বকলমা রোমন্থন...
অরূপ ঘোষ
বারোটা এক এর ট্রেনটা এগারো
মিনিট আগে গেছে চলে
৬৯-য বাসটাও কপালের ওপর থেমে, চাকা পাঞ্চার বলে
কত রকমারী বাস রুট চালু হয়েছে আজকাল
নড়তে পারেনা তারা রাস্তা নেই এই তো হাল
অযান্ত্রিক বাসে দেশি মদের আড্ডায় বসেই
খোয়ারী শুরু তিন স্যাঙ্গাতের বাসের মধ্যেই
আমি কি করি এই মাঝ রাতের উল্টোডাঙ্গার পথে
গভীর রাতে কোন পথ খুঁজে পাইনা কেউ নেই সাথে
প্রাণহরা নাম রেখেছিল দাদু
আমার, প্রাণকৃষ্ণ মন্ডল
এখন কোণ দিশার কথা শোনাবেন তিনি আমি তো ভোম্বল
কৃষক আন্দোলনের পিছনের দিকের নেতা ছিলেন ডেবরা’র
গোপীবল্লভপুরে লাল সেনার মার্চ, সেই জ্বলন্ত সময় বাংলার
এক লাল পয়সার ইংরেজী না জেনেও
সবার সামনে মাথা তুলে কথা বলতেনও
সদা সত্য কথা বইলবেক
জীবনের সকল উদ্দেশ্য সফল হইবেক
দাদুগো এই মাঝ রাতে আমি কি
মিথ্যে কথা বলেছি যে আমার এই হাল
কেন আমি সপ্রতুল বিজ্ঞাপিত শিক্ষক নামক মদ খেয়ে নাজেহাল নাকাল
দু’ পাত্তর আমিও গলায় ঢেলেছি বন্ধু গনশা’র অনুনয় বিনয়ের শিকার হয়ে
খাইনা কিন্তু খেলে বেশ লাগে মনের গোপনে নাড়া পড়ে সময় যায় বয়ে
পা আমার সোজা মাথা স্থীতধী তবুও কেন এই দুর্ভোগ দাদুগো তোমার প্রাণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ করেও যে কোনও উপায় দেখিনা শহরটা কি কিনে নিল শয়তান
গৌরবর্ণা কৃষ্ণকলি সেন
মিশকালো শীফন সফেন
হঠাত কৃষ্ণকলি সেন এর কথা মনে পড়ে বুকের বাঁদিকে কেমন মোচড় দিল
আমার সঙ্গে যাদবপুরে ইকনমিক্স পড়ত
দেখা অদেখায় আমার হৃদয় শিথিল হত
আমাকে খুব বিশেষ বন্ধু বলে মানত
গুণী মেয়ে রুপসী ছলাকলাও জানত
কত কি যে ফুরফুর করে ভাসে সিনেমার মত
মনের তলানী ঘেঁটে নাড়িয়ে দিল দু’পাত্তর শিক্ষক যত
ভেসে এল প্রাণের কৃষ্ণকলির
আপনকথা কিছুও
সেই সন্ধায় ফেষ্টের পরে নিরাবরণা ছায়ার পাশেও
শীতের ঝাপসা সন্ধায় কমিউনিটি সেন্টারের সিঁড়ির ঘরে
প্রথম দু’জনে অনুভব করেছিলাম নিবিড় করে দু’জনারে
পুরুষ সিংহ আমি এখন চার বিটা বিটির বাপ
দাদু আমার কি হল হঠাত কৃষ্ণকলি কেন দেয় চাপ
সেও তো এখন কারোর দিদিমা ঠাকুমা হয়
সুরঙ্গমা সুন্দরী শাশুড়ী কিম্বা কিছুই নয়
হঠাত কেন এমন হয় কেন ভালবাসা
ফিরে আসতে চায়
কেন চাষাড়ে বাঁশীওয়ালা আবার ফিরে আসে যৌবনের গলিতে
গিন্নির সাথে সহজাত সহবাস এখন ইদের চাঁদ দেখার মত
গতর ভারী ডাকাবুকো বৌ আমার অন্যরকম করলেই থতমত
কেন মন্ত্রীর পি এ গণশা’র হাতে পড়লাম আজ অফিস ফেরত
বন্ধুর চাপে
শিক্ষকের প্রকোপে
দমাদ্দম মেরেছি মাত্তর
দুই নাকি তিন পাত্তর
শিক্ষক গিলিয়ে দিলেগা’ সাধু আমাকে
একটা ট্যাক্সিও পারছিনা থামাতে
আমার মন ভিজল
কৃষ্ণকলি সেন এল
আমাদের কোনও ঘর থাকেনা
যা থাকে তা’ শুধু ঘরের পথে যাওয়া
ঘরের পথে যাওয়া এক অভ্যাস
অনেকটা যেমন অনিয়মিত সহবাস
পা টলেনি হাতে ফলিও ব্যাগ থুরি ব্রীফকেস
হঠাত থেমে গেছে আকাশ রুক্ষ কালো কেশ
মন কেন কৃষ্ণকলি রোমন্থন
লীলায় মত্ত
ধুস এর থেকে বেরো ঝঞ্ঝাট যন্ত্রণা যত্ত
আমি এখন কি করে বাড়ি ফিরব
কি করে কঙ্কাবতীর সামনে দাঁড়াব
ও’ আমার মুস্কিল আসান দাদু
একটি বার আমার হাতে পালটে দেবার
দাও না কাঠির জাদু...
দাও না বলে উপায় আমার ঘরে ফেরার...