জীববিজ্ঞান (১৩টি)

০১. অণুজীব (১৬৭৪)

অণুবীক্ষণের লেন্স নির্মাতা Anton Van Leeuwenhoek অকস্মাৎ এক ফোঁটা পানির মধ্যে অণুজীবের সন্ধান পান। নিজের অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি শুক্রাণু, ব্যাক্টেরিয়া ও লোহিত রক্ত কণিকা পর্যবেক্ষণ করেন। তার পর্যবেক্ষণগুলো ব্যাক্টেরিয়াবিজ্ঞান ও অণুজীববিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়ে গেছে।

 

Anton Van Leeuwenhoek

 

কোষ

 

০২. কোষের নিউক্লিয়াস (১৮৩১)

অর্কিড পাতা নিয়ে গবেষণা করার সময় উদ্ভিদবিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন কোষের অভ্যন্তরে একটি কাঠামো আবিষ্কার করেন যার নাম তিনি দেন “নিউক্লিয়াস”

 

 

০৩. আর্কিয়া (১৯৭৭)

কার্ল ওজ আবিষ্কার করেন, ব্যাক্টেরিয়া-ই পৃথিবীর একমাত্র আদিকোষী (প্রোক্যারিয়ট - নিউক্লিয়াসবিহীন এককোষী জীব) জীব নয়। এ ধরণের অনেক জীবকে “আর্কিয়া” নামক জগতের অধীনে একত্রিত করা হয়। এদের অনেকেই চরমজীবী অর্থাৎ, অতি উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রা এবং অতি অম্লীয় বা ক্ষারীয় পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। পতিত জলাভূমি, পয়ঃনিষ্কাশন পথ এবং মাটির নিচেও এদেরকে পাওয়া গেছে। আর্কিয়ার জীবগুলো অন্য জীবের কোন ক্ষতি করে না এবং এদের মাধ্যমে কোন রোগ ছড়ায় বলে জানা যায়নি।

 

ব্যাক্টেরিয়া

কোষ বিভাজন

 

০৪. কোষ বিভাজন (১৮৭৯)

Walther Flemming গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, প্রাণীকোষ বিভিন্ন ধাপে বিভাজিত হয়। এই বিভাজন প্রক্রিয়ার নাম দেন মাইটোসিস। Eduard Strasburger উদ্ভিদ কোষে একই ধরণের একটি কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।

 

০৫. যৌন কোষ (১৮৮৪)

August Weismann লক্ষ্য করেন, স্বাভাবিকের তুলনায় ক্রোমোজোম অর্ধেক হয়ে যাওয়ার জন্য যৌন ক্রোমোজোমগুলোতে ভিন্ন ধরণের কোষ বিভাজন হতে হবে। এই ভিন্ন ধরণের কোষ বিভাজনকে বলে মায়োসিস। জেলি মাছের প্রজনন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে Weismann দেখেন, পিতা-মাতার যৌন কোষে একটি বিশেষ বস্তুর বিভিন্নমুখী সম্মিলনের কারণেই বংশধরদের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। তিনি এই বস্তুর নাম দেন “জার্ম প্লাজম”।

 

 

August Weismann

 

স্টেম কোষ

০৬. কোষ পার্থক্যকরণ (উনবিংশ শতকের শেষাংশ)

কোষ পার্থক্যকরণের পেছনে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী অবদান রেখেছেন। এভাবে তারা মানুষের ভ্রুণীয় স্টেম কোষ পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন। পার্থক্যকরণের মাধ্যমে একটি কোষ নির্দিষ্ট প্রকারে রূপান্তরিত হয়। বিভিন্ন প্রকারের কোষ তখন দেহের বিভিন্ন অংশ গঠন করে, যেমন, ফুসফুস, ত্বক বা পেশী। কোষগুলো যেন নির্দিষ্ট কোন কাজ করার জন্য বিশেষ ধরণের কাঠামো তৈরী করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় জিন কার্যকরী হয়ে উঠে এবং অন্যান্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। যে কোষগুলো এখনও পৃথক হয়ে যায়নি, অর্থাৎ যারা ভবিষ্যতে যেকোন প্রকারের কোষে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে তাদেরকেই স্টেম কোষ বলে।

 

০৭. মাইটোকন্ড্রিয়া (উনবিংশ শতকরে শেষাংশ থেকে বর্তমান)

বিজ্ঞানীরা কোষের শক্তিঘর তথা মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার করেন। কোষের ভেতরে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র কাঠামো কোষের বিপাক এবং খাদ্যকে কোষের ব্যবহার উপযোগী রাসায়নিক যৌগে পরিণত করার কাজ করে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এরা কোষেরই অংশ। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন, এরা বিশেষায়িত ব্যাক্টেরিয়া যাদের নিজস্ব ডিএনএ আছে।

 

 

 

মাইটোকন্ড্রিয়া

Hans Adolf Krebs

 

০৮. ক্রেব্‌স চক্র (১৯৩৭)

Hans Adolf Krebs, কোষ যে কয়েকটি ধাপে শর্করা, আমিষ ও চর্বিকে শক্তিতে পরিণত করে সেগুলো আবিষ্কার করেন। এর অপর নাম সাইট্রিক এসিড চক্র। এটি আসলে অক্সিজেনকে কোষীয় শ্বসনের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ধারা। এই চক্রের মাধ্যমে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ ভেঙে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানিতে পরিণত হয়।

 

 

০৯. স্নায়ু-সঞ্চারণ (উনবিংশ শতকের শেষাংশ থেকে বিংশ শতকের প্রথমাংশ)

বিজ্ঞানীরা স্নায়ু-সঞ্চারক আবিষ্কার করেন। তারা এক স্নায়ু কোষ থেকে আরেক স্নায়ু কোষে রাসায়নিক পদার্থ বা বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে দেহকে কি করতে হবে তা কিভাবে বলে, এই পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়।

 

 

 

স্নায়ু কোষ

হরমোন নিঃসৃতকারী গ্রন্থিসমূহ

১০. হরমোন (১৯০৩)

উইলিয়াম বেইলিস এবং আর্নেস্ট স্টারলিং হরমোনগুলোকে তাদের নাম দেন এবং এরা কিভাবে রাসায়নিক দূত হিসেবে কাজ করে তা আবিষ্কার করেন। তারা মূলত সিক্রেটিন আবিষ্কার করেছিলেন। সিক্রেটিন নামের এই বস্তুটি ডুওডেনাম (পাকস্থলি এবং অন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত) থেকে রক্তের মধ্যে নিঃসৃত হয় এবং অন্ত্রে প্যানক্রিয়াটিক ডাইজেস্টিভ জুস নিঃসরণে সাহায্য করে।

 

১১. সালোকসংশ্লেষণ (১৭৭০-এর দশক)

Jan Ingenhousz আবিষ্কার করেন, উদ্ভিদকূল ছায়ার তুলনায় সূর্যালোকের প্রতি ভিন্নরকম আচরণ করে। এ থেকেই সালোকসংশ্লেষণ সম্বন্ধে ধরণা গড়ে উঠতে শুরু করে। সালোকসংশ্লেষণ একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে, উদ্ভিদ, শৈবাল ও কিছু ব্যাক্টেরিয়া ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। উদ্ভিদে পাতা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং মূল পানি শোষণ করে। সূর্যালোকের মাধ্যমে এমন এক বিক্রিয়া ঘটে যাতে গ্লুকোজ (উদ্ভিদের খাদ্য) এবং অক্সিজেন (পরিবেশে বিমুক্ত হয়) উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর সকল জীবই এই প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।

 

 

Jan Ingenhousz

সালোকসংশ্লেষণ

 

 

 

ইকোসিস্টেম

১২. বাস্তুতন্ত্র (১৯৩৫)

আর্থার জর্জ ট্যান্সলি “ইকোসিস্টেম” (বাস্তুতন্ত্র) শব্দটি প্রণয়ন করেন এবং একাই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের যে অংশগুলোতে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করা হয় তার সাথে জীববিজ্ঞানের বাস্তুতন্ত্রের সেতুবন্ধন রচনা করেন। কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদ, প্রাণিকুল, অণুজীবসমূহ এবং বিয়োজকসমূহের পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যে যে যৌথ বসবাসনীতি গড়ে উঠে তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।

 

১৩. ক্রান্তীয় জৈববৈচিত্র্য (পঞ্চদশ শতক থেকে বর্তমান)

ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা সমুদ্রযোগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সময় লক্ষ্য করেন, ক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রজাতিগুলোর মাঝে বৈচিত্র্য তুলনামূলকভাবে বেশি। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধ্যমেই বর্তমানে বিজ্ঞানীদের পক্ষে পৃথিবীতে জীবন সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

 

 

গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট

তথ্যসূত্রঃ The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

ভাষান্তরঃ খান মুহাম্মদ