হারিয়ে
একদিন যেও না হারিয়ে কালিঘাটের গঙ্গা পেরিয়ে একদিন যেও না হারিয়ে ট্রাম লাইনটা পেরিয়ে একদিন যেও না হারিয়ে সব ফেলে রেখে যেদিনি সবাই কাহিল তোমায় ডেকে ডেকে একদিন ভুলে যেও যে তুমি এসেছিলে সেদিন আশাকে দিও ভাসিয়ে গঙ্গাজলে একদিন যেও না হারিয়ে হাট বাট মাঠ পেরিয়ে গোয়াল ঘররে ধুনোর ধোঁয়া পুড়িয়ে একদিন যেও না হারিয়ে জোনাকীর আলো জ্বালিয়ে কাউকে না বলে চুপ করে বুড়ি চাঁদ তখনও আছে উঠোন জুড়ে মনের আকাশটাকে কে রেখেছ আঁধারে মুড়ে হারাতে চাই নি কিন্তু হারাতে যে হবে কবিকে মনে রাখে কে কোথা কবে আমি যাই, তুমি থাক, আমি যাই হারিয়ে একদিন যেও না হারিয়ে তাল গাছরে আকাশ ছাড়িয়ে এসো তুমি যদি চাও কবিতার ছায়া মাড়িয়ে একদিন যেও না হারিয়ে দুঃস্বপ্নের রাতটা পেরিয়ে
১৩ই জুন, ২০০৬ মুম্বাই
|
|
মাকে ৭৮৬ থেকে
রুদ্ধ আজ আমার মন পাখীদের গান গাওয়া শুষ্ক কন্ঠ, শ্রান্ত শরীর এবার কুলায় ফেরা অসহ্য এই, শানানো নৈঃশব্দে সকালকে যেন কেমন লাগছে তোমার দেখা নাই, বোধহীন আমি, বুঝিনা ঠিক কেমন লাগছে
হাসি খুশী পল্লবিত ফুলের পাপড়ি গুলি আজ চোখ বুজেছে তুমি কোথায়, এস সত্বর, অসাড় আমি, জানিনা কেমন লাগছে। রোজ তোমার যে কল্লোলিনী ঝরণায় আমি হই পবিত্র, সুস্নাত আজ কি হয়েছে তোমার, সুখনো কেন তোমার ঝরণা এত
তুমি কেন দূরে প্রাণ, এস একটু পা চালিয়ে আর দেরি কোরনা তুমি আমার অসাড় অঙ্গবিতানে তোমার ছোঁওয়া পাব বলে আছি বসে আমি শীতের পাহাড়ের হৃদপিন্ডের ধুকপুকুনি কি থেমে গেল, না বোধ হয়! এখনও তোমার দেখা নাই, ফুসফুসে শ্বাস আর চলেনা, থামল মনে হয়।
আমার চোখে আগুন, অবিরত গোলাবারুদের গন্ধ গত চারদিন আমার হাতের সচল আঙ্গুল গুলো অকাতরে দিয়ে যায় মৃত্যু ভেট তাদের, যারা এসেছিল আমার মায়ের গায়ে হাত দিতে, শালা ঘুস্পেট ওদের আমি একটাকেও ছাড়িনি, ওদের আমি মারিনি, ওরা মরেছে ওরা শেষ, আমি ও, ওরা ওদের প্রাপ্য কর্মফল ভোগ করেছে, করছে
তুমি কোথায় জীবন, তোমার দেখা নাই কেন, আমি যে আর পারিনা এ’কথা ভাবাও পাপ, তাই শেষ পর্যন্ত শ্বাস নেওয়া আমি ছাড়ি না তোমার সদ্য স্নাতা আকাশে জবাকুসুমের রং আমায় টানে তুমি কোথায় এস তাড়াতাড়ি, আমায় যেতে হবে আন্দামানে
সেই কবে ডিগলিপুরের গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম, মনে নেই ফিরতে হবে, অন্তত একবার, মাকে কথা দিয়ে ছিলাম, ভুলিনি তুমি কোথা হে ঈশ্বর, এস সত্বর, আমি ডুবে যাচ্ছি অন্ধকারে আমার আঙ্গুলে অবিরত আগুনের দিশা দৃষ্টি ঘোলাটে এবারে
চার দিন ধরে শত্রু নিধন করেছি, শ্বাস নিয়েছি মাইনাস চল্লিশের তাপাঙ্কে আমার শরীর বরফে মোড়া, ওদের স্পর্ধা! ওরা এসেছিল ছুঁতে আমার মাকে! এসেছে, এসেছে, এসেছে ওই শোনা যায় চপারের হুঙ্কার আর কড়কড়ানি এসে গেছে মায়ের আরেক সন্তান, আমি নিথর হলাম, গান গাও ঘুমপাড়ানি কেঁদোনা মা, আমি আসি, তুমি নিরাপদ আজ আমার ঠিকানা শৃঙ্গ সাতশো ছিয়াশি আর কারগিল হবেনা মা, দুর্বৃত্তেরা জানে আমরা, তোমার সন্তানেরা, এখন আরও সতর্ক আছি।
মুম্বাই সেপ্টেম্বর ১২, ২০০৬ ................................................................................................................... |