রসায়ন (১৩টি)

 

০১. অক্সিজেন (১৭৭০-এর দশক)

জোসেফ প্রিস্ট্‌লি অক্সিজেন আবিষ্কার করেন। Antoine Lavoisier এর স্বভাব ব্যাখ্যা করেন। প্রিস্ট্‌লি পরীক্ষার মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরী করেন এবং দহন ও শ্বসনে এর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। এরপর পানিতে স্থির বায়ু দ্রবীভুত করে কার্বনেটেড পানি তৈরী করেন। প্রিস্ট্‌লি তার নতুন আবিষ্কারের নাম রেখেছিলেন “ডিফ্লজিস্টিকেটেড গ্যাস”। Lavoisier এই গ্যাসের নাম রাখেন অক্সিজেন এবং দহনে এর সঠিক ভূমিকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। এরপর Lavoisier অন্যান্যদের সাথে মিলে রাসায়নিক নামকরণের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন যা এখনও ব্যবহৃত হয়।

 

Antoine Lavoisier

 

 

জন ডাল্টন

০২. পারমাণবিক তত্ত্ব (১৮০৮)

জন ডাল্টন অদৃশ্য পরমাণুকে পরিমাপযোগ্য রাশি যেমন গ্যাসের আয়তন বা খনিজের ভরের মত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করেন। তার পারমাণবিক তত্ত্বে বলা হয়েছে, মৌল পরমাণু নামক অতি ক্ষুদ্র অসংখ্য কণা দিয়ে গঠিত। সে হিসেবে, একটি বিশুদ্ধ মৌলে একই ধরণের অসংখ্য পরমাণু থাকে আর যৌগে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু একসাথে যুক্ত হয়।

 

 

 

০৩. পরমাণু একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে (১৮১১ থেকে)

ইতালীয় রসায়নবিদ Amedeo Avogadro আবিষ্কার করেন যে, মৌল মধ্যস্থিত পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে। তিনি প্রস্তাব করেন, একই তাপমাত্রা ও চাপে সম আয়তন গ্যাসে সব সময় সমান পরিমাণ অণু থাকে।

 

 

Friedrich Woehler

 

০৪. ইউরিয়া সংশ্লেষণ (১৮২৮)

Friedrich Woehler দুর্ঘটনাবশত অজৈব বস্তু থেকে জৈব ইউরিয়া সংশ্রেষ করে ফেলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় অজৈব বস্তু থেকে জৈব বস্তু তৈরী হতে পারে। ১৮২৮ সালের আগে মনে করা হতো, জৈব বস্তু কেবল “ভাইটাল ফোর্স”-এর সাহায্যে তৈরী করা যায়। প্রাণী এবং উদ্ভিদে যে বিশেষ প্রাণ শক্তি থাকে তাকেই ভাইটাল ফোর্স নামে অভিহিত করা হতো।

 

 

০৫. রাসায়নিক গঠন (১৮৫০-এর দশক)

Friedrich Kekule বেনজিনের রাসায়নিক গঠন আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে আণবিক গঠনের বিষয়টি রসায়ন পাঠের একেবারে আবশ্যিক পর্যায়ে উঠে আসে। Kekule লিখেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ কার্বন-কার্বন বন্ধনের প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করে তিনি বেনজিনের বলয় গঠন আবিষ্কার করেন।  সর্প তার লেজ গুটিয়ে নিচ্ছে, এমন একটি স্বপ্ন দেখেই তার এই বলয় গঠনের কথা প্রথম মনে হয়েছিল। কার্বন পরমাণু কিভাবে একই সাথে আরও চারটি পরমাণুর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে, এই সমস্যার সমাধান হয় বলয় গঠন আবিষ্কৃত হওয়ার পরই।

 

 

Friedrich Kekule

 

 

 

Dmitry Mendeleyev

০৬. পর্যায় সারণি (১৮৬০-এর দশক থেকে ১৮৭০-এর দশক)

Dmitry Mendeleyev লক্ষ্য করেন, তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৬৩টি মৌলকে তাদের পারমাণবিক ভরের উর্ধ্ব ক্রমানুসারে সাজালে তাদের ধর্মসমূহ একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পরপর পুনরাবৃত্ত হয়। এর মাধ্যমে তিনি মৌলসমূহের পর্যায় সারণি তৈরী করেন এবং তখন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত মৌলগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী করা মৌলের মধ্য তিনটি তার জীবদ্দশায়ই আবিষ্কৃত হয়। এগুলো হল: গ্যালিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম ও জার্মেনিয়াম।

 

 

 

০৭. তড়িৎ প্রবাহ রসায়নিক যৌগের রূপান্তর ঘটায় (১৮০৭ - ১৮১০)

হামফ্রি ডেভি আবিষ্কার করেন, তড়িৎ প্রবাহ রসায়নিক যৌগের রূপান্তর ঘটায়। তিনি বৈদ্যুতিক পাইল (আদি ব্যাটারি) ব্যবহার করে ইলেকট্রোলাইসিস নামক প্রক্রিয়ায় লবণ পৃথক করেন। অনেকগুলো ব্যাটারি ব্যবহার করে ক্যালসিয়াম, স্ট্রনশিয়াম, বেরিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থেকে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম মৌল পৃথক করতে সক্ষম হন।

 

 

 

 

হামফ্রি ডেভি

 

 

জে জে টমসন

০৮. ইলেকট্রন (১৮৯৭)

জে জে টমসন আবিষ্কার করেন, ক্যাথোড রশ্মি নল থেকে ঋণাত্মক আধানে আহিত যে রশ্মি নিঃসরিত হয় তা পরমাণুর চেয়ে ছোট এবং সকল পরমাণুতেই এরা থাকে। তিনি এই কণার নাম দেন “কর্পাজ্‌ল”। বর্তমানে এগুলো ইলেকট্রন নামে পরিচিত

 

 

০৯. রাসায়নিক বন্ধনের জন্য ইলেকট্রন (১৯১৩ থেকে)

নিল্‌স বোর তার পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন। এতে দেখানো হয়, ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে ঘিরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। কোন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ স্তরের ইলেকট্রন সংখ্যার উপর উক্ত পরমাণুর ধর্ম অনেকাংশে নির্ভর করে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমেই এক সময় রাসায়নিক বন্ধনে ইলেকট্রনের ভূমিকা বোঝা সম্ভব হয়।

 

 

 

 

নিল্‌স বোর

Gustav Kirchhoff   বাঁয়ে ও Robert Bunsen

 

১০. পরমাণুতে আলোর স্বাক্ষর আছে (১৮৫০-এর দশক)

Gustav Kirchhoff ও Robert Bunsen আবিষ্কার করেন, প্রতিটি মৌল নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ বা নিঃসরণ করে। এর ফলে প্রতিটি মৌলের স্বতন্ত্র বর্ণালতৈরী হয়।

 

১১. তেজস্ক্রিয়তা (১৮৯০-এর দশক থেকে ১৯০০-এর দশক)

মারি ক্যুরি ও পিয়ের ক্যুরি তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কার ও পৃথক করেন। ইউরেনিয়াম খনিজ থেকে ইউরেনিয়াম মৌল তৈরী করার পর মারি দেখেন, অবশিষ্ট পদার্থ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের চেয়ে বেশি সক্রিয়। এর থেকে তিনি প্রস্তাব করেন, ইউরেনিয়াম খনিজে ইউরেনিয়াম ছাড়াও অন্যান্য তেজস্ক্রিয় মৌল আছে। এর ফলে পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কৃত হয়।

 

 

 

 

মারি ক্যুরি ও পিয়ের ক্যুরি

 

 

 

 

Leo Baekeland

 

১২. প্লাস্টিক (১৮৬৯ - ১৯০০-এর দশক)

জন ওয়েসলি হায়াট বিলিয়ার্ড বল তৈরীতে হাতির দাঁতের পরিবর্তে সেলুলয়েড প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রচলন করেন। সেলুলয়েড প্রথম সিনথেটিক প্লাস্টিক যা হাতির দাঁত, অ্যাম্বার, শিং ও কচ্ছপের ত্বকের মত দামী বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। পরবর্তীতে Leo Baekeland কঠিন প্লাস্টিক বিশেষত ব্যাকেলাইট উদ্ভাবন করেন। ইলেকট্রনিক অন্তরক হিসেবে যে শেলাক ব্যবহৃত হতো তার পরিবর্তে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হতে থাকে।

 

১৩. ফুলারিন (১৯৮৫)

রবার্ট কার্ল, হ্যারল্ড ক্রোটো ও রিক স্মলি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের এক কার্বন যৌগ আবিষ্কার করেন যার গঠন খাঁচার মত। এরপর একই ধরণের নলাকার গঠনের কার্বন যৌগ আবিষ্কৃত হয়। এই যৌগগুলোকে একসাথে “বাকমিনস্টারফুলারিন” বা সংক্ষেপে শুধু ফুলারিন বলা হতে থাকে। এই যৌগগুলো সম্পূর্ণ কার্বন দিয়ে গঠিত এবং ফাঁপা গোলক, এলিপসয়েড, নল বা আংটির মত হয়ে থাকে। জিওডেসিক গম্বুজের উদ্ভাবক বাকমিনস্টার ফুলারের নামানুসারে এদের নাম রাখা হয়েছে। এগুলোকে বাকিবল বা বাকিটিউব-ও বলা হয়।

 

 

 

 

 

বাকি বল C60

 

 

 

গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট

তথ্যসূত্রঃ The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

ভাষান্তরঃ খান মুহাম্মদ