|
১.
সর্বপ্রভা
সর্বপ্রভা, তুমি পারো প্রাবল্য দেখে মনোঘোড়া ছুঁতে; ভয় এমন দীর্ঘ, আমি যার
ভয়ে লুকাই প্রকাশস্পৃহা কিভাবে পারো তুমি, এ-ঘোরে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
স্বাভাবিক আচরণ, নিরুদ্বেগ কথাবার্তা; এতো দীর্ঘস্নেহ…কিভাবে পারো তুমি,
কিভাবে বশ করো মনমর্ম যৈবতী এই ভয়ে আমি কাঁপি,
সমর্পণ কতদূর
নেব, কে জানে?...
চতুবিদ্যা শিখিনি, কিছুই পারি না— তাই, অন্ধকার আমার বুকে হাত রেখে ঘুমায়;
চোখ রাঙিয়ে নীরবতাও শাসায়!অন্ধকারের গর্ভে আমারও
তো জন্ম; অন্ধকার থেকে ওঠে
কেনো যে বাড়ে এতো রক্তপিপাসা। যাকে পোড়ালে দৃষ্টিও ক্রোধে ভরে ওঠে… কথার
ফেরে আজকাল লজ্জাও করে—
আমি কি দিনদিন অপরাধী হলাম, কারো লাবণ্য চোখে?
কখনও দেখিনি যাকে, দাঁড়াইনি পাশাপাশি নরম করতল ছুঁয়ে অগোচরে আমি তারে বড় করে
দেখি, নিকটস্থ মনের ভাষায় আজ আপত্তি তুলেছে ‘দেহজাগা নারী’ যে বিষ ঠোঁটে
নাড়ায় আমি কি নষ্ট হয়ে গেছি ছায়ায়? জানে না কিছুই ‘দুঃখ ও জরা’ সর্বপ্রভা,
তুমি পারো, পারো তুমি এভাবেই নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
তুমি যতই নিজেকে গুটিয়ে রাখো, সরে দাঁড়াও, আমার মুগ্ধতা দিনাতিদিন জাগবে
পৃথক আত্নায়; প্রীতিপান আর সন্তরণ সাজে ত্রিশকাল! তাতে কি? আমি নষ্ট হবো
না, সেই পণে ছাই ফোটেছে এখন তার জন্য কি বে-পথি হবো? ভ্রষ্ট হলাম তবে এই পথ
ধরে…সর্বপ্রভা, তুমি পারো প্রাবল্য দেখে মনোঘোড়া ছুঁতে কিভাবে পারো তুমি,
এ-ঘোরে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে!
২.
আঙুলের শাসন
আমার রক্তকণিকা থেকে খুলে নাও পরাজয়সহ মৃত কম্পনগুলো। জানো? টানা পথে বেদনা
বড়ই অভিমানী হলো না দেখে পুরো দেহ ঠুকরে-ঠুকরে খায় আর সীমানা পেরিয়ে ঝরে
সমবোধে। মৃতদেহ, মৃতরক্ত দুটির ধরণ এক! ইচ্ছে করলে তাদের সাথে কথা বলা যায়,
কীভাবে বলবে?— শুধু বলার ভঙ্গি জানা দরকার। হাত কাটলে গড়িয়ে পরা রক্তের
ফাঁকে স্থিরদৃষ্টি রাখি;
দেই না দাওয়াই,
বরফ কাটতে কাটতে হাতের এমনি অবস্থা যে, বরফ কাটলে হাতে আর জল লাগে না। আঙুলের ফাঁকগুলো ফেটে গেলে কলম ধরতে
না পারার বেদনায়
রক্তাপ্লুত
হই, আঙুলের শাসন
তখন হয়ে ওঠে কম্পমান
আরো কিছু দিন যদি এভাবে যায়, আরো কিছু দিন যদি দৃষ্টিসীমার রঙ তীক্ষ্ণ হয়ে
ওঠে, আমার দূষিত রক্তকণিকা খুলে নিতে পারো। প্রবাহিতা, বিরক্ত করো না
৩.
প্রীতিকাল
স্বপ্নঘোরে রত এই আমি, দেখো এ কেমন প্রস্তুতি? করস্পর্শে সর্বাঙ্গ কি
বাজছে! ঝাপসা চোখে সবই দেখি, যেমন
ইচ্ছাহত্যা; লুকানো ফুসফুস; জলীয়
স্মৃতিসহ আত্মবিদ্যা ছাড়িয়ে মানুষকে চেনার! তুমি সবই জানো শুধু
শেখাও ভণিতা,
সমগ্রচিন্তা। প্রীতিকালে সহজেই মিলে অস্থিরতা, সময়চিতা
গত বর্ষায় ভেজা
স্মৃতি জ্বলে, না-ওঠা রোদ আর খাড়াদুপুরের পাশ দিয়ে হাঁটো,
অকারণে আলো খেয়ে বাঁচো ঘুরে ঘুরে মেটাফর তৈরি করো, অপেক্ষা আর কত? আলাভোলা
মোহ তাতে আছে
যত দরজা খুলে দাও সহ্য হয় না ঠিক রাত বারোটা
ঠোঁট ছোঁবার আগে নিজস্ব সময় ধরে রাখতে চাই, যদি বলি রাখছো কি মনে, অর্ধেক
নিয়মে ধরে হৃদয়নির্মাতা। উৎসাহ, কল্পনা ধরে রাখো নিঃসন্দেহে মিলে যাবে দেখো
সঞ্চয়; গভীর রোমাঞ্চ
রীতিনীতিসহ আরো কিছু ত্রুটি, মর্মে গাঁথো, গাঁথো আরো
গভীরে গ্রহণশক্তি
জল খুলে দেখো, ওপাড়ে
তাকাও দেখতে পাও কি রাত্রিবহর?
প্রীতিকাল কীভাবে তোমাকে লুকাই দেহের ভেতর
৪.
নিদ্রাসংশয়
আত্নহননের পর কি হবে, ভাবতে ভালো লাগে না; ক্লান্তি লাগে। অবসর দু’চোখ
মেলিয়া ধরো, দেহাবেগ ঘিরিয়া ধরো তাও নয়; তবে এ-ও জেনেছি
যে কোন উপাখ্যান
মেপে কী কারো অভিযোগ মিথ্যে হবে? হবে না জেনেই
আবেগী হলাম; পথে বে-পথে ঘুরে
জেনেছি নষ্ট চোখে দিনদিন বাড়ছে ঘুমের বয়স
আগুন আমাকে ছুঁতে পারে না, জলও পারে না আলাদা ভাবতে ‘পাপ জেনেও স্পর্শ করি’
পাপ কেনো আগে করিনি? ভাবলেও পতনের ব্যাখ্যা কেউ চায়নি! মিথ্যা, জেনেছো কী?
নিদ্রাসংশ
অস্থিরতা ঠেলেই যাবো; নষ্ট চোখে আর কত জাগিয়া রাখি নিদ্রাসংশয়
৫.
এক ইঞ্চি দূরে
যতদূরে যাই স্বপ্নাসন্ন একটাই সংলগ্নে
দাঁড়িয়ে জেনে ক্রমে-ক্রমে
উজ্জ্বল হতে দেখি অর্ধরহস্য, বোবাহাসি। মেঘের সাথে আমাদের তরল বাসনা জেনে
ফোঁটা ফোঁটা জলশব্দগুলো মিশে যাচ্ছে গায়ে; গোপন
ঘনিষ্ঠতা চেপে
এতেও কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে; থাকে ফিরে আসার ইঙ্গিতও। ফলে তুমি প্রতিইঞ্চি
অনাস্থা মাড়িয়ে হাঁটো, ছায়া ধরে দাঁড়াও! রাস্তায় বিষণ্নরোদ কুড়িয়ে কুড়িয়ে
তোমারও কি অহংকার থির-থিরে বেড়ে গেলো?... রোদে হাঁটলে আমার মাথা ব্যথা বাড়ে
ছায়াও আজ স্বার্থপর হলো, গাছের পাতা নড়ছে না, তাতে
কী?
৬.
সন্দেহ খুলে নাও দু’হাত ছুঁয়ে
বড় সন্দেহপ্রবণ হলাম কারো লাবণ্য চোখে, বাঁধন আপাত তুলে রাখা থাক আসঙ্গমূলে।
মনপাখি কি জানে? নিশ্চেতনা মৃতকফিন যে কার দেহকারুকাজ দেখে উড়ছে চাপাভিমানে।
চাপাভিমান, এসো— এপৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হই, বিরহদিনে আমরাও পালাই। যদি চলে
যাই, সন্দেহ একা দাঁড়াতে পারবে তো? স্বপ্নসঞ্চয়ে
স্বপ্নগাহন না-মিললে দিকদর্শন আশ্বাসে ফুটে; যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে
না, দেহও জানবে না দীর্ঘশ্বাস ছুঁলে।
চাপাভিমান চলো, চলো
মঙ্গলে, নতুন সংসার বানাই। আমাদের সন্তান, সন্ততিরা পাবে তো আশানন্দ
পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকার?
তুমি পেয়েছো কি জলালিঙ্গন, নাকি পেলে পাতার আড়ালে যাওয়া হাওয়াসর্দারি? তবে
আমার আলজিভে হননস্পৃহা এতোটা গভীর যে, কোনো নিয়ম জানে না, জলেও বিসর্জন
জ্বলছে, তুমি টেনে নিয়ে যাও সহঅর্জন; সন্দেহ খুলে নাও দু’হাত ছুঁয়ে
৭.
রূপ খেয়ে নিদ্রা যাই
মন ফুরফুরে তাই, রূপ দেখে, রূপ
ছুঁয়ে নিদ্রা যাই। নিদ্রা এতো অধিক যেন
ইচ্ছেকে ভাবায়। সম্পর্ক, তুমি কৌশলে দাঁড়াও, দেখবে দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলো
কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। তুমি
থাকো অন্যত্র;
অন্যত্র ঘুমাও
ওহ্! বিধি… তুমি কি জানো? তোমার সরলতার ব্যাখ্যা আমি কিভাবে সাজাই!
কাছে
পেলে কিছুই বলবো না, চুপচাপ জড়িয়ে র’বো, দূরে থাকো তাই জোছনা দেখে দেহতৃষ্ণা
মিটাই, অনুভবফুল গোপন ইচ্ছায় তোমাকে ছুঁই...
৮.
দূরদৃষ্টি
ক.
ইচ্ছে হয় কাঁদি! চোখ জিজ্ঞেস করলো, কাঁদবে, জল পাবে
কই? জলটুকু খেয়ে ফেলছে দেহতৃষ্ণা।... তারচে’ ভালো চোখের গভীরতা খুলে ফেলা
হউক, খুলে ফেলা হউক আরো কিছু ঘুম, অদেখা শোকটাও দেখুক, কিভাবে খোলস পরে থাকে
সমপরিকল্পনা
খ.
সেও বিপরীতমুখি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা, আশেপাশে মানুষজন ভালোই আছে এমন
প্রণোদনা অভিমানে খাড়া। আমাকে পাবে দৃষ্টিজঙ্গলে;
দৃষ্টিজঙ্গলে আমরা কি
তবে হারাবো ঘুমের প্রণোদনা ‘অফেরত-ঋণে’
গ.
ইচ্ছে হলে এককাপ চা হতে পারে, চা খেতে-খেতে ভাবা যাবে শুধু কি পিঠ ঠেসে
আকাশ, যানবাহন, হাওয়াভরে পাতার খেলা দেখা নাকি পাতার
আড়ালে রোদের ঝিলিক কিংবা দূর্বাঘাসের উপর রোদের চুম্বন
নাকি দূরদৃষ্টিবনে
নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া...
দূরদৃষ্টিবনে রক্তক্ষরণের
দোষে কেবলই আমার হারিয়ে যাওয়া, দোষের কাঙাল হতে চেয়ে মুহূর্তগুলো
প্রলম্বিত হতে দেখা
৯.
অপরিচিতা
অপরিচিতা,জানার কিছুই ছিল না।
তবুও দেহের ভাষা ভালো বুঝে চোখ। ভালো দেখায়
মুখের সাজগোজ। কানে পাতাদুল, আঙুলে দুটি রিং,
গলার চিকন চেইন
বেবীগোলাপী রঙে
আমার দুর্বলতা এতো-এতো বেশি যে, তাও মিলে গেল জামা পরায়
অধিক চিন্তায় ভুলে গেছি সব, ইদানিং নিজের সাথে কথা বলতে পারি না।
কৌতূহলে
অপরিচিতার চুল দেখি। চুল কতটুকু দীর্ঘ না-হলেও নারী বলা যায়।
ভ্রূ কতটুকু
কেঁটেছেঁটে ছোট বানালে আই-ভ্রূ ছাড়া কিছুই পড়ে না চোখে। ঠোঁটে কতটুকু
সন্দেহ জাগায় বিস্ফোরণ চোখ
কে জানে, কত আগেই ফুরিয়েছে জলঠোঁটখেলা। চোখের
ডানপাশে অস্পষ্ট যে ছোট্ট কালো তিলটা সেখানেই আমি
রয়েছি খাড়া। গালের টোল
দেখতে দেখতে
বুকঅব্দি আর যাওয়া গেল না
অপরিচিতা, কমবেশি সব রহস্যের বস্তু আঁচ হলো ধীরে, কিন্তু তোমার হাসির রহস্য গেল না
বুঝা !...
|