পদার্থবিজ্ঞান (১৩টি)

 

০১. পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (১৬০৪)

এরিস্টটল বলেছিলেন একই সাথে ছেড়ে দিলে হালকা বস্তুর তুলনায় ভারী বস্তু দ্রুত পড়ে। ২০০০ বছরের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। তিনি বলেন, সকল ভরের বস্তুর পতনের হার সমান।

 

এরিস্টটল

 

আইজাক নিউটন

০২. সার্বজনীন মহাকর্ষ (১৬৬৬)

আইজাক নিউটন আবিষ্কার করেন, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরের উপর মহাকর্ষীয় বল প্রয়োগ করে। এর ফলে প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে।

 

 

০৩. গতিসূত্র (১৬৮৭)

আইজাক নিউটন বস্তুর গতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনটি সূত্র প্রদানের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আমূল পরিবর্তন করে দেন। সূত্রগুলো হল: ১) বাহ্যিক বল প্রয়োহ না করলে স্থির বস্তু আজীবন স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সরলরেখা বরাবর সমরেখায় চলতে থাকবে। ২) বস্তুর ভরের সাথে তার ত্বরণের সম্পর্ক F=ma এবং ৩) প্রত্যেক বলেরই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

 

 

 

০৪. তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র (১৮২৪ - ১৮৫০)

বাষ্প ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তাপকে কাজে পরিণত করার সবকিছু বুঝতে সমর্থ হন। তারা বুঝতে পারেন, উচ্চ থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে তাপের প্রবাহই বাষ্প ইঞ্জিনকে সম্ভবপর করে তোলে। পানির প্রবাহ যেমন মিলের চাকা ঘুরায় এটা অনেকটা সেরকমই। তাদের এই গবেষণা তিনটি নীতির জন্ম দেয়: তাপ উত্তপ্ত থেকে শীতল বস্তুতে স্বতস্ফূর্তভাবে প্রবাহিত হয়, তাপকে সম্পূর্ণরূপে অন্য কোন শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব না এবং সময়ের সাথে কোন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হতে থাকে।

 

 

 

০৫. তড়িচ্চুম্বকত্ব (১৮০৭ - ১৮৭৩)

তড়িতের সাথে চুম্বকত্বের সম্পর্ক আবিষ্কৃত হয় এবং এই সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য এক সেট সমীকরণের সৃষ্টি হয়। ১৮২০ সালে একদিন হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড ক্লাসরুমে তড়িত ও চুম্বকত্বের সম্পর্কের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলেন। লেকচারের সময় করা এক পরীক্ষায় তখনই তার কথা সত্য প্রমাণিত হয়ে যায়।

 

হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড

 

 

০৬. বিশেষ আপেক্ষিকতা (১৯০৫)

আলবার্ট আইনস্টাইন সময় ও স্থান সম্পর্কিত মৌলিক প্রস্তাবন উত্থাপন করেন। এর মাধ্যশে তিনি বুঝিয়ে দেন, আলোর কাছাকাছি বেগে চলমান বস্তুতে সময়ে গতি ধীর হবে এবং দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়ে পড়বে। একেই কাল দীর্ঘায়ন ও দৈর্ঘ্য সংকোচন বলে।

 

০৭. ই=এমসি২ (১৯০৫)

ভরকে আলোর বেগের দ্রুতির বর্গ দিয়ে গুণ করলে শক্তি পাওয়া যায়। আলবার্ট আইনস্টাটাইনের এই বিখ্যাত সমীকরণ প্রমাণ করে যে, ভর এবং শক্তি একই জিনিসের দুটি ভিন্ন রূপ। এ হিসেবে খুব কম ভরকে বিশাল পরিমাণ শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এই ভর-শক্তি সমতুল্যতা সূত্রের আরেকটি বড় আবিষ্কার হচ্ছে, কোন কিছুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না।

 

 

০৮. কোয়ান্টাম লম্ফ (১৯০০ - ১৯৩৫)

অতিপারমাণবিক কণার স্বভাব ব্যাখ্যা করার জন্য মাক্স প্লাংক, আলবার্ট আইনস্টাইন, ভের্নার হাইজেনবের্গ এবং এরভিন শ্র্যোডিঙার এক সেট নতুন প্রাকৃতিক সূত্র আবিষ্কার করেন। পরমাণুর ভিতরে ইলেকট্রনের এক শক্তি স্তর থেকে অন্য শক্তি স্তরে যাওয়াকেই কোয়ান্টাম লম্ফ বলে। এই পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটে, ধীরে ধীরে নয়।

 

 

 

০৯. আলোর প্রকৃতি (১৭০৪ - ১৯০৫)

আইজাক নিউটন, টমাস ইয়ং এবং আলবার্ট আইনস্টাইনের গবেষণা ও পরীক্ষণের মাধ্যমে বোঝা গেছে, আলো কি, এটা কিরকম ব্যবহার করে এবং কিভাবে সঞ্চারিত হয়। নিউটন প্রিজমের মাধ্যমে সাদা আলোকে বিভিন্ন রঙের আলোতে বিভক্ত করেন এবং আরেকটি প্রিজমের মাধ্যমে বিভিন্ন রঙা আলোগুলোকে একসাথে করে আবার সাদা আলো তৈরী করেন। এ থেকে বোঝা যায়, সাদা আলো বিভিন্ন রঙের আলোর সমন্বয়ে তৈরী। ইয়ং প্রমাণ করেন যে, আলো এক ধরণের তরঙ্গ এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যই তার রং নির্ধারণ করে। পরিশেষে আইনস্টাইন বলেন, আলোর বেগ সব সময় ধ্রুব।

 

জেম্‌স চ্যাডউইক

 

 

১০. নিউট্রন (১৯৩৫)

জেম্‌স চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন। এটা প্রোটন ও ইলেকট্রনের সাথে মিলে পরমাণু গঠন করে। এই আবিষ্কার পরমাণু মডেলে নাটকীয় পরিবর্তন আনে এবং পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানকে অনেক খানি এগিয়ে দেয়।

 

 

 

১১. অতিপরিবাহক (১৯১১ - ১৯৮৬)

কিছু পদার্থ আছে যারা তড়িৎ প্রবাহে কোন বাধা দেয় না, অর্থাৎ তাদের রোধ নেই। এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার শিল্প ও প্রযুক্তিতে বিপুল আশার সঞ্চার করে। অনেক পদার্থেই অতিপরিবাহিতা লক্ষ্য করা যায়। অ্যালুমিনিয়ামের মত সাধারণ পদার্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাতু সংকর ও সিরামিক যৌগে এই ধর্ম দেখা যায়।

 

 

 

 

 

১২. কোয়ার্ক (১৯৬২)

মারি গেল-মান এমন ধরণের মৌলিক কণার অস্তিত্বের প্রস্তাব করেন যারা একসাথে হয়ে প্রোটন ও নিউট্রনের মত যৌগ কণাগুলো গঠন করে। কোয়ার্কের শক্তিশালী বৈদ্যুতিক আধান আছে। প্রোটন ও নিউট্রন প্রত্যেকের মধ্যে তিনটি করে কোয়ার্ক আছে।

 

 

 

১৩. মৌলিক বল (১৬৬৬ - ১৯৫৭)

স্থূল এবং অতিপারমাণবিক পর্যায়ে সূক্ষ্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়, প্রকৃতির সকল মিথস্ক্রিয়া চারটি মৌলিক বলের মাধ্যশে সম্পন্ন হয়। প্রকৃতির এই মৌলিক বলগুলো হচ্ছে: দুর্বল নিউক্লীয় বল, সবল নিউক্লীয় বল, তড়িচ্চুম্বকীয় বল এবং মহাকর্ষ বল।

 

 

 

 

 

 

 

গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট

তথ্যসূত্রঃ The Science Channel’s 100 Greatest Discoveries

ভাষান্তরঃ খান মুহাম্মদ