জীবনামৃত

 

 

অফিস থেকে বেরোবার মুখে ব্যাগের মধ্যে কেষ্টো ঠাকুরের বাঁশি বেজে উঠল। আরে এতো দেশের কেউ হবে! অচেনা নাম্বার! কিন্তু দেশ থেকে ফোন এলেই মনটা কেমন টান টান হয়ে যায় এত বছর পরেও। ফোন ধরতেই ওপারে ভারিক্কি গলায় “এই যে মেয়ে...” আই এস ডি ফোনের সময় নষ্ট না করে জেনে গেলাম ফোন করছেন পৃথুদা – পৃথিবী বিশ্বাস – বোম্বে থেকে আমার পৃথুদা– নামটা আমার এক্কেবারে পছন্দ নয় আমার তবে মানুষটাকে বেশ লাগে। অবাক হয়ে ভাবছি আর তখনই পৃথুদা’র অনুরোধ – এখন তো মনে হচ্ছে আদেশ – “এই যে মেয়ে (আমার চন্দ্রা নামটা এত সুন্দর তবুও ‘এই যে মেয়ে’ বলে ডাকার মানেটা কি আমি বুঝিনা বাপু) সারা দিন খালি গান, অফিস আর বাড়ি করলেই চলবে? একটু পুরোন ভালবাসাকে কাছে টেনে নেবে কি এবার – একটু লেখালেখি করলে হয়না আবার - আমার নতুন ওয়েবজিনের জন্যে?” আমি হতবাক! কোনও যোগাযোগ নেই প্রায় দশ বছর! কোথা থেকে আমার নম্বর পেল পৃথুদা? সেই কণ্ঠ, সেই উদাত্ত আওয়াজ আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা! লিখতে খুব ভালবাসতাম এক সময়। আমার লেখা কলেজের ম্যাগ’এ বেরোতনা এটা অসম্ভব ছিল সেই সব দিনগুলিতে। কিন্তু আমি যে লিখিনি কত বছর! প্রায় ষোল বছর তো হবেই। ধুর কি যে করি। সারাদিনের এত খাটুনি, তার ওপর আবার লেখালেখি! আচ্ছা জ্বালা! ফোনটা কানে ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমি কেবল ভাবছি – পৃথুদা এত দিন পরে! কেন? কথায় কথায় ঠিক করলাম আবার লিখব। অনেক দিনতো লিখিনা। বললাম “দেখি লিখবখন।“

তাড়াতাড়ি মোবাইল অফ করে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। উফফ এখন কি মাথায় কিছু আসে? সেই কত দিন আগে লিখতাম। সংসারের নানান ঝামেলায় সে’সব এখন ইতিহাস। কিন্তু এই ভদ্রলোক তো ছাড়বার পাত্র নন। এক ঘন্টাও হয়নি, বাড়ি এসে ই-মেল চেক করতে গিয়ে দেখি পর পর দুটো ই-মেল। “কি কখন লিখতে বসবে?” এতো দেখছি মহা যন্ত্রণা হল। মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলাম যে এখনও লেখার সখ আছে। এখন তার ঠেলা সামলাও। যাক গে বাবা – বসি তো কলম নিয়ে – থুড়ি কম্পিউটার নিয়ে। আমিও তো লিখতে ভালবাসি। দেখি কি লেখা যায়! না হয় একটা রান্নার রেসিপি টেসিপি কিছু লিখে ফেলি। কিন্তু পৃথুদা’র পত্রিকায় কি রান্না বিভাগ আছে? কে জানে। লিখিতো কিছু। তার পর দেখা যাবে।

ছেলেকে একটু আদর করে তার পর এক কাপ চা নিয়ে বসলাম। আকাশ পাতাল ভাবছি – কি যে লিখি! হঠাতই মনে হল – আরে একটা কথা যা প্রায়ই আমার মাথায় ঘোরে... জীবন থেকে নেওয়া বা পাওয়া কিছু অভিঞ্জতা। একা বসে যখন ভাবি সেই সব ঘটনার তো কূল কিনারা পাইনা। সেই রকম কিছু লিখে ফেলব? শুরু তো করি... জয় রাধা মাধব...

বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলেনা কথাটা পত্র পত্রিকা আর গল্পের বই এর পাতায় প্রায়ই পড়ি। লেখক তার কল্পনা শক্তি দিয়ে কত রকমের গল্প মেলে ধরেন আর আমরা পাঠকরা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলি। আমিও মাঝে মাঝে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে এই রকম সব বই পড়তে গিয়ে বাস মিস করি। তার পর অফিসে পৌঁছে মিষ্টি হেসে বলতে হয় – “আজ আবার বড্ড ট্র্যাফিক...” সেই ছোট্ট বেলা থেকেই মনে হত “আচ্ছা এই সব গল্প কি সত্যি? নাকি সব বানিয়ে লেখা? একটু বড় হবার পরে জীবনের নানা অভিঞ্জতা থেকে বুঝতে পারলাম – এরকম হয়েও থাকে।

ছোট ছোট দু’একটি ঘটনার কথা আজ অনেক দিন পরে – তা প্রায় কুড়ি বছরেরও আগের কথা - লিখব বলে ঠিক করেছি। আমার অজানা কিন্তু ‘হবু-প্রিয়’ পাঠকদের যদি পড়ে ভাল লাগে তাহলে আমার লেখা সার্থক। আর যদি ভাল না লাগে তবে অনুরোধ করব তাদের জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর পাতায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে। কে জানে – হয়ত সেখানেও লুকিয়ে আছে এরকম অজস্র ঘটনা, আপাত দৃষ্টিতে যার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সেরকম যদি কিছু পেয়ে যান তবে আর দেরি কেন – আমার মত সব কিছু ফেলে (স্বামীর, স্ত্রীর বা প্রিয়জনের মুখোভংগী অগ্রাহ্য করে) স্মৃতি রোমন্থন করতে বসে পড়ুন। অন্য সবাই আনন্দ পাবেন। লেখক হবার আনন্দে ডুবে যান। প্রথম দিকে পুরস্কার টুরস্কার পাবার স্বপ্ন না দেখাই ভাল – কি বলেন! পাঠক এখানে যা পড়ছেন এ’সবই জীবন থেকে নেওয়া। জীবনামৃত আমার কাছে...

ঘটনা – ১


পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার শেষ প্রান্তে এক অজানা গ্রাম মধুগঞ্জ। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর, জমি জিরেত, বাচ্ছা কাচ্ছা, পোষা গরু ছাগল নিয়ে বেশ কিছু শান্তি প্রিয় মানুষের বাস। ছোট্ট হাসপাতাল, গোটা দু’এক প্রাইমারী স্কুল, গ্রামের একমাত্র দোতলা পাকা বাড়ির যিনি মালিক তিনি আর তার স্ত্রী সেই গ্রাম এবং আসে পাশের আর পাঁচটা গ্রামের লোকের বাবা আর মা। গ্রামবাসীরা নিজেরাই এই ডাক তৈরী করে নিয়েছে সময়ের সাথে সাথে। বাবা নিশি চক্রবর্তি ছিলেন মধুগঞ্জ গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা। স্বাভিমানী স্বাধীনতা সংগ্রামী। পাঁচটা বড় বড় পুকুর, প্রচুর ফুল ফলের গাছ, ঠাকুর চাকরের বাড়ি, গ্রামের ছেলেদের জন্য একটা ছোট্ট লাইব্রেরী আর গৃহদেবতা রাধা মাধবের মন্দির মিলিয়ে বিশাল জায়গা জুড়ে নিশি চক্রবর্তির বাড়ি ‘বিজলী ভবন’।

নিশি চক্রবর্তি মারা যাবার পরে ওই অত বড় বাড়িতে লোকজনের আসা যাওয়া অনেক কমে এসেছে। এখন আছেন সবার ‘মা’ বিজলী চক্রবর্তি আর অনেক পুরোন বেশ কিছু দাসদাসী, ঠাকুর চাকর। তারা কেউ এ’ বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি নয়। নিশি আর বিজলীর আট ছেলে মেয়েরা সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত। সারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যে যার চাকরী সূত্রে থাকে কিন্তু বছরে একবার লক্ষী পুজোর সময় সবাই গ্রামের বাড়িতে হাজির হয়। ক’টা দিন ছেলেমেয়ে নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে পুকুরের মাছ, গাছের নারকোল, মায়ের হাতে তৈরী আম জামের আচার আর গাছের ফল খেয়ে যে যার সংসারের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করে মেয়ে বৌ’রা নতুন শাড়ী গয়না পরে ঘুরে বকবক করে বাড়িটাকে একেবারে জমজমাট করে রেখে লক্ষী পুজোর দু’দিন পরেই বাক্স প্যাঁটরা ভরে জমির ধানের চাল, বাগানের কলাটা মুলোটা, নারকোলের নাড়ু, বাড়িতে তৈরী খেজুরের গুড় আর বাড়ির কালী গাই এর দুধের ক্ষীর নিয়ে যে যার পথে পাড়ি দেয়।

খালি বাড়িতে মস্ত বড় সেগুন কাঠের খাটে দুপুর বেলায় বিজলী একা বসে রামায়ন পড়েন। জীবনটা যে শুধু আসা আর যাওয়া সেটা তিনি খুব ভাল করেই জানেন। তবু কেন যে মাঝে মাঝে এ’চোখে অশ্রু আসে আর অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসে! এই ভর দুপুরে একা বসে থাকতে থাকতে বিজলীর অনেক কথা মনে হয়। ভবিষ্যতের কিছু কিছু ছবি যেন হঠাত একবার চোখের সামনে এসেই মিলিয়ে যায়। প্রায়ই দেখেন এই সব টুকরো টুকরো ছবির অনেক কিছুই। ক’দিন পরেই তা’ সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। সেই সত্যি কখনও যেমন ভীষন আনন্দের তেমনই কখনও আবার এতই নিষ্ঠুর যে প্রায় সত্তরে পৌঁছোনো বিজলীর মনে হয় – এই কথা মনে আসার আগেই আমি কেন চলে গেলামনা!

এই যেমন কিছুদিন আগে, মালী হরিপদর ছেলেটা পাশের গ্রাম নিশ্চিন্তপুরের স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে, তাকে তার বাবার সঙ্গে বাগানে কাজ করতে দেখে বিজলীর হঠাত মনে হল অমল এবার মাধ্যমিকে খুব ভাল করবে। তার তিনদিন পরে রেজাল্ট বেরোতে দেখা গেল অমল আসে পাশের দশটা গ্রামের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। আনন্দে বুক ভরে গেল বিজলীর। আহা গরীব ছেলে জীবনে কিছু করুক – তিনি সব দায়ীত্ব নেবেন ওর উচ্চ শিক্ষার – এই অংগীকার করলেন। তার কিছুদিন পরেই অমল কে কলকাতায় হস্টেলে ভর্তি করতে যাবার আগে হরিপদ এল “মা” কে প্রণাম করতে – সঙ্গে একটা ছোট্ট টিনের বাক্স হাতে নিয়ে অমল আর তার পেছনে দু’চোখ ভরা জল নিয়ে অমলের মা মিনতী। একমাত্র ছেলেটা চলে যাবে কোন সুদুর এক শহরে – সেই শহরটা মিনতি কোনও দিন চোখেই দেখেনি। এই গ্রাম থেকে গিয়ে তার সহজ সরল কাল ছেলেটা কি করবে, কি খাবে, এই সব ভেবেই কটা রাত মিনতী দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তবে ‘মা’ যখন ভরসা দিয়েছেন তার ছেলে স্কুলে পড়বে, কত বড় মানুষ হবে, মায়ের ছেলেদের মত সুন্দরী বৌ নিয়ে গাড়ি চেপে পুজোর সময় বাড়ি আসবে, এত সব রংগীন স্বপ্ন বুঝি বা মিনতীর চোখের জলে খুশীর রুপোলী ঝলক নিয়ে আসে।

বিজলী দাঁড়িয়ে ছিলেন দ্বোতলার বড় বারান্দায়। অমল এসে হাসি মুখে পায়ে হাত দিল প্রণাম করার জন্যে – ওর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতে গিয়ে চমকে উঠলেন বিজলী। কি যেন একটা দৃশ্য চোখের সামনে এসেই মিলিয়ে গেল! এক মুহূর্তের জন্য বিজলীর মনে হল অমল আর কোনও দিন ফিরবেনা। জোর করে মন থেকে এই বিশ্রী চিন্তা মুছে দিতে চাইলেন। অমলের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন – “ভাল করে থাকিস – পড়ায় মন দিস – অনেক বড় হ’ বাবা”। অমল চলে গেল হরিপদর সঙ্গে। পায়ে হেঁটে যাবে পাশে গ্রাম নিশ্চিন্তপুর, সেখান থেকে বাস নিয়ে কাদাখালি – তারপর নৌকোয় হাতানিয়া দয়ানিয়া নদী পার হয়ে স্টেট বাস নিয়ে সেই কলকাতা। তার ট্রেনে হাওড়া গিয়ে নিজের নতুন হস্টেল – নতুন জগত।

অমলকে রেখে দু’দিন পরে ই গ্রামে ফিরে এল হরিপদ। ছেলে তার খুব ভাল আছে। হস্টেলের মাষ্টার বাবুরা কি ভাল – তার রেজাল্ট দেখে কি খাতির করল অমলকে! হেড মাষ্টার মশাই আবার ‘মা’র বড় ছেলে বড়দা ভাই – অজিত – তার বন্ধু। অমলের কোনও অসুবিধা হবেনা। ছোট্ট ঘরের দাওয়ায় বসে মিনতীর সঙ্গে কত কথাই আলোচনা করে হরিপদ – স্বপ্নের কি লাগাম আছে! বিজলীও নিশ্চিন্ত হন। তার এই সব নানা চিন্তার কথা আকুকে বলেননা। একটা ছোট্ট খাতায় লিখে রাখেন মাঝে মাঝে। এবার মনে মনে ভাবলেন বয়স হয়েছে, ছেলেমেয়েরা কেউ কাছে নেই অমলটা সব সময় দিদা দিদা করত – সেও চলে যাবে এই ভয়েতেই কি ঐ সব উল্টোপাল্টা কথা মনে এসেছিল? নিশ্চিন্ত হয়ে রামায়নের পাতায় চোখ রাখেন বিজলী – “ভগবান শ্রী রামও স্ত্রী’র প্রতি এত অবিচার করলেন! ফুলের মত নিস্পাপ সীতাকেও অগ্নি পরীক্ষা দিতে হল...!”

সপ্তাহ খানেক পরে – সে’দিন তখন সকাল দশটাও বাজেনি। রোজকার মত স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিতে ঢুকছিলেন বিজলী – গাড়ির হর্ণ শুনে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে এলেন – “এই সময় আবার কে এল” – দেখেন গাড়ি থেকে নামছে অজিত – বিজলীর বড় ছেলে। “অজিত এখন এল কেন – ক’দিন আগেই তো ঘুরে গেছে!” কি একটা কাজে এসেছিল মধুগঞ্জ থেকে একটু দূরে – ধুপবাড়িতে – মায়ের কাছে এসে এক রাত্তির থেকেও গেছে তখন – “আবার এক্ষুনি আসবার কথাতো কিছু বলে যায়নি!” – পুজোর থালা হাতে নিয়ে ব্যস্ত পায়ে নিচের গাড়ি বারান্দায় এলেন বিজলী – “কি হয়েছেরে অজিত – তুই এখন এলি যে – বৌমা তিতলি সবাই ভালতো?” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললেন বিজলী। অজিত মাকে ধরে ঘরে নিয়ে এলেন। আগের দিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে বাস থেকে নামতে গিয়ে অমল পা পিছলে পড়ে বাসের পেছনের চাকার তলায় চাপা পড়ে – মাথাটা থেঁতো হয়ে গিয়েছে। বন্ধু হেডমাষ্টার প্রতীক সাহার কাছ থেকে খবর পেয়েছেন অনেক রাতে। এই অবস্থায় মৃতদেহ আর ফেলে রাখা যাবেনা – হরিপদ আর মিনতিকে নিয়ে যেতে এসেছেন অজিত। বিজলীর দু’চোখে গভীর অন্দকার নেমে এল। আবার। আবার বিধাতা সেই পরিহাস করলেন তার সঙ্গে! এই ঘটনা শোনার আগেই তিনি চলে গেলেননা কেন!

পরের বছর পুজোর আগে থেকেই মনে হতে লাগল – ‘এই শেষ, আর আগামী বছর পুজো দেখা হবেনা – হঠাত করে চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠছে। তিনি সাদা বিছানায় শুয়ে সামনে সবচেয়ে আদরের জামাতা রঞ্জন দাঁড়িয়ে। নিজের ছেলেদের চেয়েও রঞ্জনকে বেশী ভালবাসেন বিজলী। ছোট্টবেলায় মা’মরা রঞ্জন নিজের চেষ্টায় অনেক পড়াশোনা করেছে। বাঘদা চিংড়ি নিয়ে গবেষণার কাজে প্রায়ই আসত মধুগঞ্জে – মধুগঞ্জের খুব কাছেই তো সমুদ্র। সেখান থেকে জেলেদের দিয়ে ছোট ছোট চিংড়ি’র বাচ্ছা নিয়ে যেত কলকাতায় তার সরকারী অফিসে। ছেলেটিকে দেখে তার কথা শুনে তার সঙ্গে মিশে মুগ্ধ হয়েছিলেন নিশি আর বিজলী। তারপর তার বাবা আর বোনেদের সঙ্গে আলাপ। পরের ছেলেকে চিরকালের মত আপন করে নিতে মেজোমেয়ে মঞ্জুশ্রী’র সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। মঞ্জুশ্রী খুব সুখী – তার এক মেয়ে ছ’বছরের। খুব শিগগির তার দ্বিতীয় সন্তান হবে। বিজলী জানেন এবার নাতি হবে। কিন্তু দেখে যেতে পারবেন কি?

মনটা বড্ড উচাটন হচ্ছে ক’দিন হল। লক্ষী পুজো এসে গেল। কাল থেকেই সবাই আসতে শুরু করবে। এবার খুব বড় পুজো হবে। আসে পাশের চারটে গ্রামের সবাই রাত জেগে পুজো দেখবে। মেজো ছেলে তার সখের নাটকের দল নিয়ে আসছে। নাটক হবে, গান বাজনা হবে। এবার আসছে বড় মেয়ে প্রভার মেয়ে – বিজলীর সদ্য বিয়ে হওয়া সব চেয়ে বড় নাতনি দোয়েল আর তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এই সময় কি এইসব আবল তাবোল চিন্তা মানায়! কিন্তু বিজলী, কেন কে জানে, মনকে কিছুতেই বশ মানাতে পারেননা! খালি মনে হচ্ছে – “রঞ্জনকে এবার আসতে বলি, যদি আর কোনওদিন দেখতে না পাই”। মঞ্জুশ্রী’র ছেলেটার জন্যে পুরীর প্রসাদ রাখা আছে – রঞ্জনের হাতে দিতে হবে – যদি এ’সুযোগ আর না আসে – মঞ্জুও যে বিজলীর খুব প্রিয় সন্তান – কত গুণী মেয়ে সে – গান বাজনা, সেলাই, রান্না কিছুতেই তার জুড়ি মেলা ভার! অনেক ভেবেচিন্তে ডেকে পাঠালেন বাড়ির সব কাজের কাজি সেই রাধু মল্লিককে। নিশি চক্রবর্তির সময় থেকেই রাধু বাড়ির একজন। কোথায় ধানজমিতে কি সার দরকার, কোন কাজের মেয়ের ছেলের অসুখ করেছে, কোন গাইএর দুধ ভাল হচ্ছেনা – সব দিকে নজর রাধুর। ছেলেমেয়েরাও রাধুদা বলতে অজ্ঞান। লক্ষী পুজোর কটা দিন তো রাধুর নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। তাকেই ডেকে একান্তে কিছু কথা বললেন বিজলী –“যেমন করেই হোক, সব কাজের অন্য কাউকে দিয়ে কাল ভোরেই একবার কলকাতায় গিয়ে রঞ্জনকে নিয়ে আয় – মঞ্জুতো এবার লক্ষী পুজোয় আসতে পারবেনা। রঞ্জন অন্ততঃ একবার আসুক – না হলে আর দেখা হবেনা” – বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বিজলী।

“কি মুস্কিলেই ফেললে মা, এই সময়ে আমি এখন কি করে কলকাতায় যাই বলত? টাহকুর মশায়ের কাজ তো প্রায় শেষ, ক’দিন পরেই পুজো, কাল থেকে লোকজন আসা যাওয়া, এখন কলকাতায় যাওয়া কি চাট্টিখানি কথা? রাস্তাতো কম নয়! পায়ে হেটে যাওয়া, তার পর বাস, ট্রেন – কলকাতায় মেজদি’র বাড়িতে পৌঁছতে সেই ভর সন্ধে। রাতেতো ফেরা যাবেনা, দাদাবাবু কে নিয়ে আসতে সেই পরশু। তা তিনিতো কাজের মানুষ – হুট বললেই কি আসা যায়?” অবুঝ হয়ে পড়েছেন বিজলী – “যা একবার রাধু – পুরীর প্রসাদটা আমাকে রঞ্জনের হাতে দিতেই হবে। ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়”। চললেন রাধু। মনে একরাশ বিরক্তি। এই কাজের বাড়ি ফেলে এখন বিনা কারণে কলকাতায় যাওয়া কি মুখের কথা? তবু যেতে হয়। মা বলেছেন যে।

মঞ্জুশ্রী আর রঞ্জনের বাড়ী খাস কলকাতায়। মঞ্জুর বাচ্চাটি হবার সময় প্রায় হয়ে এল। এবার তাই আর অত রাস্তা পার করে বাপের বাড়ি যাওয়া হচ্ছেনা। রাধুদাকে এই সময় দেখে মঞ্জুতো যত অবাক ততই খুশী! তার পর শোনা গেল মায়ের বার্তা। তিনি নাকি আর থাকবেন না তাই রঞ্জনকে এক্ষুনি মধুগঞ্জ যেতে হবে। এবার দ্বিচকিত হবার পালা – “থাকবেন না মানে!” সে আমি কি করে বলি মেজদিভাই – মা’র মনে হয়েছে উনি আর কটাদিন মাত্র বেঁচে আছেন – তাই তোমার ছেলের জন্য পুরীর প্রসাদ দাদাবাবুর হাতে দিতে চান” – “মা’র কি শরীর খারাপ না কি?” অবাক প্রশ্ন রঞ্জনের। “শরীর খারাপ কেন হবে? দিব্বি আছেন, বাড়ি শুদ্ধ লোক একাই সামলাচ্ছেন”। তা’হলে কি হবে? এই মুহূর্তে কলকাতা ছেড়ে যাবার প্রশ্নই ওঠেনা। এই বাড়ীতে লক্ষীপুজো, মঞ্জু’র এ’অবস্থাতে অতো কিছুই পারবেনা এবার। বাজার হাট যা করার সবই রঞ্জনের দায়ীত্ব – তার পর আবার দিল্লি থেকে বড়দি’ আসছেন – অনেক ভেবেচিন্তে রাধুকে বলা হল – “ঠিক আছে তুমি যাও, গিয়ে বল যে পুজোর কাজকর্ম শেষ করে আমি ক’টা দিন পরেই আসছি। বড়দিদি আসবেন অনেকদিন পরে কত দূর থেকে – এদিকে একটু গুছিয়ে নিই – তার পর মধুগঞ্জ যাব।“

লক্ষীপুজো শেষ। দিল্লি থেকে আসা বড়দি’ ও এখন থাকবেন ক’দিন – এবার দিন দু’য়েকের জন্য মধুগঞ্জ যাওয়া যেতে পারে। সকাল বেলা ছ’টার বাসে রওয়ানা দিলেন রঞ্জন। রাস্তাতো কম নয়। কলকাতায় আবার কথায় কথায় মিছিল। প্রথম স্টেট বাসটি মিস করে পরের বাসে কাদাখালি, তারপর নৌকো করে নদি পার হয়ে আবার একটা বাস নিয়ে নিশ্চিন্তপুর – ভাগ্যক্রমে একটা সাইকেল ভ্যানগাড়ী পাওয়া গেল – তাতে চড়ে বিকেলের দিকে রঞ্জন পৌঁছালেন মধুগঞ্জ। গিয়ে শাশুড়ির দেখা পেলেন। সাদা বিছানায় শোওয়া বিজলী। গলা পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সব কিছু ফেলে রেখে চলে গেছেন ঘন্টাখানেক আগে। লোক গেছে বরফ আনতে। ছেলেরা সব আসা পর্যন্ত দেহ ঠিক রাখতে হবেতো!

ঐ যে বললাম ঘটনাগুলো জীবন থেকে নেওয়া – বিজলী ছিলেন আমার দিদিমা। আর রঞ্জন আমার বাবা। মঞ্জুর সেবার ছেলে হল বিজলীর রেখে যাওয়া পুরীর প্রসাদ দিয়ে তার মুখেভাত হল। দিদিমা’র সেই ছোট্ট ডায়েরীটার আঁকা বাঁকা লেখাগুলো একদিন বসে বসে পড়ছিলাম – আমার এগারো বছরের ভাই বলল “দিম্মা অনেক বই পড়ত তো, তাই যে গল্পগুলো ভাল লেগেছে সেই গুলো এই ডায়েরীতে লিখে রেখেছে – তাই নারে দিদি?”

আমার কিশোর ভাইএর মন যাই ভাবুক না কেন প্রাজ্ঞজনের বুদ্ধিতে এর কি কোনও ব্যাখ্যা আছে?

ঘটনা -২

২০০০ সালে লন্ডনে দু’একটি কন্সার্ট করার পরে আস্তে আস্তে অনেক জায়গা থেকে গান গাইবার আমন্ত্রণ পেতে শুরু করি। ঘটনাটা ২০০১ এর এপ্রিলের।

তখন এ’দেশে ইষ্টারের ছুটি চলছে। সেই সময় অক্সফোর্ডের থেকেও বেশ কিছুটা দূরে এক জায়গা থেকে আমাকে গান গাইতে যাবার জন্যে ডাকা হল। বর, ছেলে সঙ্গে গেলে সাধারণত গাড়ী নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু তারা দুজনেই ‘ভীষন ব্যস্ত’ তাদের কি সব প্ল্যান প্রোগ্রাম নিয়ে, তাই একা ট্রেনে যাওয়াই ঠিক করলাম। যাবার সময় কোনও অসুবিধা হলনা। স্টেশনে উদ্যক্তোরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাদরে আমাকে তারা নিয়ে গেলেন তাদেরই একজনের বাড়ীতে। সেই দিন সন্ধ্যায় তাদের গান শুনিয়ে রাতে সেখানেই থেকে পরদিন আমার লন্ডনে ফিরে আসার কথা দুপুর দু’টোর ট্রেনে। খুব আনন্দ করে কাটান গেল সেই একটা দিন। তারপর সময় মত একজন সংগীত রসিক আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দিলেন। সঙ্গে আমার ছোট্ট একটা ব্যাগ আর হারমোনিয়াম।
স্টেশনে এসে জানা গেল ট্রেন সেই বিকেল পাঁচটার সময়। এদিকে সেই ভদ্রলোকের বাড়িতে কাজ আছে। তিনি ততক্ষন আমার সঙ্গে বসে থাকতে পারবেন না।তো বুকের মধ্যে একটু একটু ভয় আর মুখে হাসি নিয়ে তাকে বলতে হল – “আমি এখানে বসে থাকব, চিন্তার কিছু নেই, আপনি চলে যান” – সেই শুনে ভদ্রলোকের মুখে এক স্বস্তির ছাপ দেখা গেল – তিনি বিদায় নিলেন। এদিকে আমি একা বসে প্ল্যাটফর্মে। আসে পাশে আর একটাও লোক নেই। এক্কেবারে জনমানব শুন্য প্ল্যাটফর্ম। ছোট্ট স্টেশন। দু’তিনটে দোকান আছে কিন্তু একটাও খোলা নেই। এই দেশে ছুটি মানেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়া। তাই দোকানিরাও আর দোকান খুলে রাখতে রাজি নয়। তাদেরও তো বেড়াতে যেতে ইচ্ছে হয়। যাই হোক, বসে আছি তো বসেই আছি। বরাবরই আমি গনেশ ঠাকুরের খুব ভক্ত। আর কোনও কাজ না পেয়ে মনে মনে তাঁরই মুন্ডপাত করতে লাগলাম। ভালোয় ভালোয় বাড়ি পৌঁছতে পারলে হয়। বরকে ফোন করব তার উপায় নেই। মোবাইলে সিগন্যাল নেই।

আধঘন্টা খানেক বসে থাকার পর কোথা থেকে একজন বয়স্কা মহিলা আমার পাশে বেঞ্চিতে এসে বসলেন। শাড়ি পরার ধরন দেখে মনে হল গুজরাটি। হাতকাটা মাঝারি সাইজের কালো ব্যাগ। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে জানতে চাইলেন আমি হিন্দি বা গুজরাটি জানি কি না! হিন্দি জানি শুনে আমার সঙ্গে গল্প করা শুরু করলেন। তিনিও আমার মত লন্ডনেই ফিরছেন। মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। মহিলার বয়স দেখে চলতশক্তি দেখে মনে মনে খুব শ্রদ্ধা হল। এই বয়েসে একা মহিলা কেমন ট্রেনে যাতায়াত করছেন – কথায় কথায় অনেক কিছু জানতে পারলাম। মহিলা এক কালে স্কুলে পড়াতেন। তারপর চলে যান আমেরিকা। সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন। তারপর আবার ফিরে আসেন লন্ডনে। ওনার দুই মেয়ে। তাদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে গেছে। এরকম কত গল্প...। কথায় কথায় আমি কি করি... কবে এ’দেশে এসেছি...সেই সব খবর নেওয়া হল। খুব ভাল লাগছিল মহিলার সাথে কথা বলতে। স্টেশনে মাত্র আমরা দু’টি প্রাণী... গল্পে গল্পে কখন যে পাঁচটা বেজে গেছে খেয়ালই করিনি। তারপর ছোট্ট ট্রেনটা এল। এই ট্রেনে আমরা অক্সফোর্ড মেইন স্টেশনে গিয়ে তারপর সেখান থেকে অন্য ট্রেনে লন্ডন ফিরব। আমাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে মহিলা একহাতে আমার ভারী হারমনিয়ামটা তুলে নিলেন ট্রেনে ওঠার জন্য। আমি বাধা দেবারও কোনও সুযোগ পেলামনা। ট্রেনে উঠে ওনাকে খুব বকাবকি করলাম – এত ভারী জিনিসটা বইবার জন্য – মাথা নেড়ে বললেন ওনার নাকি আরও ভারী জিনিস তোলার অভ্যাস আছে। ট্রেনটাও একেবারে খালি বলে মনে হল। পেছনের দিকে শুধু দু’একটি মুখ দেখতে পেলাম জানালার ধারে। আমাদের ছোট্ট কামরায় আমি আর সেই মহিলা – নাম বলেছিলেন সরজু প্যাটেল – আর কেউ নেই।

তারপর আবার কত গল্প। একটু পরেই ট্রেন এসে দাঁড়ালো আরেকটা ছোট্ট স্টেশনে। প্ল্যাটফর্মে একটা ঝাঁপ খোলা ছোট্ট দোকান দেখে মহিলা আমাকে বললেন – “তুমি একটু আমার এই ব্যাগটা দেখ। আমি স্টেশনের দোকান থেকে একটা জলের বোতল নিয়ে আসি – ট্রেন এখানে পাঁচ মিনিট দাঁড়ায়” – তারপর ব্যাগ থেকে ওনার ছোট্ট পার্স বের করে নিয়ে নেমে গেলেন। আমি বসে রইলাম ট্রেনে। জায়গাটা খুব সুন্দর। অন্ধকার হলেও বোঝা যায় চার দিকে সবুজের মেলা। পাতা নড়ছে... হাওয়া খেলছে। একটু পরেই ট্রেনের হুইসল শুনে চমক ভাংগল। বুঝলাম ট্রেন এবার ছাড়বে। এদিকে মহিলাতো আর আসেননা! দোকানের সামনেও কাউকে দেখতে পেলামনা। কি করি এখন? ট্রেন চলতে শুরু করেছে দেখে তাড়াতাড়ি জানাল দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করলাম যদি ওনাকে দেখতে পাই! কিন্তু আর তো কোনও লোকজনও নেই! বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। চিন্তা হল – একা মহিলা হয়ত বাথরুমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাত পাঁচ ভেবে দরজার সামনেই এমার্জেন্সী লেখা একটা বক্সের গায়ে ‘প্রেস’ লেখা বড় লাল বোতামটা দিলাম টিপে। একটু পরেই লম্বা চওড়া সাহেব গার্ড এসে জানতে চাইলেন কি হয়েছে? আমি সব খুলে বলাতেই অভয় দিয়ে বললেন – “হয়ত ট্রেন চলতে শুরু করায় অন্য কামরায় উঠে পড়েছেন – আমি গিয়ে দেখে আসছি” – প্রায় মিনিট দশেক পরে ফিরে এসে বললেন আমার দেওয়া ডেসক্রিপশান মত কোনও মহিলাই ওনার চোখে পড়েনি শুধু তাই নয় পেছনের কামড়ায় যে দু’একজন লোক ছিল তারা নাকি আগের স্টেশনে কোনও ইন্ডিয়ান লেডিকে নামতেই দেখেনি!

গার্ড লোকটিও খুব অবাক হয়েছেন বুঝতে পারছিলাম কারণ মহিলার ব্যাগটি আমার সামনের সিটে রাখা আছে। ব্যাগের থেকে কোনও ঠিকানা, ওসুধ বা কোনও রকম ক্লু পাওয়া যায় কিনা দেখার জন্যে গার্ড ব্যাগের চেনটা টেনে খুললেন আমার সামনেই!
আজও লিখতে গিয়ে কেন জানিনা আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ব্যাগের ভেতরে দু’তিনটে শাড়ী আর তার ওপরে রাখা একটি অপুর্ব সুন্দর গনেশ মুর্তি। আর কিছু নেই। গার্ড লোকটি কোনও ক্লু না পেয়ে ব্যাগ নিয়ে চলে গেলেন। জানালেন যে অক্সফোর্ড পৌঁছে ব্যাগটা ওরা পুলিশের হাতে তুলে দেবেন আর তারপর বাকী কাজ তারা করবে।

আমি কি ভাবে অক্সফোর্ড থেকে ট্রেনে উঠলাম তা’ নিজেও জানিনা। সারা রাস্তাই একতা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। মহিলা কে? কেন আমাকে অতটা সময় সংগ দিলেন, কোথায় গেলেন তারপর? তার কোনও ব্যাখ্যা আমি অনেক ভেবেও বের করতে পারিনি আজও। তারপর রোজই টিভি তে নিউজ শুনতাম – কোনও নিরুদ্দেশ ভারতীয় মহিলার বলে কি না – লন্ডনের যত খবরের এবং অন্যান্য কাগজ আছে টানা দু’বছর ধরে আমি প্রতিটা কাগজের আনাচে কানাচে আমি খুঁজে দেখেছি – কোনও দিন সেই মহিলার কোনও ছবি ওনার খোঁজ চেয়ে কেউ বা কোনও লেখা চোখে পড়েনি...

আগেই বলেছি সময়টা ছিল ২০০১ এর এপ্রিল। এখন ভাবি, যদি সময়টা ২০০১ এর সেপ্টেম্বরের পর হত তা’হলে তো ফেলে যাওয়া একটা ব্যাগ খোলার সাহস কেউ করতেও পারতনা... আর আমিও হয়ত এই ঘটনার কথা লেখার সুযোগ পেতামনা। সেই গণেশের মূর্তিটি আজও চোখে ভাসে... আমার নিজের সংগ্রহে প্রায় তিনশ’ গণেশ আছে – তারপর দেশে বিদেশে অনেক খুঁজেও কোনও দোকানে অত অপুর্ব গণেশ আমি দেখতে পাইনি...

মনে রাখতে হবে যে আমি পৃথু’দার অনুরোধে বা আদেশে এই প্রথম পাবলিক ডোমে’নে লিখছি।

এবার পাঠক বলুন... বুদ্ধি দিয়ে আমি এর কি ব্যাখ্যা করব? আপনারা কেউ একটু ব্যাখ্যা করে দেবেন... প্লিজ!

জীবন থেকে নেওয়া এই ঘটনাদ্বয় আমার কাছে জীবনামৃত হয়ে আছে। আপনাদের কাছেও কি...!

চন্দ্রা চক্রবর্তী
লন্ডন
অগাষ্ট ৩০, ২০০৮