৩৯. ক্ষমার চেয়ে আর কিছু
শ্রেষ্ঠ হতে পারে না বলে
কেন যে বাড়ছে না খুঁটিনাটি দুঃখবোধ।
ক্ষতভরা হারানো আশা,
আমার আত্মা জমে নিষ্ফল চিবুকে। পাশাপাশি থেকে বিশ্বাসে জমাই কথা, অভিমানী
দেহ বদলা নিতে চুপচাপ ডুবে আছে বিশ্বাসে। হারানো আশাই অন্ধকারে ঘুমায়, আমাকে
শোনায় কবিতা। তুমি পড়ো, আমি কান ভরে শুনি, দেখি কোথায় লুকানো বিশ্বাস,
নিষ্ফল চিবুক, দুঃখবোধ, এতো এতো মুগ্ধতা... ৪০. জুতোর
সাথে খাতিরটা বেশ পুরনো, সে আর আমি একসাথে অনেক পথ হেঁটে
যে অভিজ্ঞতা
সঞ্চয় করেছি। পুরোনো জুতোগুলোর কথা আজ বেশি মনে পড়ছে! ৪১. শিশু যখন কাঁদে, মা
বুকের প্যাঁচ খুলে স্নেহভরে নিরন্ন মুখে স্তন ধরে চেপে; শিশু কোল জুড়ে হাসে…
কান্না থেমে যায়! ও-মা, তুমি স্তনপাত্রে রেখেছো জন্মঋণ। দিনের পর দিন আগলে
রেখেছো প্রাণ গোপন জঠরে, তোমাকে ভালোবেসে পঞ্চমদিন চুরি করেছি দীর্ঘজীবন!
পরজন্মে শোধ হবে কী? তোমার
দুগ্ধঋণ… ৪২. কতটুকু আহত হলে
দীর্ঘ চুলে? কতোখানি কৃতজ্ঞতা ডিঙিয়ে ছড়ালে জল
নীরবে। যিনি পাশে
দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর ক্লান্তি দেখে পায়চারি করো; ইচ্ছেগুলোকে নীরবতা মাখিয়ে
চেপে ধরো বুকে... ৪৩.
ব্যথার বিপরীতে দেখি ‘চারদিক্ জুড়ে কালো-কালো চোখ’ আমি নিশ্চুপ! তোর
খেদমতের পর কামুক চোখ হেফাজতে রাখি… রইদে আশা পুষি আর আনন্দ পাওয়ার উৎস
খুঁজতে দেখি সারি-সারি প্রবলেম! অনেক জায়গা খালি, আমারও অরুচি। শুধু তোর
তাকানোর টাইম নেই হলুদিয়া পাখি... তোর সামনে
দাঁড়াই, শীষ শুনি,
নিজের ছায়া মাড়িয়ে হাসি।
বাদবাকি
ঘাসে ফেলে আসি কখন ফুটবে সে, আমাকে দেবে নতুন চাকুরি। শীত
! অরে-শীত
! শীত-রে ! তোকে বুকে চেপে সময় শাসন লিখতে শিখতে মরে যাওয়ার
জন্যই বাঁচি
! তুই যে বলিস বালক হৃদয়ে একা
দাঁড়িয়েছি ভাবিস অন্য আপদ্! ৪৪. নীলভয় পাথর চাপায়
যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়! বিবর্ণরেখা আমাকে গ্রহণ করতে চায়;
প্রতীক্ষায়। পুরো অধিগ্রহণ যাকে বুঝায়। দেহবারতা,আমাদের পরিণাম কি
এভাবেই নামতে
শিখছে আঁধার ছায়ায়। ভয়, দাহতা নিভে গেলে আমাদের জিজ্ঞাসা গলে
গলে কতোই হবে আর একটুকরো মোম ৪৫. হারানো কান্না এবয়সে পুরনো শ্বাসের ভেতর বাঁচতে পারে না। যা আগে কখনো বলা হয়নি মৃদুকন্ঠে
তাও বললে যতটা প্রয়োজন গ্রহণ করো আমায়; প্রাত্যহিক কান্নায়... অসহায় করো না
বুকপকেটে ফেলে। জলে গাঁথা শাদারুমাল আর করাত কলের পাশে সর্বদা আরেক
বেদনা... ক্ষতের মতন হাড়ে
গাঁথি ঘুরে ঘুরে
পর্দা আড়ালে দীর্ঘশ্বাস
। অতীতের
চোখে প্রশ্নহীন দূরত্বে ঘুরছে নিজের খামখেয়াল। দেহের ভেতর দুর্দিন ঘুরে
ঘুরে প্রত্যাখ্যান, পুরনো দিনের গান তখন তোমার কাছে জল মানে বৃষ্টি; বৃষ্টি
মানে জল ৪৬. অনীহা
ছিল তবু কে যেন স্মিত হাসির পূর্ণতাটুকু ভয়ে ভয়ে দাঁতের ফাঁকে রেখে পরাজিত
হলো। ছায়ার পাশে মিলেমিশে ভেবেছিল নীরব কোলাহল ছাপিয়ে যাবে শ্বাসে-সর্বনাশে। আমাকে খুঁজে নিতে নিতে বেদনা ছড়াবে লুকোবার স্থানে। কিন্তু স্মৃতিচাকায়
তোমার দাঁড়িয়ে থাকার দ্বিধা, লক্ষ্য অবহেলা, আর কত?... হয়তো ভালো; দূরলক্ষ্য করে দাঁড়ানোর
পরেও কোন কারণ ছিল না আজ দু’জনের বনে-বাদারে ৪৭.
উল্টা মরকের বীজ! স্বরনালী ছিঁড়েছিঁড়ে চৈত্রপরবশে মনের ভাবগুলো দীর্ঘকাল বাঁচার আশায় মুক্তহৃদয় পাঠ হতে পারে। এরকম ভাব করে সে-ও জানতে চায় কতটুকু নিরাপদ ছুঁলে বুকদেহে জাগে না মৃত্যুভয়। প্রতীক্ষায় তাকে তাড়ানো যাবে কি? সার্কাসে-এসেন্সে কিংবা স্বয়ং বাগানবাড়ির ছায়ায়! জন্ম নেয়া একান্ত যতকথা তত আমার পূর্ণতা। বিপরীত সুতোর মতো ছুটে নিঃশ্বাস, টেনে নিচ্ছে চিবুকের ছাট; বিশ্বাসে চমকাচ্ছো শীতল বাতাসে ঢুকে ৪৮. কাহিনী শেষ হবার পূর্বেই একটি অনুভব শ্যামবাজারে আলাদা হতে-হতে অস্পর্শ নুড়িপাথর কুড়াতে কুড়াতে রঞ্জন ভাবে শুশ্রূষা কীভাবে গা-ঘেঁষে বেঁচেছে এতকাল! প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে; খুব কাছাকাছি ছিলে, আছো, থাকবে। সবই ঠিক আছে। তবুও সন্দেহ। পূর্ণসন্দেহ... পূর্ণসন্দেহ, সে কথাই ভাবছি অর্ধেকের চেয়েও কম বয়স, সত্তরে। ভাবনা যত আগে আসে
তত ভালো। যৌবনের ভাবনাগুলো ফুরফুরে বেশি মনে পড়ে, যেমন আশা ও ইঙ্গিতে। এখন
কতই-বা বয়স
হল, মাত্র ত্রিশ! এবয়সে... মনে রেখো, চোখ খুলে বলো— কাহিনী শেষ হবার পূর্বে সবই জমিয়ে রাখো, প্রতিদিন
সনাক্ত করো মৌলিক পদ্ধতি । শুধু চিহ্ন রেখে যেও না, আগামীকে ইতিহাস
হবে ৪৯. একটি কান্না সলাজে হাসতে দেখে তুমি ছোটাছুটি করো চিলেকোঠায়, উঠোনে। দেখো আমি কেবল হাওয়ারূপে পাখিদের কন্ঠ শুনে চারপাশ ঘুরি; ঘুরে-ঘুরে স্মৃতিস্পর্শ অবলোকন করি, সগৌরবে খুঁজি দেহসুরসহ গোপনমোহ। মুখ ভর্তি নীরবতা মেখে একটি কবিতা লিখবো বলে কতশত ইশারা খুঁজি চোখের গহ্বরে কি করে যে দিনের রূপ ফেটে ওঠে রোদের ভেতর! সন্নিকটে চতুর আকাশ চমকাতে চমকাতে ছায়াভরে দাঁড়ালে ঝরঝরে রোদ রহস্যভেদ করে নীরবে ঘুমায়; ভরা মজলিসে কি করে বলি সমস্ত রেখাই একদিন সরলরেখায় দাঁড়ালে আমাদের উজ্জ্বল চোখ অন্ধকারে ঘুমাবে; আমরাও জেগে র’বো অকারণে; আদর চোখে একটি কান্না সলাজে হাসতে দেখে সেদিন দশখানা বৃষ্টিফোঁটা
জমেছিল তোমার হাতের
প্যাঁচসহ জানালায়, পর্দার আড়ালে ৫০. ভাবার
যত বিষয়ই থাক; ঘোর অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পুরনো গান শুনলেই কেনো জানি তোর
মুচকি হাসির মুখোচ্ছবি দূর অন্ধকারে উড়ে পিপাসাধিক মৌন হাওয়ায়! মৃদু সংক্রমণ আর বিরহবিলাস একই গতিপথে হেঁটে যাচ্ছিল
বলেই কি চোখকেও আলোকিত করে? সব পথ জানাশোনা ছিল, তাই পথ চিনে কত আগেই চলে গেলে অনেক দূরে... কেনো যে
এখনো মাঝেসাঝে আসিস ঘুমঘুম চোখসহ গানের পরতে হেসে ও ভেসে! কিছুই অবশিষ্ট ছিল না বলে অধিক পিপাসা... তাড়া যত এভাবেই শেষ হবে দিনের পর দিন মিশিয়ে যেমন, পুরনো বছর। খুব কাছ থেকে দেখছি টান-টান আওয়াজ, ইচ্ছে বিরুদ্ধে টানছি; টেনে রাখছি ঐচ্ছিক নিয়ম… কেন যে ঘুমের ভেতর কৌতুহল করিস আরো একটি ঘুম; আপেল বাগান
৫১. দেহের
সাথে মিশে যাচ্ছো তাড়া! অনতিদূরে আসা-যাওয়া মানে আদিপ্রকরণ, শালবন,
বিবিধ হাওয়া। সর্বশোক ক্রমে ক্রমে জেগেছে অপেক্ষাগাছে,
বোঝা গেল এইখানে তুমিও উপলব্ধিতে ঘুরো আর
স্পর্শে মিশাও যৌথ রহস্য, নীলরঙ, কামনাফুল, আবছায়া।
এভাবেই আগ্রহ সরে যেতে যেতে বাড়ে মৃদুলুপ্ত উষ্ণতা! বাড়ে দায়বদ্ধতা, ভরা
আগ্রহ, আর্তনাদ... ৫২.
মুখশ্রীকে দেখে
চোখজোড়ায় অদ্ভুত স্বপ্ন চৌদিক দখল করে মিশে আছে, চোখ
খুললেই ‘আপনে গোপনে’ আগ্রহ বাড়াও, সুরে বাজাও রহস্যবাঁশি! চেনারহস্য কেনো
যে আমাকে তাড়ায়
মধ্যেজলে?— তারচে’ ভালো অপবাদ দাও আর এসো, বাঁধন
টুঁটে চেপে ধরি চেনাগন্ধ, ভীতি
আমাকে জাগাতে চাও তুমিসহ শত-শত সন্দেহআঘাত ৫৩. মন খারাপের আধুনিকতা তখনও
সে কথা বলে-টলে আমাদের বুঝাতে চাচ্ছো চোখ আশ্চর্য সুন্দর এইকথা আমরা সকলেই
মানি; অথচ দূরে যাব বলে বন্ধ চোখে নিজেকে দেখিতে পারি না। হারিয়ে যাওয়া
স্মৃতিগল্প ঝেড়ে কিছুই ভুলতে পারি না বলে লক্ষ মাইল দূর থেকেও মনে হয় এইতো
মিশে আছি পাশাপাশি ক’ক্রোশদূরে। তোমাকে বলি— আমাকে পাহারায় রাখে দিনের
কর্মব্যস্ততা, দাঁড়াতে বলে সুদূর
কল্পনাসহ মন খারাপের আধুনিকতা ৫৪.
খোলা
চোখে আমি
এত
চাওয়া ছিল না তবুও জল শামুকের ঠোঁটে লুকাও মেঘ, নিজেও লুকাও স্বেচ্ছায়!
ফলে, ইচ্ছাছলে জোড়হাত খেলে ধৈর্য্যকে করনি
বারণ। লজ্জাবতী, লুকাও দেহ,
লুকাও বুকের কাঁপন। আমি গল্পের ভেতর হাঁটি, ভুলে যাই আশা ছাড়া আর কিছু মনে
থাকে না। মনে না-রেখেও চোখের উপর সাজাও নীরবতা, সাজাও দৃঢ়রাত্রিবাদ
৫৫.
ধন্ধ
: কবিতা ও গান
গানে
মাখামাখি সুরে আকাল, কবিতার ঘোরে নেচেছি বহুকাল... এখন শুধু জ্বালা, বইয়ের
পৃষ্ঠায় তোর মিথ্যুক স্মৃতি, কাউকে বলিস না কেনো তুই হ’লি একেলা ৫৬.
আশারা ও দিচ্ছে পাহারা
একা
ঘরে, একাকী বেজে ওঠে কিছু নীরবতা, কিছুটা দীর্ঘশ্বাস। এই সুযোগে কথা আর
বিষণ্ণতা নিরাপদ ভেবে সুঁইয়ের ছিদ্রপথে তুলে রাখছে ডরালোক হাওয়া; ফলে
স্মৃতিচোখ খুলে রাখছে পোষাপ্রস্তুতি অতীতজ্বলা... রূপগল্পের ভেতর এমন বধির
হবার কথা ছিল কি-না জানতে আশারা দিচ্ছে পাহারা |