নব আলোকে বাংলা উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।
সম্পাদক পাঠক পরিষদঃ চঞ্চল চৌধুরী, শুভলগ্না শোয়ারা
এবারের
প্রকাশনাঃ দোল – ২০১১
সম্পাদকীয়
ছন্দাবলী – ২৩
হিরোশিমা
নাগাসাকি’র পরে এত বড় ধাক্কা জাপান খায়নি আপনাদের সুপ্রতীক ১৫ই মার্চ ২০১১, ১লা চৈত্র ১৪১৭
***
অনাগতা হোলিকা
*** শালু ও কবি
ভোর হল... দিন শুরু হল... আলো ফুটছে... রামধনু বাজছে... সবুজ মাঠের পারে... কচি ঘাসের ‘পরে... দুটি ভিন্ন গোত্রের পাখী... কথা নেই মিলেছে চার আঁখী... সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
দীর্ঘ নীরবতা। শ্বেত কবুতর মুখ খুলল। বক বক বকম শুরু। শালিখ পাখী আপন মনে শোনে। তারপরঃ
শালিখ পাখীঃ কি ব্যাপার বন্ধু! শান্তি বাবু সাত সকালে এত বকম বকম কিসের! শ্বেত কবুতরঃ এ’রকম তো আমি রোজই করে থাকি শালু! শালিখ পাখীঃ কি?!!! শ্বেত কবুতরঃ এই জান এখন থেকে তোমাকে আমি শালু নামেই ডাকব... আপত্তি? শালিখ পাখীঃ নাহ, আপত্তি কিসের, আমারও বেশ লাগছে শুনে, শালু...(ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ)। আমিও তা’হলে তোমার লম্বা নামটা ছেঁটে দিলাম... শ্বেত কবুতরঃ (আপন উত্তাল হৃয়য়ের ঢেউ শুনে...) কি নাম দিলে আমার তুমি! শালুঃ কবু... কবি... ক্যাবস! কেমন? যখন যেটা মনে হবে তাই ডাকব! শ্বেত কবুতরঃ বাহ। বেশ লাগছে তো... হ্যাঁ হ্যাঁ তাই ডেকো শালু... শালি... শালুয়া। শালুঃ তুমিও কিছু কম যাওনা দেখি! কবিঃ যাইনা তো! আমাকে দেখ। দু’পেয়ে দের সমাজে আমি শান্তির দূত আর আমার মধ্যে যে কবি আছে সেটা তারা কেউ জানেনা, জানতে চায়ও না। অথচ... শালুঃ অথচ কি? কবিঃ অথচঃ আমি কত কি ভাবি! আমার মধ্যে এক প্রেমিক আছে, এক পুরুষ আছে, এক প্রাণ আছে যা’ তুমি আজ সকালে আমাকে ফিরিয়ে দিলে... শালুঃ ফিরিয়ে দিলাম! নিয়েছিলাম কবে? কবিঃ এই দেখ! কথা ধর কেন? ফিরিয়ে দিলে মানে আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলে! ঐ যে একটা গান আছেনা – আমাকে আমার মত থাকতে দাও... না কি... শালুঃ তুমি আবার গানও শোন ক্যাবস? বেশ খাসা আছ দোস্ত... কবিঃ হ্যাঁ গো শালুয়া আমি গান শুনি... ভাল লাগলে দু’এক কলি আমার বকম বকমের মধ্যে ঢুকিয়েও দিই...(গুনগুনিয়ে) আমাকে আমার মত থাকতে দাও... শালুঃ বেশ... এই শোন আজ এই সাত সকালে তুমি শান্তি প্রচারে না গিয়ে হঠাত এই খোলা আকশের নিচে বসে কি করছিলে? কবিঃ নাহ আমি এখন শান্তির দূত নই। এখন সে’ কাজ সঁপা হয়েছে সাদা টুপি পরা আর লাল ঝাণ্ডা মার্কা শান্তি রক্ষকের হাতে। আমি এখন এক প্রাচীন চিহ্ন হয়েই আছি। সেদিন দেখলাম আমার ছবি এক ছেঁড়া খামের ওপরে আর জান...শালু! শালুঃ কি? কবিঃ এক সাদা টুপি এই ময়দানে নামল এসে তার বিদেশী গাড়ি থেকে আর তার প্রথম পা পড়ল আমার ওপরে... আমি গুমড়ে উঠলাম।। কেউ শুনতে পেলনা! শালুঃ মন খারাপ করনা কবি... নালায়ক নাদান ওরা কি জানে তোমার মূল্য! কবিঃ নাহ, এখন মন খারাপ করিনা... করেই বা কি করব বল... এখন আমার সব ভাই বোনেদের জায়গা হয়েছে হয় বড় লোকের ঘরে লৌহ শলাকার পিছনে নয়ত চিড়িয়াখানার খাঁচায়... শালুঃ এই! তুমি কিন্তু কাতর হয়ে পড়ছ... আরে আমাকে দেখনা... আমাকে লোকে কত কি বলে... আমার নাম শালিখ... কেউ বলে শারি, শারিকা আবার কেউ বলে বাদামী ময়না... শালারা ভেবেছে কি? কবিঃ বল বল বল তোমার কথা বল শালু... ধ্যাত আমি কেবল আমার নিজের কথাই ভাবছিলাম... ধিক আমাকে... শালুঃ না না সে’রকম কিছু নেই আমার বলার। তবে ঐ বাদামী ময়না নামটা আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ফেলে দেয় বলে মনে হলে খুব কষ্ট হয় জান কবু! কবিঃ বুঝি শালু আমি বুঝি তোমার মনের অবস্থা... আচ্ছা আমি যে তোমাকে শালু বলে ডাকলাম তুমি তা’তে কিছু মনে করনি তো শালু? শালুঃ এই যে হাঁদারাম বেকার শান্তির দূত আমি কিছু মনে করলে কি আর বলতাম – আমার বেশ লাগছে শালু নামটা শুনে? বলি আজকাল কি খাও না কি খাওয়া দাওয়াও জোটেনা ঠিক মত? কবিঃ ও হ্যাঁ আমারই ভুল শালু... আমারও খুব ভাল লাগছে জেনে...যে তোমার ভাল লাগছে শালু নামটা! শালুঃ কি হাল করেছ নিজের খেয়াল আছে? কবিঃ কি হাল করেছি আবার? শালুঃ আবার? তুমি কি মনে কর আমি কিছুই দেখিনা? কবিঃ কি দেখ তুমি শালুয়া? শালুঃ তোমার দুধ সাদা অঙ্গে এখন ধূসর প্রলেপ পড়েছে... কেন? শান্তি রক্ষার ঠিকাদাররা কি করল না কি বলল তাই বলে নিজের মাহাত্ম্য কেন শেষ হতে দেবে কবু? কবিঃ ঠিক বলেছ তুমি শালু... আমাকে তো ইশ্বর পাঠিয়েছেন এই ধরায় – আমার কাজ হল শান্তির প্রতীক হয়ে সকলের মনে বিরাজ করা আর আমিই কিনা নিজের যত্ন নিতে পারিনি!!! শালুঃ যাক। আর দুঃখ নয়। চল একটু হালকা করে উড়ে আসি আর বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে আসি। এই ভিক্টরিয়া ময়দানে এই সাত সকালেই কি পলিউশ্যান দেখ ... দম বন্ধ হয়ে আসছে! কবিঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছ শালু – চল! শালুঃ আমার যে কি ভাল লাগছে কবি তোমার পাশে পাশে উড়তে কি বলব... কবিঃ আমারও খুব ভাল লাগছে মনটা ভাল করে দিলে তুমি শালু... তোমাকে কি উপহার দিই বলত... শালুঃ উপহার? আমি চেয়ে কিছু নিইনা যে কবি... আমার অনেক আছে... আমি তোমাকে পেয়েছি বন্ধু হিসেবে সেই আমার সবচেয়ে বড় উপহার... কবিঃ শালু তুমি এত সুন্দর, এত নির্ম্মল তোমার অন্তর আর আমি তোমাকে কত নতুন করে চিনছি আজ... আমরা একই আকাশে উড়ি কিন্তু কতটুকু চিনি বল প্রাণের দোসরকে! শালুঃ তাইতো আজ সকালে ঈশ্বর তোমাকে এই মাটিতে নামিয়ে এনেছেন। না হলে তো রাজভবনের উঠোনে এতক্ষণ সরকারী দানাপাণি কাড়াকাড়ি করতে হত... কবিঃ হ্যাঁ ভাল লাগেনা জান... এই বচ্ছরকার একদিন আমাকে বা আমার জাত ভাইদের কাউকে নিয়ে গিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিয়ে কোনও এক সরকারী দালাল হাততালি কুড়োয় আর আমার তখন ক্ষিদে পেয়ে গেলেও আকাশে উড়তে হয়... সে’বার... শালুঃ সে’বার কি? কবিঃ সে’বার জানুয়ারি মাসে আমার পালা ছিল – আমার সঙ্গে আরও ৫৮ জন ছিল – আমরা একটা বিশাল খাঁচায় ছিলাম। সকালবেলা নামল ঝিরঝির করে শেষ শীতের বৃষ্টি – দেরী হল অনেক – কেউ একবারের জন্যে ভাবেও নি আমাদের কথা! ক্ষিদেয় মাথা ঘুরছে... তার পর শালুঃ তার পর কি হল? কবিঃ তার পর যেই না আমাদের ডাক পড়েছে আমি তক্কে তক্কে ছিলাম আজ একটা কিছু করে বুঝিয়ে দিতে হবে... শালুঃ কি? কবিঃ বুঝিয়ে দিলামও... যেই খাঁচা খুলে আমাকে ধরতে এসেছে আমি সেই ঝালর টুপি পরা আর্দালীকে দিলাম হাতের মধ্যে ঠুকরে... অমনি আমি বাদ হয়ে গেলাম সেই অনুষ্ঠান থেকে... এখন শালুঃ এখন কি কবি? কবিঃ এখন আমি কি করে দিন চালাই সে’সব কে আর খবর রাখে... আমি হলাম বাগী ও বেকার একটা সাধারণ পায়রা...সাদা রঙ ধূসর হয়েছে স্মৃতির অতলে... শালুঃ চল এবারে একটু নামি... ঐ দেখ কি সুন্দর সবুজ নিচে ... চল ওখানে কিছু খেয়ে নেওয়া যাবে কবি... কবিঃ হ্যাঁ চল... শালুঃ জান আমার খুব মজা লাগে যখন দেখি আমাকে একা দেখলে কেউ ফিরেও তাকায়না! আমি যদি আমার আরেক ভাই বা বোনের সঙ্গে থাকি তবে নাকি মানুষের ভাল হয় আর আমি একা থাকলে নাকি দুঃখের... ঐ দু’পেয়েরা বলে এমনটাই... কবিঃ এটা’র মানে কি? শালুঃ মানে টানে জানিনা... তবে এ’রকমটাই ওরা মেনে থাকে যেনে রাখ তুমি... কবিঃ ওহ তাহলে আরও জানতে ইচ্ছে করছে... তুমি কি মিষ্টি করে কথা বল রেগে গেলেও বল... তুমি সত্যিই সুন্দর শালু... শালুঃ আরও শোন... আমরা তিনজনে একসঙ্গে থাকলে নাকি ঐ দু’পেয়েদের বাড়িতে চিঠি আসে... আর চারজন থাকলে না কি চরম সর্বনাশ...! কবিঃ কি রকম? শালুঃ আমরা চারজন একসঙ্গে থাকলে না কি বাড়িতে অনেক অতিথি আসে... ওরা বলে এমনটাই... কবিঃ বুঝলাম কিন্তু অতিথি আসা তো ভাল... সর্বনাশের কি দেখলে তুমি শালুয়া? শালুঃ বাহ রে তাই ত হবে - তাই না? আগেকার দিনে লোকে বলত – ‘অতিথি দেবঃ ভবঃ – আর এখন বাড়িতে অতিথি আসলে প্রথমে খরচের চিন্তা তার ‘পরে হল কে নেবে এত হ্যাঁপা... অতিথি সরকারের কাজ? তারপর যদি সেই অতিথি যদি খুব একটা কাজে না লাগে তবে তো আরও সর্বনাশ কারণ খরচটাই এক্কেবারে জলে... কবিঃ কি বলছ তুমি শালু!!! শালুঃ হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি... আমিতো কার্ণিশ আর ঘুলঘুলিতেই জীবন কাটিয়ে দিলাম কবি আমি এই দু’পেয়েদের খুব কাছ থেকে দেখেছি – তোমার মত খাঁচাবন্দী হয়ে দুরের আরামে নয়... এই তুমি দুঃখ পেলে বন্ধু? কবিঃ না না তুমি তো ঠিকই বলেছ... শালুঃ অবশ্য বাদামী ময়না হয়ে আমাদের কেউ কেউ আজকাল খাঁচায় জায়গা পায় তবে আমরা হলাম আম জনতা – সর্বহারার দল যাদের শৃংখল ছাড়া হারাবার কিছুই নেই! কবিঃ এই শালুয়া তুমি তো ঐ আলিমুদ্দিনের গান গাইছ ... কি ব্যাপার? শালুঃ আরে না না কোনও ব্যাপার নেই... আমরা ঐ আমদানী করা বুলি বলিনা ... আমাদের জীবন আমাদের গল্প বলে দেয়... আর আজকাল তো আলিমুদ্দিনের সর্বহারাদের অনেক প্রতিপত্তি আর সম্পদ... কবিঃ হ্যাঁ এ’রকম আমিও শুনেছি...তবে কে সেই দলে নেই বল? কেউ ধরা পড়ে গেছে আর কেউ এখনও সেই জালের বাইরে আছে... ধরা পড়তেই হবে... সততার প্রতীক কথাটা রাজনীতির ঠিকাদারদের অভিধানে নেই শালু... এটা মেনে নাও... শালুঃ হ্যাঁ! আমি রোজ ঘুলঘুলি দিয়ে বোকা বাক্সে যা’ সব দেখায় সবই দেখি... কোন সর্বহারার কত সম্পদ – আর কোন সততার প্রতীক কত স্বচ্ছ সবই দেখি... কত্ত সব ঘোটালা তোমাকে আর কি বলব... কবিঃ আচ্ছা শালু আমরা কি আমাদের অন্তরকে মলিন করে তুলছিনা এই সব বেকার আলোচনা করে... তার চেয়ে এস আবার... শালুঃ আবার কি? কবিঃ আবার আমরা বিশাল ঐ নীলে ফিরে যাই... আমাদের সব জ্ঞাতি ভাই বোনদের ডেকে নিই আর ... শালু ও কবিঃ গান গাই ডানা মেলে দূরে নীলে মন খেলে পাখী কূল বাঁচুক উড়ে ডানাসুখ থাক মন জুড়ে
***
* প্রবন্ধ * Best view with Microsoft Internet Explorer Font download link: http://omicronlab.com/download/fonts/SolaimanLipi_20-04-07.ttf |