ভূ-বিজ্ঞান (১২টি)

 

০১. পৃথিবীর কেন্দ্রভাগ (১৯০৬)

ভূকম্পনবিদ রিচার্ড ওল্ডহ্যাম নির্ণয় করেন, ভূত্বকের তুলনায় পৃথিবীর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ভূমিকম্পের তরঙ্গ অনেক ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। এ থেকে তিনি সারাংশে পৌঁছেন যে, পৃথিবীর কেন্দ্রভাগ তরল পদার্থে গঠিত।

 

রিচার্ড ওল্ডহ্যাম

 

Inge Lehmann

০২. পৃথিবীর অভ্যন্তরীন কেন্দ্রভাগ (১৯৩০-এর দশক)

১৯৩৬ সালে Inge Lehmann বলেন, ভূমিকম্পের কিছু তরঙ্গ পৃথিবীর কেন্দ্রভাগের একেবারে গভীর অঞ্চল ভেদ করে যেতে পারে না বরং প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এ থেকে বোঝা যায়, পৃথিবীর মূল কেন্দ্র কঠিন লৌহ দিয়ে গঠিত। এই লৌহ কেন্দ্রের চারপাশে তরল লোহার একটি স্তর আছে।

 

 

০৩. মহাদেশীয় বিচ্যুতি (১৯১১)

Alfred Wegener প্রস্তাব করেন, পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ একসময় একসাথে ছিল। তারা একসাথে একটিমাত্র ভূভাগ গঠন করেছিল। পরবর্তীতে “মহাদেশীয় বিচ্যুতি” নামক প্রক্রিয়ায় এরা পৃথক হয়ে যায়। দক্ষিণ আমেরিকার সাথে আফ্রিকার খাপে খাপে মিলে যাওয়া, জীবাশ্মের বণ্টন এবং ভূতাত্ত্বিক সাদৃশ্যের মাধ্যমে তিনি এটা প্রমাণ করেন।

 

 

০৪. সমুদ্রতলের বিস্তৃতি (১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৬০-এর দশক)

সমুদ্রতলের গভীরতা পরিবর্তন এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক আবিষ্কার থেকে পাওয়া উপাত্ত একসাথে করে Harry Hess প্রস্তাব করেন, Wegener কর্তৃক প্রস্তাবিত মহাদেশীয় বিচ্যুতির কারণ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিস্তৃতি। তিনি প্রকল্পায়িত করেন, “গ্রেট গ্লোবাল রিফ্ট”-এর (বর্তমানে “মিড-ওশ্যান রিজ”) প্লেটগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে ভূত্বকের নিচ থেকে গলিত ম্যাগমা চুইয়ে চুইয়ে উঠছে। এই উত্তপ্ত ম্যাগমা শীতল হয়ে রিফ্ট থেকে প্লেটগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে থাকে। এর ফলে আটলান্টিক মহাসাগরের প্রস্থ দিন দিন বাড়তে থাকে।

 

 

০৫. প্লেট টেক্টোনিক (১৯৬০-এর দশক)

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়, পৃথিবীর পৃষ্ঠতল, পরষ্পরের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি শিলা প্লেটে বিভক্ত করা যায়। পৃথিবীর সর্ববহিঃস্থ স্তর লিথোমণ্ডল-কে অন্তত ৭টি বড় বড় দৃঢ় টুকরোয় ভাগ করা যায়। এই টুকরোগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিকে ভিন্ন ভিন্ন দ্রুতিতে (বছরে ১-৪ ইঞ্চি) চলাচল করছে এবং পরষ্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে একে অপরকে টানছে এবং তাদের ঘর্ষণে ক্ষয়ও হচ্ছে। প্লেটের সীমানায় সংঘটিত এই ঘটনাগুরোর কারণেই পাহাড়, আগ্নেয়গিরি এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

 

 

০৬. ট্রপোমণ্ডল এবং স্ট্র্যাটোমণ্ডল (১৮৯০-এর দশক)

মনুষ্যবিহীন বেলুনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে Leon Teisserenc de Bort আবিষ্কার করেন, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর আছে। তিনি লক্ষ্য করেন, উপরের দিকে প্রায় ৭ মাইল পর্যন্ত তাপমাত্রা নির্দিষ্ট হারে হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু এর পর তাপমাত্রা স্থির থাকে। প্রায় ২০০টি বেলুন পরীক্ষা করার পর তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, বায়ুমণ্ডল “troposphere” এবং “stratosphere” নামক দুটি স্তরে বিভক্ত।

০৭. ভৌগলিক উষ্ণায়ন (বিংশ শতকের শেষাংশ)

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি ঝোঁক লক্ষ্য করেন। তারা “গ্রিনহাউজ গ্যাস” এর ঘনত্ব বৃদ্ধিকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ভৌগলিক উষ্ণায়ন তত্ত্ব বলে, উনবিংশ শতকের শেষাংশ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণ মানুষ নিজেই। কল-কারখানা থেকে উচ্চ মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীল তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সকল গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।

 

 

 

Victor Hess

০৮. মহাজাগতিক বিকিরণ (১৯১১ থেকে)

১৯১২ সালে Victor Hess একটি উষ্ণ বায়ু বেলুনে (অক্সিজেন ছাড়া) চড়ে ১৭,৫০০ ফুট ভ্রমণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিকিরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আরও পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, এই বিকিরণ মহাশূন্য থেকে আসছে। বর্তমানে আমরা জানি মহাজাগতিক বিকিরণের মূল অংশ হচ্ছে প্রোটন, সে হিসেবে তাদের ধনাত্মক আধান আছে।

 

 

০৯. চৌম্বক ক্ষেত্র বিপর্যাস (১৯০৬)

Bernard Brunhes (১৮৬৭-১৯১০) আবিষ্কার করেন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তার দিক পরিবর্তন করে নিজেকে উল্টিয়ে ফেলেছে। ১৩ মিলিয়ন বছর আগের মায়োসিন লাভার প্রবাহ জমাট বেঁধে তৈরী হওয়া মাটির “প্যালিওম্যাগনেটিক” পরীক্ষা করে তিনি এই আবিষ্কার করেন। এর প্রায় ৫০ বছর পর বিজ্ঞানী মহলে তার আবিষ্কার স্বীকৃতি পায়।

ভূ চৌম্বকত্ব

চার্লস লায়েল

 

১০. ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন (১৮৩০-এর দশক)

চার্লস লায়েল তার বহু খণ্ডের “Principles of Geology: An Attempt to Explain the Former Changes of the Earth’s Surface by Reference to Causes Now in Operation” (১৮৩০ ও ১৮৩৩ সালে প্রকাশিত) গ্রন্থে প্রমাণ দেখান যে, পৃথিবী ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি তখন পর্যন্ত বিতর্কিত “ইউনিফর্মিটারিয়ানিজ্‌ম”-কে সমর্থন করেন। এই তত্ত্বে বলা হতো, পৃথিবী বেশ কয়েক ধাপে ধীর বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সে সময় বাইবেল বর্ণীয়ত “ক্যাটাস্ট্রফিজ্‌ম” বেশি গ্রহণীয় ছিল।

 

 

 

 

১১. তেজস্ক্রিয়ামিতিক তারিখ নির্ণয় (১৯০৭)

Bertram Boltwood কোন পাথরের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় পরিমাপের মাধ্যমে তার বয়স গণনার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তার হিসাবে পৃথিবীল বয়স দাড়ায় ২.২ বিলিয়ন বছর। এই বয়স সে সময়ে গৃহীত বয়সের তুলনায় অনেক অনেক বেশী ছিল। বর্তমানে অবশ্য আমরা জানি, পৃথিবীর প্রকৃত বয়স এরও দ্বিগুণ। কার্বন-১৪ সহ বেশ কয়েকটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের মাধ্যমে Boltwood এর গণনা কার্যকর করা যায়। ঐতিহাসিক বস্তুর বয়স নির্ণয়ে সাধারণত কার্বন-১৪ ই ব্যবহার করা হয়।

 

 

 

 

১২. পর্যাবৃত্ত বরফ যুগ (১৯৩০-এর দশক)

সার্বীয় জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী Miultin Milankovitch দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন এবং বরফ যুগের সাথে পৃথিবীর গতির সম্পর্ক স্থাপন করে একটি তত্ত্ব দেন। ঋতু ও অক্ষাংশের ভিত্তিতে সৌর বিকিরণের পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে তিনি জলবায়ুর এই গাণিতিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পৃথিবী-সূর্য জ্যামিতি যেমন কক্ষপথের আকার বা অক্ষের কোণ ইত্যাদির বৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে আগত সৌর শক্তির তারতম্য ঘটে।

 

 

 

গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট

তথ্যসূত্রঃ The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

ভাষান্তরঃ খান মুহাম্মদ