচন্ড
সুশৃংখল,
সবাই
ট্রে
নিয়ে
লাইন
বেঁধে
খাবার
নিয়ে
টেবিলে,
অথবা
বাইরের
মাঠে
বসানো
পিকনিক
টেবিলে
চলে
যায়।
প্রতিদিন
কম
করে
হলেও
হাজার
চারেক
কর্মী
এখানে
খেয়ে
থাকে।
ভারতীয়
বা
চীনারাতো
মনে
হয়
বিকেল
বেলাতে
পুরো
পরিবারের
বাপ,
মা,
বাচ্চা
কাচ্চা
সহ
গোটা
দশেক
লোক
সাথে
নিয়ে
আসে।
উল্লেখ্য,
প্রত্যেকেই
অতিথি
নিয়ে
আসতে
পারে,
কোনো
বাঁধা
নেই।
আর
খাওয়া
যে
ফ্রি,
তা
তো
আগেই
বলেছি।
গুগলের
এই
খাওয়ার
অঢেল
ব্যবস্থার
কারণে
নতুন
আসা
গুগল
কর্মীরা
হাপুস
হুপুস
করে
খেতে
থাকে,
নিজের
চোখে
দেখা।
"গুগল
ফিফটিন"
বলে
কথা
চালু
আছে,
গুগলে
ঢোকার
প্রথম
দুই
সপ্তাহে
নাকি
কর্মীদের
ওজন
বাড়ে
১৫
পাউন্ড
অন্তত।
শুধু
কি
খাওয়াই
মূল
আকর্ষণ?
মনে
হয়
না,
কারণ
গুগলের
অন্যান্য
ব্যবস্থাও
চমৎকার।
চুল
কাটা
দরকার?
কোন
সমস্যা
নেই,
গুগলের
চুল
কাটার
মিনিবাস
আছে
একটা,
সারা
দিন
অফিসে
অফিসে
ঘুরতে
থাকে,
জানালা
দিয়ে
বাইরে
দেখতে
পেলেই
নেমে
গিয়ে
চুল
কেটে
ফেলা
যায়।
গাড়ির
অয়েল
চেইঞ্জেরও
ব্যবস্থা
আছে।
আর
ঐ
রাজভোগ
খেয়ে
ওজন
বাড়লে
ভুড়ি
কমানোর
জন্য
রয়েছে
জিম।
বাচ্চাদের
রাখার
জন্য
নার্সারি।
ডাক্তার,
ডেন্টিস্ট।
আর
কাজ
করতে
করতে
অবসন্ন
বোধ
করলে
ম্যাসেজ
করার
জন্য
অটোম্যাটিক
চেয়ার
ম্যাসাজ,
বা
এক
ঘন্টার
টেবিল
ম্যাসাজের
ব্যবস্থাও
রয়েছে।
আর
যাতায়াতের
জন্যও
অনেক
ব্যবস্থা --
নিজের
গাড়ি
না
থাকলে
বা
প্রতিদিন
ড্রাইভ
করতে
ইচ্ছা
না
হলে
গুগলের
শাটল
গিয়ে
নিয়ে
আসবে,
এমনকি
৪০
মাইল
দূরের
সান
ফ্রান্সিস্কো
থেকেও
অনেকে
গুগলের
বাসে
করে
আসে।
আর
গুগলের
ইলেকট্রিক
গাড়িও
অনেক
কর্মীকে
দেয়া
হয়,
চালাবার
জন্য।
আর
সব
সময়
কাজ
করা?
তা
নয়
মোটেও,
বরং
খেলাধুলার
ব্যবস্থা
রয়েছে
বিস্তর।
ক্যাফের
পাশেই
ভলিবল
কোর্ট,
আর
টেনিস
খেলা,
সাঁতার
কাটা,
কৃত্রিম
স্রোতে
সার্ফিং
এর
ব্যবস্থা,
এসব
তো
রয়েছেই।
কিন্তু
তার
চেয়েও
ইন্টারেস্টিং
হলো
ভিডিও
গেইমের
কালেকশান,
বাংলাদেশে
আমরা
যেমন
খেলতাম
কয়েন
অপারেটেড
মেশিন,
সেরকম
মেশিন
সাজানো
আছে।
আমার
অফিসের
এক
কোনাতে
একটা
বড়
স্ক্রিন
পেয়ে
তো
একজন
দেখি
রীতিমত
ভিডিও
গেইম
কর্নার
বানিয়ে
ফেলেছিলো,
উইই,
পিএসপি,
আর
অন্য
সব
মেশিন
দিয়ে।
সিলিকন
ভ্যালির
অন্যত্র
অবশ্য
এতোটা
সুযোগ
সুবিধা
নেই।
আমার
বন্ধু
কেউ
কেউ
ইন্টেলে
কাজ
করেছে,
ওদের
ক্যাফেতে
নাকি
পানিটাও
কিনে
খেতে
হতো।
গুগলের
কর্মীরা
থাকে
রাজার
হালে।
অবশ্য
এর
পেছনে
গুগলের
লাভটাও
অনেক।
কর্মীদের
এভাবে
রাজার
হালে
রেখে
রেখে
অফিসে
ধরে
রাখাটা
খুব
সহজ
হয়,
সকাল
থেকে
এসে
সবাই
রাত
করে
ফিরে,
মাঝের
সময়টাতে
পাগলের
মতো
কাজ
করে
চলে।
আর
মনে
ফুর্তি
আনার
মতো
সব
ব্যবস্থা
আছে
বলে
সারাদিন
চরম
উৎসাহে,
আগ্রহে
তৈরী
করে
চলে
অসাধারণ
সব
সফটওয়ার।
(ছবি,
আমার
অফিসের
বাইরের
অংশ,
চার্লিজ
ক্যাফের
বাইরের
বসার
পিকনিক
টেবিল,
আর
শেষে
মাইক্রোকিচেনের
কিয়দংশ)।
গুগল
কথন ৬প্রযুক্তির স্রোতে অবগাহন
গুগলপ্লেক্সের
প্রধান ক্যাফেতে প্রতিদিন দুপুরে বা বিকেলে যেতাম ... ওখানকার ৫ রকমের বিভিন্নদেশী খাবারের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। এই ক্যাফেটার নাম "চার্লি'স ক্যাফে" ... জানতে চেয়েছিলাম একদিন, চার্লিটা কে? জানলাম, চার্লি ছিলো গুগলের প্রথম বাবুর্চি। যখন গুগলের মোট কর্মী সংখ্যা দশ বিশ জন, তখন যোগ দেয়া চার্লি বেতনের বদলে গুগলের কিছু শেয়ার পেয়েছিলো। যখন স্টক মার্কেটে গুগল শেয়ার ছাড়লো বছর কয়েক আগে, ততদিনে সেই সব শেয়ারের দাম হয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার। সেই মিলিয়নিয়ার চার্লি আজ গুগল থেকে অবসর নিয়ে নিজের রেস্তোঁরা খুলতে পেরেছে, কিন্তু তার নাম রয়ে গেছে।
(ছবিতে,
শেষ
দিনের
পিকনিকে
আমার
সহকর্মী
রিচার্ড
ও
ব্রায়ানের
সাথে
আমি,
কোনো
এক
সকালে
আমার
অগোছালো
ডেস্ক,
আর
গুগলপ্লেক্সের
চত্ত্বর]
(সমাপ্ত)