নিজেকে যখন একা
প্রণব আচার্য্য
নিজেকে যখন একা, খুব একা মনে হয়-
ভাঙ্গা জানলার মতো বিষন্নতা নেমে আসে মনে
ভাবনার গহ্বরে অস্তমান সূর্যের মতো দেখি তোরই
বিজন উপস্থিতি; বন্ধু,
নির্জন সুহৃদ আমার,
প্রথম কবে দেখা আমাদের
অথবা প্রথম পরিচয়ের হিরন্ময় ভোর
(স্মৃতিধূসর আমি, গিয়েছি ভুলে)
স্মরণে কি আছে তোর?
মনে পড়ে, আমার কবিতা লেখার প্রথম প্রহরে
প্রনয়াক্রান্ত অমল কিশোরের মতো
আনত লজ্জা নিয়ে গিয়েছি ছুটে তোরই নিকট
সদ্য ভূমিষ্ঠ কবিতা নিয়ে হাতে দারুণ উৎসুক;
চশমার ভারী কাঁচের ওদিক থেকে
আমার কবিতায় তোর নিবন্ধিত দৃষ্টিকে
মনে হতো, সময়ের ওপাড় থেকে
কোন মুগ্ধ নয়না তাকিয়ে রয়েছে যেন আমারই দিকে-
বুকে তার শতাব্দি কাঁপানো প্রেম থরো থরো
মনে আছে তোর প্রথম মিছিল আমার?
আমার প্রথম আর্তনাদের
কী কাতরই না হয়েছিলি তুই। তোর শীতল পদাবলীতে
উঠেছিল কেঁপে অচেনা ঘাতকের বিরুদ্ধে ক্ষোভজাগ্রত পরোয়ানা মৃত্যুর।
একসাথে জ্যোতস্নার আমন্ত্রণে
দারুণ ক্ষুধার্ত চোখে কত মধ্যরাত্রি করেছি সাবাড়
তুই আর আমি
মনে কি আছে আজো সেই বিবর্ণ গোধূলীর লজ্জা?
বান্ধবহীন- তুই আর আমি- আমরা
অসহায় সন্ধ্যা নিয়ে বুকে অভিমানে জ্বলে উঠেছিলাম
বিধ্বস্ত ছাপাখানার অন্ধকার গুহায়
কবিতা নাম্নী অশ্বের আস্তাবলের খোঁজে; অথবা
ফেব্রুয়ারির সেই হিম রাত্রি? কবিতা তখন পলাতক-
নিঃসঙ্গ এক সিসিফাস কড়া নেড়েছিল
দাঁতল নেকড়ের খাঁচায়- রক্তাক্ত প্রগতি
সভ্যতার জনাকীর্ণ উঠোনে...
হে বান্ধব, হে ব্যর্থতার সহপাঠী,
হে অনুজ্জ্বল শোভাসঙ্গী আমার,
আজও শহরের পরিচিত
সড়কে, দালানে, বিপন্ন বৃক্ষে, বিলবোর্ডে
খুঁজে চলি তোকে আর অভিমান ঋদ্ধ পংক্তিমালা তোর;
সুদূর জনারণ্যের অপ্রসন্ন অবসরে যদি
আমার স্মরণে তোর কন্দরে না ওঠে ঝড়
যদি না ঝরে বৃষ্টি তোর
ব্যক্তিগত আষাঢ়ে- ক্ষতি নেই; আমি
তবু শহুরে রাত্রির নিয়ন আলোর বৃষ্টিতে ভিজে অনুবাদ করে যাবো
ক্ষমাহীন ব্যর্থ পদাবলী তোর আর আমার
একা একা...
(বন্ধুবর কবি হাবীব ইমনের ২৫তম জন্মদিনে লেখা)