মাকড়সার জাল

 

মাকড়সার জাল। ব্যাপারটা খুব সাধারণ। খুব চোখে পড়ে, ঘরের আনাচে কানাচে, আসবাব পত্রের নীচে, খাঁজে, ফাঁকে-ফোকরে। ঝুল ঝারার আকসি দিয়ে ঘষে দিলেই হলো। এ আর এমন কি ব্যাপার। মাকড়সার জাল আবার www এর অর্থাৎ ওয়ার্লড ওয়াইড ওয়েব এর জন্ম সুত্রে প্রাজ্ঞ প্রপিতামহ। এই মাকড়সার জাল দেখেই নাকি সারা পৃথিবীকে এক সূত্রে ইন্টারনেটে গাঁথার কথা মাথায় এসেছিল ইন্টারনেট স্রষ্টাদের। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এদের বেশ সমীহ করে চলাই উচিত, মনুষ্যকুলের। অতি সম্প্রতি এই মাকড়সা কুল বেশ ভয়াবহ সÞম আদায় করে নিয়েছে মালয়েশীয়ার কুয়ালালামপুর শহরে। এই মাকড়সারা জ্ঞাতি গুষ্টি মিলিয়ে প্রায় সাত হাজারের ও বেশি ধরণের হয়ে থাকে। সে এক বিজ্ঞাপণ যাকে এন্টোমোলোজি বলা হয়। সে কথা থাক।

অতি সম্প্রতি, মালয়েশীয়ার এক রেস্তরাঁর তিন মহিলা কর্মচারিণী মারা গেছেন যখন তাঁরা ছুটিতে ছিলেন। অনেক অনুসন্ধান করেও তাঁদের মৃত্যুর সঠিক কোন ও কারণ খুঁজে পাওয়া গেলনা। কেবল ফুড পয়জনিং কে সম্ভাব্য কারণ ধরে নিয়ে চুপ করে থাকা যায়না। কিন্তু তাই করতে হল। পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আধিকারীকেরা বেশ নাজেহাল। এর ঠিক কয়েক দিনের মধ্যে এক বয়স্ক ব্যক্তি সেই রেস্তঁরা সংলগ্ন এলাকাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেন এবং প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় তাকে সেই হাসপাতালের আইসিইউ তে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তারেরা প্রমাদ গোনেন কারণ ওই তিন মৃতা মহিলাও প্রায় একই রকম উপসর্গ নিয়েই অচৈতন্য অবস্থায় এসে ছিলেন এই হাসপাতালে। অনেক লড়াই চালিয়ে ডাক্তারেরা এই বৃদ্ধকে বাঁচাতে সক্ষম হন। এর পর শুরু আসল কাহিনীর।

ওই বৃদ্ধকে প্রশ্ন করে জানা গেল যে তিনি খাবার কিনতে এসে ওই রেস্তরার ওয়াশরুমে গিয়ে কমোডের সীটে বসেছিলেন আর সেখান থেকে বেরোবার কিছুক্ষণ পরেই শুরু বিপত্তির। তিনি শুধু মনে করতে পারলেন যে কমডের সীট ছেড়ে ওঠার পর থেকেই তিনি তার গুহ্যদ্বারে ও তার আশে পাশে (anus and buttock) প্রচন্ড জ্বলন অনুভব করতে থাকেন যা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে; অবশেষে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। এর পরের অধ্যায়ে আর ও খোলসা করে জানা গেল যে ওই তিন মহিলা ছুটিতে থাকলেও ঘটনার দিন খাবার কিনতে রেস্তরাঁয় এসেছিলেন এবং তিন জনেই ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। খাবার কিনে রাস্তায় বেরোতেই বিপত্তি। সাধারণ বুদ্ধি ফুড পয়জনিং কে কারণ হিসেবে ধরে নিল ওই তিন মহিলার মৃত্যুর পর। এর পর পুলিশ ও বিজ্ঞানীরা এলেন ওই রেস্তরাঁর ওয়াশরুমের সরেজমীন তদন্ত করতে আর পেলেন কমোডের সীটের নীচে ছোট্ট ছোট্ট অসংখ্য মাকড়সা যাদের কামড়ের পর বিষক্রিয়ায় মৃত্যুই হয়ে থাকে যদি না খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসা করা যায়। খুবই ভাগ্যবান তিনি যিনি বেঁচে যান। এই মাকড়সার বিষ শরীরের স্নায়ুতন্ত্রীকে বিষাক্ত করে তলে (effects of neurotoxin liberated from the saliva of the spider)। এই ব্যাপারে পড়াশোনা করতে হলে - Bites and Stings of medically important venomous arthropods, Richard S. Vetter and P Kirk Visscher, Department of Entomology, University of California, Riverside, CA 92521 USA এর  সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে মাকড়সা কে যতটা হেলায় আমরা দেখি ততটা সহজ প্রাণী নয় এরা। এর পর পাবলিক ওয়াশরুমে র সীটে বসার আগে দেখে নিলে ভাল ওই ছোট্ট ছোট্ট মাকড়সাগুলো আছে কিনা। সাবধানের মার নেই।এব্যাপারে আরও তথ্য পরে আলোচনা করা যাবে। তড়িঘড়ি এই সাবধান বার্তা পৌঁছে দেবার চেষ্টা করলাম।

 

কলকাতা

জুন ৯, ২০০৬