|
২৭.
একদম মনে নেই
আঘাত দাও, মুগ্ধ হই। অপেক্ষাভ্রমে চমকে দাঁড়াই।
রাত্রিপ্রত্যাশায় সারাদিন ঘুরি। আকাঙ্ক্ষায় রাত্রি জাগে না; একাই জাগি।
রাত্রি পরিচয় সর্বদা নিচুপথে
নামো, পতন শেখাও। জানা
গেল ন, ভরা চোখে কত নিষেধ আছে; জানা গেল না; চোখের ভেতর কত সুখ জাগে। কেবল
খুনি করো জলঠোঁট অপরিচিত ঘ্রাণে
মেজাজ ভালো নেই। কিছুই মনে পড়ে না। বিশ্বাসী, তোমার কাজ কি শুধু মন খারাপ
করা? আমাদের মন খারাপ হলে প্রবল তৃষ্ণা চেঁচিয়ে উঠে
ছায়াপাহাড়ের
অতি পরিচিত আকর্ষণসহ তৃপ্তি
যাপনে। আনাগোনা, আদর্শে সুখে থাকা ভালো; আরো ভালো সতর্কিত ইচ্ছায়।
আমাদের নিকটবর্তী দূরত্ব ঠিক যেন কত?...
একটি ফেরত চুম্বনের আশায়
বারবার খুনি বানাও, দাও তাড়া।
দেবী, একদম মনে নেই;
সেখানে তুমিও যে নিরাপদে খাড়া
২৮.
রক্ত ঝরাও, রক্ত গড়াও
কাঁপছে বাতাস! রোদে পাতো হাত। ছায়ার বুকে হাত রেখে আমি আরো গহীনে যাবো,
প্রকাশ্যে তুমিও এসো গহীন বনে... আমাকে কাঁপাও বন্ধু; শুধু কাঁপিও না পুরনো
ক্যাকটাস। কুড়িটি আঙুলের তোলপাড়
ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ো ফায়ারবক্সে;
আমাকে সারিয়ে
তোলো পুরনো অসুখ! পুরনো অসুখ
! পুরোনো অসুখ কেনো যে হাসে অবহেলায়, বোবা কান্নায়
অপেক্ষা, বাতাসে
উড়াও, বাতাসে দাঁড়াও। দশটি আঙুলে আলতা পরাও, বাকি দশ আঙুলে জমাও
অনুভব; জিজ্ঞেস করো কতটুকু ছুঁয়েছে
পাতালের জল? পাতো হাত, যাপন করি আঙুলের হাড়গোড়,
আয়নার বিপরীত খুঁটি
উষ্ণনির্যাস
হাত না-নাড়ালেও রক্ত সঞ্চালন হয়। হাত কাটলে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণা করে
এমনিতেই শুকায়। এটাই সহজ অভ্যাস। রক্ত ধরে নিজের কথা ভাবছি। কাঁপছে
বাতাস কুড়িটি আঙুলের শ্বাস। কেবল রক্ত
ঝরাও, রক্ত গড়াও
২৯.
ক্লান্তি
প্রাপ্তির অনুভূতি চোখ আলোকিত করে! সব প্রাপ্তি ধরে রাখা যায় না তুমুল
আলোড়নে... প্রাপ্তি বেশি কিছু নয়;
অনর্গল কথা বলি পোড়াবুকে। গোপন
রাখতে পারি না মোহভঙ্গিমা, সরলতায় পুড়ে।
শরমিন্দা, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ঘুমাবো। ঘুমুতে যাব
দিনের ব্যস্ততা কেটে
গেলে বেশ ক্লান্তি লাগে। ক্লান্তিটুকু আলাদা করতে না
পারার বেদনায় ঘুম-ঘুম
চোখ। পবিত্র হও ব্যাকপেইনের যন্ত্রণা।
আমাকে ছেড়ে দাও। ক্লান্তি লাগে। ঘুমুতে যাব
৩০.
স্বপ্নপূরণ
ইচ্ছেগুলো স্বর্গ থেকে নেমে আসেনি বলে কাদায় বসে আছে জল; জলের উপর স্থির
পায়ে দাঁড়িয়ে রোদ লুকোচুরি খেলে। দাবী দাওয়া আর কত!
সরো, সরো তো দেখি, আরো দূরে সরে দাঁড়াও... অপেক্ষা পেরিয়ে যাব বলে এখনও
নির্দিষ্ট গতি ফিরছে না! গাঢ় স্বপ্ন থেকে ঘনত্ব
বাড়ছে! বাড়ছে মোহসম স্বপ্নপূরণ, কল্পনা
একমাত্র চোখই জানে ভেতর চোখে রহস্য কত? ছুঁলে
গহব্বর থেকে সে-ও টেনে
তুলে ভেদ করা সর্বস্ব-রহস্য... কোনো চিহ্ন রাখোনি বলে
সমীপবর্তী দাঁড়াই; কৌতূহলে খেলি। আমার ক্লান্তি নাই
ক্লান্ত হাতে মিশে থাকে কাঁটাছেঁড়া দাগ। চোখের ভেতর
ওড়ে হাওয়া, হাওয়ার
ভেতর উড়ে চুল! ধারণা জল ছুঁয়ে দেখা, হতে পারে দারুণ কিছু... পূর্ণ হবে কি
ধারণা, দূরত্ব বিস্তার? ফলে, ধারণাহীন দূরত্ব লুকিয়ে
গেল ভয়ে
৩১.
তৃপ্তিজাত
যেতে চাই, কিন্তু যাব কই?
যাব বলে কোথাও যাওয়া হয় না। ভাস্কর, তারচে’
তুমিই বলো তৃপ্তি
যেন কিসে? কার দখলে ঠাঁয় দাঁড়াও; মিশাও পিপাসু
উত্তরাধিকার। অলস এই আমি, স্বপ্নাঘাত গোপন রেখে বসে আছি। আর দেখছি কিভাবে
তুমি চাপা পড়ো বর্ণে ও ছায়ায়। শর্টকাট দৃষ্টি ফেলে যন্ত্রণা নিয়ে
যাবো স্ব-গৃহে, কিন্তু পারি না। রহস্যময় দুপুরও দাঁড়ায় চৌরাস্তায়
এবার বলো, হাওয়ার জোরে আর কত বসে থাকা; কথা না-বলে কত অপেক্ষা…চাপা,
স্তব্ধতার ভেতর খুন হবার মন্ত্র শিখো, বুক খুলে দেখো, তৃপ্তিজাত ফলের
মিষ্টতা
৩২.
ঋণ
কোথায় যাবো! কোথায় পৌঁছানোর শেষ ইচ্ছা; কথা রাখা যায়নি বয়স কত
হলো? মৃত্যুর
পর পেয়ে যাবে সঠিক বয়স; আঙুলে পরে নিও শেষ গণনা। ইচ্ছে হয় গল্প করি।
বন্ধুদের স্মৃতি বুকে গেঁথে রাখি; কিন্তু পারি
না। বন্ধুরা বিনিময় দিতে চায়।
ঋণ পাহাড়ে জমুক; আমার মৃত্যুর পর বিনিময় চাইবো। বন্ধুরা
মৃতদেহ কাঁধে নেবে। আামি কথা বলবো না। নীরবে ঘুমাবো। মাটিতে
শুয়াবে সবাই।
আমি একা একা কাঁদব
মা-বাবা আমার শ্রেষ্ঠকবিতা,
বন্ধুদের তাই মনে হয়। বন্ধুরা দীর্ঘশ্বাস ফেলবে;
সঞ্চিত হবে দীর্ঘশ্বাস আমার আত্নায়। আমার জন্য কেঁদো না কেউ… কেঁদো না মা-ভগ্নি- জায়া
৩৩.
নিদ্রাপোষাক
প্রতি ভোরে সূর্যটা চুমু খায় পৃথিবীর ঠোঁটে। ইচ্ছে হয় সূর্যকে টেনে আনি;
তুলে রাখি শোবার ঘরে; যেন অন্ধকার লালন হয় চোখে; কিন্তু পারি না! ধীরে-ধীরে
সরোদ চোখ খুলে হাসে। এই রোদে যদি আমার অর্ধেক হাড় খুলে ফেলা যেত; যদি
অর্ধেক হাড় ছুঁড়ে দেয়া যেত শকুনের ঠোঁটে
আমার ধারণা থেকে জেগে উঠছে ব্যথা; নিদ্রাপোষাক। দেহের ভার থেকে দশগুণ বেশি
ব্যথার ভার! পৃথিবী কি জানে
ছায়ার ওজনটা
ঠিক কত?
ছায়াহীন ভাবে হাঁটতে পারি না বলে দূরে দূরে হাঁটি; দূর পথে
হাঁটলেই স্বস্তি পাই। পৃথিবী কি জানে? ছায়া
ভরে আমিও দাঁড়িয়ে আছি
৩৪.
আমি ও দেয়াল
বিজ্ঞানীর ভাষায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ঠিক
যেন কত? যতই হউক,
পূর্ণদৃষ্টি থেকে বেশি নয়। কারণ পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখা,
আর জোড়াচোখে সৌন্দর্য উপভোগ করে বুঝলাম: দৃষ্টির দূরত্ব থেকে সূর্যের
দূরত্ব কয়েক কোটি
গুণ কম
হেলানো দেয়াল আনন্দ দেয়! দেয়ালের কি হৃদয় আছে? হেলানো দেয়ালে প্রায়ই ঘটে
চোখাচোখি। সে আর আমি সটান হয়ে দাঁড়াই; দাঁড়িয়ে দেখি আমাদের প্রস্তুতি আমার
সাথে রোদও হেলে, ছায়াও চুপিচুপি দাঁড়ায়, ভাবি দৃষ্টির ভেতর কখন যে আমিও
দেয়াল হয়ে যাই
৩৫.
শব্দকারিগর
সে-ও কি জানে বাতাসের গতিবেগ ঠিক যেন কত?
মানুষ কি জানে, মানব জন্মের আগেও
বাতাস শব্দের ফেরিওয়ালা ছিল? না-হলে কেন হবে নয়নগোচর করা শব্দকারিগর;
শব্দধারা
পাথরদেবী, অধিক পিপাসায় কালো হও, লোভী হও, চিবুকে শব্দ দমাও। ইশারা জমাও
ত্রিকালে; এই হলো রীতি; রপ্ত করো হৃদয়রহিত
নীরবতার আলাদা শব্দ থাকে; তাই চুড়ির শব্দ, কাচ ভাঙার শব্দ, কলঘরে জল পড়ার
শব্দ, শুনতে ভালো লাগে, শুনি কিন্তু শুষ্কহাত শব্দ বাজে না! শব্দ বাজে না
করতলে
টাঙানো দেয়ালঘড়ি, নিঝুম অন্ধকার, ঘুমাবো এখন, শব্দ করো না
৩৬.
দূরে থাকা ভালো
নয়
আশার প্রস্তুতি দেখে আঙুল যদি পূর্ণতা পায়, তবে পান
করো আধেকচোখ, চোখের অর্ধেকভাষা। বাকি অর্ধেকে আমি
সংসারী হবো; কেউ যদি শিখায় আদালেবু দিয়ে মাছ রান্না…
জানি রান্নাও শিল্প। রান্না শিখবো বলে মাঝে-মাঝে ভাবি, হবো কি সংসারী? ঘোর
কেটে গেলে সবই আকাশ কুসুম কল্পনা। পাছে ভয়, বেশি
সংশয়, কবিতার কি হয়?...
চক্রপথে এতো উৎসাহ, এতো অপেক্ষা দেখে খালিপায়ে হেঁটে-হেঁটে আমরাও মিশে যেতে
পারি ছায়াবাড়ি। মিশে যেতে পারে আমিসহ মুখের তীব্রভাষা। দূরে থাকো বলে এতো গর্ববোধ!
এমন অর্জন তবে কঠিন কল্পনা
গর্ববোধে ধরে
রাখছো কী? ঋণের দেনা। ঋণ কি কথা বুঝে, অনেক ঋণে যে
রাত্রি জ্বলে! ফলে, চলে
যাবার পথে আমার সাথে চোখ দৌড়াচ্ছে; হ্যালো-হ্যালো… এবার তবে দেখি অসুখটা
কোথায় জন্মালো?
৩৭.
আনন্দ শিরা
ভালবাসার সাথে স্পর্শের সম্পর্ক তালপাখাহাত,ভরা
মধুমাস, দু’হাতের চাপে লোলানো আমলকিফল,
চিনাবাদাখোসা,
তারচে' বলো আখ-খেজুরের রস, তালের সন্দেশ,
যত মুগ্ধতা খুঁটে-খুঁটে
পড়ো, উপভোগ করো, বুঝাও, দুর্বলতাগুলো
উচ্চসুরে পাঠ করো, তাকেও জানতে দাও, হাতকলম ধরাও সহজ
ভাষায় শেখাও
আমিতো কিছুই শিখিনি, দেখিনি কিছুই তোদের কৃপায়, তাদের বলে দাও আমি শুধু
ভাত-ডিম-ডাইল রাঁধতে জানি, একসাথে স্পাইস দিয়ে মাংশ
রাঁধতে জানি আর অবসর পেলে
দূর আকাশে তাকাই,
উঁচুউঁচু দালান দেখি, দেখি
রবি-শশী।
কথাকলি, তুমি তো সবই জানো, বেস ভালো খোশ আমদেদ তোমাকে…বাল্য-ফ্রেন্ডশিপ রাগ
করো না, তুমিও ভাল থেকো
শ্রী কারণ গত পরশু সি-ট্যাকটাইল শিরাগুলো চিনে আজই
প্রথম তাকে ছুঁয়ে
ভাল দেখার কিছু ধারণা পেলাম, গবেষকদের মতে
ভাল সেকেণ্ডে ৪/৫
সেন্টিমিটার একটি
নির্দিষ্ট গতিতে স্পর্শ করলে আনন্দের নার্ভগুলো সক্রিয় হয়ে
ওঠে। বরফের দেশে ‘বয়সঃসন্ধির উড়নচণ্ডি’ স্পর্শ ছাড়া কি কিছু ভাল লাগে?
৩৮.
জলবরফ
আগ্রহ, নিঃশব্দে
যত্রতত্র ভাল। সবই
ভাল দেখি, শুনি। শুধু শুনি না চুলের আওয়াজগুলো দলা পাকিয়ে
দূরে দাঁড়াও; পুনরায় জাগিয়ে
আনো রহস্যময় নিঃসঙ্গতা। ভাবুক
পৃষ্ঠাগুলো একত্র হলে
ভাল জ্যোৎস্নায় মিশে থাকে ছায়াপালকসহ হাজারতারা।
দৃষ্টি থেকে খসে পড়ে কলঙ্ক, হারানো রূপ,
ভাল লাভাতুর নীরব ভঙিমা… এইবার
ভাল দেখা
যাবে রাত্রিফুলগুলো কিভাবে লাফিয়ে ওঠে খোলা জানালার শিকে
ছিঁড়ে-খুঁড়ে দেখো, অনির্দিষ্ট কাল এবাবেই মিশে থাকা; এভাবেই খুঁজে দেখা ধূসর
অন্ধকার। বাঁকাপথ হাওয়ায় ফেরে, আঁকাপথ হেঁটে আসে জোনাকপোকা; জোনাক আসার কি দরকার ছিল? কিছু
বললে না… ফলে আঙুলের ডগায় খেলছে ধুলা, ধুলার আঁচলে মাপছি
সীমা। আমাকে টেনে রাখো হাওয়ার ভেতর যেনো গোপনে
দোলে সব চাহিদা-দাবিদাওয়া।
এভাবেই বসে থাকো আজ
বাধা দিও না
শুধু রেখাঙুলিতে মিশে থাকে বরফের কণা। এদেহ চুষে নিচ্ছে জলবরফ, দেহের পুরোটা
আগুন-ফাগুন… চোখের ভেতর পুষে রাখি ক্ষণ, মুহূর্তআঁখি, বিষের বাঁশি। নীরবতা
তুমি সয়ে যাও, সহো
একাকী
|