মোহভঙ্গের ইতিকথা
এই কথামালা ৪৮২ ঘন্টার বিভিন্ন সময়ের থেকে নেওয়া কিছু অন্তরের কথা এখানে রেখেছি সব নয়! কোনও জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সাথে এই ইতিকথার কোনও মিল পাওয়া গেলে তা নিছকই কাকতালিয় বলে গণ্য করার জন্য অনুরোধ রাখছি অনাম্নী স্বাক্ষর।
কুন্তলাঃ
কি দেখছ অমন ভাবুক হয়ে?
কোথায় তুমি গিয়েছ হারিয়ে!
কবি তুমি চুপ কেন!
আমায় পাগল করে তুমি নীরব!
আমি কিন্তু আর কথা বলবনা
তাও তুমি চুপ করে থাকবে!
ধীস্ময়ঃ তুমি স্নান করে বেরোনোর পর থেকেই তো কথা বলছি!
কুন্তলাঃ কার সাথে মশাই!
ধীস্ময়ঃ তোমার লম্বা ভেজা চুলের থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল বিন্দুর সাথে
কুন্তলাঃ মানে?
ধীস্ময়ঃ মানে নেই কোনও মানে নেই কুন্তলা এসবের মানে এক কাব্যময় মনই জানে
কুন্তলাঃ এই এমন করনা প্লীজ... আমার কাজ আছে অনেক...এই আমি
কিন্তু আর পোষাক পরতে পারবনা
ধীস্ময়ঃ পোষাক পরাটা কি খুব জরুরী কাজ এখন?
কুন্তলাঃ উফফফফফফফ ধীঈঈঈঈঈঈ প্লীজ...
ধীস্ময়ঃ তোমার পাকা গম রঙের নরম তোয়ালেটা তোমার গায়ের সাথে মিলে একটা দারুন
ভাস্কর্যের সৃষ্টি করেছে জান কি মন মোহিনী...!
স্নান ঘর থেকে আলগা খুশী মাখা পায়ে পায়ে বেডরুমে ঢুকলে তুমি
একা ঘরেও তোয়ালেটা আলগা-আঁটো করে বাঁধা বুকের ওপরে
মুক্ত হবে সে বাঁধন কার ছোঁয়ায় কার উষ্ণ ওষ্ঠ অধরে
পিঠের ওপর ভেজা চুলের ফোঁটা ফোঁটা স্ফটিকের মত জলবিন্দু
সময় নিয়ে এলিয়ে গড়িয়ে এসে তোমার পিঠের তোয়ালের প্রান্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে
আর সেই ঠাণ্ডা তরল স্ফটিকের তুলি দিয়ে পিঠের ক্যানভাসে কত ছবি যে আঁকা হল তুমি জান! তোমার আদুরে গলা সব বলে দিচ্ছে কুন্তলা ...
কুন্তলাঃ তোমার গলার স্বর বলে দিচ্ছে তুমি এখন আর বেরোনর
জন্যে তৈরী হতে পারবেনা মন খুশী খুশী কাশ সাদা মেঘের মতন উড়ে বেড়াচ্ছে কল্পনার
নভোনীলে
কুন্তলাঃ ধীইই, এই কি হচ্ছে কি?
ধীস্ময়ঃ কি হল কুন্তলা! আমি তো মোবাইলে কথা বলছি তোমার সাথে
কুন্তলাঃ কেন ফোন করেছিলে এখন!
ধীস্ময়ঃ তুমি স্নানঘরে ফোন নিয়ে গিয়েছিলে কেন!!!
কুন্তলাঃ আমার হাজব্যান্ড ফোন করতে পারে তাই...
ধীস্ময়ঃ তাই...? তাই গত আট দিনে তুমি যতবার স্নান ঘরে গিয়েছ ততবার মোবাইলটা সেখানে
সঙ্গেই থেকেছে... আনমনে...
কুন্তলাঃ উফফফফফফফ তুমি না...
ধীস্ময়ঃ আছা তোমার হাজব্যান্ড তোমার ফোন কখনও ব্যাবহার করেন না? মানে সুন্দরী বৌ
সারাদিন কার সঙ্গে কথা বলে কি এস এম এস করে সেগুলো দেখেন না?
কুন্তলাঃ
না উনি তা করেন না। আমাদের মধ্যে পরিষ্কার বোঝা
পড়া আছে কেউ কারও একান্ত স্পেস এ ঢুকবেনা। আমার ফোন টেবলে পড়ে থাকে ওনারটাও
তাই থাকে কেউ কারও ফোন ধরিনা আমরা আর ধরলেও কোনও কৌতুহল দেখাইনা...
ধীস্ময়ঃ আমিও তাই মনে করি কেউ তো আর কারও মালিক নন! সম্পর্কের মধ্যে মালিকানা
সত্ব চলে কি? আমার বাড়িতে আমি যদি ল্যান্ডফোন ধরে দেখি অন্য কাউকে চাইছেন কেউ
ততক্ষণাত যাঁর ফোন তাঁর হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিই... তিনি বাড়িতে না থাকলে... বলি
মোবাইলে করুন পেয়ে যাবেন!
কুন্তলাঃ আমিও মনে করি আমি একজন পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট হোম
মেকার বাই চয়েস, আমার নিজস্ব স্পেসটা আমারই... কিন্তু ধী... এইইই, তুমি কি করে
ঢুকে পড়লে এই অন্তস্তলে! তাই ভাবি...
ধীস্ময়ঃ এই আমি কি তোমাকে কখনও তোমার বন্ধুদের নাম তথ্য জানতে চেয়েছি কুন্তলা?
দেখাতো হয়নি আজও যে তোমার মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করব! ইচ্ছেটা যদিও তখন হবে অন্য
কোনও খেলায় মাতার!
কুন্তলাঃ পাজী! তাহলে আমি দেখা করব কি না ভেবে দেখব!
ধীস্ময়ঃ ওহ তাই! ঠিক আছে তবে তাই হোক!
কুন্তলাঃ এই না না আমি এমনিই বললাম কবে দেখা হবে বল!
প্রথম দিন আমরা একটা নির্জন বরিস্তা কাফে তে সারা দুপুর গল্প করব কেমন!
ধীস্ময়ঃ যথা ইচ্ছা দেবী! আচ্ছা কুন্তলা এই নিরূপ অদেখা প্রেম কি করে জন্ম নিল! কি
করে সেই দারুচিনি দ্বীপের নীল বালুকা শয্যায় তুমি শুনতে পেলে তোমার প্রারব্ধ
প্রেমিকের হাঁটু গেড়ে তোমার সামনে বসে নাভীমূলে মুখ রেখে তার সেই আকুতি YOU
ARE MINE
!
কুন্তলাঃ ধী আমি জানিনা... তোমার কথা ভাবলে শুনলে আমি কেমন
যেন নতুন হয়ে যাই বার বার, আমার সারা শরীরে যেন কি এক তোলপাড় হয়ে যায় ধীইই...
ধীস্ময়ঃ তাই বুঝি রোজ স্নানঘরেও ফোন নিয়ে যাও কুন্তলা !
কুন্তলাঃ জানিনা... স্নানঘরেই তোমার কথা ভাবতে ভাবতে স্নান
করে বেরিয়ে তোমাকে দেখেও দেখিনি তুমি বিছানার উপুড় হয়ে আমাকে দেখছ একমনে...
তোমার চোখে প্যাসনেট স্বপ্নিল প্রেমের উথাল পাথাল... আমি আনমনে পোষাক পরতে যাব আর
আয়নায় দেখি তুমি আমাকে দেখছ... ঠিক আমাকে নয় আমার খোলা পিঠের ওপর এক অদম্য নরম
ভালবাসা মাখানো দৃষ্টি...
ধীস্ময়ঃ হুম, মন মোহিনী কুন্তলা রাণী তুমি তো জাননা তুমি ঈশ্বরের কি এক অসম্ভব
সৃষ্টি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি বেতলার জঙ্গলে একা লং ড্রাইভে গিয়ে আমার
কল্পনায়...
কুন্তলাঃ তুমি তো আমাকে দেখইনি আজও আমার কোনও ছবিও নেই
তোমার কাছে! তাহলে কি করে এই আগুন জ্বালাও আমার অন্তরমহলে! কি করে সব তোলপাড় হয়ে
যায় তোমার কথা ভেবে পন্ড হয়ে যায় এলোমেলো হয়ে যায় সব কাজ! আমার খুউব ভাল লাগে সোফায়
বসে সেন্টার টেবলে পা তুলে দিয়ে এলিয়ে হৃদয় তোমার সাথে কথা বলি তোমার পাগলামী
শুরু তখন আর আমার স্বর্গবাস...
ধীস্ময়ঃ ভিজে তোয়ালে পরে থাকলে ফ্যান চলছে নিশ্চয়ই ঠান্ডা লেগে যাবে মণি - একটা
শুখনো নরম কিছু পরে নাও... বেশ এক হাতে ফোন আরেক হাত দিয়ে তাই করছ দেখছি... তুমি
খুব লক্ষী মেয়ে... আমার কথা শোন তুমি!
কুন্তলাঃ আহা... এই তুমি যেন... সব দেখতে পাও না? বলত এখন
আমি কি রঙ পরলাম এখন...
ধীস্ময়ঃ একটা ওয়াইড নেক ফ্রিল দেওয়া সী ব্লু পাতলা শর্ট গাউন হাঁটুর একটু নিচ
পর্যন্ত মাথার ওপর দিয়ে গলিয়ে দিলে আর পাকা গমের মুক্তি হল...
কুন্তলাঃ তুমি না... কি করে এটা সম্ভব! তুমি কি লুকিয়ে
আমাকে দেখছ?
ধীস্ময়ঃ কুন্তলা মনি তুমি কি জান আমি এখন ড্রাইভ করে দুর্গাপুর যাচ্ছি অফিসের কাজে
আর তোমার সঙ্গে আছি। ব্লু টুথ ম্যাডাম...
কুন্তলাঃ কি করে... কি করে তুমি প্রত্যেকবার বলে দাও আমি কি
রঙ পরেছি... আমার সাজের খুঁটিনাঁটী সব তুমি কি করে জেনে যাও ধীঈঈঈ... কি করে!!!
ধীস্ময়ঃ খুব সোজা - ধী তো কুন্তলার অন্তরে থাকে তাই!
কুন্তলাঃ জান, আমাকে অনেকেই বলে আমি খুব সুন্দর দেখতে -
কিন্তু তারা আমাকে দেখেছে তাই বলে তাদের অনেকের প্রকাশ খুবই স্থুল তুমি কি করে
আমাকে না দেখে আমার প্রত্যেকটি ভাব এত
সূক্ষ্ম ভাবে বুঝে ফেল - এই তুমি না খুব
পাজী... এখন একা ঘরে পোষাক বদলাতেও খুব লজ্জা হয় - একটা আবেশের মধ্যেও থাকি তখন,
মনে মনে তোমার অন্তরসুন্দর কথাগুলো শুনি আর দুচোখ বুজে নিজেকে আমাদের আয়নায় দেখি
আর তুমি আমাকে আরও পরিপূর্ণা ও সুতৃপ্তা করে তোল জান ধীঈঈ...!
ধীস্ময়ঃ আমি তো তোমাকে দেখতে পাই... দেখতেই থাকি আমি তোমার অন্তঃসলিলা অনুভূতির
সঙ্গে থাকি...
কুন্তলাঃ কি করে তা সম্ভব তাই তো ভেবে চলেছি আর ভেসে
চলেছি... ধীঈঈ!!!
বারো বছরের বিবাহিত জীবনে আমার স্বামী যার সঙ্গে আমি একাত্মা হয়ে ঘর করি, তিনিও তো
কোনও দিন একবারের জন্য এমন করে আমাকে বলেননি! তার সাথে তিমির নিবিড় আবেগঘন
মুহূর্তগূলোর মধ্যে কোনও সময়ে কেন আমি আমার একান্ত চাওয়া এইসব অনুভুতিকে ছুঁতে
পারিনি ধী! ওগো আমার ধীস্ময় অনবয়ব রূপ তোমার আলতো গভীর গলা আবার তোমার কুন্তলা কে
আবিষ্ট করে ফেলে... কেমন অসাড় এক আনন্দে আমি ভেসে যাইইইই...
ধীস্ময়ঃ কুন্তলা, কবিরা তাদের অস্তিত্বের প্রতিটি রোমকুপ
দিয়ে তাঁদের প্রেমিকাকে দেখে, অনুভব করে, বুঝে নেয় সেই ফল্গুধারার তীব্রতা। কবিদের
অনুভুতি সংসারের অযোগ্য তাই এই বিরল পাওয়া অনেক না বলা চাওয়াকে ছুঁতে পারে হয়ত...
কুন্তলাঃ না গো ধী তোমাকে বলি আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে
তারা সবাই বন্ধুত্বের উঠোনের এপারে কখনও আসেনি আমিই আসতে দিইনি। তাদের অনেকেই
সুপুরুষ, সুকণ্ঠের অধিকারী কিন্তু আমি বুঝতেই পারিনা যাকে আমি দেখিনি যার সাথে
আটদিন আগে এক রাতে কিছুক্ষণ গুগুলে কথার মধ্যে দিয়ে পরিচয় সে কি করে আমার
অন্তস্থলে অবলীলায় প্রবেশ করে এল আর আমি তাকে থামানোর বদলে দিন রাত আরো কাছে টানি
মনে মনে সারা দিনে রাতে অষ্ট প্রহর জুড়ে। আমার স্বামী আমাকে খুব ভালবাসেন তিনি
আমার সব খেয়াল রাখেন হ্যাঁ তিনি আমার রোমান্টিসিজমকে অবশ্য ছাইপাশ বলে থাকেন
সেন্টিমেন্টাল ফুল বলেন আমাকে। কিন্তু আমি তো কোনদিনও স্বপ্নেও ভাবিনি কারও সাথে
আমার রোমান্টিসিজমের
চূড়ান্ত গোপন কথা শেয়ার করব! তুমি চুপ কেন? ধী তুমি কি আছ?
ধীস্ময়ঃ আমার নিশ্বাসের উষ্ণতা তোমার খোলা কাঁধের ওপরে তুলি বোলাচ্ছে নানা রঙ্গে আর
তুমি ...
কুন্তলাঃ উফফফফফফফফ ধী আর বলনা... আমি এলিয়ে আছি! দিলেতো আমার ব্যাঙ্কের কাজগুলো
মাটী করে!
ধীস্ময়ঃ তাহলে রাখি?
কুন্তলাঃ নাআআআআআ এখন তুমি যেতে পারবেনা ধী... তোমার সঙ্গে
সারাবেলা থাকি আর তোমার বুকে মুখ রেখে গুনগুন করে আমার যা খুশী গান গাওয়া... ধী
তুমি কোথায় ছিলে এতদিন! তোমাকে পাগলের মত চুমু খেতে খেতে সেই কথাটা শোনা
YOU
ARE MINE
আমাকে পাগল করে দেয়...
ধীস্ময়ঃ জানি কুন্তলা, আমি এখন তখন সর্বক্ষণ তোমাকে অনুভব করি...
কুন্তলাঃ জানি গো জানি... আমিও ভেসে যাই সেই ফল্গু ধারায়
কি আছে তোমার মনের কণ্ঠের ভাঁড়ারে ধী... কেন এমন করে পাগল করে দাও আমাকে
তুমিইইইইইইই!!!
ধীস্ময়ঃ আমাদের সারাদিনে কতবার কথা হয় কুন্তলা?
কুন্তলাঃ গুনিনি কখনও তবে ফোনে ১০-১২ বার তো বটেই... সেদিন
তুমি সকালে যখন ফোন করেছিলে তখন আমি খুব গম্ভীর গলায় বললাম পরে কথা বলছি... তুমি
একটুও দেরী না করে বলেছিলে আমি জানি... পরে কথা হবে... তুমি যে আমাকে বোঝ তার
প্রমাণ আমি প্রতি মুহুর্তে পাই জান ধী...
ধীস্ময়ঃ ভালবাসি তোমাকে কুন্তলা: ... প্রতি মুহূর্ত তোমার
সাথে থাকি আমি আমার কল্প জগতে...তোমার সুখ - দুঃখ - হাসি - কান্না - গোপন কথা -
অগোপনীয় স্নিগ্ধতার নব নব রূপ তোমার চাপা কষ্ট তোমার ঝর্ণাধার হাসির কলতান -
আমি যে আরও কত কি বুঝি কুন্তলা ... আরও জানতে চাই ঈশ্বরের এক আশ্চর্য সুন্দর
সৃষ্টিকে... তোমার গলার স্বরের সামান্য পরিবর্তন আমাকে বলে দেয় ঠিক কি মূডে আছে
কুন্তলা: ... তুমি গোপন করনা... ধীর কাছে করতে পারনা গোপন, যদিও গোপন করার সহজাত
গুণ তোমার মধ্যেও আছে।
কুন্তলাঃ পারিনা গো পারিনা... তোমার কাছে আমি ঠিক তোমার মতই
খুলি কিতাব
ধীস্ময়ঃ বাহ! উর্দু ভালবাস!
কুন্তলাঃ ভালবাসি কি না জানিনা তবে শুনতে ভাল লাগে! এর পর
রাত জেগে গজল শুনতে যাব তোমাকে সঙ্গে নিয়ে... বুঝলে আমার ধী-মান কবি...
ধীস্ময়ঃ আমিই যে সঠিক বোদ্ধা কে বলল তোমাকে আমি উর্দু ভালবাসি...
কুন্তলাঃ নাহ, তোমার এস এম এস এ পাঠানো শের ও শায়েরী আমি
একজন উর্দু সাহিত্যের প্রফেসরকে পড়িয়ে মানে জানতে চেয়েছিলাম তোমার নামটা আমি গোপন
করেছি অবশ্য - উনি মানে না বলে বলেছিলেন - ইয়ে ফনকার তো মেরা শাগির্দ হ্যায় কব
মিলাওগি উনসে!আমি জোর করতে একটার মানে এত সুন্দ র করে বললেন উফফফ আমি আমার ধী কে
আরও আপন করে পেলাম উনি এও বললেন ইয়ে সব কুছ উনহি সে পুছনা... তুমহারি দোস্ত
কাবিল-এ-তারিফ অদাকর অর এক আচ্ছা ইন্সা হ্যায়...
ধীস্ময়ঃ ওনাকে আমার সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানিও কিন্তু ভাল মানুষদের আমি প্রণাম
জানাই... ওনাকেও জানালাম! আর নিজের কান ধরলাম ঈশ্বরের উদ্দেশে!
কুন্তলাঃ তুমি সত্যিই খুব ভাল লেখ ধী... তোমার গলা শুনলে
আমার মধ্যে কি যেন হয়ে যায়... সেদিন স্কাইপে আমাকে দেখে তোমার চোখে আমি কামনা
বাসনার উর্দ্ধে যে প্রেম ও এক অদম্য বন্য সুন্দর পুরুষ কে দেখেছি... তা বলে বোঝাতে
পারবনা ধীঈঈঈ...
ধীস্ময়ঃ তুমি জান কি তুমি আমার সৃষ্টি কবিতা বা ছবির অতলান্ত উতস... কুন্তলা!
তোমাকে এক তাতক্ষণীকা এই মুহূর্তের
স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে তোমার পূজায় অর্ঘ্য দিলামঃ
মোহ...কে!
অনাম্নী স্বাক্ষর
পথ ভুলে আসেনি কবি
পথ খুঁজে আসনি তুমি
প্রারব্ধ ভোলেনি ভবি
আনমনা পথ চলা ভূমি
পায়ের পাতায় আলতা মেখে
কামনার চিতায় নিজেকে জ্বলতে দেখে
কপালে আলগা তেরছা সিঁদুরের রেশ রেখে
বাসনার উঠোনে ষোড়শী মনকে ছলকে চলতে দেখে
প্রেম উপাসনা মন্দিরের বেদীতে কুন্তলা এসেছিল
প্রথম সেই আসায় ছিল অনীহা কাণায় কাণায় অসম্পূর্ণা
কুন্তলা এসেছিল অছিলা বিহীন আঁচল লুটিয়ে সপ্রতিভা উত্তীর্ণা
কুন্তলা যে কে, কবে এল এই মন পথে
হাট বাট মাঠ ঘাট পেরিয়ে মনরূপার সাথে
কবির কুন্তলা সে কবির প্রেম পরমাত্মাগ্নি
এই পদাবলী তার বুকের গভীরে অসীম সুখে
রেখে যায় অদৃশ্য এক প্রেম স্বাক্ষর অনাম্নী
অসম্ভব ভবিতব্য তুমি মোর মোহ সুখে ও অ-সুখে!
কুন্তলাঃ আমাকে অন্তরে বাহিরে এই ভাবে কেউ পুজা করেনি কখনও
জান ধী! নিজেকে খুব পরিপূর্ণা মনে হচ্ছে। তুমি চিরকাল
আমার পাশে এই রকম উন্মুক্ত বন্ধুত্বের অবাঁধনে থাকবে? আমার ভয় হয় জান যদি তোমাকে
কখনও হারিয়ে ফেলি!
ধীস্ময়ঃ ভালাবাসা বন্ধুত্ব ঈশ্বরের দান। সেই দান আমরা দু'জনেই
এক সঙ্গে মাথা পেতে গ্রহন করেছি। থাকবনা একথা ভাবতে আমি পারিনা। তুমিও পারনা তবুও
তোমার ভয়টা আমি বুঝি। নিশ্চিন্তে থাক কুন্তলা, ধী তোমার সঙ্গে ছায়ার মতন আছে,
থাকবেও। যদি কোনও দিন যেতে হয়...মনে হয় চলে যাবে বলে যেও। আমিও তাই করব! সেদিনটা
যেন কখনও না আসে কুন্তলা...
কুন্তলাঃ জানিনা গো... ভয় হয় যদি তোমার তোমাকে কখনও হারাতে
হয় ধীঈঈঈঈ!
ধীস্ময়ঃ কুন্তলা,সেদিন যেন সূর্য না ওঠে... সেদিন যেন ভালবাসার চাঁদছত্র উপত্যকায়
ধীস্ময়ের শেষ নিশ্বাস পড়ে তাও সে কুন্তলা কে না বলে যাবেনা...
এই মোহভঙ্গের ইতিকথা'র আয়ু ছিল ৪৮২ ঘন্টা! এই কাহিনীর দু চরিত্রই পরিণত মনষ্ক ত্রিশোর্ধ নারী পুরুষ। এদের দুজনের আপন আপন সংসারে স্ব স্ব কর্তব্য আছে যা তাঁরা মন দিয়ে পালন করে থাকেন। এঁরা এঁদের দুজনের জীবনে অনেক অপূর্ণ স্বপ্ন ও কল্পনার অসীম মিল খুঁজে পেয়েছিল... গোটা কুড়ি মিল খুঁজে পাবার পর গোনা ছেড়ে দিয়ে দুজনে বলেছিল ঈশ্বর আলাদা করে রেখে দুজনকে মিলিয়ে দিলেন কিন্তু চির মিলন ঘটালেন না!!! তবুও তাদের চব্বিশ ঘণ্টার দিনপঞ্জী ছিল তাঁদের অন্তরমহলের মিলনের কথায় ভরা...
পাঠক ভাবছেন ৪৮২ ঘণ্টার পরে কি হল!
সেদিন কুন্তলা এক বন্ধুর সঙ্গে শপিং করে ফিরল রাত ন'টা
নাগাদ। ইতিমধ্যে সারাদিন বিভিন্ন শপিং মল থেকে কেনাকাটার পছন্দ অপছন্দ সব নিয়ে বার
কুড়ি ফোনে কথা হয়েছে। ধীস্ময় কাজের মাঝেও প্রতিবার কুন্তলার সঙ্গে কথা বলেছে আর ওর
গলায় সেই খুশীর ঝর্ণাধারার কলকল শুনেছে আর আনন্দে কাজ করেছে। তার পর শপিং থেকে ফিরে
লিফটে উঠেই কুন্তলা ফোন করেছে দরজার চাবি খুলেছে একহাতে কোনমতে আলগা হয়েইঃ
কুন্তলাঃ ধী, এস আমরা কার্পেটের ওপর দুই পা ছড়িয়ে অনেকক্ষণ
গল্প করি
ধীস্ময়ঃ ওগো কুন্তলা সুন্দরী তুমি আমার মনের কথাটিই বললে যে...
কুন্তলাঃ জান কাল সারা রাত আজ সারা দিন তোমার কুন্তলা
ভেসেছে ডুবেছে আবার ভেসেছে অনাবিল প্রেমের সাগরে! (অনেক ক্ষণ প্রায় আধ ঘন্টা
তাঁদের কথা হল - তার পর কুন্তলা বলল,) আমি স্নান করে ডিনার সেরে তোমাকে দেখব
স্কাইপে... ধীস্ময় বলল - আজ আমরা সারা রাত গল্প করব...
রাত সাড়ে ন'টা থেকে সওয়া দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধীস্ময়
একটা ফোন করল। কেউ ধরল না... তার পর ঠিক ১০ বেজে ১৭ মিনিটে কুন্তলার নামটা ধীস্ময়ের
মোবাইলে ভেসে উঠল... প্রাণ ভরা 'হ্যালো বলতেই... আমি
কুন্তলার হাজব্যান্ড কথা বলছি আপনি আর এই নাম্বারে ফোন বা এস এম এস করবেন না
ওকে?
ফোনটা যে ওপার থেকে কেটে দেওয়া হল সেটাও ধীস্ময়ের খেয়াল হলনা। নিশ্চুপ, নিথর,
অপমানিত, চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে
ল্যাপটপের সামনে সারারাত বসে রইল ধীস্ময়! ভোর বেলা নিজেকে নিজের অজান্তেই কুড়িয়ে
গুছিয়ে নিল সে। কাজে যেতে হবে। তার পর থেকে ধীস্ময়ের কাজ কর্ম সব কেমন এলমেলো হয়ে
গিয়েছে। সে কেবল একটাই প্রশ্ন মনে মনে নিজেকে করে চলেছে
স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি কেন মরে গেল কেন কুন্তলা তাকে বলে যেতে পারলনা?
***