০১. গ্রহসমূহ গতিশীল (২০০০
খ্রিস্টপূর্ব - ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব)
হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ রাতের আকাশের তারাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে। দিনের
সূর্য আর রাতের চাঁদকেও ছেড়ে কথা বলেনি। কৌতুহলী মানুষের এসব পর্যবেক্ষণের
মাধ্যমেই একসময় বোঝা গেছে, আকাশের তারারা চলমান এবং তারা বিভিন্ন গড়ন তৈরী করে।
এর মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে যে, পৃথিবী সৌর জগতের অন্তর্ভুক্ত যে জগতে আরও
অনেকগুলো গ্রহ আছে। কারণ, মানুষ তখনই তারা এবং গ্রহের পার্থক্য বুঝতে পেরেছিল।
|
|
নিকোলাস কোপারনিকাস
|
০২. পৃথিবী চলমান (১৫৪৩)
নিকোলাস কোপারনিকাস সৌর জগতের কেন্দ্র থেকে পৃথিবীকে বিতাড়িত করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে
বলেন, পৃথিবী নয় সূর্যই সৌর জগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে
পৃথিবীসহ অন্যান্য সব গ্রহই ঘুরছে।
|
০৩. গ্রহের কক্ষপথ
উপবৃত্তাকার (১৬০৫ - ১৬০৯)
ইয়োহানেস কেপলার যুগান্তকারী গাণিতিক নকশা প্রণয়ন করেন। এই নকশা থেকে বোঝা যায়,
গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করছে।
|
ইয়োহানেস কেপলার
|
গ্যালিলিও গ্যালিলি
|
০৪. বৃহস্পতি গ্রহেরও চাঁদ
আছে (১৬০৯ - ১৬১২)
গ্যালিলিও গ্যালিলি আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবীর মত বৃহস্পতিরও চাঁদ আছে। এর
মাধ্যমে তিনি টলেমিকে ভুল প্রমাণ কোপারনিকাসের তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করেন।
কোপারনিকাস মনে করতেন, পৃথিবী অনন্য নয় বরং সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহের মতই যারা
সূর্যকে আবর্তন করছে।
|
০৫. হ্যালির ধূমকেতুর
কক্ষপথ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা (১৭০৫ - ১৭৮৫)
এডমান্ড হ্যালি প্রমাণ করেন যে, ধুমকেতুগুলো গ্রহের মত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
তিনি হ্যালির ধূমকেতু কবে ফিরে আসবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি নির্ধরাণ
করেন, ১৫৩১ ও ১৬০৭ সালে যে দুটি ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল তারা একই এবং তারা ৭৬ বছরে
একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ১৭৫৮ সালে হ্যালির ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়,
অর্থাৎ সে বছরই কথা মতো হ্যালির ধূমকেতু ফিরে আসে। দুর্ভাগ্যবশত এর আগেই ১৭৪২
সালে হ্যালি মারা গিয়েছিলেন।
|
এডমান্ড হ্যালি |
|
০৬. আকাশগঙ্গা অনেক তারার
এক বিশাল চাকতি (১৭৮০ - ১৮৩৪)
দূরবীণ নির্মাতা উইলিয়াম হার্শেল ও তার বোন ক্যারোলিন মিলে সমগ্র আকাশের
মানচিত্র তৈরী করেন। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেন যে, আমাদের সূর্য অসংখ্য
তারার এক বিশাল চাকতির কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। এই চাকতির নামই আকাশগঙ্গা।
হার্শেলের পদ্ধতি ছিল, দূরবীণের একটি ভিউয়ে যতগুলো তারা দেখা যায় সবগুলো গণনা
করা। তিনি ২,৪০০ টি নমুনা অঞ্চলে ৯০,০০০ এরও বেশি তারা গণনা করেছিলেন। পরবর্তী
গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের ছায়াপথ আসলেই অসংখ্য তারা দিয়ে গঠিত যদিও সূর্য এর
কেন্দ্রের কাছাকাছি নেই। এছাড়াও বর্তমানে দেখা গেছে হার্শেলের অনুমানের চেয়ে
আকাশগঙ্গা আরও অনেক বড়।
|
০৭. সাধারণ আপেক্ষিকতা
(১৯১৫ - ১৯১৯)
আলবার্ট আইনস্টাইন তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। এতে বলা
হয়, ভর স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। সে হিসেবে অনেক ভারী কোন বস্তু আলোকেও
বাঁকাতে পারে। ১৯১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মিলে একটি সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ
করার মাধ্যমে এই তত্ত্ব প্রমাণ করেন।
|
আলবার্ট আইনস্টাইন
|
এডুইন হাবল
|
০৮. মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত
হচ্ছে (১৯২৪ - ১৯২৯)
এডুইন হাবল কাছাকাছি অবস্থিত অনেকগুলো ছায়াপথের দূরত্ব নির্ণয় করেন। এর মাধ্যমে
তিনি প্রমাণ করেন, কোন ছায়াপথ আমাদের থেকে যত দূরে অবস্থিত তা তত বেশি বেগে
আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তার গণনার মাধ্যমে বোঝা যায়, আমাদের মহাবিশ্ব
সম্প্রসারিত হচ্ছে।
|
০৯. আকাশগঙ্গার কেন্দ্র
রেডিও তরঙ্গ নিঃসরণ করে (১৯৩২)
কার্ল জান্স্কি রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান উদ্ভাবন করেন এবং এবং এর মাধ্যমে
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে একটি অদ্ভুত রেডিও তরঙ্গ নিঃসরণকারী বস্তুর সন্ধান পান।
জান্স্কি মূলত তার কোম্পানি তথা “বেল কমিউনিকেশন ল্যাবরেটরিস”-এর হয়ে রেডিও
তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অপবর্তন নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি তিনটি
উৎস অনুমান করেন: স্থানীয় বজ্রপাত, দূরবর্তী বজ্রপাত এবং একটি সুস্থির
হিসহিস-এর মত তরঙ্গ। জান্স্কি বলেন, আকাশে আকাশগঙ্গা যে অবস্থানে আছে তা থেকে
বোঝা যায় তার কেন্দ্রের কোন উৎস থেকেই এই স্থির তরঙ্গ আসছে।
|
কার্ল জান্স্কি
|
|
১০. মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ
পটভূমি বিকিরণ (১৯৬৪)
আরনো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইলসন মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কার
করেন। তারা সন্দেহ করেছিলেন এই বিকিরণ মহা বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট এক ধরণের
প্রভা। হাবলের মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ তত্ত্বের সাথে এই বিকিরণ মিলে মহা
বিস্ফোরণের পক্ষে একটি সুদৃঢ় প্রমাণ দাড় করায়। মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে
মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে এর পক্ষে এটি অন্যতম যুক্তি।
|
১১. গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ
(১৯৬৯ - ১৯৯৭)
গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ নিয়ে দুই দশক স্থায়ী সমস্যার অবশেষে সমাধান হল। ভূস্থিত এবং
কক্ষপথে আবর্তনকারী বেশ কিছু সূক্ষ্ণ দূরবীণের সাহায্যে এই সমাধান করা হয়। এটা
হল গামা-রশ্মি ফোটনের তীব্র বিস্ফোরণ যাকে আলোর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকার বলা হয়।
এর সাথে নিউক্লীয় বিস্ফোরণের সংযোগ আছে। বর্তমানে কিছু গামা-রশ্মি বিস্ফোরণকে
অন্তত অনেক দূরের অতিনবতারা থেকে আগত বলে সনাক্ত করা গেছে। অতি বৃহৎ তারার
জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে যে বিস্ফোরণ ঘটে তাকেই অতিনবতারা বলে।
|
|
|
১২. অন্যান্য তারার চারদিকে
গ্রহ (১৯৯৫ - ২০০৪)
অতি শক্তিশালী দূরবীণের সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, অন্যান্য
তারার চারদিকেও গ্রহ আছে যেগুলোকে বহির্গ্রহ বরে। এখানে বেশ কিছু তারা জগতের
অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে যদিও কোনটির সাথেই আমাদের সৌরজগতের মিল নেই। তারার উপর
গ্রহের কারণে যে মহাকর্ষীয় প্রভাব পড়ে তা পরিমাপের মাধ্যমে বহির্গ্রহ সনাক্ত করা
যায়।
|
১৩. মহাবিশ্ব ত্বরিত হচ্ছে
(১৯৯৮ - ২০০০)
বিস্ময়ের সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, মহাবিশ্ব মহাকর্ষের টানে ক্রমশ
সংকুচিত হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ত্বরণের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হার ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এই পর্যবেক্ষণ যদি সত্য প্রমাণিত
হয় এবং বিজ্ঞানীরা যদি এই তত্ত্বে স্থির থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে আর দূরবর্তী
ছায়াপথগুলোকে দেখা যাবে না। এই আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের একটি নতুন
পরিণতি নির্ধারণ করতে হচ্ছে। এই নব পরিণতিকে 'বিগ রিপ' বলা হয়ে থাকে।
|
|