কথিকা -ফিরোজা হারুন

বঁধুয়া,
ভেবেছি তোমায় কিছু লিখবো। অনেক দিন লিখতেও চেয়েছি। কিন্তু কেন যে লিখিনি তা আর না বলেও পারছিনা । যদিও তুমি নির্বাক শ্রোতা জানি তবুও তোমায় বলে শান্তি, পাব বলেই লিখছি। কারণ আমি এতদিন ধরে কেবল তোমার মতই একজন নির্বাক বন্ধুর সন্ধানে ইতঃস্তত ঘুরেছি। কিন্তু জানতাম না যে তুমি আমারই কাছে আমারই সাথে একান্ত আমারই হয়ে আছো। অন্ধ আমি তাই হয়তো তোমার জন্যই তোমাকে চিনিনি। যাক্, যা বলছিলাম, যা বলার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন-হ্যাঁ প্রয়োজনই বটে। প্রয়োজনের বন্ধনেই আমরা বাঁধা।
অনন্তকালের মধ্যে ক্ষনিক হলেও আমার জীবনের বহু বছুর আমি পাড়ি দিয়েছি। এক অধ্যায় শেষ করেছি আরো অধ্যায় খুলেছি। জীবনে নূতন সিলেবাস পাঠ করেছি। নূতন পরীক্ষা দিয়েছি। ফল কি পেয়েছি জানি না তবে মনে হয় যা পেয়েছি তা নেহায়েত মন্দ নয়। আর সেটা হলো অভিজ্ঞতা যা বঞ্চিতের মনে জাগায় বিভীষিকা, শিহরণ আর আরেক শ্রেণীর মনে জাগায় আশার আলো, সুখ আর শান্তি। জীবনের অনেকগুলো দিনই আমাকে অনেক কথা বলেছে। কিছু শুনেছি কিছু শুনিনি। আবার হয় তো কিছু শুনেছি ভুলে যাবার জন্যই। কতবার হাসি গানের ভিতর দিয়ে কল কল্লোলে অনন্ত প্রবাহের একটি ছোট ধারাকে মিশিয়ে দিয়ে অজনা পানে চলেছি। আবার হয়তো পথ চলতে চলতে পেয়েছি প্রচন্ড আঘাত। আঘাত কোন এক ভাসমান পদার্থের সাথে। কিন্তু সেটা সেই ক্ষণকালের জন্যই। পর মুহূর্তেই দুজনে দুমুখী হয়েছি। কেননা সেও যে ভাসমান-আমার মত অস্থায়ী আমারই মত দুঃখী অথবা সুখী।
ধাক্কাটা ঘা দিয়ে গেল তা ক্ষণিকের আর ঘা রেখে গেল তা স্থায়ী কালের। ঘা-কে আমরা সাধারণ ভাবে স্মৃতি বলে থাকি যার বিরাট গহ্বরের প্রবল আকর্ষণে প্রতিটি মুহূর্তে-প্রতিটি ক্ষণ ছুটোছুটি করে প্রবেশ করে যাচ্ছে। আমাদের ফেলে আশা দিনগুলিও মধুর হয়ে পড়ে। মনে হয় এই ই ভালো ছিল। ও রকম না হলে আজকের দিনের এই করুণ অথচ আনন্দমুখর দিনটির সাক্ষাত পেতাম না। জীবনের অনেক আনন্দমুখর অনেক বিরহ বিধুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। জীবনকে উপলব্ধি করেছি নতুন করে। চিনেছি বিভিন্নরূপে। চিনেছি যেটা দুঃখের সেটাই সুখের। যেটা তিক্ত সেটাই মধুর। যেটা বেদনা দায়ক সেটাই আবার ভবিষ্যতের কোন এক অজানা আনন্দের সম্ভার তৈরী করে আমাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংঘাত দ্বন্দ, আনন্দ, বেদনা, বিরহ, মিলন পাওয়া আর হারিয়ে ফেলা এই তো জীবন।
১৩. ৫.৬১