নব আলোকে বাংলা
উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।
সম্পাদক
পাঠক পরিষদঃ শুভলগ্না শোয়ারা, চঞ্চল চৌধুরী
এবারের প্রকাশনা
রুবাইয়াৎ
Suprateek Aroop Ghosh, Humaira Haroon
গ্রাফিক্সঃ ইন্টারনেট
মুখবন্ধ
অসংখ্য রুবাই নিয়ে এবারের প্রকাশনা রুবাইয়াৎ। ওমর খাইয়্যামের জীবন ও দর্শনের ওপর জুনের লেখাটি পেয়েই মূলত এরূপ চিন্তার সূত্রপাত। রুবাই অনুবাদক হিসেবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন অনেকেই। তাদের মাঝে কাজী নজরুল ইসলাম, কান্তি ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, নরেন্দ্র দেব, সিকান্দার আবু জাফর এ সংখ্যাকে করে তুলেছেন সমৃদ্ধ। তাঁদের অনুবাদ সংগ্রহে সহায়তা না পেলে এ আয়োজন অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তাই সংগ্রহকারক ফিরোজা হারুনকে জানাই কৃতজ্ঞতা। এ প্রকাশনার আরো সংযোজন হচ্ছে মোস্তফা কামাল ও সজল শর্মার দক্ষ হাতের রুবাই ও শায়েরী রচনা, সাথে সুপ্রতীক অরূপের কাব্য কণিকা, যা দেখে পারস্যের কবি, রুবাই স্রষ্টা কিছুটা হলেও চমকে যাবেন!
ধন্যবাদান্তে
শুভলগ্না শোয়ারা
নভেম্বর ২০১০
রুবাইয়্যাৎ
কাঠামো এবং বৈশিষ্ট্য
এ টি এম মোস্তফা কামাল
রুবাই আরবী শব্দ। অর্থ-চতুষ্পদী অর্থাৎ চার পংক্তি বিশিষ্ট কবিতা। এটা বিশেষ
ধরণের কবিতা। কিছু কিছু কবিতা আছে বিশেষ কিছু নিয়ম কানুন মেনে সেগুলো লেখা হয়,
যেমন- সনেট,লিমেরিক,এলিজি,ওড, ক্বাসিদা, রুবাই ইত্যাদি। রুবাইয়ের বহুবচন
রুবাইয়াত। ১০৪৮
খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের (বর্তমান ইরান) কবি উমর খৈয়াম, হাফিজ
প্রমুখের হাতে কবিতার এই বিশেষ ফর্মটি চরম উৎকর্ষ লাভ করে। এটি ছড়া নয়। ছড়া
হচ্ছে মূলত: শিশুতোষ রচনা। রুবাই উচ্চমার্গের দার্শনিক রচনা। সুফিবাদ ও
মুতাজিলা সম্প্রদায়ের দার্শনিক মতের সাথে মিল পাবেন রুবাইয়ের দর্শনের।
প্রধানত সুফিবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত এই সব রুবাই মাত্র চার লাইনে লেখা হয়েছে। রুবাইয়ে উল্লিখিত সাকি সুরা প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে সাকি হলো মুর্শিদ আর সুরা হচ্ছে দিব্যজ্ঞান/পথের দিশা। রোমান্টিকতাও যে তাতে নেই তাও নয়। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ লাইনে একই অন্তমিল রাখা হয় তৃতীয় লাইনটি মুক্ত অর্থাৎ কোন অন্তমিল থাকেনা (ককখক)।
১৮৫৯ সালে ইংরেজ কবি এডোয়ার্ড ফিটজেরাল্ড উমর খৈয়ামের রুবাই
সমূহ ইংরেজি অনুবাদ
করার পর পাশ্চাত্য জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারই সূত্রে ইংরেজি থেকে
বাংলায় অনুবাদ হয়। এর মধ্যে কবি নরেন দেব ও কান্তি ঘোষের অনুবাদ দুটি বেশি
জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু এসব অনুবাদে মূল অন্তমিল কাঠামো বজায় রাখা হয়নি। প্রচলিত
কবিতার ন্যায় প্রথম দ্বিতীয় লাইনে মিল এবং তৃতীয় চতুর্থ লাইনে আরেকটা মিল রাখা
হয় (ককখখ)। এছাড়া মূল ফারসি থেকেও অনেকে অনুবাদ করেছেন। কাজী
নজরুল
ইসলাম, ড.
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ মূল ফারসি থেকেই রুবাই বাংলায় অনুবাদ করেছেন। নজরুল
মূল রুবাইয়ে ব্যবহৃত রচনাকৌশল ও অন্তমিলই (ককখক) ব্যবহার করেছেন।
মূল
ফারসি থেকে করা অনুবাদগুলোর মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদটিই সবচেয়ে ভালো
বলে গুণীরা স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বহুভাষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মুজতবা আলী নজরুলের অনুবাদকের ভূমিকায় বলেছেন,
কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।
*
**
******
***********
*********************
**********
*****
**
*
*
**
******
***********
*********************
***********
****
**
*
*
**
****
********
*********************
*********
*******
****
**
*
রুবাইয়্যাৎ স্রষ্টা - ওমর খৈয়াম এর জীবন ও দর্শন
জুন
মধ্যযুগের এক কালজয়ী ফারসি কবি আবুল ফতেহ গিয়াসউদ্দিন হাকিম ওমর খৈয়াম- যাঁর সৃষ্ট গভীর মর্মস্পর্শী অন্তর্নিহিত বাণী সমৃদ্ধ রুবাইয়াৎ ইংরাজী ভাষায় অনুদিত হয়ে ঊনিশ শতকে সমস্ত বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। তাঁর জন্ম কিন্তু হয়েছিল ইরানের খোরাসান প্রদেশের নৈশাপুরে ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই মে এক সামান্য তাঁবু প্রস্ততকারীর ঘরে। তাঁর পিতার নাম ছিল ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন একজন খৈয়াম অর্থাৎ তাঁবু প্রস্ততকারী। বাবার পেশার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যই ওমর, খৈয়াম নামটি গ্রহন করেন।
এরই উল্লেখ আছে তাঁর কবিতায়:
বুনলে বটে খায়াম বুড়ো জ্ঞান তাঁবুতে অনেক দড়ি আজ সে তবু মরছে পুড়ে তপ্ত -অনল কুন্ডে পরি! জীবন-ডুড়ি ছিন্ন করে দিয়েছে তার মৃত্যু আসি ভাগ্য গেছে ছড়িয়ে শিরে লাঞ্ছনা আর ঘৃণার মসি।
|
|
জ্ঞান আহরণের প্রতি ছিল ওমরের অসীম আগ্রহ। তার জন্য তিনি যুবক বয়সেই প্রথমে সমরখন্দ এবং সেখান থেকে বুখারা যান। বুখারায় মধ্যযুগের একজন প্রধান এবং প্রবাদতুল্য গনিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ক্যালেন্ডারেরও সংস্কারক ছিলেন। সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে খৈয়াম ছিলেন একজন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, শিক্ষক, চিকিৎসক, দার্শনিক, সুফী, ক্যালেন্ডার এর সংস্কারক এবং সর্বোপরি চার লাইন বিশিষ্ট কবিতা 'রুবাইয়ৎ-এ ওমর খৈয়ামের' স্রষ্টা। তাঁর দার্শনিক আর শিক্ষক সত্তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর কবি পরিচয়। অনেকেই তাঁকে দার্শনিক হিসেবে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি নিজেকে দার্শনিক হিসেবে পরিচয় দিতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না।
তার জন্যই তিনি বলতে পেরেছিলেন 'কে আমি'!
বয়সকালে সে একদা আহাম্মকের মত
এই দুনিয়ার রহস্যটা বুঝতে গিয়ে- কত
ঘুরেছিলাম দেশ বিদেশের মনীষীদের পাছে
নিত্য তাদের কাছে, শুনতে যেতেম কি আগ্রহে
গভীর জ্ঞানের বাণী।
কোনো কাজের নয় যে সে সব
তখন কি তা জানি !
সাধু সংগ বেড়িয়ে এতো তত্ত্বকথার কুড়িয়ে সার
সুফল বড় হয়নি কিছু
জ্ঞানের বোঝা বাড়িয়ে আর।
ঘুচলোনা মোর মনের ধোঁকা চিরদিনের দ্বন্দ্ব যত
অবিশ্বাসের আবছায়াতে ঘনিয়ে উঠে ক্রমাগত।
ফার্সিভাষার বাইরে ইংরেজী ভাষার জগৎ তথা পৃথিবীর সমস্ত কাব্যরস পিপাসুর কাছে তাকে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দেন ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কবি-এডওয়ার্ড ফিটজারেল্ড। তিনি খৈয়ামের রচিত ১১০ টি রুবাইয়াৎ অনুবাদ করে সমগ্র বিশ্বের সাহিত্য জগতে এক আলোড়নের সৃষ্টি করেন। যদিও অনেকের ধারণা তার অনুবাদের অনেকগুলোই খৈয়াম লিখিত নয়। উল্লেখ্য যে ফিটজেরাল্ডের অনুবাদের পরেই পারস্যবাসী খৈয়ামকে নতুন করে চিনতে পারেন এবং তার জন্য এখনও গৌরব বোধ করেন।
খৈয়ামের ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস কি ছিল তা পরিষ্কার ভাবে জানা যায়নি। তাই তাঁর কবিতার মাধ্যমেই অনেকেই তা বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। আমার ধারণা তিনি কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামীর মধ্য নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি নাস্তিকও ছিলেন না আবার অন্ধবিশ্বাসীও ছিলেন না। খৈয়াম কিন্তু অত্যন্ত ভাগ্যে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি লিখতে পেরেছিলেনঃ
দাও পিয়ালা প্রিয়া আমার অধরপুটে পূর্ণ করে
যাক অতীতের অনুতাপ আর ভবিষ্যতের ভাবনা মরে
কাল কি হবে ভাববো কেন আজ বসে লো তাই
তার আগে সই এখান থেকে চলেই যদি যাই
বিচিত্র নয় তত
ফুরিয়ে যাওয়া অসংখ্য দিন নিরদ্দিষ্ট যত-
তার ভিতরেই কোন অতীতের লুপ্ত স্মৃতির প্রায়
মিশিয়ে যাবো হায়...।
ওমরের বিখ্যাত রুবাইয়াৎ এর উপাদান মূলত দুটি। এক হলো তার সুফী বা দার্শনিক মতবাদ, আরেকটি হলো তার কবিতার সৌন্দর্য। প্রচন্ড অদৃষ্টবাদী এই কবির মতে মানুষের জন্ম, মৃত্যু, ভাগ্য, রুজী-রোজগার সবই পূর্ব নির্ধারিত। কান্না কাটি করে কোনো লাভ নেই। এখানে মহাকাশকে দায়ী করেও কোনো ফায়দা নেই, সে আমাদের মতই অক্ষম ও অসহায়। সুতরাং হা হুতাশ না করে জীবনকে উপভোগ করো, কারণ কেউই একবারের বেশী দু বার জন্মাবেনা।
মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে ছিল তাঁর প্রচন্ড কৌতুহল। তাঁর এই আক্ষেপ তাঁর মানসিক দ্বন্দ্ব তাঁর বিভিন্ন কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে। তাই তো উনি বলেছেনঃ
উপুড় করা পাত্রটা ওই
আকাশ মোরা বলছি যাকে
যার নীচেতেই কুঁকড়ে বেঁচে
আঁকড়ে আছি মরণটাকে
হাত পেতে কেউ ওর কাছেতে
হয়োনা আর মিথ্যে হীন
তোমার আমার মতই ওটা
অক্ষমতায় পংগু দীন।
ওমর খৈয়ামের মতে পৃথিবীটা এক সরাইখানা যেখানে মানুষের অবস্হান স্বল্প সময়ের জন্য, সে রাজাই হোক আর সাধারণ মানুষই হোক। নিয়তির কাছে সবাই অসহায় এবং সেই নিয়তি তার নিষ্ঠুর চাকার নীচে সবই পিষ্ট করে শেষ পর্যন্ত রেখে যায় কিছু করুণ স্মৃতি।
তারই উল্লেখ করেছেন খৈয়াম কবিতায়ঃ
ঘুটি তো কেউ কয়না কথা
নির্বিচারে নিরুপায়ে
খেলুড়েরই ইচ্ছে মত
ঘুরতে থাকে ডাইনে বাঁয়ে
তোমায় নিয়ে খেলার ছলে
চাল চেলেছেন আজকে যিনি
তোমার কথা সব জানা তাঁর
সবার কথাই জানেন তিনি।
খৈয়াম মনে করতেন মৃত্যুর পরে জীবন বলে কিছুই নেই। মাটিতেই সবার দেহই বিলীন হয়ে যাবে, সেই মাটি দিয়েই হয়ত ভবিষ্যতে কোনো কুম্ভকার তৈরী করবে মদের কুজো বা পেয়ালা আর সেই পেয়ালা তখন শোনাবে কোনো পানকারীকে তার বিগত জীবনের ইতিহাস। তাই তিনি লিখেছেন:
সেইতো সখী মাটির কোলে
হবেই শেষে পড়তে ঢলে
তাই বলি আয় হিম অতলে
তলিয়ে যাবার আগে
ভোগ করে যাই প্রাণটা হেসে
বুক ভরে নেই ভালোবেসে
এই জীবনের যে কটা দিন সামনে আজও জাগে
মাটির দেহ মাটির গেহে হবেই যেনো লীন
ধুলোর বোঝা মিশবে ধুলোয় এসে
সুর কি সুরা -গায়ক-আলোক সকল শোভাহীন
অন্তহারা অসাড় শীতল দেশে।
ওমরের কাব্যের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো সাবলীল গতিশীলতা, লীলায়িত ছন্দময় ভংগী যা তার পরবর্তী কবি হাফিজ, সাদী প্রবল ভাবে অনুসরণ করলেও কেউ আয়ত্ত করতে পারেনি। তিনি এক অনন্য অসাধারণ অনতিক্রম্য কাব্য প্রতিভার অধিকারী যে নিজ বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।
এছাড়া ছিল তার নৈসর্গ প্রেম যা তার পেশা নিরস গণিত চর্চাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর রূপরস যেমন ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী, বুলবুলির গান, টিউলিপ ফুল, গোলাপের সুবাস, বসন্তের সমীরণ, ঊষার আলো, জোৎস্না প্লাবিত রজনী, যা তাঁর কবিতায় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। অপরূপা সাকী খৈয়ামের পান পাত্র পূর্ণ করে দিচ্ছে আর তুলছে বীণার মধুর ঝংকার যা, তার সর্বক্ষণের কল্পনার ফসল।
এইখানে এই তরুতলে তোমায় আমায় কতূহলে
এ জীবনের যে কটা দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে
সংগে রবে সুরার পাত্র অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেক খানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে।
থাকবে তুমি আমার পাশে গাইবে সখী প্রেমোচ্ছ্বাসে
মরুর মাঝে স্বপ্ন স্বরগ করবো বিরচন
গহন কানন হবে লো সই নন্দনেরই বন।
অনেকে মনে করেন খৈয়ামের রুবাইয়াৎ বলতেই ইংরেজী ভাষীদের চোখে যেন সুরা সাকী আর রুটির চিত্র ভেসে উঠে, এটা ঠিক নয়। কারণ তিনি শুধু একজন বিশিষ্ট কবি-ই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত দার্শনিক, গণিতবিদ। এ ছাড়াও একজন চিকৎসক। ফিটজেরাল্ডের ভুল অনুবাদের ফলেই পাঠকদের মধ্যে এই ভুল ধারণা। ফিটজেরাল্ড ছাড়াও অনেকে বহু ভাষায় রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেছেন। বাংলা অনুবাদকের মধ্যে কাজী নজরুল, নরেন্দ্র দেব ও কান্তি চন্দ্র ঘোষ উল্লেখযোগ্য।
সুফী মতবাদে বিশ্বাসী খৈয়াম দীর্ঘকাল ধরে বিজ্ঞান সাধনার ফলে জগৎকে আরো স্পষ্টভাবে দেখার দৃষ্টিভংগী লাভ করেছিলেন। তাঁর মতে মানুষ তার সীমাবদ্ধ চিন্তাভাবনা দিয়ে সৃষ্টি রহস্য কোনো সমাধান করতে পারবেনা। সুতরাং এটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। কালক্ষেপণেরও দরকার নেই।
তাই খৈয়াম লিখেছেন:
দুঃখ তোমার বাড়িওনা আর
আক্ষেপে হে বন্ধু বৃথা
অন্যায়ের এই জগৎটাতে
জ্বালিয়ে রাখো ন্যায়ের চিতা-
মিথ্যা যখন এই ধরণী
তখন হেথা কিসের ভয়
দুর করে দাও ভাবনা যত
কিছুই সখা সত্য নয়।
কারো কারো ধারণা যে তিনি দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তাই কোনো কোনো কবিতায় তিনি বিধাতার কাছে সম্পূর্ণ আত্নসমর্পন করে জানতে চাইছেন তার কৃতকর্মের ফলাফলঃ
ওগো আমার চলার পথে তুমি -
রাখলে খুড়ে পাপের গহর
বইয়ে বিপুল সুরার লহর
করলে পিছল ভূমি
এখন আমি ঠিক যদি না চলতে পারি তালে
শিকল বাঁধা চরণ নিয়ে প্রারদ্ধের ঐ জালে
বলবে নাতো ক্রুদ্ধ অভিশাপে---
পতন আমার ঘটলো নিজের পাপে ?
আবার কখনো লিখেছেনঃ
কোন প্রমাদে পরাণ কাঁদে এমন করে ওমার
দুঃখ কিসের তোমার--?
ভাগ্য নেহাৎ মন্দ ভেবে মিথ্যা করো খেদ
দাও ডুবিয়ে আনন্দে হে জীবন ভরা ক্লেদ
পাপীর শুধু আছেই যেনো তার দয়াতে অধিকার
পাপ করেনি জন্মে যে জন বিধির কৃপায় কি দাবী তার!
আবার লিখছেনঃ
জীবন বিভীষিকা যারে মৃত্যু ভয়ের চাইতে মারে
মরণ তাকে ভয় দেখাতে এমন কি আর অধিক পারে!
দিন কতকের মেয়াদ শুধু ধার করা এই জীবন মোর,
হাস্যমুখে ফিরিয়ে দেবো সময়টুকু হলেই ভোর।
পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এই শোকে তিনি রচনা করেছেনঃ
ঐ আকাশের গ্রহ তারার ভীড়ের মধ্যে যেদিন যাবো
এমন স্নিগ্ধ শস্য শ্যমল জগৎ কি আর সেথায় পাবো!
হায় ধরণী- হৃদয় রানী তোমায় ফেলে যেতেই হবে
মনটা আমার কাঁদছে গো আজ সেই বিরহের অনুভবে।
শেষ পর্যন্ত ভাগ্য নিয়ে সকল দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ১১৩১ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর নৈশাপুরেই এই জগৎ বিখ্যাত কবি ইরানের গৌরবের প্রতীক ওমর খৈয়ামের জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে তার ছিল প্রচন্ড কৌতুহল।
তাই তো তিনি এক কবিতায় বলেছেনঃ
অনন্ত অম্বরে যারা করেছে প্রবেশ
বলেনা তো কিছু তারা ফিরে এসে কেহ
পথের ইঙ্গিত মাত্র নাহি দেয় একটি বিদেহ
অজানা সে ও পারের লইতে উদ্দেশ
নিজেদেরই তাই কিগো একে একে যেতে হয় শেষ!
সত্যিই তিনিও আর ফিরে এসে বলেননি কি আছে সেথায়!
[কবিতাগুলো কবি নরেন্দ্র দেব কর্তৃক অনুদিত]
**
******
***********
*********************
**********
*****
**
*
**
******
***********
*********************
***********
****
**
*
*
**
****
********
*********************
*********
*******
****
**
*
রুবাইয়াৎ-ওমর খাইয়াম
সিকান্দার আবু জাফর
ইউরোপীয় পাঠকদের কাছে ওমর খাইয়ামের ফার্সী চতুষ্পদ্গুলীর ইংরেজী তরজমা সমাদর লাভ করতে আরম্ভ করলো ১৮৬৭ সালের পর থেকে। অর্থাৎ কবি হিসেবে ওমর খাইয়াম ইউরোপীয় পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেন মৃত্যুর প্রায় ৬০০ বছর পর।পারস্যের রাজদরবারে কবি পরিচয়ে ওমর খাইয়ামের কতখানি সুখ্যাতি এবং প্রতিপত্তি ছিল বাইরের পৃথিবীতে সে খবর ১৮৬৭ সালের আগে প্রায় পৌঁছায়নি বললে ভুল বলা হবে না।
বিশ্ববিখ্যাত এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড অবশ্য তার তর্জমা ১৮৫৯ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে তর্জমা ইউরোপীয় পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি দীর্ঘকাল পর্যন্ত। যখন ইউরোপীয় পাঠক মহলে কবি ওমর খাইয়াম রীতিমতো পরিচিত হয়ে উঠলেন এবং গোটা ইউরোপে যখন অসংখ্য ‘খাইয়াম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাঁর কবিতা চর্চা শুরু হলো তখন জানা গেল যে, বাইরের পৃথিবীতে ওমর খাইয়ামের পরিচয় এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড-ই প্রথম তুলে ধরেন নি। ফন হ্যামার ১৮১৮ সালে ওমর খাইয়ামের কবিতা জার্মান পাঠকদের সামনে উপস্থিত করেছিলেন। কিন্তু জার্মান ভাষা তেমন বহুপ্রচলিত ভাষা না হওয়ায় ইউরোপের সর্বত্র ওমর খাইয়াম সম্বন্ধে তেমন কৌতূহল জাগেনি।
১৮৫৯ সালে প্রথম পর্যায়ে ফিটজেরাল্ড-এর তর্জমা প্রকাশিত হবার বেশ কয়েকবছর পরে পারস্যের ফরাসী দূতাবাসের দোভাষী এ.ই. নিকোলাস পারস্য দরবারে তৎকালে ওমর খাইয়ামের কার্যখ্যাতি সম্বন্ধে ওয়াকিফাল হয়ে তেহরানে লিথোগ্রাফ করা একটি পান্ডুলিপির আক্ষরিক তর্জমা ফরাসী ভাষায় প্রকাশ করেন। প্রথম পর্যায়ে সফলকাম না হলেও ফরাসী ভাষায় ওমর খাইয়ামের তর্জমা প্রকাশিত হতে দেখে ফিটজেরাল্ড নতুন উতসাহ লাভ করেন। এবং ১৮৬৭ সালে তিনি ওমর খাইয়ামের তর্জমা দ্বিতীয় এবং বর্ধিত সংস্করণে প্রকাশ করেন। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ওমর খাইয়ামের কদর ইউরোপীয় পাঠক মহলে বাড়তে থাকে।
গোড়ার দিকে ফিটজেরাল্ড কোন বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ওমর খাইয়ামের তর্জমা শুরু করেছিলেন – এমন মনে হয়না। অক্সফোর্ডের বদলিয়ান লাইব্রেরিতে রক্ষিত বাছাই-না-করা স্তুপীকৃত পান্ডুলিপির ভিতর থেকে ক্যামব্রীজের ইতিহাসের অধ্যাপক ই. বি. কাওয়েল ১৮৫৬ সালে হঠাত ওমর খাইয়ামের ১৫৮ টি চতুষ্পদীর পান্ডুলিপি আবিষ্কার করেন যাতে তারিখ ছিল ১৪৬০-৬১ সাল। অর্থাৎ ওমর খাইয়ামের মৃত্যুর প্রায় ৩৩৮ বছর পরে । কারো কারো মতে সেটি প্রায় ৩৫০ বছর পরের পান্ডুলিপি। পান্ডুলিপিটি লেখা ছিল হলদে কাগজে বেগুনী রঙের কালিতে, তার উপর দিয়ে সোনালী রঙের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়া।
চতুষ্পদীগুলীর রচয়িতা এবং উক্ত পান্ডুলিপি সম্পর্কে অধ্যাপক কাওয়েল ১৮৫৮ সালে ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ লেখেন। উক্ত প্রবন্ধ ফিটজেরাল্ডকে ওমর খাইয়ামের অনুবাদের জন্য আরো বেশী আকৃষ্ট করে। এর এক বছর আগে ১৮৫৭ সালে জার্নাল এশিয়াটিক–এ প্রকাশিত ফরাসী প্রাচ্য ভাষাবিদ Garcon De Tassy –র প্রবন্ধেও ওমর ও তাঁর চতুষ্পদীর উল্লেখ ফিটজেরাল্ড-এর কৌতূহল উদ্রেক করেছিল।
আমি নিজে অবশ্য রুবাইয়ের মিল পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ছন্দের নির্ধারিত সীমানার ভিতরে একটি রুবাইয়ের ভাব প্রকাশের ভাষা গোছাতে পারিনি বলে সেটাকে বাড়িয়ে দুটো করতে হয়েছে। এই ত্রুটি পীড়া দিলেও তা এড়াতে পারিনি।
রুবাইয়্যাৎ - এ ওমর খাইয়াম
*
মাটির ধূলিতে জন্মের মতো সুপ্ত হবার আগে
তা'হলে কুড়াই যা কিছু লভ্য সকল পুরোভাগে
তারপর ধুলি তুচ্ছ মলিন মিশবো ধুলিতে শেষে
সঙ্গীতহীন মদিরা শূন্য কালের সমাধি বাগে
*
পেয়ালা দুঠোঁটে ছুঁয়ে ধীরে ধীরে শুধালাম
এ জীবনের কিবা রহস্য কতটুকু তার দাম
মাটির পেয়ালা শোনালো আমাকেঃ ভোগ করো প্রাণ ভরে
মরণে হারালে ফিরবে না আর কোন পরিচিত নাম
*
এই যে মাটির পাত্র এখন বিচিত্র ভঙ্গীতে
আমাকে শোনালো কথাগুলি তার অস্ফূট সঙ্গীতে;
যে কঠিন ঠোঁটে এখনি আমার ঠোঁট দুটি রাখলাম
কত চুম্বন তাড়াবার তাকে হয়েছে যে লঙ্ঘিতে
*
কোন ফাল্গুন সন্ধ্যা লগনে হয়তো আনমনে
আগের মতন অনুরাগ রাঙা নিমেষ অন্বেষণে
নতুন তারার অতিথি সভায় মখমল তৃণদলে
মধুমুখী প্রিয়া আসবে আবার নিভৃত কুঞ্জবনে
আসবে যেখানে জীবনের লোভে আমিও এসেছিলাম
তোমার শান্ত সুরভিতে আমি ক্লান্তি ঢেকেছিলাম
সেই পরিচিত ভূমি পাবে তুমি দিও গো উপুড় করে
একটি শূন্য মদিরা পাত্র জড়ায়ে আমার নাম
*
**
******
***********
*********************
**********
*****
**
*
**
******
***********
*********************
***********
****
**
*
*
**
****
********
*********************
*********
*******
****
**
রুবাইয়্যাত -এ ওমর খৈয়াম
অনুবাদ - কাজী নজরুল ইসলাম
১
রাতের আঁচল দীর্ণ করে আসলো
শুভ ঐ প্রভাত,
জাগো সাকি! সকাল বেলার খোঁয়ারি ভাঙো আমরা সাথ।
ভোলো ভোলো বিষাদ-স্মৃতি! এমনি প্রভাত আসবে ঢের,
খুঁজতে মোদের এইখানে ফের, করবে করুণ নয়নপাত।
২
আঁধার অন্তরীক্ষে বুনে যখন রূপার পাড় প্রভাত,
পাখির বিলাপ-ধ্বনি কেন শুনি তখন অকস্মাত!
তারা যেন দেখতে বলে উজল প্রাতের আরশিতে-
ছন্নছাড়া তোর জীবনের কাটল কেমন একটি রাত।
৩
ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস? কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
আনন্দ-গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর?
ঘুম মৃত্যুর যমজ ভ্রাতা, তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কবরে তোর জনম ভোর।
৪
আমার আজের রাতের খোরাক তোর টুকটুক শিরিন ঠোঁট,
গজল শোনাও, শিরাজী দাও, তন্বী সাকি জেগে ওঠ!
লাজ-রাঙা তোর গালের মত দে গোলাপি রং শারাব,
মনে ব্যথার বিনুনি মোর খোঁপায় যেমন তোর চুনট।
৫
প্রভাত হল। শারাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর,
যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাঁচ করব ভেঙে চাখনাচুর।
অনেক দিনের সাধ ও আশা এক নিমিষে করব ত্যাগ,
পরব প্রিয়ার বেণী বাঁধন, ধরব বেণুর বিধুর সুর।
৬
ওঠো, নাচো! আমরা প্রচুর করব তারিফ মদ-অলস
ঐ নার্গিস-আখিঁর তোমার , ঢালবে তুমি আঙ্গুর-রস!
এমন কী আর- যদিই তাহা পান করি দশ বিশ গেলাস,
ছয় দশে ষাট পাত্র পড়লে খানিকটা হয় দিল সরস!
৭
তোমার রাঙা ঠোঁটে আছে অমৃত-কূপ প্রাণ-সুধার,
ঐ পিয়ালার ঠোঁট যেন গো ছোঁয় না, প্রিয়া, ঠোঁট তোমার।
ঐ পিয়ালার রক্ত যদি পান না করি, শাপ দিও;
তোমার অধর স্পর্শ করে এত বড় স্পর্ধা তার!
৮
আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙিন গুল
রেখো না পান-পাত্র বেকার, উপচে পড়ুক সুখ ফজুল।
পান করে নে, সময় ভীষণ অবিশ্বাসী, শত্রু ঘোর,
হয়ত এমন ফুল মাখানো দিন পাবি না আজের তুল!
৯
শারাব আনো! বক্ষে আমার খুশির তুফান দেয় যে দোল।
স্বপ্ন চপল ভাগ্যলক্ষ্মী জাগল, জাগো ঘুম-বিভোল!
মোদের শুভ দিন চলে যায় পারদ সম ব্যস্ত পায়
যৌবনের এই বহ্নি নিভে খোঁজে নদীর শীতল কোল!
১০
আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন,
লাভের অঙ্ক হিসাব করে পাই শুধু দুখ, মুখ মলিন।
খুঁজতে গিয়ে এই জীবনের রহস্যেরই কূল বৃথাই
অপূর্ণ সাধ আশা লয়ে হবি মৃত্যুর অঙ্কলীন।
রুবাইয়্যাত -এ ওমর খৈয়াম অনুবাদ - সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত
প্রথম মাটিতে গড়া হয়ে গেছে শেষ মানুষের কায় শেষ নবান্ন হবে যে ধান্যে তারো বীজ আছে তায় সৃষ্টির সেই আদিম প্রভাতে লিখে রেখে গেছে তায় বিচার কর্ত্রী প্রলয় রাত্রি পাঠ যা করিবে ভাই
*** |
রুবাইয়্যাত -এ ওমর খৈয়াম অনুবাদ - কান্তি ঘোষ
সেই নিরালা পাতায় ঘেরা বনের ধারে শীতল ছায় খাদ্য কিছু পেয়ালা হাতে ছন্দ গেঁথে দিনটা যায় মৌন ভাঙ্গি মোর পাশেতে গুঞ্জে তব মঞ্জু সুর সেই তো সখি স্বপ্ন আমার সেই বনানী স্বর্গপুর
*** আমার সাথে আসবে যেথায় - দূর সে চোখে শহর গ্রাম একধারেতে মরু তাহার, আরেকদিকে শষ্পশ্যাম বাদশা নফর নাইকো সেথা - রাজনীতির চিন্তাভার মামুদশাহ? - দূরে থেকেই করবো তাকে নমস্কার
*** দ্রাক্ষালতার শিকড় সেটি - তার না জানি কতই গুণ জড়িয়ে আছেন অস্থিতে মোর দরবেশী সাঁই যাই বলুন গগণভেদী চিতকারে তার খুলবে নাকো মুক্তিদ্বার অস্থিতে এই মিলবে যে খোঁজ সেই দুয়ারে কুঞ্জি কার
***
|
রুবাইয়্যাত
এ টি এম মোস্তফা কামাল
[আমি ১৯৯৬
সালে রুবাই অনুবাদের (কিছুদিন আগে
পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় জানতে পারি এ
পর্যন্ত ১০৪ জন
গুণী বাংলা ভাষায় রুবাই অনুবাদ করেছেন) বদলে রুবাইকে ফর্ম
হিসাবে ব্যবহার করে নতুন রুবাই লিখতে শুরু করি। আমি মূল রুবাইয়ের রচনা শৈলী ও
আবহ অনুসরনের চেষ্টা করছি]
শিশিরস্নাত গোলাপ দেখি কাঁপছে মৃদু হাওয়ায়;
অবহেলায় তাকাই সেদিক কাজের আসা যাওয়ায়।
হঠাৎ দেখি আস্তে করে একটি শিশির ফোঁটা
ঝরলো নিচে অশ্রু হয়ে কোন্ বেদনা পাওয়ায় ?
***
রাত মরেছে দিনের হাতে রাতকে সাকি দাও কবর;
দিনটা __ চলো জেগেই কাটাই , আসবে আবার রাত জবর
শূন্য জাম-এর নিঃস্ব তাতে কাতর কেন হও সাকি ?
এ নিঃস্বতা বইছে বুকে পূর্ণতারই খোশ্ খবর!
***
ভোরের আগেই জাগায় আমায় বিচিত্র সব পাখির ডাক;
রাতটা আমায় শুধুই জাগায় প্রাণঘাতি ওই সাকির ডাক!
বিবেক জাগায় হর হামেশা, ঘুমাই কখন হায় খোদা!
তালাশ করি রসের ডাকের,
তত্ত্বজ্ঞানী চুলায় যাক !
***
সেই কতোকাল থেকেই তাকে সকাল বিকাল দেখি;
হঠাৎ করে তার খুলেছে রূপের আগুন, এ কি !
যখন এলো অনেক কাছে তাকাই অবাক চোখে
এই যে এমন রূপ খুলেছে তার সকলই মেকি !
***
সেই যে কবে নেমে ছিলাম জীবন জীবন খেলায়;
ছোট্ট বেলা টানছে পিছু জীবন সন্ধ্যা বেলায় !
মাঝখানে খুব স্বপ্ন এসে দেয় রাঙিয়ে শরীর
রঙের মেলা পথ দেখালো পথ হারিয়ে ফেলায় !
***
সরাইখানার বন্ধুরা যে কোন নজরে তাকায় ?
আসল খবর পাইনা কিছুই সামনে বসে থাকায়।
কেউ যখনি ছাড়ছে আসর, পরের নিমেষ থেকেই-
মনের সুখে চরিত্র তার পিষছে কথার চাকায় !
***
প্রজাপতির পাখার রঙে ফুলের রেনু মেখে
ফুলগুলো খুব মৌজে আছে মজার খেলা দেখে !
ফুলের সাথে প্রজাপতির এই যে খেলার রীতি
কবি এবং প্রেমিক ছাড়া আর কি কেহ শেখে ?
***
সাকির নেশা জমতে গেলেই রাতের আঁধার কাটে !
নেশার লোভে নাও ভিড়ালাম দীর্ঘ-রাতের ঘাটে।
রাত বাড়াতে কায়দা করি রোদের কক্ষপথে
পথ ভুলে তাই সূর্য ঘোরে তেপান্তরের হাটে !
**
******
***********
*********************
**********
*****
**
*
**
******
***********
*********************
***********
****
**
*
*
**
****
********
*********************
*********
*******
****
**
*
সুকূত-ই-শাম - সন্ধ্যার নীরবতা
সজল শর্মা
ভুলিতে তারে পান করে যাই
যদি তারে
ভুলে থাকা যায়।
কমবখত শরাব নাফরমানি করে,
তাকে আরও
বেশি মনে পড়ে যায়।।
**
সে তো আমারই, তাকে আপন বলেই জেনে এসেছি
বুকের ঘরে
যতন করে রেখেছি।
দুঃখ দিয়ে সে যবে দূরে থাকার বাহানা খুঁজে,
আমি তাকে
আরও জড়িয়ে বুকে রেখেছি।।
**
সে তো আছে দূর দেশে,
সে কি আর
জানে আমার স্পন্দন স্পন্দন তারই নাম জপে যায়।
উঠেছে গজব চাঁদ আজ আকাশে
তারই
মেহজাবীন চেহারা মনে পড়ে যায়।।
**
ভুলে যদি যেতে পারে,
যাক সে
দূর সুদূরে আমার ছেড়ে।
সে তবু জানে না তার যাবার পথে,
নিয়েছে
আমার জীবন কেড়ে।।
**
কিছু তো দুনিয়ার আশীর্বাদ
আমার মন
ভেঙ্গে গেল।
আর কিছু ছিল সময়ের তিক্ততা
সে আমার
মন ভেঙ্গে দিল।।
**
ভেবে পাই না আমি কি করে সে ভুলবে আমায়,
কি করে
থাকবে দূরে।
আয়নায় নিজের মুখ দেখলেই আমাকে সে পাবে,
পারবে কি
তখন মুছতে তারে।।
**
জানি ফিরবে সে আমার মনেতে আবার,
সে যে
আমার আপনের আপন।
ভুল করে সে ভুল বুঝে যায়,
ভুল করে
আমায় দিয়ে যায় বেদন।।
**
রসম-ই-উলফত কি জানি আমি,
আমি তো
জানি বুক উজাড় করে তাকে আপন করে চেয়ে যেতে।
আজ সুকুত-ই-শাম এত ব্যথাতুর ছিল,
আমি
বারেবারে চেয়েছি তারে বুকে পেতে।।
**
আমার হমনফস আমার হমনবা,
আমায়
বন্ধু করে বুকে দাগা না দে।
আমি দর্দ-ই-ইশকতে জাঁ-বলব,
আমায়
জিন্দেগীর আর দোয়া না দে।।
-শাকিল বাদায়ুনি
*
মেহজাবীন = চাঁদের মত সুন্দর; নাফরমানি = অবাধ্যতা; রসম-ই-উলফত = ভালবাসার
আচার-প্রথা; দর্দ-ই-ইশক = প্রেমের ব্যথা; জাঁ-বলব = মৃত; নফস = নি:শ্বাস; নবা =
কণ্ঠ; হমনফস,
হমনবা =
বন্ধু
**
******
***********
*********************
**********
*****
**
*
*
**
****
********
*********************
*********
*******
****
**
ভুলে যাওয়া যাবে না তোমায়,
স্মৃতি
উঁকি দেওয়ার আগেই চলে এসো বুকের ঘরে।
সে যাওয়া
হয় যেন আমার মরণের পরে।।
শরাবের
কাছেই তাই এই সমর্পণ।
গলা জ্বলে
বুকে আসে শান্তির শ্রাবণ।।
প্রেমের
সাথে বেদনাও দিলেন উপহার করে।
এখন দেখি মেহফিলে
জায়গা না ধরে।।
কার কাছেই
বা বলি মনের কথা।
আজকাল মনে
হয় খোদার মনেও ব্যথা।।
তোমরা তো
দেখে যাও শরাবী আমার ছবি। কষ্টেই সুখ, কষ্ট আছে বলেই দিল হয়ে যায় কবি।।
**** |
শবনমী রাতের শায়েরী সজল শর্মা
|
|
কাব্য কণিকা
|
যথারীতি প্রকাশনা
ই বুক
ধারাবাহিক গল্প
প্রবন্ধ
*
******
*************
****************************
******************************************
****************************
**************
******
*
Best view with Microsoft Internet Explorer
font download link
http://omicronlab.com/download/fonts/SolaimanLipi_20-04-07.ttf