সুতি চাদরের কেমিক্যাল জঙ্গল আর শিকার কাহিনী
মৃদুল মাহবুব
যেদিন এই ঘটনা ঘটার কথা সেদিন আকাশটা মেঘ কালো থাকার কথা। কথা ছিলো শীত শীত মেঘলা হাওয়ায় ভেসে যাবে, সেই আলো যা খনিজ সুর্যের পেটের ভেতর থেকে এই মাত্র জন্ম নিলো, সেই আলো রশ্মির রেখায় রেখায় জড়ানো থাকবে স্যাঁতস্যাঁতে জরায়ুর আঠালো তরল। ফলে সেদিন তাপমাত্রা থাকার কথা ছিলো পাহাড়ী নদীর পানির মত তরল আর স্বচ্ছ আর বরফের ঘামের মত লবণাক্ত, প্রবাহমান। পুরো শহর তোলপাড় করে উড়ে যাবে হাওয়া, সেই বাতাস, সেই পবন যে পবনে বসে ঈশ্বর দেখছেন জন্ম হচ্ছে মানুষ-সঙ্গিনীর, ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখবে কেউ । আর তার স্বপ্ন ভেঙে যাবে বিস্ময়ের দমফাটানো শব্দে। নিরালা মাঠের ভেতর হাজারে হাজার সাপের খোলশ, তার ভেতর ছড়ানো আছে পাখি খাদ্য দানা। হাজারে হাজারে পাখি, নীল পাখি তবু উড়ে নামছে খাদ্যাভাস বসত। নীল পাখি নামে কেননা এই ঘাস-বন আর এই পাখিবোধক উত্তরাধিকার তাকে নামিয়ে ফেলে ডানার শব্দে। আর ওত পেতে থাকা বন বেড়াল ঠিক শুনতে পাচ্ছে হৃদয়ের প্রান ভ্রমরার ডাক। তাকেও ঝাপিয়ে পড়তে হবে, সে জানেনা রক্ত অনুরাগ। আর তখনই লক্ষ লক্ষ পাখি উড়াল দেবে, অথচ পড়ে থাকবে একা একটা পাখি, তার পালক, রক্ত, বাঁচার অর্থহীনতা আর সেই সমস্ত পড়ে থাকা সাদা খোলস। এমনই তো কথা ছিলো।
ঐতো আমার বিছানার কাভারে আঁকা ফুল আর ঘাসের কেমিক্যাল বনে পরে আছে নিরীহ একটা দীঘল চুল, বাতাসে উড়ছে, উড়ে যেতে চাইছে বিশুদ্ধ সতীত্বের কাছে। যেনো এই মাত্র একটা কালো মহিষ তার রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে পরে আছে, ধীরে ধীরে ওর রক্তে বাসা বেঁধে নিচ্ছে মরুদেশের শীতভোর, আমাদের কাক ডাকা হেমন্ত কালে। একটা চুল উড়তে উড়তে ফিরতে চাচ্ছে ঐ চুল জঙ্গলের দিকে, আবার হারিয়ে যেতে চাচ্ছে কালো মহিষদের বিস্তৃত দৌড়ের ভেতর। আজ মাত্র একটা চুলের স্মুতি পরে রইলো আমার কেমিক্যাল জঙ্গলে। যিনি ঈশ্বর তিনি হয়তো খেয়াল করেছেন কিভাবে একপাল কালো মহিষের দল থেকে ছিটকে পড়ে আছে মাত্র একটা যুবতী মহিষ আর কিভাবে তার পতন হয় এই সুতোর ফুল আর ঘাসের বনে। তিনিই হয়তো দেখে থাকবেন, কেনান তিনি ছাড়া আমাদের দেখার মত কোনো তৃতীয় কালো চোখ ছিলো না । তাহলে ঈশ্বর আছে কেনানা যে কারো মনে হতে পারে তিনিই দেখে থাকবেন কখন প্রাণীটি ছিটকে পরে ছিলো গোত্র থেকে। ঈশ্বর কি আছেন? যেহেতু আজ বাতাসে মেহেগুনী ফল ফাটার শব্দ শুনেছিলাম সেহেতু তিনি নেই। যেহেতু ঐ শরীরী আগুনের আঙুলের মেহেদী রঙ এত কিছুর পরও মুছে গেলো না সেহেতু ঈশ্বর নেই। যেহেতু আমরা এর পর দেখতে পেয়েছিলাম এই মাত্র আমরা স্বর্গচ্যুত, কেনান সেই দৃশ্য ভেসে উঠেছিলো, আমরা পিছন ফিরে মাত্র একবার স্বর্গের নন্দন কানন দেখে লাফিয়ে পড়েছিলাম পৃথিবীর দিকে। তারপর আজ আমাদের দেখা হলো ইডেনের পথে, একে বলা যায় শিকারের মাঠ। যেহেতু এত কিছুর পর আমরা অনুভব করেছিলাম সেই দিনটিকে যে দিন দুজন মানুষ অনুভব করেছিলো প্রথম নগ্নতা। এতো কিছুর পরও আমরা যেহেতু চোখে দেখেছিলাম সেহেতু ঈশ্বর নেই। আমাদের কারোই চোখ ছিলো না। ফলে এই দৃশ্য কি ঘটে গেছে আমাদের অন্তরালে ঈশ্বরের মায়াবী মঞ্চের পর্দার উপর উলম্ব বরাবর? না, ওটা ছিলো আমার সুতির ফুলের বিছানা। তবে কেন দেখেছি একটা মহিষ পড়ে আছে এভাবে একা একা। আমার চোখের ভেতর লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মহিষের নগ্ন চুল, আর তাদের খসিয়ে ফেলানোর সুতীক্ষ বাসনা। আমি বসে আছি একা মৃত মহিষের পাশে আমার সনির্মিত বনবাসে, দেখছি একটা ভুলে ঝরে পরা চুল উড়েতে চাচ্ছে আমার মাথার চারপাশে। আমি কি একে উড়তে দিবো? তবে উড়ুক। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘরে কথা বরতে চাচ্ছে মহিষ। আমি কি তাকে কথা বলতে দিবো? তবে বলুক।