আটলান্টিস

সব্যসাচী প্রসূন



নিজেদের সংলাপে তিমাউস এবং ক্রিটিয়াস নামের দুই গ্রীক একটা গল্প বলেছিল...... সংলাপগুলো তাদের মুখে প্রতিধ্বনিত করেছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো (৪২৭-৩৪৭ খ্রীঃপূঃ)। গল্পটি একটি শহরের...... নাম আটলান্টিস । সত্যিও হতে পারে টাইপের গল্পটিতে একটি সভ্যতার কথা বলা হয়েছিল যেটা কিনা হঠাৎ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায় । শুধু সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র আটলান্টিস নগরটাই নয়, ওটাকে যে ধারণ করেছিল সেই মহাদেশটাও নগরীর সঙ্গী হয় সমুদ্র তলদেশে । যদিও এটার ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই এবং যুগে যুগে গল্পটি চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে...... তবুও আটলান্টিস হয়ে আছে মানুষের মনের বিখ্যাত আলেয়া ।

প্লেটোর গল্প



প্লেটোর মতে, প্রায় ১২,০০০ হাজার বছর আগে পিলারস অফ হেরাকলেসের ( যা বর্তমানে দ্যা স্ট্রেটস অফ গিব্রাল্টার নামে পরিচিত ) পশ্চিমে বাস ছিল শৌর্যে-বীর্যে অনন্য এক জাতির, আটলান্টিস । এই দ্বীপের বাসিন্দারা ইউরোপ ও আফ্রিকার এক বিরাট অংশ শাসন করত । ক্ষমতার প্রতি তাদের ছিল প্রবল আকাংখা । এই লালসায় তারা নিজেরাই তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে...... তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এথেনিয়ান্সদের সাথে, প্লেটোর ভাষায় যারা ছিল অস্বাভাবিক রকমের সাহসী এবং কৌশলী । গ্রীক যোদ্ধারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। সবাইকে অবাক করে এথেন্স পরাস্ত করল সেই পরাশক্তিকে । শুধু পরাস্ত করেই ক্ষান্ত হল না... সাধারণ গ্রীকদের পর শুরু হল গ্রীক দেবতাদের খেল...... গ্রীক দেবগুরু জিউস প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে নিক্ষেপ করল আটলান্টিসের দিকে । ব্যস ...... তলিয়ে গেল সম্পূর্ণ সভ্যতা...... সমাপ্ত ঘটল এক অধ্যায়ের...... সূচনা হল এক আলেয়ার ।

এ সবই প্লেটোর ভাষ্য যা তিনি শুনেছিলেন আরেক পন্ডিত পরিব্রাজক সোলোনের (৬৩৯-৫৫৯ খ্রীঃপূঃ) কাছে।

এবার আসি সোলোনের কথায়...... সোলোন ৫৭১-৫৬১ খ্রীঃপূঃ এই দশ বছর চষে বেড়িয়েছেন ঈজিপ্ট এবং তার আশপাশের এলাকা । ধারণা করা হয়, নীল নদের তীরবর্তী ঈজিপ্টের রাজধানী সাইসের কোন এক মন্দিরের শিলালিপি থেকে তিনি প্রথম আটলান্টিস সম্পর্কে জানতে পারেন ।

এখানেই লাগল খটকা...... ঈজিপ্টশিয়ানরা কোন উৎস থেকে আটলান্টিসের খবর পেল সেটা আজো রহস্যাবৃত আর প্লেটোর ক্রোনোলজি অনুযায়ী ঈজিপ্টশিয়ান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে আটলান্টিস বিলুপ্তির আরো ৫০০০ বছর পর। আবার আলেয়ার খেলা......
আটলান্টিসের বর্ণনা মূলত উঠে এসেছিল প্লেটোর বর্ণিত গ্রীক বীরত্বগাঁথার দুটি সংলাপে। বীরগাঁথা হলেও রচনাটা ছিল মূলত আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে এথেন্স এবং আটলান্টিসের মধ্যকার তুলনামূলক পর্যালোচনা। প্রথম সংলাপটি ছিল তিমাউসের, যেখানে এথেন্স বনাম আটলান্টিসের যুদ্ধ পূর্ববর্তী গ্রীক ইতিহাস বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় সংলাপে (ক্রিটিয়াসের সংলাপ) ছিল আটলান্টিসের কথা। ধারণা করা হয়, তৃতীয় আরেকটি সংলাপ ছিল প্লেটোর পরিকল্পনাতে যেটা কোন এক অজানা কারণে তাঁর লেখায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রথম বিতর্ক

প্লেটোর বক্তব্যতে এথেন্সকে নিয়ে মাতামাতি একটু লক্ষণীয়। এথেন্সকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না। এর যে বিরুদ্ধ মত ছিল না তা কিন্তু নয়। বরং এ দলে ছিল স্বয়ং প্লেটোর সর্বসেরা ছাত্র এরিস্টটল যাঁরা খোলাখুলি প্লেটোর বক্তব্যের সমলোচনা করেছেন। একটি বিশাল জনগোষ্ঠির কাছে গ্রীসকে একটা আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতীয়মান করার জন্য প্লেটো কিছু মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। এই মনোবৃত্তিই সম্ভবত তাঁর রচনায় তৃতীয় সংলাপটির অনুপস্থিতির কারণ। দ্বিতীয় সংলাপটিতেই প্লেটোর অনেক জারিজুরি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। সেখানে তিনি ক্রিটিয়াসের মুখে আটলান্টিসের এমনি মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছিলেন যে, তাতে মনে হয়েছিল এটা পার্থিব কোন জায়গা না...... এর অবস্থান আমাদের চেনা জগতের বাইরে। তৃতীয় সংলাপটিতেও সম্ভবত আটলান্টিস সম্পর্কিত কিছু তথ্য উঠে আসছিল যে কারণে প্লেটো সচেতনভাবে তা অসমাপ্ত রাখেন......... সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আটলান্টিস সম্পর্কিত তাঁর জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে তিনি প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন যার যোগ্য উত্তর তাঁর কাছে নেই। তাঁর এই হঠাৎ থেমে যাওয়ায় জন্ম দিল আটলান্টিস অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম বিতর্কের। যে বিতর্ক এখনো থামেনি...... চলছে তো চলছেই ।

 

'Atlantis: The Antediluvian World'

স্তিমিত আটলান্টিস

গ্রীক দার্শনিক ক্রেন্টরই (খ্রীঃপূঃ ৪০০) প্রথম আটলান্টিসের অস্তিত্ব নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনিও তাঁর রচনায় আটলান্টিস সম্পর্কে তথ্যের সূত্র হিসেবে ঈজিপ্টশিয়ান নগরী সাইসের শিলালিপির কথা উল্লেখ করেন। ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন বিখ্যাত দার্শনিক এবং পন্ডিতদের বিলুপ্ত মহাদেশটির অজানা তথ্য জানার জন্য রাতের ঘুম হারাম করার নজির পাওয়া যায়। তারপর হঠাৎ একদিন সব কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেল। আটলান্টিস হয়ে রইল একান্তই প্লেটোর কল্পনা...... ধীরে ধীরে যেন গল্পটি সবার স্মৃতিতে ফ্যাকাসে হয়ে গেল......।

আটলান্টিসের পুনরুত্থান
আরো ৯০০ বছর পর...... সময়টি জাগরণের...... ঘুম ভেঙ্গে পৃথিবীর জেগে উঠার...... সময়টা রেঁনাসার। জেগে উঠে আটলান্টিস নামের আলেয়াটাও। এবার আটলান্টিসের অস্তিত্বের পক্ষে ওকালতি করার জন্য অনেক পন্ডিত জুটে গেলেন...... তবে বিরুদ্ধ পক্ষও যে ছিল না তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ পক্ষ-বিপক্ষ সবাইকে নিয়ে বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে আবার সদর্পে ফিরে আসল আটলান্টিস।

পন্ডিত সমাজে বিতর্কটা ঝড় তুললেও সাধারণ মানুষেরা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।
সাধারণ জনগণ এই রহস্যের সংস্পর্শে আসতে আসতে পেরিয়ে যায় আরো প্রায় ৩০০ বছর অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীতে। আর এই কাজটি করলেন ঔপন্যাসিক ইগ্নাটিয়াস ডোনেলি ( ১৮৩১-১৯০১) তাঁর 'Atlantis: The Antediluvian World' বইটির মাধ্যমে। বইটিতে তিনি আটলান্টিস সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিণী এবং জনশ্রুতির সম্মিলন ঘটান।
 


ঔপন্যাসিক ইগ্নাটিয়াস ডোনেলি ( ১৮৩১-১৯০১)

কাহিণীগুলোতে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাটার বর্ণনার কিছু ভিন্নতা থাকলেও মহাদেশটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল না। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ডোনেলি এই উপসংহারে পৌছেন যে, স্বর্গ সদৃশ এক সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল আটলান্টিসে...... তিনি ভৌগলিক একটা ধারণাও দিলেন মহাদেশটির। শুধু তাই না, তিনি দাবী করলেন সেই সভ্যতা নতুন আর পুরানো পৃথিবীর মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করেছিল।

এভাবেই মানুষের মনে ধীরে ধীরে অবয়ব পেতে থাকল এক প্রাচীন ‘সুপার সিভিলাইজেসন’। এর পক্ষে-বিপক্ষে চলতে থাকল অবিরাম তর্ক-বিতর্ক...... এভাবে পরিমার্জিত হয়ে উঠতে থাকল কাহিনীটি...... ঝরে পড়তে থাকল এর কাল্পনিক অংশগুলো......।

আটলান্টিস নিয়ে অনেক রচনা থাকলেও ডোনেলিয় মূলত আকর্ষণটা বিশেষজ্ঞদের টেবিল থেকে সাধারণদের কাতারে এনে ফেলেন। তিনি যখন আটলান্টিকের মধ্যিখানে একটি সভ্যতার হারিয়ে যাবার করুণগাঁথা রচনা করেন তখনই সবাই সেই ডুবে যাওয়া মহাদেশটির প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করে। ১৯০৯ সালে দ্যা টাইমসে প্রত্নতাত্ত্বিক কে.টি. ফ্রস্টের আটলান্টিস বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি দাবী করেন আটলান্টিস সভ্যতাটা গড়ে উঠেছিল দ্যা মেডিটেরিয়ান আইল্যান্ড অফ ক্রীটের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির উপর ভর করে। আর কি চাই বলুন...... এভাবেই ফ্রস্টের সংস্কৃতি বিষয়ক ব্যাখা আর ডোনেলির ভৌগলিক সীমারেখা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে আটলান্টিস হয়ে উঠতে থাকে মায়া......ইনকা... সভ্যতার মত অতিবাস্তব একটা বিলুপ্ত সভ্যতা।

আটলান্টিসের গল্প

অনেক আলোচনা হল আসুন এবার সংক্ষেপে মিথটা বলি...... এক দেশে এক রাজা ছিল...... অহু...... না না ...... এভাবে তো গল্পটা বলা যাবে না...... কারণ কোন একক রাজা রাজত্ব করত না আটলান্টিসে বরং একটা কনফেডারেসনের মাধ্যমে চলত দেশটার শাসন ব্যবস্থা। বিশাল আটলান্টিয়ান সেনাবাহিনী পাড়ি দিল আটলান্টিক মহাসাগর, লক্ষ্য ইউরোপ এবং এশিয়া। তাদের এই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এথেনিয়ান্সরা গঠন করল এক বিশাল কোয়ালিশন বাহিনী। কোয়ালিশন বাহিনী মুখোমুখি হল আটলান্টিয়ানদের। পদে পদে পর্যদুস্ত হতে হতে তুরুপের তাসের মত উড়ে গেল কোয়ালিশন বাহিনী। একে একে ইউরোপ-এশিয়ার অনেক দেশ কুক্ষিগত করে ফেলল আটলান্টিয়ানরা। কোয়ালিশন বাহিনী ভেঙ্গে গেলেও জেদী এথেনিয়ান্সরা পণ করেছিল ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদেনী’। মরনপণ লড়াই করে চলল তারা লক্ষ্য নিজ দেশকে এবং আটলান্টিয়ানদের কবল থেকে অন্য দেশগুলোকে নিজেদের দখলে নেওয়ার। অবশেষে জয় হল সাহসীদেরই। তারা আটলান্টিসও দখল করে নিল।

তাদের জয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই ( মহানুভব এথেনিয়ান্সরা আটলান্টিয়ানদের রাজ্য তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ফেরত আসার আগেই) মহাদেশটিকে ধাক্কা দিল ক্যাটাস্ট্রপিক ভূমিকম্প এবং জলোচ্ছ্বাস...... ডুবে গেল একটি আস্ত মহাদেশ।

আপনাদের সেই সোলনের কথা মনে আছে নিশ্চয়...... তাঁরও আটলান্টিস নিয়ে একটা গল্প ছিল। এখন সেটা বলি......

সোলনের মতে আটলান্টিসের ইতিহাস সূচনা হয় পৃথিবীর শুরুর দিকে। এটা সে সময় যখন পৃথিবীতে বিচরণ ছিল অমর দেবতাদের। তাঁরা সমগ্র পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন। দেবতা পসেডিয়ানের ভাগে পড়েছিল আটলান্টিস, যে ভুখন্ড কিনা লিবিয়া এবং এশিয়ার মিলিত ভূখন্ডের চেয়েও বৃহৎ ছিল। তিনি স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন একজন সাধারণ মানবীকে নাম ক্লিয়েটো এবং এই ক্লিয়েটোর মাধ্যমেই পত্তন ঘটে আটলান্টিসের রাজপরিবারের।

দেবতা পসেডিয়ান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী ক্লিয়েটোর জন্য দ্বীপের ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের উপর গড়েন এক সুরম্য অট্টালিকা। সেই অট্টালিকাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি ওটার চারপাশে গড়ে তোলেন পাঁচটি জল ও স্থলের চক্র। সৃষ্টি করলেন উষ্ণ এবং শীতল পানির ঝরনা। অর্থাৎ ভবিষ্যত নগরায়নের সব ব্যবস্থা তিনি সম্পন্ন করে রাখেন।


ক্লিয়েটোর সুরক্ষিত অট্টালিকা

ক্লিয়েটোর কোল আলো করে আসে দেবতা পসেডিয়ানের পাঁচ জোড়া সন্তান। এটলাসকে, যিনি ছিলেন প্রথম জোড়ার প্রথম জন, তার পিতা এ সমগ্র ভূখন্ডের রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা হন রাজকুমার এবং তাদেরকে দ্বীপটির বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটলাসেরো অনেকগুলো সন্তান ছিল এবং রাজমুকুট বংশ পরম্পরায় জেষ্ঠ্য সন্তানের মাথাতেই উঠত।

বহু বছর ধরেই আটলান্টিসের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল। অধিবাসীদের অধিকাংশ চাহিদাই দ্বীপের খনি, চাষের জমি এবং বন থেকেই মিটে যেত। অবশিষ্টাংশ রপ্তানী হত দ্বীপটির বাইরে থেকে।

দেবতা পসেডিয়ান আটলান্টিসের জীবনযাত্রাকে সুশৃঙ্খল জন্য কিছু আইন তৈরী করেন। কোন একক শাসক নয় বরং দশ জনের এক শাসকগোষ্ঠি পরিচালনা করত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে (এটলাস এবং তার বাকি নয় জন ভাই, যারা পরাক্রমশীলতার সাথে রাজত্ব করেছিলেন)। শাসকচক্রের সব সদস্য নিয়মিত মিলিত হত দেবতা পসেডিয়ানের মন্দিরে। সেই প্রাচীন বৈঠকের শুরুতে তারা একে অপরকে সম্ভাষন করতেন। তারপর একটি তেজী ষাঁড়কে ধরে প্রথমে সেটাকে হত্যা করে রক্ত সংগ্রহ করা হত এবং পরবর্তীতে ষাঁড়টিকে স্বর্গের দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুরানো হত আগুনে । ষাঁড়ের রক্ত ওয়াইনের সাথে মিশিয়ে কিছুটা ছিটানো হত আগুনের উপর। আর বাকি ওয়াইনের স্থান হত দশটি স্বর্ণ পাত্রে। প্রত্যেকে সেই পাত্র আগুনের সামনে উচিয়ে পিতৃদেব প্রদত্ত আইন সঠিকভাবে পালনের শপথ করতেন। শপথ গ্রহণ ও পাণীয় পানের পর স্বর্ণ পাত্রগুলো উৎসর্গ করা হত মন্দিরে।


সর্বশেষে থাকত এক প্রীতি নৈশ ভোজ যেখানে দ্বীপের অধিকর্তারা পসেডিয়ানের আইনানুযায়ী রাজ্য পালনের কর্মপন্থা ঠিক করতেন।

এভাবে ভালই কাটছিল দিন। বিচক্ষণ পসেডিয়ানের প্রদর্শিত পথে আটলান্টিস হয়ে উঠছিল স্বর্গের জন্যেও ইর্ষণীয়। কিন্তু পসেডিয়ানের বংশধরদের রক্তে যে মানুষেরও সংমিশ্রণ ছিল, আর মানুষ যে ভুলেরই সমার্থক। তারা যখন ধীরে ধীরে পসেডিয়ানের নিয়মকানুন ভুলে যেতে বসল তখনই শুরু হল বিপত্তি। বেশির ভাগ শাসকই সাধারণ মানুষকে বিয়ে করল। তাদেরর আচরণ হয়ে উঠতে লাগল নির্বোধের মত। তাঁরা দেবতাদের কথা ভুলে হয়ে উঠতে লাগল স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতালোভী। লালায়িত হতে লাগল আরো বৃহৎ ক্ষমতার জন্য।


দেবরাজ জিউস উপর থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করলেন...... দেখলেন কিভাবে মানুষেরা কিভাবে দেবতাদের অনুশাসন ভুলে হয়ে উঠেছে শয়তানের দাস। অলিম্পাসে বসল দেবতাদের বৈঠক আর ঘোষিত হল আটলান্টিসের ভাগ্য......... এরপরের ইতিহাস সবারই জানা।


অবশেষে

অনেকেই বলেন কয়েকদিন আগেই আটলান্টিসের অস্তিত্বের স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বাহামা দ্বীপ পুঞ্জের কাছে…... সমুদ্র তলদেশে আভাস মিলছে ডুবন্ত এক নগরীর।  তাদের জন্য এটুকু বলতে পারি এই যান্ত্রিক অবিশ্বাসের যুগে আমার মনটাও কিছুটা হলেও সন্দেহপ্রবণ। পশ্চিমা বিশ্বে এসব বিষয়কে পুঁজি করে চলে মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য...... হতে পারে সেটা অর্থলিপ্সু কোন গোষ্ঠির কূটচাল...... কারণ অনেকেই বাহামার প্রমাণ টিকে ভুয়া বলেছে (বিখ্যাত সান পত্রিকা এদের মধ্যে অন্যতম)। তাই আমার মনও ঐ ব্যাপারটা উল্লেখ করতে সায় দিচ্ছে না। এ লেখাটাতে পাঠক না হয় ইতিহাসই অবগাহন করলেন।