সংরক্ষণ


সংরক্ষণের কথা বলতে গিয়ে অনেক কিছু মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। একটু অন্য রকমের কথা বলি।
চার রকমের দু পেয়ে জীব আছে যারা সবাই কোন না কোন ভাবে জীবন টাকে চালিয়ে নিয়ে যায় যত দূর পারে। এর মধ্যে আমি ও আছি। আমাদের সবাই এই চারের এক। এই চার কারা? এরা হলোঃ
• সব্জি বা ভেজিটেবল
• ধাতু বা মিনারেল
• জন্তু বা এনিম্যাল
• মানুষ বা হিউম্যান
ব্যাখ্যা দেবার আগে একটু বলি যে আমরা যারা সংরক্ষণ নিয়ে আজ দেশে কি চলছে তার একটু ও খবর রাখি তারা এই লেখনীর সত্বাধীকারীর সংগে মীমাংসার মনোভাব নিয়েই এই লেখা পড়বেন।


সব্জি বা ভেজিটেবল এর নিজের কিছু করার ক্ষমতা নেই। এদেরকে কেউ মাটি কেটে, বীজ পুঁতে, জল দিয়ে বড় করে তোলে। কেউ বেড়ে ওঠে আবার কেউ বা অকালেই শুকিয়ে শেষ হয়ে যায়। অন্যের সেবায় বেঁচে যারা বাজারে আসে তাদের রান্না করে খেয়ে শেষ করে দেয়া পর্যন্ত এদের কেউ টের ও পায়না যে এরা পৃথিবীতে কেন এসেছিল আর কেনই বা চলে গল বা কখন চলে গেল! কারণ এরা নিজে কিছু করেনা নিজের বেঁচে থাকার জন্য। কেবল দয়া ভরসা করে এরা বাঁচে আর বাঁচে ততো দিনই যত দিন না কেউ মারে বা যত দিন পর্যন্ত এরা শুকিয়ে না মরে যায়। এ রকম দু'পেয়ে দের আমরা চিনি। আমাদের সমাজে এরা আছে। এরা যেখানে জন্মে ছিল সেখানেই মরে, একটু ও নড়া চড়া করে কিছু উৎপাদন করে নিজের বা পরিবারের বাঁচার ব্যবস্থা করা কে সমাজের অবিচার বলে মনে করে। এদের চাই সংরক্ষণ।


এবার আসা যাক ধাতু বা মিনারেল এর সংস্পর্শে। এরা প্রভূত শক্তিশালী পদার্থ। কিন্তু এরা পাহাড়, পর্বত বা শিলার গায়ে লেগে থেকেই এরা বেঁচে থাকে জড় পদার্থ হয়ে। কোন অন্য দু' পেয়ে জীব এসে এদের কাজে লাগায়। ধরা যাক, ধাতু বাবুর কথা - তিনি আমাদের সমাজে কোন এক তলায় আছেন। তাঁর অনেক জ্ঞান আছে। তিনি মনে করেন যে সমাজ টা তাঁর উপযোগী হয়ে ওঠেনি এখনও। তিনি নড়ে বসতে জানেন না। তাঁকে সব ব্যাপারে কাউকে সাহায্য করতে হয়। তখন তাঁর অনেক জ্ঞানের কিছু প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। এই জাতীয় দু'পেয়েরা সংখ্যায় কম নয়। এদের চাই সংরক্ষণ।


এবার যদি জন্তু বা এনিম্যাল দের কথা বলি তাহলে ব্যাপার টা আর ও একটু খোলসা হবে বলে মনে হয়। চতুস্পদ প্রাণীরা তাদের নিজেদের বাচ্চা কাচ্চা দের নিয়ে চলে। যেখানে যা ঘাস, গাছ গাছালি, বিচালি বা কোন প্রকার খাবার দাবার এরা ওই স্বল্প কয়েক জনের মধ্যেই ভাগ করে খায় আর বেঁচে থাকে এরা। কখনও আবার নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মারামারি ও করে থাকে এরা। এদের চোখ জোড়া মুখের দুপাশে থাকে বলে এরা সামনেটা ভাল করে দেখতে পায়না আর তাই ভবিষ্যৎ এর জন্যে কোন শিরঃপীড়া ও এদের নেই। এরা খুবই সংকীর্ণতার বশবর্তী আর তার জন্য চেতনার জ্বালা যন্ত্রণাও নেই এদের মধ্যে। কারণ অজ্ঞতা এদের ভূষণ। বহুতল অট্টালিকা গুলোতে এর ভাল উদাহরণ পাওয়া যাবে। পাশের ফ্ল্যাটে  কে অসুস্থ বা কে একটা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে তার খোঁজ রাখা আমাদের অনেকের অভ্যাসের মধ্যে নেই। কারণ মানসিকতা টা হলো - ‘হাম দো অর হামারে দো‘। এই জাতীয় দু পেয়েদের কি আমরা দেখতে পাইনা? খুব পাই। বেশ সচরাচর ই দেখতে এদের। এদের চাই সংরক্ষণ।

চতুর্থ দু'পেয়েদের সম্পর্কে বলার আগে সংকর বা অ্যালয় নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। এই তিন এর সংমিশেণে এক লোভী পেশাদার এর জন্ম হয়। রাজনীতিবিদ বলা হয় এদের। একটু নজর রাখুন। দেখবেন ইনসিকিউরিটি বা মানসিক অসুরক্ষা এদের মধ্যে বেশ বিদ্যমান কিন্তু এরা বুদ্ধিমান ও বটে। তাই এঁরা এই প্রথম তিন শ্রেণীকে চালনা করে থাকেন। নিজেদের ইনসিকিউরিটি বা মানসিক অসুরক্ষার ব্যাপারটা বেশ দক্ষতার সংগে এরা এই তিন শ্রেণীর মগজে ক্রমাগত ঢোকাতে থাকেন বছরের পর বছর ধরে আর সংগে থাকে তাদের পাইয়ে দেবার লিস্টি যেটা খুড়োর কল এর মত নাকের সামনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঝুলতেই থাকে। এদের চাই সংরক্ষণ বেশি করে। এদের বিষয় বোধ এর ক্ষুরধার বুদ্ধি সংরক্ষণের রক্ষা কবচ কে সুচতুর ভাবে ব্যবহার করে থাকে ভোট বাক্সের ওজন বারাবার জন্য। এখানে বলে রাখতে চাই যে সৎ এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদেরা আমাকে ভুল বুঝবেন না কারণ তাঁরা জানেন যে এই লেখনী কোন ব্যক্তিকে আক্রমন করার জন্য আদৌ উদ্দীপিত নয়।


চতুর্থ প্রকার দু’পেয়েদের নিয়ে আলোচনা সব চেয়ে জরুরী আজ। তাঁরা হলেন প্রনম্য মানুষ বা হিউম্যান। এঁরা শুধু নিজের টা বোঝেন না। পরিবার, প্রতিবেশী, সমাজ, দেশ ও বিদেশ সব নিয়ে এরা চিন্তা করেন এবং বাঁচেন - বেশ ভাল ভাবেই বাঁচেন। এরা সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যান। এঁরা সংখ্যায় স্বল্প কিন্তু এঁরা কাজ করেন সবার জন্যে। মানুষের ভাল হোক এটাই এঁরা চান। আজ এদের খুব প্রয়োজন। আজ দেশ জুড়ে যে সংরক্ষণ বিরোধী ঝড় উঠেছে সে ঝড় যেন থামে তখনি যখন এই সংরক্ষণ এর রাজনীতি পুরোপুরি শেষ হবে। আমি এক জন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রার্থনা করি সবার কাছে - আসুন এই সংরক্ষণের রাজনীতি কে শেষ করি। প্রতিভার কদর করি। আমরা ভারতীয়রা জানিনা যে আমাদের কি অসীম ক্ষমতা আছে এই ধরিত্রী কে রক্ষা করার। স্বামীজী বলেছিলেন, ভারতের বোধশক্তি আর পশ্চিমের যন্ত্র কুশলতার মেল বন্ধন আরেকটা পৃথিবীর জন্ম দিতে পারে।

 

ধন্যবাদ।

সুপ্রতীক অরূপ
মে ১৭,২০০৬