বন্দেঃ মাতরম এর ওপর ফতোয়া


মায়ের পুজো করি। মাকে বন্দনা করি। মাকে ভাল বাসি। মা হোলেন গিয়ে শেষ আশ্রয়। বিপদে পড়লে মাকে ডাকি। কষ্ট পেলে বলি - মা, মা, মাগো রক্ষা করো। এ শুধু এই বিশাল দেশ ভারতে নয় আমার মনে হয় সারা বিশ্বেই মা এক কনসেÌট যাকে নিয়ে কোন ও বিবাদ বা মতবাদ থাকতে পারে না। যদি থাকে তবে তা বেশ কষ্টের। দেশমাতৃকাও এক  কনসেপ্ট যা, ধর্ম, জাত- পাত ইত্যাদি শ্রেণী বিভাগের উর্দ্ধে।


ফতোয়া জারী হয়েছে স্কুলে বন্দেঃ মাতরম গান গাওয়া চলবেনা। নাঃ ঠিক তা নয়! সেটা হলে তাও একটা স্বস্তি থাকত। একটা সমবেত আওয়াজ তোলা যেত সেই ফতোয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু এ যে এক ভীষণ কঠিন সময় এল। এই সময় ও দেখতে হচ্ছে যে মায়ের বন্দনা করতে গেলে আগে দেখতে হবে যারা এই বন্দনা গান গাইছে তাদের ধর্ম কি! কারণ ফতোয়া জারী হয়েছে যে স্কুল গুলোতে মুসলীম ছাত্রদের যেন 'বন্দেঃ মাতরম' গাইতে বাধ্য না করা হয়। আজ হায়দ্রাবাদে হয়েছে, কাল অন্যত্র কোথায় ও এই রকম ফতোয়া জারী হয়ে যাবে। আমি ও একই সুরে বলি কাউকেই কিছু করতে বাধ্য করা উচিৎ নয়। ব্যক্তিগত নিয়মানুবর্তীতা একটা স্বেচ্ছা বরণীয় অভ্যাস। তার বাইরে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করার আমি ঘোরতর বিরোধী। তাই হায়দ্রাবাদের বিভিন্ন মৌলবী মস্তিস্কে বিরোধের আগুন জাজ্জ্বল্যমান। বন্ধ কর স্কুলের শুরুতে এই মাতৃবন্দনা - বন্দেঃ মাতরম। ছাত্র ছাত্রীদের বাবা মা'দের বলা হয়েছে তাঁদের সন্তান কে সেই স্কুল তেকে অন্যত্র মানে অন্য কোন স্কুলে নিয়ে যেতে যেখানে বিদ্যাভ্যাসের আগে মাতৃ বন্দনা হয়না। বেশ ভাল কথা। বেশ সুচিন্তিত পরামর্শ, থুড়ি ফতোয়া। ইসলাম বিরোধী কাজ করতে সব মুসলমান কে ফতোয়া জারী করেছেন বিভিন্ন ইসলাম শাখার ধর্মীয় নেতারা - মানে হায়দ্রাবাদের মৌলবীরা। ইসলামে মাতৃ বন্দনা শখৎ মানা। তাই কি?


আমি কিন্তু তাদের দলে নই যারা বলেন যে, এ দেশে থাকতে গেলে এদেশের কায়দা কানুন মেনেই চলতে হবে। যেটা ইসলাম দেশ গুলোতে বেশ প্রকট করে দেওয়া হয় অ-ইসলামী নাগরিক দের কাছে। কিন্তু আমার মনে একটা খটকা লেগেছে। যাদের নিয়ে এই ফতোয়া জারী করা হল সেই ছাত্র ছাত্রী দের মা বাবা দের কাছে কেউ কি জানতে চেয়েছে যে তাঁদের সন্তানেরা স্কুলে বিদ্যাভ্যাসের আগে মাতৃ বন্দনা করে কষ্টে আছে না ভাল আছে? কেউ কি সেই সব ছাত্রদের একবার জিঞ্জাসা করবে যে ওরা বন্দেঃ মাতরম এর মধ্যে দিয়ে মাতৃ বন্দনার গু• অর্থ জেনেই এই গান গাইছিল এত দিন ধরে, নাকি ওদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বন্দেঃ মাতরম গান।


হায় রে দেশ আমার। ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র যদি জানতেন যে বন্দেঃ মাতরম গানের মধ্যে দিয়ে মায়ের পুজো করলে ফতোয়ার সম্মুখীন হতে হবে তাহলে উনি নির্ঘাৎ এই বন্দনা গান লেখা থেকে বিরত থাকতেন যতই তার চিত্ত তাঁকে মাতৃ বন্দনায় উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন!
একটি সনির্বন্ধ অনুরোধ মৌলবী সাহেবদের কাছে - ছোট ছোট শিশুদের সামনে হেসে হেসে কয়েকটা প্রশ্ন রাখুনঃ


১। আচ্ছা তোমার মাকে তুমি ভাল বাস?
২। আচ্ছা তোমার মায়ের সুখ্যাতি হলে তোমার ভাল লাগে?
৩। তুমি কি আল্লাহ তালার কাছে তোমার মা এর মঙ্গল কামনা কর?
৪। তোমার দেশ কে তুমি নিজের মায়ের মতই ভাল বাস?
৫। তোমার কি মাতৃ বন্দনা করতে ভাল লাগে?
৬। তুমি বন্দেঃ মাতরম গানের মধ্যে যে বক্তব্য আছে তা কি জান?
৭। সেই গানে যদি তোমার দেশমাতৃকার বন্দনা হয় তবে কি তুমি গাইবে সেই গান?
৮। তোমার কি বন্দেঃ মাতরম গান গাইতে ভাল লাগে?


যদি নির্ভয়ে শিশুরা তাদের মনের কথা বলতে পারে তবে হয়ত জানতে পারবেন যে বন্দেঃ মাতরম গানের মধ্যে দিয়ে ওদের দেশমাতৃকার বন্দনা করতে ভালই লাগে। আর তা যদি হয়, তবে দোহাই মৌলবী সাহেব এই শান্তির  দেশ আজ অনেক অশান্তির মধ্যে আছে, আর নতুন করে অশান্তির বীজ বপন করবেন না।


বন্দেঃ মাতরম! বন্দেঃ মাতরম! বন্দেঃ মাতরম!
সুজলাং, সুফলয়াং মলয়াজ শীতলং,
শস্য শ্যামলাং মাতরম,
বন্দেঃ মাতরম!বন্দেঃ মাতরম!বন্দেঃ মাতরম!
 

আমি বিশ্বাস করি যে নিজের মাকে ভাল বাসে সে দেশমাতৃকার বন্দনা করার ওপর ফতোয়া জারী করতে পারেনা, তা সে যে ভাষাতেই গাওয়া হোকনা কেন।
 

কলকাতা
জুন ৮, ২০০৬