৩৯.
খুঁটিনাটি দুঃখবোধ

ক্ষমার চেয়ে আর কিছু শ্রেষ্ঠ হতে পারে না বলে কেন যে বাড়ছে না খুঁটিনাটি দুঃখবোধ ক্ষতভরা হারানো আশা, আমার আত্মা জমে নিষ্ফল চিবুকে। পাশাপাশি থেকে বিশ্বাসে জমাই কথা, অভিমানী দেহ বদলা নিতে চুপচাপ ডুবে আছে বিশ্বাসে। হারানো আশাই অন্ধকারে ঘুমায়, আমাকে শোনায় কবিতা। তুমি পড়ো, আমি কান ভরে শুনি, দেখি কোথায় লুকানো বিশ্বাস, নিষ্ফল চিবুক, দুঃখবোধ, এতো এতো মুগ্ধতা...

অপেক্ষা, তুমি আততায়ী। নীরবে পুড়ো, একেলা পোড়াও রাতদুপুরে। ভরা বর্ষায় টেনে রাখো মেঘের পোশাক। আমাকে বানাও একা বৃষ্টিমমি... ফলে অতি সহজেই আমি পেয়ে যাই সফলতা আমি পেয়ে যাই পুরনো দিনের বাকল। দেহকাণ্ডসহ শ্রুতরূপে টেনে রাখি উষ্ণবৃষ্টি অসহায়বোধ

মর্মসোপান। ক্ষমার চেয়ে আর কিছু শ্রেষ্ঠ হতে পারে না বলে একা তুলে আনতে বলো না বন পথের অসহায়। তারচে বলো আমি প্রথা ভেঙে দেবো। যদি মেঘ হও, বৃষ্টি হও, স্নাত হও উড়াল হাওয়া
 

৪০.
খাতির

জুতোর সাথে খাতিরটা বেশ পুরনো, সে আর আমি একসাথে অনেক পথ হেঁটে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। পুরোনো জুতোগুলোর কথা আজ বেশি মনে পড়ছে!

শীতের দেশে আজই প্রথম ৩০ ডিগ্রি তাপ। মাত্রা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো এতো দিন ধরে পাশে আছি, আজই প্রথম আমাকে সাথে নিলে; এতো দিন কেনো নাওনি? কালো হলাম বলে?… আমি কিছু বলি না কিছু, যদি তার বুকে ঘাম ঝরে…

ভাবছি, অন্যসব জুতোজোড়া সরিয়ে রাখবো। কালো জুতোকে পাশাপাশি রাখা দরকার, আমি ছাড়া সে কোথায় যাবে…
 

৪১.
দুধ ও ভাতের সন্তান

শিশু যখন কাঁদে, মা বুকের প্যাঁচ খুলে স্নেহভরে নিরন্ন মুখে স্তন ধরে চেপে; শিশু কোল জুড়ে হাসে… কান্না থেমে যায়! ও-মা, তুমি স্তনপাত্রে রেখেছো জন্মঋণ। দিনের পর দিন আগলে রেখেছো প্রাণ গোপন জঠরে, তোমাকে ভালোবেসে পঞ্চমদিন চুরি করেছি দীর্ঘজীবন! পরজন্মে শোধ হবে কী? তোমার দুগ্ধঋণ…

ভাত আমাকে আর ভালোবাসে না! ভাতফুল দুধঠোঁটে হাসে; চিবুক খুঁটে খুঁটে খায়। ভাতভাই তুমি কি ক্ষুধার রহস্য বোঝ? জানো কি ফুটপাতে যারা ক্ষুধা খেয়ে ঘুমায়, আমি তাঁদের মেজভাই… তুমি একবার বলো, ক্ষুধার কষ্ট কেমন? আমাকে ক্ষুধাগাছ বানালেই ভালো হতো; ভাতজন্মে শোধ হতো জন্মের দেনা

ভাতবন্ধু তুমি পাঠ করো ক্ষুধার নামতা; আর আমি ক্ষুধাতাপে নষ্ট করি খাদ্যনালী, খাদ্যাভ্যাস, ক্ষুধা পেলে থালাও কান্না জুড়ে দেয় ভাতের নাড়াচাড়া দেখে

ও-মা, তুমি কেনো যে আজীবন আমাকে বানিয়ে রাখলে না দুধেরসন্তান
 

৪২.
কৃতজ্ঞতা

কতটুকু আহত হলে দীর্ঘ চুলে? কতোখানি কৃতজ্ঞতা ডিঙিয়ে ছড়ালে জল নীরবে। যিনি পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর ক্লান্তি দেখে পায়চারি করো; ইচ্ছেগুলোকে নীরবতা মাখিয়ে চেপে ধরো বুকে...

তুমি কি জানো; বৃষ্টি নামার আগে একটি অকৃতজ্ঞ হাত তোমার বুকের উপর ডানাভরে কেনো উড়ে গেল?

কৃতজ্ঞতা, শুধু আমি উড়ছি না ডানায়। প্রেরণা পেলে আশার আকাশ জুড়ে দু’দণ্ড কথা বলবো; আরো বলবো কলঘরে যা শিখছি শাওয়ারের জলে...। ভাবি, যদি না-পাই তারে, মজে যাওয়া দুপুরে; গুঁড়িবৃষ্টিতে ভিজে সে কি দাঁড়াবে? চোখ মুদে কিংবা খোলা চোখে নেশাঘুম টেনে-টুনে বৃষ্টির দিনে

বৃষ্টির দিনে দীর্ঘ চুলের পাশে দাঁড়াবে না কেউ স্বপ্ন-সমুদয়-যত-বোন কৃতজ্ঞ হাতে খুলে দেবে না কেউ তোকে, ভাঁজ করা স্ব-দেহের কাঁপন
 

৪৩.
বিবৃতিগুচ্ছ

ব্যথার বিপরীতে দেখি ‘চারদিক্ জুড়ে কালো-কালো চোখ’ আমি নিশ্চুপ! তোর খেদমতের পর কামুক চোখ হেফাজতে রাখি… রইদে আশা পুষি আর আনন্দ পাওয়ার উৎস খুঁজতে দেখি সারি-সারি প্রবলেম! অনেক জায়গা খালি, আমারও অরুচি। শুধু তোর তাকানোর টাইম নেই হলুদিয়া পাখি... তোর সামনে দাঁড়াই, শীষ শুনি, নিজের ছায়া মাড়িয়ে হাসিবাদবাকি ঘাসে ফেলে আসি কখন ফুটবে সে, আমাকে দেবে নতুন চাকুরি। শীত ! অরে-শীত ! শীত-রে ! তোকে বুকে চেপে সময় শাসন লিখতে শিখতে মরে যাওয়ার জন্যই বাঁচি ! তুই যে বলি বালক হৃদয়ে একা দাঁড়িয়েছি ভাবিস অন্য আপদ্!

এই যে পঁচিশে এসে উনত্রিশের আর মাত্র ক’দিন বাকি শীতের দেশে! সর্বনিম্ম মাইনাস ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা শরীর ঘেঁষে কাঁপানো শীত লাই পেয়ে পেয়ে বিনা বাঁধায় জামার ফাঁক-ফোঁকরে হাঁটে তা কি সহ্য হয় সিগ্রেটের শেষ টানে। সিগ্রেট শেষ হলে হাতে হাত ঘষি ব্যথা-আনন্দের সাথে কোলাকুলি করি, এপাশ ওপাশ দেখে তর্ক জুড়ি, তারাও কথা কয়, হাসায়-ভাসায়
 

৪৪.
দেহশিল্প

নীলভয় পাথর চাপায় যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়! বিবর্ণরেখা আমাকে গ্রহণ করতে চায়; প্রতীক্ষায়। পুরো অধিগ্রহণ যাকে বুঝায়। দেহবারতা,আমাদের পরিণাম কি এভাবেই নামতে শিখছে আঁধার ছায়ায়। ভয়, দাহতা নিভে গেলে আমাদের জিজ্ঞাসা গলে গলে কতোই হবে আর একটুকরো মোম

আহত করো না প্রিয়লজ্জা… যতক্ষণ তুমি বাজুতে রহিয়াছো খাড়া। তোমার দেহ- বাতাসের দোলায় উৎকন্ঠা-অপারগতা নিষ্ক্রিয় লাগে এই আমি আত্মতুষ্ট শীতরাতে। পরিতাপের ভাষা সে-ও জানতে চায় ভরা হৃদয়াঘাত যতটা না জেনেছে পিপাসা প্রস্তাব

হতাশাবোধ, অন্ধকার চারপাশখানি জুড়িয়া শুয়ে আছে! হে স্বপ্ন বিকাশ, অশ্রু খোলো, খুলে ধরো তোমার ত্রস্ত জিজ্ঞাসা। আগেও জেনেছো অন্ধকারের আমার অধিকার। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখলেই সমবিলাসী বাতিঘর মুখরতা ভেদ করে জেগে ওঠে অদৃশ্য হাওয়া; আলো-আঁধারে আমাকে স্থাপন করে নাও মনসায়; দেহশিল্প বেদনায়
 

৪৫.
উপাখ্যান

হারানো কান্না এবয়সে পুরনো শ্বাসের ভেতর বাঁচতে পারে না যা আগে কখনো বলা হয়নি মৃদুকন্ঠে তাও বললে যতটা প্রয়োজন গ্রহণ করো আমায়; প্রাত্যহিক কান্নায়... অসহায় করো না বুকপকেটে ফেলে জলে গাঁথা শাদারুমাল আর করাত কলের পাশে সর্বদা আরেক বেদনা... ক্ষতের মতন হাড়ে গাঁথি ঘুরে ঘুরে পর্দা আড়ালে দীর্ঘশ্বাস অতীতের চোখে প্রশ্নহীন দূরত্বে ঘুরছে নিজের খামখেয়াল দেহের ভেতর দুর্দিন ঘুরে ঘুরে প্রত্যাখ্যান, পুরনো দিনের গান তখন তোমার কাছে জল মানে বৃষ্টি; বৃষ্টি মানে জল

মিলেমিশে থাকার লোভে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোমার সামনে কোন কথাই সহজে বলতে পারি না; কোন কথায় দ্বিমত নেই তর্কে-বিতর্কে কথা বাড়াই না কারণ তর্কে-বিতর্কে আমাদের দূরত্ব বেড়ে যায় তিন-চার গুণ তোমার প্রথা-কথা-টথা শুনে হাসির ভেতরে তাকাই; হাসলেই খুন হয়ে যাই পূর্বাপর... ঘুমের ভেতর শরীর জ্বলে না পুড়ে না; শেষ বেদনা টুকরো হিমের মতো ঘুরায়

সুরে-সুরে শরীর বেয়ে ওঠে হারানো কান্না দিবারাত্রি মন খুলে শ্বাস টানিনি, তবু গা-পুড়ে যাচ্ছে ১০৪ ডিগ্রী জ্বরে মুক্ত করো যতকথা; বিব্রত করো না দ্বিধা উষ্ণাকারে
 

৪৬.
ন্ধি

অনীহা ছিল তবু কে যেন স্মিত হাসির পূর্ণতাটুকু ভয়ে ভয়ে দাঁতের ফাঁকে রেখে পরাজিত হলো ছায়ার পাশে মিলেমিশে ভেবেছিল নীরব কোলাহল ছাপিয়ে যাবে শ্বাসে-সর্বনাশে আমাকে খুঁজে নিতে নিতে বেদনা ছড়াবে লুকোবার স্থানে কিন্তু স্মৃতিচাকায় তোমার দাঁড়িয়ে থাকার দ্বিধা, লক্ষ্য অবহেলা, আর কত?... হয়তো ভালো; দূরলক্ষ্য করে দাঁড়ানোর পরেও কোন কারণ ছিল না আজ দু’জনের বনে-বাদারে

যদি বলি তোমাকে চিনলাম জোড়াচোখে মনোকষ্টের আড়ালে শ্বাসকষ্ট টেনে টেনে আর্জি হাসির ফাঁকে-ফাঁকে... কঠিনশ্বাসে বলছি জীবনের কথা; যত পারো উড়ো ক্ষোভে-লোভে-সন্দেহে প্রকাশ নেব হাড়ের রূপ-বৈচিত্র; নড়াচড়া পতনের দৃশ্য; মুহূর্তে বিন্দু বিন্দু অভিযোগ দেহের ভেতর বর্জ্য জমেছে ভয়ে আর্তে...

বোকাসোকা অনীহা ছিল তবু ঋণের দায়টুকু ফিরিয়ে নিলে স্বপ্নমোহে, ভয়ে ভয়ে আমিও অতীতের মতো জেগেছি ঘষামাজা বুকে তীব্র সন্দেহে
 

৪৭.
প্রয়োজনহীন

উল্টা মরকের বীজ! স্বরনালী ছিঁড়েছিঁড়ে চৈত্রপরবশে মনের ভাবগুলো দীর্ঘকাল বাঁচার আশায় মুক্তহৃদয় পাঠ হতে পারে এরকম ভাব করে সে-ও জানতে চায় কতটুকু নিরাপদ ছুঁলে বুকদেহে জাগে না মৃত্যুভয় প্রতীক্ষায় তাকে তাড়ানো যাবে কি?  সার্কাসে-এসেন্সে কিংবা স্বয়ং বাগানবাড়ির ছায়ায়!  জন্ম নেয়া একান্ত যতকথা তত আমার পূর্ণতা বিপরীত সুতোর মতো ছুটে নিঃশ্বাস, টেনে নিচ্ছে চিবুকের ছাট; বিশ্বাসে চমকাচ্ছো শীতল বাতাসে ঢুকে

 
এমন ভাব ধরে বসে আছো শ্বাসে, দূরে ছায়া লম্বা হবার কালে জিভ কথার  ধাক্কা সামলাতে না-পেরে এতকাল পরে বলবে কী?  পরিচিত অহংকার কেউ দেখবে না সন্ধ্যা নামার আগে ...  ফলে চেনা-জানা স্বপ্নাবেগগুলো জোৎস্নারাতে আকাশে ঝুলে থাকে

কেনো যে ভান ধরে বসে আছো, আমাকেও দাঁড়াতে বলছো বুক চেপে মনের সন্দেহে এখন ওইখানে বসে থাকা! তারও কী প্রয়োজন আছে?
 

৪৮.
কাহিনীর পূর্বকথন

কাহিনী শেষ হবার পূর্বেই একটি অনুভব শ্যামবাজারে আলাদা হতে-হতে অস্পর্শ নুড়িপাথর কুড়াতে কুড়াতে রঞ্জন ভাবে শুশ্রূষা কীভাবে গা-ঘেঁষে বেঁচেছে এতকাল! প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে; খুব কাছাকাছি ছিলে, আছো, থাকবে। সবই ঠিক আছে। তবুও সন্দেহ। পূর্ণসন্দেহ...

পূর্ণসন্দেহ, সে কথাই ভাবছি অর্ধেকের চেয়েও কম বয়স, সত্তরে। ভাবনা যত আগে আসে তত ভালো। যৌবনের ভাবনাগুলো ফুরফুরে বেশি মনে পড়ে, যেমন আশা ও ইঙ্গিতে এখন কতই-বা বয়স হল, মাত্র ত্রিশ! এবয়সে...
 

মনে রেখো, চোখ খুলে বলো— কাহিনী শেষ হবার পূর্বে সবই জমিয়ে রাখো, প্রতিদিন সনাক্ত করো মৌলিক পদ্ধতি । শুধু চিহ্ন রেখে যেও না, আগামীকে ইতিহাস হবে
 

৪৯.
একটি কবিতা লিখবো বলে

একটি কান্না সলাজে হাসতে দেখে তুমি ছোটাছুটি করো চিলেকোঠায়, উঠোনে। দেখো আমি কেবল হাওয়ারূপে পাখিদের কন্ঠ শুনে চারপাশ ঘুরি; ঘুরে-ঘুরে স্মৃতিস্পর্শ অবলোকন করি, সগৌরবে খুঁজি দেহসুরসহ গোপনমোহ। মুখ ভর্তি নীরবতা মেখে একটি কবিতা লিখবো বলে কতশত ইশারা খুঁজি চোখের গহ্বরে

কি করে যে দিনের রূপ ফেটে ওঠে রোদের ভেতর! সন্নিকটে চতুর আকাশ চমকাতে চমকাতে ছায়াভরে দাঁড়ালে ঝরঝরে রোদ  রহস্যভেদ করে নীরবে ঘুমায়; ভরা মজলিসে কি করে বলি সমস্ত রেখাই একদিন সরলরেখায় দাঁড়ালে আমাদের উজ্জ্বল চোখ অন্ধকারে ঘুমাবে; আমরাও জেগে র’বো অকারণে; আদর চোখে

একটি কান্না সলাজে হাসতে দেখে সেদিন দশখানা বৃষ্টিফোঁটা জমেছিল তোমার হাতের প্যাঁচসহ জানালায়, পর্দার আড়ালে
 

৫০.
বিরহবিলাস

ভাবার যত বিষয়ই থাক; ঘোর অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পুরনো গান শুনলেই কেনো জানি তোর মুচকি হাসির মুখোচ্ছবি দূর অন্ধকারে উড়ে পিপাসাধিক মৌন হাওয়ায়! মৃদু সংক্রমণ আর বিরহবিলাস একই গতিপথে হেঁটে যাচ্ছিল বলেই কি চোখকেও আলোকিত করে?
 

সব পথ জানাশোনা ছিল, তাই পথ চিনে কত আগেই চলে গেলে অনেক দূরে... কেনো যে এখনো মাঝেসাঝে আসিস ঘুমঘুম চোখসহ গানের পরতে হেসে ও ভেসে!
 

কিছুই অবশিষ্ট ছিল না বলে অধিক পিপাসা... তাড়া যত এভাবেই শেষ হবে দিনের পর দিন মিশিয়ে যেমন, পুরনো বছর। খুব কাছ থেকে দেখছি টান-টান আওয়াজ, ইচ্ছে বিরুদ্ধে টানছি; টেনে রাখছি ঐচ্ছিক নিয়ম… কেন যে ঘুমের ভেতর কৌতুহল করিস আরো একটি ঘুম; আপেল বাগান

 

৫১.
হালকা থেকো আশা

দেহের সাথে মিশে যাচ্ছো তাড়া! অনতিদূরে আসা-যাওয়া মানে আদিপ্রকরণ, শালবন, বিবিধ হাওয়া। সর্বশোক ক্রমে ক্রমে জেগেছে অপেক্ষাগাছে, বোঝা গেল এইখানে তুমিও উপলব্ধিতে ঘুরো আর স্পর্শে মিশাও যৌথ রহস্য, নীলরঙ, কামনাফুল, আবছায়া। এভাবেই আগ্রহ সরে যেতে যেতে বাড়ে মৃদুলুপ্ত উষ্ণতা! বাড়ে দায়বদ্ধতা, ভরা আগ্রহ, আর্তনাদ...

প্রেরণা, একাকী যেতে চাই কিন্তু পারি না; মূলকথা নীরব দর্শক! আপাতত কিছুই চেষ্টা করি না, সুযোগ পেলেই গুটিয়ে রাখি গোপন ইশারা, পরস্পর জিজ্ঞাসা... নিজে মিশে থাকি ধ্যানে, শ্বাস টেনে টেনে ঘুমোনোই ভালো ভাঙা-ভাঙা ঘুমে…

কিন্তু পক্ষপাত আমারই গত যৌবনার মতো অর্ধেক আশা দিলেই হাসে! এমন ভাবখানার বয়স বাড়ছে জেনে আমাকে গিলে ফেলছে চিরস্থায়ী ঘুমে। ঈর্ষাকথা হও চুপচাপ, হও সন্ধ্যা পোষাক। ইচ্ছারা দুশ্চিন্তা করো না; হালকা থেকো সকল আশায়
 

৫২.
জোড়াচোখ

মুখশ্রীকে দেখে চোখজোড়ায় অদ্ভুত স্বপ্ন চৌদিক দখল করে মিশে আছে, চোখ খুললেই ‘আপনে গোপনে’ আগ্রহ বাড়াও, সুরে বাজাও রহস্যবাঁশি! চেনারহস্য কেনো যে আমাকে তাড়ামধ্যেজলে?— তারচে’ ভালো অপবাদ দাও আর এসো, বাঁধন টুঁটে চেপে ধরি চেনাগন্ধ, ভীতি আমাকে জাগাতে চাও তুমিসহ শত-শত সন্দেহআঘাত

এযুগে ই-মেইল, ইন্টারনেট ছাড়া আমার পাশ ঠেলে পাড় হতে চাচ্ছো তুমিসহ জীবনধারা;  এত চেনা জানার ভেতর কেনো জাগছো না তুমিসহ ইচ্ছেকথা, হাতঋণ, রূপজড়তা। কান পাতলেই শুনি মন টেনে ধরেছে ট্র্যাজেডিআশা। ইচ্ছে ঘাস হয়ে বাঁচি সংগোপনে বলি সুখদীর্ঘ যাপনের কথা মুখশ্রীকে দেখতে যারা এসেছে তারা দেখবেন পথ, তারাই হবেন পথিক...
 

৫৩.

মন খারাপের আধুনিকতা

তখনও সে কথা বলে-টলে আমাদের বুঝাতে চাচ্ছো চোখ আশ্চর্য সুন্দর এইকথা আমরা সকলেই মানি; অথচ দূরে যাব বলে বন্ধ চোখে নিজেকে দেখিতে পারি না। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগল্প ঝেড়ে কিছুই ভুলতে পারি না বলে লক্ষ মাইল দূর থেকেও মনে হয় এইতো মিশে আছি পাশাপাশি ক’ক্রোশদূরে। তোমাকে বলি— আমাকে পাহারায় রাখে দিনের কর্মব্যস্ততা, দাঁড়াতে বলে সুদূর কল্পনাসহ মন খারাপের আধুনিকতা

কোনো আকার জানা গেল না! দিক নির্দেশনা পেয়েও ঘাসফুল-সবুজপাতা-গোলাপ আর মৌমাছিকে কিছু বলতে পারিনি, কেউ শুনেনি কথা; নিজেই নিজেকে বলি : আমাকে কতটুকু ছুঁয়েছো আধুনিকতা... আমি যা ছুঁতে চেয়েছি সেও ফিরছে না কথা-সময়-চিরতা, যা চাই ঝটপট পেয়েও যাই, আমি ভুলে যাই রঙরূপ বিশ্বাসের দানা

অবাক, তুমিও জানবে না কতটা আশা নিয়ে চোখ বাঁচে, চোখে পৃথিবীর আকার বড় হলেও কল্পনায় তার দূরত্ব এই তো অতিনিকটে...
 

৫৪.

খোলা চোখে আমি
 

এত চাওয়া ছিল না তবুও জল শামুকের ঠোঁটে লুকাও মেঘ, নিজেও লুকাও স্বেচ্ছায়! ফলে, ইচ্ছাছলে জোড়হাত খেলে ধৈর্য্যকে করনি বারণ। লজ্জাবতী, লুকাও দেহ, লুকাও বুকের কাঁপন। আমি গল্পের ভেতর হাঁটি, ভুলে যাই আশা ছাড়া আর কিছু মনে থাকে না। মনে না-রেখেও চোখের উপর সাজাও নীরবতা, সাজাও দৃঢ়রাত্রিবাদ

কিছু ঘটবে না জেনে উথালদেহে একাই জড়িয়েছি শূন্যধূসর। সন্নিকটে ছায়ানুভব বলছে অন্ধকারে তোর জোড়া চোখের ঘ্রাণ অদ্ভুদ সুন্দর! এই সরোবর, এই সুন্দরের ব্যাখ্যা একমাত্র চোখই দিতে পারে...

আশাকথা অনেক বিশাল, সে কথা দু’চোখ বলেনি। আহত চোখ সেও জানে বর্ষার অন্য নাম যেন কী?... দেবী, ভরাবর্ষা জমাও ঠোঁটে। দেখবে শ্রাবণের চেয়ে আমরা হালকা। দেহের নিকটবর্তী তোমার দৃষ্টি, দৃষ্টির খোলাচোখে আমি
 

 

৫৫.

ধন্ধ : কবিতা ও গান
 

গানে মাখামাখি সুরে আকাল, কবিতার ঘোরে নেচেছি বহুকাল... এখন শুধু জ্বালা, বইয়ের পৃষ্ঠায় তোর মিথ্যুক স্মৃতি, কাউকে বলিস না কেনো তুই হ’লি একেলা

গান না কবিতা এ বিষয়ে তোর খোলাখুলি ফায়সালা দু’টিই ভালো। এ বিষয়ে আমার দ্বিমত কখনোই ছিল না। লোকগান কিংবা কবিতা জীবনের ভাঁজে-প্রভাঁজে জলছবি আঁকে। সময়ের টুকিটাকি আশা স্বকণ্ঠে একাই চাখে। কাউকে বলি না কিছু, ভুলতে পারবো না জেনে

কবিতা দুর্বোধ্য জেনে গানটাই বেছে নিলে কবিতা কাকে শোনাই? সব অপ্রস্তুত রেখে সেই যে চলে গেলে মেহদি রাঙানো হাতে... কবিতা না গান কোনটি ছোঁব আগে। গান ছুঁলে দুঃখের মতো বিরহ লাগে; কবিতা সে-যে হাসি আশপড়শি, পাশের বাড়ি... তাকে ছুঁয়ে ফেললে কবিতার ছন্দ-দ্বন্দ্ব সবই হারাই তীব্র আবেগে শোকাগ্নি কেটেকুটে রাত্রিসুর সাজাই
 

৫৬.

আশারা ও দিচ্ছে পাহারা
 

একা ঘরে, একাকী বেজে ওঠে কিছু নীরবতা, কিছুটা দীর্ঘশ্বাস। এই সুযোগে কথা আর বিষণ্ণতা নিরাপদ ভেবে সুঁইয়ের ছিদ্রপথে তুলে রাখছে ডরালোক হাওয়া; ফলে স্মৃতিচোখ খুলে রাখছে পোষাপ্রস্তুতি অতীতজ্বলা... রূপগল্পের ভেতর এমন বধির হবার কথা ছিল কি-না জানতে আশারা দিচ্ছে পাহারা

স্বপ্নপাহাড়ে মিশে যাবার আগে পেঁচিয়ে ধরো নির্দিষ্ট রেখা, ওসব আঁধার খুলে নামাও, যতদূর চোখ যায় ততদূরে নামতে দাও দিকনির্দেশনা; দেখবে আমাদের চোখে-মুখে গড়িয়ে নামছে ইচ্ছের শেষ সীমানা...

অথচ তুমি বলো যাদের কোটরে অমাবস্যা খেলে গলাঅব্দি সুনসান নীরবতা দেখে পিপাসা কৌতূহলে কাঁপছে তিনখণ্ড লবণের দানা। সুতাহীন সম্পর্ক কী বলতে পারে? সুঁই কেনো কাঁপিয়ে তুলছে তপ্তবাহু, চোরা চোখের ইশারা। নিরজনে সমস্ত অভিমান একা ঘরে নেই! এ গোপন কথা কি করে জেনে গেছে আমন্ত্রিত সুতা