কয়ামৎ সে কয়ামৎ
কয়ামৎ সে কয়ামৎ থেকে শুরু করে ফনা পর্যন্ত যে লম্বা সফর শ্রীমান আমীর খান বেশ সফলতার সঙ্গে চালিয়ে একটা বেশ মজবুত সামাজিক জমিতে এসে দাঁড়িয়েছেন সে ব্যাপারে মিডিয়ার এখন ও সন্দেহ থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই।
লেখাটা এখান থেকেই শুরু করা যাক। বেশ ছিলেন এই চল্লিশোর্ধ সদ্য বিবাহিত যুবক। জীবনে সাফল্য শুধু শরৎ-এর খুশী খুশী সাদা মেঘের মত উড়ে বেরাচ্ছে। ফ্যান মহলে বেশ উঁচু দরের শিল্পী তিনি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রীর সবাই বেশ মান্নি গন্নি করে। লগান আর দিল চাহাতা হ্যায় এর পরে তো আমীর আন্তর্জাতিক তারা মহলের একজন হয়েছেন। মাঝে মঙ্গল পান্ডে তত ব্যবসা না করলে ও ইমেজ টা তাঁর বেশ ভালোই তৈরী করে দিয়ে গেছে। এ'হেন আমীর খান হঠাৎ তাঁর সাম্প্রতীকতম কীর্তি 'ফনা' বাজারে আসার ঠিক আগে এই রকম একটা বোমা ফাটালেন কেন?
এই কথাটা আমার মাথায় নড়াচড়া করছে আর তার জন্ম কিছু প্রশ্নেরঃ
১.কোথায় ছিলেন আমীর সাহেব যখন ভুপাল গ্যাস কান্ডের হত্যালীলা’র শেষ অঙ্ক অভিনীত হচ্ছিল আর আমেরিকা রাঘব বোয়াল উকীলেরা বেশ গুগলী দিয়ে নাস্তানাবুদ করছিল আমাদের সরকারি উকীল দের, ১০ বছর আগেও?
২. কোথায় ছিলেন এই সদা রোমান্টিক যুবক তারকা যখন কয়েক লক্ষ মানুষ গত ২০ বছরে নির্মম রেল দুর্ঘটনা গুলোতে বেঘোরে প্রাণ দেবার পর তাঁদের নিকটাত্মীয়দের হয়রানি হচ্ছিল কটা টাকা না পাওয়ার জন্যে? তাঁর সূর্য তো মধ্যাকাশে আজ প্রায় ২০ বছর ধরে! তাই না?
৩. কোথায় ছিলেন লগানের সেই ভুবন যখন গুজরাতের ভূমিকম্পের পর রিলিফের কাজে অনেক অনিয়ম হচ্ছিল? এখন ও অনেক ন্যায্য দাবীর মীমাংসা হয়নি। জানেন কি আমীর ভুবন খান?
৪. কোথায় ছিলেন 'দিল চাহাতা হ্যায়' এর দিলদার বন্ধু যখন মুম্বাই শহরের বুকে পুলিশ দিন দুপুরে নিজের কর্ম ক্ষেত্রে ধরে এনে ধষর্ণ করেছিল? বেশ কয়েকটা এই রকম ঘটনা ঘটেছিল এই মুম্বাই শহরেই সেই দিন গুলোতে। ন্যায় ধর্মের প্রবল পরাকাষ্ঠা আমীর খান সাহেব কি সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন?
৫. হালের সুনামির কথা যদি তুলি যাতে এখন ও অনেক অনাথ মানুষ দিশাহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটু সুবিচারের আশায়! সেখানে আমীর খানের নজর পরেনি?
৬. খুব তাজা একটা ব্যাপার হলো সংরক্ষণ যার জন্য সারা দেশ জুড়ে প্রধাণতঃ ডাক্তারী ছাত্ররা আন্দোলন চালাচ্ছেন। সেখানে ও কি আমীরের নজর পরেনি?
৭. দা ভিঞ্চি কোড নিয়ে ও বেশ জল ঘোলা হোচ্ছে কিন্তু আমীর একজন আন্তর্জাতিক স্তরের তারকা হয়ে ও মুখ খোলেন নি! কেন?
৮. এই মুম্বাই শহরের প্রায় এক লক্ষ বার বালা দের, বেশ সংগঠিত ভাবেই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বা আর ও পরিষ্কার করে দেখলে বলা যায় তাদেরকে বেশ্যা বৃত্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হল । আমীর বাবু কি জানেন না সে সব? না আমি একথা বলছিনা যে আমীর কে বা কোন তারকাকে সব ব্যাপারেই শহীদ ক্ষুদীরাম হয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। কিন্তু সেটা যখন কেউ করবে তখন জনমানস তাকে পরিষ্কার ভাবে গ্রহণ করবে বা সমর্থন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ তার প্রচেষ্টার মধ্যে কোন বেনিয়াপনা নেই এই ধারণাই সাধারণ মানুষ করবে।
৯. নর্মদা বাঁধ নিয়ে বচসা চলছে প্রায় এক যুগ ধরে। আমীর কি খুব ব্যস্ত ছিলেন? জন সমর্থনের দই 'আমীর-ফনা-নর্মদা' মিষ্টান্ন ভান্ডারে এখন ও জমেনি। তাই বলে জাত ভাই দের (ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রীর সভ্যরা) কেন এত সময় লাগছে ঠিক করে উঠতে যে 'সঙ্গে যাই না চুপ মেরে যাই'? আমীর নিজের জমিতেই অনেক দিন ধরে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ আশাহীন ভাবে। অবশ্য টিভি চ্যানেলে বেশ ভাল আমীর পরিক্রমা হয়েছে। এতগুলো সমাজ শুধারকের ভূমিকায় 'লাইভ' অভিনয় করার সুযোগ ছিল কিন্তু আমীর মুখ খোলেননি। কেননা তখন সময়টা সঠিক ও উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। কিসের জন্যে? তা ও কি বলে দিতে হবে বুদ্ধিমান পাঠককে! মনে রাখতে হবে যে অপরাহ্নের সূর্যের তাপ কম আর তাঁর আলোতে যে ছায়া পড়ে সেটা বেশ লম্বা ছায়া। লম্বা ছায়া সাবধান করে দেয় জীবনের অপরাহ্নে পৌঁছে যাওয়া সব মানুষকে!
তারকাদের একটু বেশি সাবধান হতে হয়। প্রত্যেক মানুষই জীবনের সব খেলাতেই জিততে চায়। তাতে কিছু অন্যায় নেই। তারকাদের জীবনে অপরাহ্ন এলে তারা সবাই বাজী মারতে চাইলেও খেলাটা এত ভাল খেলতে পারেন না। যেটা আমীর পেরেছেন বেশ ভাল ভাবেই। যশ চোপড়াজি একটু ধৈর্য ধরুন আপনার পুঁজি সমূলে ঘরে ফিরে আসবে। আর আমীর ভাই এবার একটু ভাবুন আগামী দিনগুলো নিয়ে। বেশ ভাল কিছু চরিত্র তৈরী করুন আর তার রসদ অনেক আছে। চাইলেই পাবেন।