বংশগতি বিজ্ঞান (১৩টি)

 

০১. বংশগতির সূত্র (১৮৫০-এর দশক)

অস্ট্রীয় ধর্মযাজক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী গ্রেগর মেন্ডেল আবিষ্কার করেন, কিভাবে জিনতাত্ত্বিক তথ্যগুলো এক বংশ থেকে আরেক বংশে প্রবাহিত হয়। মটরশুঁটি চারা নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন, কোন কোন চারার বংশধরদের মাঝে মাতৃ চারার বৈশিষ্ট্য ফিরে এসেছে বা প্রকট হয়ে উঠেছে। সে সময় মেন্ডেলের গবেষণাকে কেউ গুরুত্ব দেননি। মেন্ডেল তার জীবদ্দশায় জানতেও পারেননি যে, তাকে “বংশগতিবিদ্যার জনক” বলা হবে।

 

গ্রেগর মেন্ডেল

 

০২. জিন ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে (১৯১০ - ১৯২০-এর দশক)

টমাস হান্ট মরগ্যান আবিষ্কার করেন, জিন ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে। ফলের মাছির উপর পরীক্ষা চালাতে গিয়ে দেখেন, এদের কিছু বৈশিষ্ট্য লিঙ্গের সাথে সম্পর্কিত এবং সম্ভবত বৈশিষ্ট্যগুলো যৌন ক্রোমোজোমের (এক্স এবং ওয়াই) মাধ্যমে বাহিত হয়েছে। তিনি প্রকল্পায়িত করেন, অন্যান্য জিনও ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বাহিত হয়। ক্রোমোসোম পুনঃসংযোগের মাধ্যমে মরগ্যান ও তার ছাত্ররা ক্রোমোজোমের মধ্যে জিনের মানচিত্র তৈরী করেন। এর মাধ্যমে তারা “The Mechanism of Mendelian Heredity” নামক বিখ্যাত বইটি লিখেন।

 

 

০৩. জিন জৈব-রাসায়নিক ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে (১৯৩০)

George Beadle এবং Edward Tatum নিউরোস্পোরা’র (একটি ব্রেড মোল্ড) উপর পরীক্ষা চালিয়ে আবিষ্কার করেন, জিন উৎসেচক উৎপাদনের জন্য দায়ী। তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমেই “একটি জিন-একটি উৎসেচক” ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

 

 

০৪. কিছু জিন লাফ দিতে পারে (১৯৪০)

বারবারা ম্যাক্‌ক্লিন্টক শস্য দানায় রঙের বৈচিত্র্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রান্সপন (এমন জিন যারা ক্রোমোজোমের উপর লাফ দিতে পারে) আবিষ্কার করেন। ট্রান্সপন আসলে এক ধরণের ডিএনএ অংশক যা একই কোষের জিনোমের মধ্যে বিভিন্ন অবস্থানে চলাচল করতে পারে। এই চলাচলের প্রক্রিয়ায় তারা পরিব্যক্তি এবং জিনোমের মোট ডিএনএ সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। ডিএনএ-র এই সচল অংশকগুলোকে অনেক সময় “জাম্পিং জিন” বলে।

 

 

০৫. ডিএনএ-ই জিনতাত্ত্বিক পদার্থ (১৯২৮, ১৯৪৪, ১৯৫২)

বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রমাণ করেন, ডিএনএ-ই জিনতাত্ত্বিক তথ্যের রাসায়নিক ভিত্তি। Oswald Avery প্রমাণ করেন, ডিএনএ জিনতাত্ত্বিক তথ্য বহন করে। রিনাস পাউলিং আবিষ্কার করেন, অনেক প্রোটিন স্প্রিং কয়েলের মত কুণ্ডলাকার রূপ নেয়। পরিশেষে জৈব-রসায়নবিদ Erwin Chargaff আবিষ্কার করেন, ডিএনএ-তে অবস্থিত কিছু নির্দিষ্ট নাইট্রোজেন ক্ষার সব সময় ১-১ অনুপাতে বিন্যস্ত হয়, এভাবে তারা ক্ষার যুগল তৈরী করে।

 

 

০৬. ডিএনএ ডাবল হেলিক্স আকৃতির (১৯৫৩)

জেম্‌স ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড) অণু ব্যাখ্যা করেন। তারা প্রস্তাব করেন, ডিএনএ অণু নিউক্লিওটাইডের দুটি শিকল দিয়ে গঠিত যাদের প্রতিটি একটি হেলিক্সের মধ্যে থাকে, একটি উপরের দিকে উঠে এবং অপরটি নিচের দিকে নামে। ক্রিক যোগ করেন, দুই শিকলের মাঝে ক্ষার যুগলগুলো পরষ্পরের সাথে আবদ্ধ তাকে। এভাবে দুই শিকলের দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে। তারা আরও দেখান, প্রতিটি ডিএনএ সূত্রক আরেকটি সূত্রকের জন্য ছাঁচ হিসেবে কাজ করে। এভাবে ডিএনএ অণু নিজের গঠনে কোন পরিবর্তন ছাড়াই নিজের প্রতিলিপি তৈরী করতে পারে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে গণ্ডগোল ঘটতে পারে যার ফলে পরিব্যক্তি ঘটে।

 

০৭. জিনতাত্ত্বিক সংকেতের মর্মোদ্ধার (১৯৬০-এর দশক)

মার্শাল নিরেনবার্গ জিনতাত্ত্বিক সংকেত তথা জেনেটিক কোড আবিষ্কারকারী দলের নেতৃত্ব দেন। তারা দেখান, তিনটি নিউক্লিওটাইড ক্ষার মিলে যে কোডন তৈরী করে তার ধারাটিই জেনেটিক কোড হিসেবে কাজ করে। এই সংকেতই ২০টি অ্যামিনো এসিডের প্রতিটি নির্ধারণ করে।

 

মার্শাল নিরেনবার্গ

০৮. আরএনএ জিনতাত্ত্বিক তথ্য বহন করে (১৯৬০-এর দশক)

বিজ্ঞানীরা রাইবোনিউক্লিয়িক এসিড তথা আরএনএ আবিষ্কার করেন। এটি কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে অবস্থানকারী এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ যার গঠন ডিএনএ-র মতো। তারা দেখেন, আরএনএ প্রোটিন সংশ্লেষণ ও কোষের অন্যান্য রাসায়নিক কার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

 

০৯. প্রতিরোধ উৎসেচক (১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৬০-এর দশক)

বেশ ক’জন বিজ্ঞানী প্রতিরোধ উৎসেচক (রেস্ট্রিকশন এনজাইম) আবিষ্কার করেন। এরা এক ধরণের জৈবিক কাঁচি যারা নির্দিষ্ট ডিএনএ ধারা চিহ্নিত করে এবং ধারাটি কেটে ফেলে।

 

 

১০. আরএনএ স্প্লাইসিং (১৯৭৬)

বিজ্ঞানীদের কয়েকটি দল আরএনএ স্প্লাইসিং আবিষ্কার করেন। তারা দেখেন, কোষের মধ্যে প্রোটিন তৈরীর জন্য ডিএনএ প্রথমে প্রাক-বাহক আরএনএ-র মধ্যে অনুলিখিত হয়। এরপর এক অস্বচ্ছ কারণে প্রাক-বাহক আরএনএ-র মধ্যে স্প্লাইসিং ঘটে এবং তা বাহক আরএনএ-তে পরিণত হয়। অনেক জিনতাত্ত্বিক রোগে, জিন পরিব্যক্তি আরএনএ স্প্লাইসিং প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটায়। ভুলভাবে স্প্লাইসিং হওয়া বাহক আরএনএ ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিনের জন্ম দেয় এবং এর ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।

 

 

১১. ডিএনএ পলিমরফিজ্‌ম (১৯৮৫)

অ্যালেক জেফ্রিস আবিষ্কার করেন, কিছু ডিএনএ অনুক্রম প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অনন্য। এর মাধ্যমেই ডিএনএ ফরেনসিক্স-এর জন্ম হয়। তার ডিএনএ কৌশল প্রয়োগ করে প্রথম যে আসামীকে ধরা হয় তার নাম কলিন পিচফর্ক। পিচফর্ক দুটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করার পর খুন করেছিল। ঐ দুই মেয়ের দেহ থেকে নেয়া ডিএনএ নমুনার সাথে তার ডিএনএ নমুনা মিলে যাওয়ার পরই সে দোষী ব্যস্ত হয়।

 

অ্যালেক জেফ্রিস

 

 

 

১২. মানব দেহে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ জিন আছে (২০০৩)

মানবদেহের সকল জিনের অনুক্রম অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মানব দেহে প্রায় ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ জিন আছে। অনেক বিজ্ঞানীর ভবিষ্যদ্বাণীর তুলনায় এই সংখ্যা  বেশ কম। আশা করা হয়, জিন অনুক্রম গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জৈব-প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে এক দিন ক্যান্সার ও অলজাইমার্সের মত রোগ নিরাময় সম্ভব হবে।

 

 

১৩. আরএনএ ইন্টারফেয়ারেন্স (১৯৯৮)

অ্যান্ড্রু ফায়ার এবং ক্রেইগ মেলো আরএনএ ইন্টারফেয়ারেন্স (আরএনএআই - RNAi) আবিষ্কার করেন। একটি জিনের অনুক্রমের সাথে মিল আছে এমন অনুক্রমের দ্বি-সূত্রক আরএনএ (dsRNA) উপস্থিত থাকলে উক্ত জিনের প্রকাশের উপর এই আরএনএ-টি হস্তক্ষেপ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যেসব dsRNA, RNAi এর ট্রিগার হিসেবে কাজ করে সেগুলোকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

 

 

ক্রেইগ মেলো  এবং   অ্যান্ড্রু ফায়ার

 

 

 

 

গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট

তথ্যসূত্রঃ The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

ভাষান্তরঃ খান মুহাম্মদ