শ্রাবণের আকাশে অনার্য মেঘ

 

প্রণব আচার্য্য


সময় যদিও বিরুদ্ধে তবুও প্রত্যাশায় কোন কমতি থাকতে নেই;

কুনাল এরকম করেই ভাবতো সবসময়। পাওয়ার আকাঙ্খা তার মধ্যে অ্যাতটাই তীব্র। শৈশবের কেডস্ থেকে জীবনের প্রতিষ্ঠা যা কিছু চেয়েছে সবই চেয়েছে তীব্র ভাবে। এবঙ পেয়েছেও সবই, শুধু প্রথম যৌবনের প্রথম নারী ছাড়া। ঐ একটা যায়গায়ই অপ্রাপ্তি তার। ব্যর্থ হয়েছে সে শেষমেশ কাঙ্খিত নারীর কাছে। যদিও অনেক নারীই চেয়েছে তাকে; কিন্তু যাকে চেয়েছে সে তার সমস্ত যৌবন দিয়ে, পৌরুষ দিয়ে; যার জন্য সে কাটিয়েছে সংখ্যাতীত স্বপ্নাবিষ্ট যন্ত্রণাকাতর রাত্রি; যার জন্য সে ছুঁয়েছে প্রতিষ্ঠার প্রতিটি শিখর; এমনকি যার কাছে প্রথম নতজানু হয়েছে সে ভালোবাসার দুর্বিনিত দাবী নিয়ে- পায়নি সে সেই নারীকে। প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো কুনাল। সে অবশ্য শোধ নিয়েছে এই প্রত্যাখ্যানের।

অরুন্ধতী। কুনালের একমাত্র ব্যর্থতার নাম। দ্বিতীয় বর্ষের ভাষা বিজ্ঞানের ছাত্রী। বর্তমানে বান্ধবহীন। কুনালের সাথে ব্যাপারটার পর কেন জানি বন্ধুবান্ধবরাও ওকে এড়িয়ে চলে। এখন ক্যাম্পাসে সে একা। অবশ্য ও নিজেও ইচ্ছে করে এখন আর ওদের কাছে ঘেঁষে না। নিজের মতো করে আছে। যদিও হারিয়েছে আগের সেই উচ্ছ্বলতা। ক্লাশ শেষে সেই বিষন্ন বাসা; সারাদিন মায়ের বিরক্তিকর ঘ্যান ঘ্যান। তিনটে টিউশনি করে মাস শেষে নগদ চার হাজার টাকা মায়ের হাতে তুলে দ্যায়; নিজের পড়া এবঙ হাত খরচের জন্য একহাজার টাকা থাকে ওর কাছে অবশিষ্ট। তবুও সংসারের আরও চাহিদা ওর কাছে। বন্ধুরাও চেয়েছিলো কুনালের সঙগে ওর এই সম্পর্কটা হোক। কুনাল ভালো এবঙ যোগ্য এতে কোন সন্দেহ নেই। ডিপার্টমেন্টের সেরা ছাত্র। কিন্তু একপক্ষ চাইলেতো আর হবে না।
 

***

আজও অরুন্ধতীর ঘুম ভাঙ্গলো মার চেঁচামেচি শুনে। আজ অবশ্য ক্যাম্পাসে যাবে না ও। মাত্র একটা ক্লাশ; একটা ক্লাশের জন্য যাওয়ার কোন মানে নেই। তাছাড়া আজ একটা বিশেষ দিন ওর জন্য। ২৮ সেপ্টেম্বর। এই দিনেই অনার্যের সাথে পরচিয় হয়েছিলো ওর। বিকেল ৫ টায় ওর সাথে দেখা করার কথা ক্যাম্পাসের সেই কৃষ্ণচুড়া গাছটির নিচে। আজ সারা দিন ধরে সেই প্রস্তুতি নিবে ও। ফিরোজা রঙের শাড়ি, কপালে টকটকে লাল টিপ আর চুল অবশ্যই ছাড়া থাকতে হবে। যতক্ষণ সময় আছে অনার্যের চিঠিগুলো আবার এক এক করে পড়বে ও। তার চিঠির ভাষা অসাধারন। যদিও অনার্যের সঙ্গে তার পরিচয়টা একেবারে সাদামাটা। স্মরণীয় করে রাখার মতো কোন ঘটনা সেদিন ঘটেনি। তবু আজও মনে আছে অনার্যর সঙগে প্রথম পরিচয়ের কথা।
 

***


সেদিন টিএসসিতে তরুন কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর চলছিলো; সেখানেই অনার্যকে প্রথম দ্যাখে ও। অপর্ণাই ওকে দেখিয়েছিলো। কিরকম ভাবে যেন অপর্ণার দাদা হয় অনার্য। ওরা বসেছিল দর্শক সারির মাঝামাঝি। আর অনার্য ষ্টেজে কবিদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায়। ভাঙ্গাস্বাস্থ্য, একহারা গড়ন, মুখে উসকোখুসখো দাড়ি, কাঁধে চটের ব্যাগ, রঙচটা একটা ফতুয়া গায়ে; দূর থেকেই ভীষন আনস্মার্ট দেখাচ্ছিলো। কিন্তু যখন সে মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে আবৃত্তি শুরু করল, অরুন্ধতীর অবাক হওয়ার পালা; অ্যাত সুন্দর কন্ঠ মানুষের হতে পারে! মনে হচ্ছিলো য্যানো তার কন্ঠ দিয়ে ঝরঝর করে বেরুচ্ছে শুভ্র শুভ্র ঝর্নাধারা; আর সেই ধারায় অরুন্ধতী ভিজে চলছে অবিরল। ওর গা ঝমঝম করতে লাগলো, সমস্ত শরীরে কম্পন শুরু হয়ে গ্যালো। আজও মনে আছে সেই কবিতাটির শেষ কয়েকটি লাইন...



...সেই মেঘবৃন্তিত অলকের অলক্ষ্যে তোমাতেই প্রলুব্ধ হৃদয়
করোটিতে কাঁপে প্রেম; দুর্বিনিত আর্তনাদে নিয়ত প্রকম্পিত
শিরাপুঞ্জের শোণিতধারা এই; অনন্ত যৌবনা তুমি কবিহৃদ্ বসন্তে;
তোমারই স্মরণ বলে যায় কানে কানে নির্লিপ্ত হিয়ায়
জাগায়ে স্পন্দন এসো প্রিও, প্রিয়তমা, হে আঁধার সুন্দর আমার...



আবৃত্তি কখন যে শেষ হলো বুঝতে পারেনি ও। অপর্ণা যখন ওর
সঙগে অনার্যের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল তখন হুশ হলো ওর।

: আপনি খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন, বলল ও;
আচ্ছা, বলেই নিজেরে পথে হাঁটা ধরল অনার্য।

মন খারাপ হয়ে গ্যালো অরুন্ধতীর। একেবারেই অসভ্য ছেলেটা। ভদ্রতা জানে না। এত সুন্দর কন্ঠ অথচ কী ভীষন অহংকারী। একটা ধন্যবাদও দিল না। ঠিক করে ফেলেছে যত বড় কবিই হোক এর সাথে আর কোনদিন কথা বলবে না ও।

পথে আসতে আসতে অপর্ণা যখন ছেলেটার প্রশংসা করছিলো খুব বিরক্তি লাগছিলো ওর। তোর দাদা খুব দাম্ভিক অরুন্ধতী বললো। অপর্ণা মানতেই রাজি নয় তা। অপর্ণার কথা তার দাদা খুব ভালো ছেলে, বিনয়ি ভদ্র। অরুন্ধতীই তাকে বুঝতে ভুল করেছে।
 

*
 

: আপনার নামইতো অরুন্ধতী, তাই না?
: হুঁ, তাই
: সেদিন আপনার নামটি খুব মনে হচ্ছিল। আপনার কোন ঠিকানা জানতাম না। না হলে দেখা করতাম;
: মানে...?
: জানেন তো আপনার নামে একটি নক্ষত্র আছে। হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার কথা মনে পড়ে গ্যালো
: ক্যানো, আমার নাম নক্ষত্রের নামে না হলে কি আপনার মনে আসতো না?
: হুঁ, ঠিক বলতে পারছি না। নাও আসতে পারতো হয়তো
: যাক, আমার মতো একজন সাধারন মানুষের নাম কেউ মনে করতে পারে ভেবে অবাকই হচ্ছি। ধন্যবাদ; যাই
: আচ্ছা

দ্বিতীয়বার এই কয়েকটি কথাই হয়ছিলো তাদের। তারপর অবশ্য প্রতিদিনই আসতো সে অপর্ণার সঙগে। একসাথে আড্ডা দিতো ওরা। ওর সঙগে প্রথম দিকে অনার্যর কথা খুব কমই হতো। প্রথম দিকে ওকে অপছন্দ করলেও পরে পরে আর ওর খারাপ লাগতো না। বরঞ্চ অনার্য একদিন ক্যাম্পাসে না আসলে, একদিন তার সঙ্গে দ্যাখা না হলে অরুন্ধতীর ভালোই লাগতো না। কি একটা আকর্ষন যেন আছে তার মধ্যে। অনার্যের যে জিনিশটা ভালো লাগতো ওর তা হলো তার কথা বলার ষ্টাইল। অরুন্ধতী তন্ময় হয়ে শুনতো শুধু। প্রতিদিন ১ টার পর অরুন্ধতী অস্থির হয়ে থাকতো কখন অনার্য আসবে। ওদের ডিপার্টমেন্টের ক্লাশগুলো ১ টার আগে শেষ হতো না। প্রথম প্রথম অবশ্য অপর্ণা থাকতো তাদের সঙ্গে। এখন আর সে থাকে না। কেন জানি সে তাদেরকে এড়িয়ে চলে এখন। অরুন্ধতী বেশ কয়েক বার এ ব্যাপারে তাকে জিগ্গেস করেছে। কিন্তু, অপর্ণা কিছুই বলে না; এড়িয়ে যায়। অনার্যর সাথেও সে এ বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেছে। অনার্যর কথা হচ্ছে, থাক ও যদি আমাদের এড়িয়ে চলে তো চলুক; আমাদের আর কী করার আছে।

*

অরুন্ধতীর জন্ম শ্রাবণ মাসে শুনে অনার্য তার নাম দিলো শ্রাবণ

শ্রাবণ নামটি ওর খুব ভালো লাগল। তবু খুব নির্লিপ্ত ভাবে বললো, আচ্ছা ডাকবেন
 

***

অরুন্ধতী এখনও অনার্যকে আপনি বলে সম্বোধন করে। যদিও ওর তুমি বলতে খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু অনার্য এ ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। অথচ অরুন্ধতীকে সে যখন আপনি সম্বোধন করতো তখন ও নিজেই তুমি বলতে বলেছিলো। অনার্য তাকে এখন তুমিই বলে। কিন্তু ওকে কখনও বলেনি তুমি বলে ডাকতে। আসলে তার কাছে তুমি আর আপনিতে কোন পার্থক্য নেই; লোকটা আসলেই একটা হাবলু। অরুন্ধতীর খুব ইচ্ছে অনার্য একটু স্মার্ট হয়ে চলুক। ক্যামন হাঁদারামের মতো চলাফেরা করে। একটু চেঞ্জ হলে ক্ষতি কী! এ বয়সের ছেলেরা কি সুন্দর ক্লীন শেভড্ হয়ে চলাফেরা করে। কতবার সে অনুরোধ করেছে শেভ করার জন্য। চুলগুলো একটু গুছিয়ে আঁচড়ানোর জন্য। না, গোঁ ধরে বসে আছে, শেভ করবে না। এটা নাকি তার একটা বিদ্রোহ। সমাজের বিরুদ্ধে নিরব প্রতিবাদ। হু! কী উদ্ভট কথা। দাড়ি রাখা নাকি প্রতিবাদ। তবে সেও তাকে শেভ করিয়েই ছাড়বে, না হলে ওর নামও অরুন্ধতী নয়। অনার্যর আরেকটা বিষয়, সাহিত্য কবিতা রাজনীতি এসব ছাড়া তার আর কোন কথা নেই। আর সব ব্যাপারেই সে উদাসীন। ব্যাক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার, ফ্যাশন আরও কত কথা আছে। অরুন্ধতী তার জন্য কী অধীর হয়ে থাকে, অথচ তার কোন শোধবোধ নেই। কোন ব্যাপারেই তার নিজস্ব অপিনিয়ন নেই। ও যা’ই বলে তা’ই মেনে নেয়। সব কিছুতেই, আচ্ছা ঠিক আছে; অরুন্ধতী যদি বলে যাই, আচ্ছা ঠিক আছে; যদি বলে কাল দেখা হবে না তাও, আচ্ছা ঠিক আছে। অরুন্ধতীর ধারনা, ও যদি বলে কাল থেকে আর আপনার সাথে কথা বলবো না, তাহলেও সে নির্বিকার ভাবে বলবে, আচ্ছা ঠিক আছে। যেন ওর কোন নিজস্ব সত্তা নেই, ইচ্ছা নেই। এটা ওর খারাপ লাগে। একটু জেদ করলে কি হয়? একথার সুত্রে সেদিন অনার্য বলছিলো, কবিরা সাধারনত পার্থিব জীবনে ব্যর্থই হন। বস্তুত শিল্প মানেই মহান ব্যর্থতার এক অপার্থিব উল্লাস। এই দ্যাখনা জীবনানন্দ দাশ; কত বড় কবি। অথচ, তাঁর সম্পর্কে তাঁর স্ত্রীর মন্তব্য, জীবনানন্দ একজন ব্যর্থ মানুষ ছিলেন। এ ধরনের কথা ওর ভালো লাগছিলো না বলে সেদিন অতিদ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গ্যালো। কিন্তু, সেদিন সারাটা দিন ওর মন খারাপ ছিলো বারবার ঐসব কথাগুলো মনে এসে।

 

*****


একটা বিষয় অরুন্ধতী এখন বুঝতে পারছে, ক্যানো অপর্ণা তাদেরকে এড়িয়ে চলে; ইদানিং অপর্ণার সঙগে কুনালের খুব ভাব। ক্যাম্পাসে ওরা সারাক্ষণ এক সাথেই থাকে। কুনালকে ও একদমই পছন্দ করে না। ঐ ঘটনার পর কুনালের কারনেই ওর বন্ধুরা ওকে এড়িয়ে চলে। কুনাল সে সময় বলেছিলো সে শোধ নেবে। এখন অরুন্ধতী বুঝতে পারছে প্রতিশোধটা আসলে কী? সবার কাছ থেকে ওকে বিচ্ছন্ন করে দিচ্ছে সে। এমনকি অপর্ণা, যে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ; ওর জীবনের সবকিছুই সে জানে, এতদিন যে অপর্ণা ওর জীবনে জড়িয়ে ছিলো গোপন নিঃশ্বাসের মতো-; সেও ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এখন বুঝতে পারছে ক্যানো অপর্ণা ওর সাথে ইদানিং খারাপ ব্যাবহার করে।
 


***


শাড়ি পরা হয়ে গ্যাছে। সেই গাঢ় ফিরোজা রঙের শাড়ি। সে দিন প্রোগ্রামে এই শাড়িটাই পড়ে গিয়েছিলো ও। শাড়িটা অনার্যর খুব পছন্দ। ৫ টা বাজতে চল্লিশ মিনিট বাকি। ঠিক করে রেখেছে আজকে অনার্যকে কথাটা বলবে; আরও আগেই বলতো; সঙকোচের কারণে পারে নি। আজ যে কোরেই হোক বলবে ও। অনার্যের গোলাপ পছন্দ। আজ তাদের পরিচয়ের এক বছর পূর্ণ হবে। তাই ও একটি টকটকে লাল গোলাপ কিনলো।


*


বরাবরই অরুন্ধতী দেরীতে আসে। কিন্তু আজ ও ক্যাম্পাসে পৌঁছলো ৫ টা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে। অনার্য বসে আছে। শেভ করে নি। কথা ছিলো আজকে শেভ করে আসবে। নিশ্চিত আজও কোন একটা অজুহাত দাঁড় করাবে।

: আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে? একেবারে পাঁচ মিনিট আগে?
: আজকেও আপনি ফাজলামি করবেন আমার সাথে? কী কথা ছিলো আজকে?
: কী কথা?
: ক্যানো ভুলে গ্যাছেন?
: ও আচ্ছা! না, আসলে হয়েছে কী...
: থাক, আর অজুহাত দেখাতে হবে না; আমার কোন কথাই আপনি রাখেন না
: দ্যাখো, রাগ কোরো না। কথা দিচ্ছি আগামী বার আমি অবশ্যই শেভ করে আসবো। ও, একটা খবর আছে
: কী খবর?
: আগে গোলাপটা দাও তারপর বলি
: না, গোলাপ এখন না, পরে। গোলাপ দেওয়ার সময় আপনাকে একটা বিশেষ কথা বলবো। আচ্ছা আপনার সেই কবিতাটার নাম কী দিলেন?
: কোনটা?
: ঐ যে কৃষ্ণচুড়া গাছ নিয়ে লেখা? একটু আবৃত্তি করেন না ওটা
: ও আচ্ছা, ওটার নাম দিয়েছি, একগুচ্ছ কৃষ্ণচুড়ার সলিল সমাধি



কৃষ্ণচুড়া গাছের ছায়া পড়েছে দীঘির জলে
তোমার ছায়া পড়েছে আমার প্রেমে। তুমি তবু নীল শাড়ি পড়ে
জনহীন সন্ধ্যাবেলার মতো হেসে উঠলে; ভয় পেয়ে শিউরে ওঠা
বাতাস পালাতে গিয়ে হোঁচট খেলো কৃষ্ণচুড়ার পাতায়। গাছ থেকে
খসে পড়ে সলিল সমাধি ঘটল এক গুচ্ছ কৃষ্ণচুড়ার...
 


আবৃত্তি শেষ হলে ও হঠাৎ করেই জিগ্গেস করে বসলো, আচ্ছা আপনি প্রেম করেন নি কখনও?
: না
: ক্যানো করেন নি?
: আসলে করা হয়ে ওঠেনি
: কেউ যদি আপনার কাছে আসতে চায়; কেউ যদি আপনার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে, কেউ যদি আপনার কাছে এসে প্রেম প্রার্থনা করে; কী করবেন আপনি?
: ঠিক বলতে পারছি না কী করবো; যখন হবে তখন দেখা যাবে। এখন এসব ভেবে লাভ কী?
: এমনও তো হতে পারে যে এখনও কেউ আপনার জন্য বিনিদ্র রাত কাটায়; হয়তো আপনার জন্য নিরবে কারো মধ্যে চলছে বিরামহীন রক্তক্ষরণ; হয়তো করো শিরাপুঞ্জে রক্তের বদলে প্রবাহিত হচ্ছে আপনারই নাম...
: না, এরকম কাউকেতো দেখছি না; কেউ নেই
: আপনি নিশ্চিত?
: নিশ্চিত; শোন, কবি আমি; কবিদের পর্যবেক্ষণ শক্তি নির্ভুল। এরকম হলে আমি ঠিকই বুঝতে পারতাম; বাদ দাও এসব কথা। তোমাকে তো আসল কথাই বলিনি; আমি এই শহর ছাড়ছি। পরীক্ষাতো শেষ। ভাবছি চট্টগ্রাম সেটেল হবো। পরশু বাড়ি যাবো; সেখান থেকে চট্টগ্রাম। ঢাকা ফিরবো না আর। একেবারেই নির্বাসন নেবো ঢাকা থেকে। এখানকার সবার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেবো। তোমার সাথেও। আজকেই আমাদের শেষ দেখা। এখানেই সমাপ্তি টানবো আমাদের এই হিরন্ময় সম্পর্কের। কী বলো? একদিনতো আমাদের বিদায় নিতেই হবে; না হলে একটু আগেই নিলাম। আজ থেকে মেঘমুক্ত হলো শ্রাবণের আকাশ। দাও গোলাপটা; তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে; সন্ধ্যা হয়ে আসছে, তোমাকেও যেতে হবে; অরুন্ধতী তার হাতে গোলাপটা দিয়ে হতবিহ্বলের মতো বসে রইলো। অনার্য ওকে জিগ্গেস করলো, কই বলো তোমার সেই বিশেষ কথাটা?

অরুন্ধতী কোন রকমে বললো, না থাক বলবো না আর

আচ্ছা ঠিক আছে বলে অনার্য ওর কাছ থেকে বিদায় নিলো; ওর গলা দিয়ে কোন কথা আসছে না; না, কান্নাও আসছে না; শুধু অনার্যর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অরুন্ধতীর চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো- অনার্য, দেখবেন আপনি একদিন অনেক বড় কবি হবেন কারণ আপনিও আসলে একজন ব্যর্থ মানুষ।


(যখন আবৃত্তি দলে কাজ করতাম তখন শ্রুতিনাটক লিখতে গিয়ে এই লেখাটি লিখেছিলাম; সাল ২০০২)