ভাল থাকুন হৃষিদা


হৃষিকেশ মুখার্জী। শো’ম্যান রাজ কাপুরের বাবুমশায় হৃষিকেশ চলে গেলেন। নিজের নামজ স্থানের গঙ্গায় বিলীন হয়ে তিনি রেখে গেলেন অনেক কর্ম, কীর্তি ও সৃষ্টি যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস লেখার কাজে উপাদান হিসেবে কাজ করবে।


আমরা ক'জন জানি এ মানুষটিকে। ১৯৪০ এর কেমিস্ট্রির স্নাতক অঙ্ক ও বিজ্ঞান পড়াতেন, কলকাতায় বি এন সরকারের নিউ থিয়েটর ফিল্ম এডিটরের কাজ শুরু করার আগে। তারপর জুড়ে গেল কিংবদন্তী বিমল রায়ের সাথে। 'দো বিঘা জমীন' আর 'দেবদাস' সৃষ্টি করলেন বিমল রায়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে। তিনি স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও তারপর ১৯৫০ এর প্রজাতন্ত্র স্থাপনাও দেখলেন। এই করতে করতে ১৯৫১ এসে গেল। চাপা বাম ঘেষা হলেও কখন ও বামত্বের গোঁড়ামি তাকে বা তার কাজকে ছুঁতে পারেনি।
 

এরপর তৈরী হলো 'মুসাফির'। মা লক্ষ্মী ফিরেও তাকালেন না। হতোদ্যম না হয়ে পরের ছবি 'আনাড়ী'র কাজে মন দিলেন। সেটা ১৯৫৯। এই আট বছরে তিনি অনেকটা স্থিতধী হয়েছেন। সেটা বোঝা গেল পাঁচ পাঁচটা 'ফিল্ম ফেয়ার' পুরস্কার এই একটি ছবি থেকে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেয়েছিলেন তাঁর গুরু ও শিক্ষক -বিমল রায়। শচিন কর্তার সাথে তাঁর ছিল আত্মিক যোগ। তাঁর অনেক ছবিতে শচীন দেব বর্মনের প্রাকৃতিক ভাবেই। মানুষকে প্রাণ খুলে হাসতে ও হাসাতে শিখিয়ে গেছেন তিনি তাঁর সব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। কাঁদাতেও তিনি ছিলেন সমধিক পারঙ্গম।
 

দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারের সম্মান দেরীতে হলেও তাঁর সক্ষম জীবদ্দশাতেই এসেছিল এবং খুব ন্যায্যত তা হৃষিদাকে দিয়ে ভারত সরকার ধন্য হয়েছিলেন, তিনি নন। তিনি ইশ্বরের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন তাঁর সুকর্মের জন্য। এরপর পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পাওয়া সেও যেন তাঁর প্রাপ্য বরমালা গলায় ঝুলিয়ে দিলেন স্বয়ং মা সরস্বতী নিজে। হৃষিদা প্রায় সব তারকা অভিনেতা দের নিয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ করেছেন নিজের জায়গা থেকে। ২০০৫ এ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে 'হৃষিকেশ মুখার্জী রেট্রস্পেক্টিভ' এর উপস্থাপনা বলে দেয় ভারতিয় চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর আবদানের কথা। আমি নিজে আবাক হয়েছিলাম তার 'সত্যকাম' দেখে। মাসল ম্যান ধর্মেন্দ্রকে দিয়ে তিনি কি কাজটাই না বের করে এনেছিলেন।
 

শুধু তাই বা কেন। সরল গল্প বলা এক ডিরেক্টর ছাড়া কতবড় সিনেম্যাটোগ্রাফার ছিলেন তা মুসাফিরের দিলীপ কুমার, আনাড়ির রাজকাপুর, নূতন, অনুরাধার বলরাজ সাহানি-লীলা নাইডু বা আনুপমার ধর্মেন্দ্র ও শর্মিলা অভিনয়ের কিছু মুহূর্তই মনে করিয়ে দেয়। আরও অনেক ছবির কথা মনে পড়ে। আনন্দ, নেমখারাম, মিলি, গুড্ডী, সাঁঝ অর সবেরা, আশীর্বাদ,বাওয়ার্চি, অভিমান, চুপকে চুপকে, গোলমাল,খুবসুরত কোন ছবিটা বাদ দেব! তালাশ, নামুমকিন, লাঠি, হাম হিন্দুস্থানী, আচ্ছা বুঢ়া, ঝুটি , সদমাজুর্মানা, নকরী, ঝুট বোলে কৌয়া কাটে, অর্জুন পন্ডিত বা আলাপ কোন ছবিটা হৃষিদা’র অসাধারণ নয়?
 

আজ উনি চলে গেছেন কিন্তু এত বড় একটা ভান্ডার রেখে গেছেন যার মূল্য অপরিমেয়।
তাই প্রার্থণা করি, হৃষিদা আপনি যেখানেই থাকুন আমাদের আশীর্বাদ করুন আমরা যেন হাসতে ভুলে না যাই।
 

মুম্বাই
আগাষ্ট ২৮, ২০০৬