জানি আমি   (অমিত্রার চিঠি)
হুমায়রা হারুন

 

জানি আমি জানি সখি
যদি আমাদের দোঁহে হয় চোখাচোখি

 

কে, কে বলে উঠলো অমন করে? আজও শুনতে পেলাম? কন্ঠস্বর অবিকল তার মত। কিন্তু এ কি সম্ভব? সুমন আসবেই বা কোত্থেকে আর কথাই বা বলবে কিভাবে? ও যে কোথাও নেই। ঘরের দুয়ার ছাড়িয়ে দূরের ঐ মাঠটা পেরিয়ে চেরি ফুলের বাগানে ঘেরা যে সমাধিস্থল সেখানেই তো সুমনকে রেখে আসা হয়েছে। সুমন এ ঘর ছেড়ে চলে গে, আর আমার কি রইল? স্মৃতি ওর কথা, ওর লেখা, ওর আঁকা ছবি, ওর কন্ঠে আবৃত্তিরবিঠাকুরের মানসসুন্দরী পুরোটা কখনোর পড়ে নি। শুধু ঐ দুটো লা, তারপর কটু থেমে হেসে হেসে বাকী দুটো লান।

 

জানি আমি জানি সখি
যদি আমাদের দোঁহে হয় চোখাচোখি
 সেই পরজন্মপথে দাঁড়াবো থমকি
নিভৃত অতীত কাঁপি উঠিবে চমকি

 

আমায় চিনবে তো ঠিক ঠিক, আমায় প্রস্ন করতো বাক করে তাকিয়ে। সেই প্রশ্ন মনে মনে ঘুরে ফিরতো বার বার। আমার হৃদয়ে আমার অন্তরে যদি থাকে তোমার জন্য খোঁজ তা জানাই বুঝি কবির এই চরণ দুখানির সৃষ্টি। তা বলতাম পরজন্ম পথে আমি যে খুঁজে ফিরব তোমায়। সুমন কি তাতেই আত্মহারা? তাই আমায় ছেড়ে যেতে র বুঝি আর কষ্টই রইলো না। কে যে বলেছিলাম, ওকে আমি খুঁজে নেব। এখন যে আর কিছুই বলার নেই।ওর কন্ঠস্বর বারবার ধ্বনিত হয়ে আমার মন ভরিয়ে দিতে আসে যেন ওকে খুঁজে নিই।


প্রতি বিকেলের বারান্দা বসি। খোলা মাঠের পারে তো সুমন সমাহিত। সুমন নয়, দেহটা। ও যে আমার কাছে কাছে সব সময়। আমায় ঘিরে তার আসা যায়া, আমার অনুভবে। বারোটি বছর কেটে গেছে র চলে যায়ায়। কটু বারের ন্য তো টে পায়নি। একবারের জন্যো মনে হয়নি আমার সুমন সশরীরে আমার কাছে আর আসবে না। ত ভালবাসায় ঘেরা আমি। ওর মায়াজালে আচ্ছন্ন আমি। আমার প্রশান্তি, পূর্ণতা  সব দিয়ের যে আমায় ঘিরে রাখে। দুষ্টুমি করে মনে করিয়ে দে,
 

জানি, মনে হবে মম,
চিরজীবনের মো ধ্রুবতারা- সম
চির পরিচয়- ভরা র কালো চোখ।
আমার নয়ন হতে লয়া আলোক,
আমার অন্তর হতে লইয়া বাসনা
আমার গোপন প্রে করেছে রচনা
এই মুখখানি। তুমি কি মনে মনে
চিনিবে আমারে?


আমি না চিনলে আর কে চিনবে তোমায়? সেই বারোটি বছর আগে, তোমায় কি দেখেছিলেম তখনো। শুধু তো চিঠি লিখে উত্তর দেয়া, পে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয়। তারপর কত কথা। তুমি ছিলে ছায়া সুনিবিড় ইয়র্কশ্যায়ারের একটি গ্রামে। আর আমি ন্ট্রিয়লের জনবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্টেআমার সমস্ত দিন, সমস্ত সন্ধ্যা কেটে যেত ভাবতে ভাবতে তুমি কেমন ভাবে ভালবাসো এত নির্জনতা। সারাদিনে তোমার ওখানে একটি পথিকের দেখা পায়া ভার। আর আমার খানে জনাকীর্ণ পরিবেশে তোমার দেখা পায়া ভার।


কথা যত বলি না কেন কখনো ভাবিনি আমি তোমার প্রতি অনুরক্ত হব। আমার ভাবনার তীত ছিল যেমন দেয়া কাকে বলে জেনেছি গল্প পড়ে। গপ্লের নায়িকারা পারে কাজটি করতে। আমার দ্বারা হবে না কখনোআর সেই আমি কিনা তোমায় বশেষে। আর তখনই তোমার জীবনের ঘন্টা বেজে ঠল। মন ভাবে কি ঠিক করে রেখেছিল নিয়তি। নিয়তি কি জানতো যে তোমার সময় হয়ে সেছে। তাই চলে যাবার আগ দিয়ে নিয়তি তোমার জীবনের সকল পূর্ণতাকে একত্র করে তোমা দিতে চেয়েছে। আর সেজন্য নির্বাচিত হলাম আমি। আমি নির্দিষ্ট হলাম সেই মেয়েটি হিসেবে যে হবে তোমার মানসসুন্দরী


আমার তো সৌভাগ্যতুমি বলো এ যেন তোমার সৌভাগ্যতাই এত দূরত্বের বাধা না মেনে চলে লে আমার কাছে। লে তো লে কেবারে বলে। আমায় ভরিয়ে দিয়ে শূন্য করে তারপর চলে গেলে।


সেই দিনটি খনো এতো সুন্দরতুমি আমার ঠিকানা চালে। আমি ঠিকবুঝেছি তুমি আমায় দেখতে চাকিন্তু কবে আসবে তা বলতে চানি। আমিজানতে চা নি। কদিন বিকেলে দরজায় নক্‌দরজা খুলে দেখি খুব সুন্দর একটি মানুষ আমার সামনে। আমি তো না জেনেই সেদিন নীল শাড়িটি পরেছিলাম। নাকি আমার মন জেনেছিল? তোমায় দেখতে দেখতে সবটুকু সময় আমার নিমেষেই যেন শেষ হয়ে গেল। সব কথা যেন বলা হয়ে গেল। বারবার তবুও তোমার অনুরোধ, মিত্রা কিছু বল। দশটি দিন যেন স্বপ্নের মত। তোমার দুসপ্তাহের ছুটি আবার চলে যেতে হবে ফিরে। ত কম সময়ে আমার সব কথা অনুভবে নিয়েছিলে তুমি। আমি তো বলিনি কিছু সেই 'দিনে শহরের আনাচে কানাচে ঘুরেছ আমায় নিয়ে কত সন্ধ্যায়

 

খনো সন্ধ্যা  নামে, আমি তো কোথা যা না ঘুরতে। সময়ের ভারে ক্ষয়ে গিয়েছি নেক। নিজেকে বেশ জড় মনে হয়। আবার তুমি যখন আসবে তখন আমার প্রাণ সঞ্চার করে দিও সুমন তোমার বিনিময়ে নয়, তাহলে যে আবার তোমায় হারাবো।


যাবার দিন হঠাতই দুর্বল বো করে অসুস্থ হয়ে পড়লে। ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল করতে করতে তুমি শেষ। আর তুমি নেই খানকার মাটিই কি তোমায় টেনে নেছিল ?

বড় ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল আমার এইভেবে, আমার ভালবাসা তোমায় নে দিয়েছে আমার কাছে। কিন্তু এভাবে?


আমি প্রতি বিকেলে বারান্দায় বসি। খোলা মাঠের পারে সবুজ গাছের সারি। চেরি ফুলে ছেয়ে আছে খন। খানে তুমি রয়েছ। আকাশে বাতাসে তোমার সুবাস।জীবনের সমাপ্তিই কি অনুভবের সমাপ্তি?মন বলে তুমি আমায় অনুভব করো আর তাই আমার বেঁচে থাকা। তোমায় না পায়ার মাঝে এ যেন আমার বেশী করে পায়া।
অমিত্রা
২৫শে মে, ২০০৭
ন্ট্রিয়ল