সে অজয় কিংবা কথারূপ। অথবা তার কোনো নাম নেই,
সে কালো-আলো একজন। তাকে তো ভালোবাসতে পারি আমি। তার
প্রতি সম্পৃক্ত হতেই পারি।
সম্পৃক্ততা আজীবনের হলে আজীবন পূজা সমর্পণ।
সমর্পণই প্রেম।
প্রেমই সৃষ্টি করে জল-হাওয়া,
মেঘ-বৃষ্টি-ঝড়। প্রেমই সৃষ্টি করে শুশ্রুষা। প্রেমই পথ
দেখায় গোপন ক্ষতের। চুঁইয়ে পড়ছে বেদনা।
বেদনা কি গো,
এই
প্রশ্নেই থাকে সৃজন-ক্রিয়া। কৌতুহলী ও জিজ্ঞাসু না-হলে ব্যথা-বেদনা জানা
যেমন যায় না,
তেমনি মাগুর ও
ঢ্যাং মাছের চোখকেও জানা যাবে না। গাভীর করুণ চোখকেই ক’জন
জানে। আমার তো মনে হয়,
গাভীর চোখেই থাকে জগতের ভাঙা-গড়া।
এই মাঘ শেষের শীত শেষের চলে যাওয়ার কষ্ট অনুভব করতে করতে মনে হয়েছিল চলে
যাই শরবেড়িয়া বিগুড়ি মৌতড়। শীত চলে যেতে আরেকবার দেখি,
আমার
গ্রামদেশের ঘর-বাড়ি,
গাছপালা,
ক্ষেত-প্রান্তর এবং হাড়াই নদীর শীর্ণতা। আমার যে প্রেম
আছে না-ফুটে থাকা কুঁড়িতে। আমি যে চাই না-ফোটার সঙ্গেও কথা।
নীলের কাছে চলে গেলে হয়,
তখনই
অনির্বান দাসকে মনে পড়লো। ক’দিন
আগে নীল,
ক’দিন
আগেই মেলা মানুষ। মিলনে ছিলাম।
মিলনই কাব্য -কথকতা। মিলন নেই বিরহ। মিলন নেই যুগলরূপ হারিয়ে যায়।
যুগলরূপই মহাকাব্য। যদি মিলনের আর্তি না থাকে,
কবিতা নেই। প্রেম নেই।
প্রেম নৈঃশব্দ্যের এক ভাষা। প্রেম এক বিমূর্ত রূপ। এখানে আইন-আদালত,
রাষ্ট্রচক্ষু কেউ নেই। কেউ থাকতে পারে না। এবং প্রেম কবিতাও। কবিতা
কথনও রাষ্ট্রশক্তির কাছে নত নয়। মেরুদন্ড নুইয়েও ফেলবে না। যদিও আমরা
দেখতে পাই,
দেশে কালে কালে,
রাষ্ট্র
চেয়েছে কবি-শিল্প-বুদ্ধিজীবীদের ক্রয় করতে। কেউ কেউ বিক্রিতা হয়। কেউ
কেউ নিজেকে বিক্রি করে,
পুরস্কারে আহ্লাদে ধন্য হয়।
আমি ফুলের কাছে ধন্য হবো। মানুষের কাছে মানুষ হয়ে ধন্য হবো। আমি তোর
কাছে অভি,
ধন্য হতে
চাই,
তোর কাছেও। তোর চোখের জলে আমার আকাশ দেখি।
মন্থর প্রান্তিক প্রবাহ অপু সুলগ্না যাদের নিয়ে যাদের নিঃশ্বাসে বৃত্ত
গড়ে ওঠে এবং যে-বৃত্তে কথারূপ কথামৃত হয়,
আমি
দেখতেও পাই,
পৃথিবী আমার জননী হয়ে আমাকে কোল দিতে ডাকে।
পিতা নেই,
ভাই নেই,
ভগ্নি
নেই,
স্ত্রী নেই,
স্বামী
নেই,
পুত্র-কন্যাও
নেই আছে কেবল জননী। জননী সকলে নয়। কিন্তু
‘জননী
ভাবনা’
যেন থাকে আমাদের।
জননী যে প্রকৃত মা,
শেষ দিনেও কোল দেয়। জননী যে বহুরূপা তিনি জল হয়ে মেঘ হয়ে ঘাসফুল হয়েও
জননী। প্রেম কবিতা।
পৃথিবী কখনও শূন্য নয়-শূন্যতা তৈরি করে মানুষ। তাই নেগেটিভ বলে কোনা কথা
নেই শব্দ নেই। সবই সুন্দর। সুন্দরতার দিকে,
সৌরভের দিকে যাত্রা করতে চাই।
তোর কাছে যাওয়া,
প্রতি
মুহূর্ত যাওয়া। তুই আমাকে ছিড়ে ফেললেও যাওয়া। বাতাস বহে মরি,
মরি তরী
বাঁধা থাকবে না রে,
তোর নিকট আমি যে যাই।
নিষেধ কে শুনছে,
আমি যে নিঃশ্বাস নিঃশ্বাস রেখে তোর পাশে ঘুমোবো। রচনা
করবো আমার এলোমেলো জীবনের প্রেম-পংক্তি।
একই পংক্তিতে বসতে চাই,
বসাতে
চাই মাহাত-মুড়া,
রজক,
পরামানিক
বাউরি,
বামুন,
তেলি
শুঁড়ি-হাঁড়ি। এসো এসো সর্বজন,
সজনে ফুলের সুবাসে ভাত মাখো। হাসো।
হাসিতে হাসিতে ভরে উঠুক মন।