লোকটা...      

অব্যক্ত অনেক না চাওয়া
অনেক কিছু না পাওয়া
উর্দ্ধে নীলে সাদা বক দেখে মিটেছে
অশেষ আদর পাবার হ্যাংলামো
অসীম আদর করার পাগলামো
 

ঊষার অস্ফুট আলোতে ভোর হয়েছে
কানে ভৈঁরোর অমোঘ কান্না নিয়ে কেটেছে
ভালবাসা প্রত্যাখ্যানের ভয়ে লুকিয়ে থেকেছে
কবোষ্ণ প্রেমের কবরে সদ্যস্নাতা করবী’র পাপড়ি রেখে
গলা শুখিয়ে কাঠের আংরা
তন্বী জলজা পদ্মা’র চোখে চোখ রেখে
সুরঙ্গমার ভেজা ঠোঁটের তাপ মাপা হয়নি
জীবন কিন্তু অয়নান্ত চলেছে...
 

অব্যক্ত অনেক না চাওয়া
অনেক কিছু না পাওয়া
জিততে জিততে হেরে যাওয়া
হেরে গিয়ে মেনে না নেওয়া এই করেই চলেছে
লোকটা এখনও কাঁদে
ডুকরে কুঁকড়ে এক ভুতুড়ে মনের মধ্যে গুটিয়ে
হাসি তার মনের চাকর
যন্ত্রণা তার কামনাদাসী
সুখ তার বাসনাদেবী
 

সব কিছু মেনে নিয়েই সরে গেছে লোকটা
সমাজের উঁচুতলার সেই ভদ্রলোক এখন ‘লোকটা’
লোকটার অনেক প্রতিপত্তি ছিল, পরিচিতিও
হারাবার ভয় ছিলনা তাই প্রেম হারাল
সন্তানের কাছে সন্মান হারাল, বাবা ডাকটাও
হেলায় অবলীলায় নিজের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট শ্রাদ্ধ করল
অমাবস্যার রাতে ফল্গু নদীর আঘাটায় - নিজেকে হারাল
 

তবুও কেন
অব্যক্ত অনেক না চাওয়া থাকে জীবনে
না পাওয়া উষ্ণতার লোভ কেন থাকে মনে
দুর্মর বসন্তের দুপুরে শালপ্রাংশু পিঠে লেখার নখের আঁচড়ের কথা
দ্বিধা কম্পিত শীতের রাতে মনে পড়ে যায়
রতিসুখের আর্তনাদ থেকে জন্ম নেয় আরেক কবিতা
চেনা ভালবাসা আজও পৌঁছতে পারেনি তার ঠিকানায়


এখন সে বসে ঠিকানা বিহীন ‘ডেড লেটার’ অফিসের দরজায়
রূপসী বাংলা কাঞ্চনকন্যা রেল লাইনে নূপুর ঘুঙ্গুর বাজিয়ে
চলে গেছে দ্রুত চক্র কিঙ্কিনী ঝঙ্কারে অলঙ্কার ফেলতে ফেলতে
লোকটা প্ল্যাটফর্মের এক কোণে বসে আকাশ দেখে এক মনে হারিয়ে
দিন মাস বছর ভুলে বসে থাকে স্মৃতির নিবিড় রসে জারিয়ে
হারিয়ে গিয়েও লোকটা সবার সামনে আছে হারায়নি...
নীল অসীমের কাছে, আদিগন্ত সাগরের কাছে সে প্রেম ভীক্ষা মাগেনি
কে যেন বলে গেল – চাইতে হয় নইলে হারিয়ে যেতে হয়...

সুপ্রতীক অরূপ