নব আলোকে বাংলা
উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।
সম্পাদক
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
পাঠক পরিষদঃ চঞ্চল চৌধুরী, শুভলগ্না শোয়ারা
প্রকাশকালঃ ২০শে এপ্রিল ২০২০
টরোন্টো, কানাডা
*
সম্পাদকীয় ছন্দাবলী - ৩০
মানুষ ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
এই দাবী তো মানুষেরই। পৃথ্বী 'পরে লক্ষ কোটী প্রাণী আছে। তাদের কেউ এই দাবী করেছে
কখনও? কারণ তারা কথা বলতে পারেনা। কে বলল? তাদের ভাষা বোঝার বিজ্ঞান যদি সব মানুষ
জানত তাহলে আর এই প্রশ্ন থাকতোনা। জানি আপনি মনে মনে বলছেন – “কি বোকা বোকা…” মানুষ
ছাড়া অন্য কোনও প্রাণী একে অপরকে হত্যা করেনা আত্মরক্ষার কারণ ছাড়া। আচ্ছা বাঘেরা
কিম্বা হরিণেরা কেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি নয় ! সিংহ ক্ষিদে না পেলে অন্য প্রাণী বধ করেনা।
সে কেন শ্রেষ্ঠ নয়? পৃথিবীর কোনও প্রাণী অপরকে লোভের দাস হয়ে মারেনা। মানুষ মারে
মানুষকে, হিংসা, লোভ, ঈর্ষা বা ক্রোধের বশবর্তি হয়ে। মানুষ অন্যের মুখের, এমন কি
ক্ষুধার্তের মুখের গ্রাস কেড়ে জমিয়ে রাখে নিজের জন্য। আজকের সম্পাদকীয় এক ছন্দহীন
হারানো প্রকাশ। আমরা ছন্দ হারিয়েছি। আমরা প্রকৃতির উপর অনেক অত্যাচার করেছি
নির্লজ্জ ও নির্মম ভাবে। করোনা বা কোভিড ভাইরাস সপাটে একটা থাপ্পড় মেরে ঘরে বসিয়ে
দিয়েছে মানুষ নামক দু’পেয়ে প্রাণীদের। মৃত্যুভয়। এক চড়ে মৃত্যুভয়। এমনটা শুনেছেন
কি, বাঘ সিংহ হাতী, পথ কুক্কুর, কোনও পাখী বা অন্য কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে
করোনার জন্য? না। পাবেনও না।
মানুষ শোধরাবে কি না সেই জানে।
মানুষ যদি তার ভুল অন্যায় না মানে।
মানুষ যদি ঘুরে না দাঁড়ায়?
মানুষ নামক প্রাণী থাকবে কি না
আমরা কেউ জানিনা।
এ’টুকু জানি ও বিশ্বাস রাখি, মানুষই পারে
মেরুদন্ড ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগ করে
পৃথিবীকে আবার সুন্দর করে
বাসযোগ্য করে তুলতে পারে
নব আলোকে নব আশায়
আমরা থাকি প্রত্যয়ের বাসায়…
আপনাদের
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
২০শে এপ্রিল, ২০২০
*
এবারের প্রকাশনার সূচীপত্র
*
কবিতা
বৈশাখী করোনা
শিশুদের বাসযোগ্য হোক পৃথিবী
প্রেম
*
প্রেমপত্র
*
জীবন দর্শন
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদাসীন এর আশ্রয়ে "করোনা জনিত লকড ডাউন" এর
দিনগুলির এক দুপুরে... হঠাত আমি...
***
কবিতা
*
বৈশাখী করোনা
কালপুরুষ
তোমার ভয়ে গুটিয়ে আছি বৈশাখে আজ ইলিশ ছাড়া,
তোমার ভয়ে মাটির সানকি পান্তাভাত আর শুঁটকি হারা।
হয়নি আঁকা আলপনা আজ তোমার গালে রঙ
তুলিতে,
মনে মনেই আঁকছি হাজার
খুশীর ছবি কল্পনাতে।
ঢোলের তালে নাচবো না আজ
বৈশাখে তাই বৈরাগী সাজ,
একতারাটাও বাঁধিনি সুরে
বাউল গানেও মনটা পুড়ে।
বোশেখ এলে নতুন সাজে
থাকতে তুমি সকল কাজে
সাধতে গলা গানের সুরে
কেউ কখনও থাকিনি দূরে।
হঠাৎ এবার পহেলা বৈশাখ
পাল্টে দিল সবার ভাবনা,
ঘর হলো আজ পাগলাগারদ, করোনা ভয়ে রয়েছি
পাবনা।
পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭
***
শিশুদের বাসযোগ্য হোক পৃথিবী
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
স্প্যানিশ ফ্ল্যু’র পরে
করোনার পথ ধরে
একশ’ বছর পরে
আবার এসেছে কুড়ি
প্রার্থনার আছে জোর
হাসবে প্রতিটি কুঁড়ি
শিশুরা বাঁচবে হাসবে খেলবে তত
যেমন হাসে ফুলদল প্রতিনিয়ত
এই পৃথিবীতেই আবার আসা
আস্থা ও বিশ্বাসের আশার ভাষা
প্রার্থনা হয়ে বইবে নতুন বাতাসে
পাখীরা আবার ফিরবে নীল আকাশে
মন খারাপ করনা মন
তুমি আমি পারি যখন
একশ’ বছর পরে,
আবার এসেছে কুড়ি
প্রার্থনার আছে জোর,
হাসবে প্রতিটি কুঁড়ি…
***
*
*
প্রেম
প্রণব আচার্য্য
এখন অন্ধকার; মানুষের সব রঙ মুছে
যাবে।
ঘনায়মান অন্ধাকারে জিয়ন কাঠির আভা নিভে যাবে।
অস্তমান গোধূলি শেষ হলে ফুলের সৌরভের মতো
কোন কোন প্রেমিকার মতো
অন্ধকার উঠবে ভরে মানুষীর ঘ্রানে—মানুষের ঘ্রাণে
এখন সমুদ্রে আঁধার—
প্রেয়সীর থৈ থৈ জলে জ্যোৎস্নার আকাঙ্ক্ষা
এখন রাত্রি—
ভীষণ রাত্রি রমনীর চুলের দৈর্ঘ্যের বিস্তীর্ণ ভাঁজে
এখন সময়—
মানুষ আর মানুষীর সন্তর্পণ আলিঙ্গনের অদ্বৈত একীভবন
***
প্রেমপত্র
সকাল রয়
মিলি,
আজ বৃষ্টি নেই। আকাশে কোন তারাও নেই, কোথায় যেন গেছে
ওরা। হয়তো আজ ছুটি পড়ে গেছে ওদের তাই বেরুতে গেছে। চারপাশে থমথমে ভাব। ঘরে ফিরে
জানালা খুলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম তবুও হাওয়া এলো না। কৃত্রিম হাওয়াটাও বন্ধ হয়ে
আছে। ইলেকট্রিসিটি নেই। কদিন ধরেই এমন ইচ্ছে, রোজ রাত্তিরে মেঘ ডাকলেই হাওয়া হয়ে
যায় সে।
অনেকদিন পর পুরোনো সেই গ্যাসের বাতি জ্বাললাম আজ। অনেক
কাজ বাকী পড়ে আছে, তাই ভাবলাম আলো ফিরবার আগে ঘরটা অন্তত গোছাই। ঘর গোছাতে গিয়ে
দেয়ালে টাঙ্গানো পুরোনো একটা পেইন্টিং এর দিকে চোখ আটকে গেলো। পেইন্টিংটা অরজিনাল
নয় রেপ্লিকা তবুও আশ্চর্য রকমের একটা দ্যুতি আছে। অপরিচিত অঙ্গনার খসে পড়া কাপড়ের
ভাজে বাঁধা চুল, আর উন্মুখ পিঠের উঠোন ভেসে আছে পেইন্টিংটা। প্রথম দেখাতেই ভালো
লেগেছিল তাই কিনেছিলাম। আজ ওটাতে চোখ রাখতেই মনে হলো তোমার চুলের মতোই একটা চুলেল
আভাস আছে পেইন্টিংটায়।
বছর দুয়েক আগে ঋষিকোন্ডা সৈকত দেখতে যাচ্ছিলাম কয়েকজন
মিলে। হাওড়া ষ্টেশন থেকে বিশাখাপট্টমে যাবো, তাই তিরুপতি এক্সপ্রেসে উঠেছিলাম।
ট্রেন থেকে নামার পর এক মাঝবয়সী লোকের হাতে দেখতে পেলাম তারপর দর কষাকষি অতঃপর
কেনা। ঋষিকোন্ডার ‘দ্যা পার্ক’ হোটেলে বসে পেইন্টিংটি নিয়ে ভেবেছিলাম যে, কোন
অনুষ্ঠানে এটা কাউকে গিফট দিয়ে দেব। কিন্তু সে হয়নি। আজ মনে হলো না দিয়ে ভালোই
হয়েছে। থেকে যাক আমার কাছেই। মাঝে মাঝে কল্পনা করা যাবে।
গত দুদিন আগে তোমার চিঠি পড়ে কয়েকবার ভেবেছি উত্তর লিখে
ফেলবো কিন্তু হয়নি। একটা ছোট্ট ঘটনা আমাকে ভাবিয়েছে অনেকক্ষণ। আমি যাদের শ্রদ্ধা
করি, পছন্দ করি তারা সময়ের কালক্ষেপণে অজানা কারণে আমার কাছ থেকে একসময় দূরে চলে
যায়। কোন একদিন সেটা বুঝতে পেরে ফিরে আসতে গিয়ে দেখে সে পথটা অস্পষ্ট হয়ে আছে! কেন
যে এমনটা ঘটে, তা বুঝে উঠতে পারছি না। কিছু লোক আমার আড়ালে আমার গুন কীর্ত্তন করে
বেড়ায় সে বিষয় আমার আর কোন মাথাব্যথা নেই। এ চিঠি লিখতে গিয়ে তাই মনে পড়ছে রবি’র
গীতাঞ্জলীর কয়েকটি পঙতির কথা
লোকে আমায় নিন্দা করে,
নিন্দা সে নয় মিছে-
সকল নিন্দা মাথায় ধরে
রব সবার নীচে
শেষ হয়ে যে গেল বেলা,
ভাঙল বেচা কেনার মেলা-
ডাকতে যারা এসেছিলো
ফিরল তারা রোষে।
---- গীতাঞ্জলী
যারা আমার নিন্দে করে আমি মনে করি তারাও আমার বন্ধু,
আমার স্বার্থকতা সেখানেই, এই যা, নিন্দে করে হলেও ওরা আমার কথা মনে করে রেখেছে।
আজকাল এক একবার ভাবি শামুকের মতো করে আর কতোকাল নীরবতা নেব এ বুকে? একবার গঙ্গাফরিঙ
হয়ে যাই। একটু না হয় ছুটে চলি পাখির মতো। আবার এসব কথা মনে করে নিজেই হেসে চলি কি
ভাবনার খেয়াল আমার। সময় যখন পেয়ে গেছি এবার কদ্দিন নিজের ইচ্ছে মতো করে লিখে পাতা
ভরে ফেলবো। জানিনা তা সম্ভব হবে কি-না!
মিলি, তোমাকে গত চিঠিতে বলেছিলাম জীবনকে উপভোগ করতে
শেখো। এভাবে নিজেকে হারিয়ে দিওনা। হয়তো কথাগুলো তোমার মাথায় আছে, তবে তা যে কতটুকু
তুমি মেনে চলেছো তা কিন্তু বুঝতে পারছি না। আমি না হয় উদাস পথিক। তারপরও নিজেকে
নিয়ে ভাবি। যদিও আমি কষ্ট নামক চারা গুলোকে অতি যত্নে পরিচর্যা করে বড় করে তুলি।
অজানা কোন কোন কারণে তাকে লালন করি। তবুও কিন্তু আমি প্রতিদিন হাসতে ভুলি না। তুমি
কি জানো না ‘কষ্ট নামক কান্নার পাতাটিকে রঙ্গীন হাসির পাতায় ঢেকে রাখতে হয়’। আনন্দ-
কষ্ট হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যেন পরস্পর-পরস্পরের বন্ধু।
আমি হলাম সকালের মতো প্রতিটি সূর্যোদয়ের প্রথম অনুভবে
আমি মিশে থাকি তোমাদের চোখের মাঝে, আমাকে প্রতিদিন কষ্টানন্দ মুদ্রা নিয়ে দিন শুরু
করতে হয়। প্রতিটি মানুষের জীবনে আনন্দের অনেক চেক থাকে তা সঠিক ভাবে খরচ করতে
পারলেই দুঃখ ব্যাংকে আর তার সুদ গুনতে হয় না। মিলি তুমি অল্পতেই হেরে যেও না কখনো।
আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানুষের মাঝেই সফলতা ব্যর্থতা আছে। তোমাতে যা আছে তা
তোমাকে একদিন আলোড়িত করে তুলবে।
মিলি, রাত অনেক হয়ে এলো চিঠি শেষ করতে হবে এবার। তার আগে
নজরুলের সেই কবিতার লাইন গুলো বলতে ইচ্ছে করছে, কারণ কাল তুমি বলেছিলে আমরা সবাই এই
গ্রহ ছেড়ে একদিন চলে যাবো। দু-বেলার যতো কথা-অপকথা বেড়ে উঠছে, ধীরে ধীরে তা,
একদিন,থেমে যাবে। কারো কারো আগে কেউ কেউ চলে যায়। যদি তোমার আগে যাই চলে তাহলে আমিও
কবির মতো বলে যাবো,
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার বন্ধন-
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন।
শিউলি ঢাকা, মোর সমাধি
পড়বে মনে, উঠবে কাঁদি। ----- অভিশাপ
মিলি দেখো চিঠি পড়ে আবার চোখের জল ফেলো না। এমনিতেই
তোমার কাছে আমি বড্ড ঋণী হয়ে গেছি। আর আমায় ঋণী করোনা। জানো তো সবচে শান্তি হলো
সরলের মতো করে সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসা।
মেঘ ডাকছে। কোথায় যেন বজ্রপাত হলো। রাত এখন মধ্যবর্তী।
ঘুমুতে যাই আজ। ভালো থেকো। নিজের মতো করে।
শেষান্তে - রয়
***
জীবন দর্শন
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদাসীন এর আশ্রয়ে "করোনা জনিত লকড ডাউন" এর দিনগুলির এক দুপুরে... হঠাত আমি...
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
আমার সাংস্কৃতিক জীবনে রবীন্দ্র
নাথের “উদাসীন” একেবারে প্রথমদিকের আকর্ষণ। এখনও সমান ভাবে আমাকে কেড়ে নেয় অনেক
কবিতার কাছ থেকে। এই কবিতা আমাকে রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রথম নিয়ে এসেছিল – তখন
বয়স, বছর বারো হবে। ইতিমধ্যে কয়েকশ’ বার আমি উদাসীন আবৃত্তি করেছি। আজ যখন সারা
পৃথিবী গৃহবন্দী তখন সেই উদাসীন আবার ফিরে এল আমার কাছে কিম্বা এটাই বলা ঠিক যে,
আমি ফিরে গেলাম উদাসীন এর কাছে বুকের পাঁজর ভাঙ্গা কিছু প্রশ্ন নিয়ে। সত্যিই কি
হাল ছেড়ে বসে থাকা সম্ভব? তবুও অসহায় উদাসীন আমি।
হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি,
ছুটি নে কাহারো পিছুতে।
মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই
কিছুতে।
নির্ভয়ে ধাই সুযোগ-কুযোগ বিছুরি,
খেয়াল-খবর রাখি নে তো কোনো-কিছুরি--
উপরে চড়িতে যদি নাই পাই সুবিধা
সুখে পড়ে থাকি নিচুতেই,
থাকি নিচুতে।
হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি
ছুটি নে কাহারো পিছুতে--
মন নাহি মোর কিছুতেই,
নাই কিছুতে।
জানি মনুষ্য জাতির বাঁচার তাগিদে, আমার নিজের বাঁচার
তাগিদে, আবার সব কিছু স্বাভাবিক করার তাগিদে ঘরে বন্দী থাকাই উচিত এবং তাইই করছি।
কিন্তু ওদের কি হবে? যারা দিন আনে দিন খায়। আজ ২৫ দিন হল এক পয়সা রোজগার নেই। না
খেয়ে আছে যারা। যারা খেতে পাচ্ছেনা, ঘরের শিশু ও পরিবারকে খেতে দিতে পারছেনা তারা
কি করে ঘরে বসে থাকবে? যেথা সেথা ধেয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সামনেই মৃত্যু, বিষ বিপদ
করোনার হুঙ্কার। মন আমার ধাইছে ভাবনার এ’কোণ থেকে ও’কোণ…
যেথা-সেথা ধাই, যাহা-তাহা পাই—
ছাড়ি নেকো ভাই, ছাড়ি নে।
তাই ব’লে কিছু কাড়াকাড়ি ক’রে কাড়ি নে।
যাহা যেতে চায় ছেড়ে দিই তারে তখুনি,
বকি নে কারেও, শুনি নে কাহারো বকুনি—
কথা যত আছে মনের তলায় তলিয়ে
ভুলেও কখনো সহসা তাদের নাড়ি নে।
যেথা-সেথা ধাই, যাহা-তাহা পাই—
ছাড়ি নেকো ভাই, ছাড়ি নে।
তাই ব’লে কিছু তাড়াতাড়ি ক’রে কাড়ি নে।
সত্যিই কি হাল ছেড়ে বসে আছি? এ’ কি হাল ছেড়ে বসে থাকার
সময়? যাহা তাহা পাই তা ছেড়ে দেবার বা কুড়িয়ে নেবার নয়। যা কিছু চলে যেতে চায় তা
হয়ত চলে যাবে এই কোভীড১৯ এর ঝড়ের মধ্যে দিয়ে কিম্বা তার পরে। যা থাকার থা থেকে
যাবে আরও শক্ত মন বন্ধনীতে আর থেকে যাবে ভালবাসা। এই বিশ্বাস নিয়ে অলস সময়ে
উদাসীন হওয়া…
মন-দে'য়া -নে'য়া অনেক করেছি,
মরেছি হাজার মরণে--
নূপুরের মতো বেজেছি চরণে চরণে।
আঘাত করিয়া ফিরেছি দুয়ারে দুয়ারে,
সাধিয়া মরেছি ইঁহারে তাঁহারে উঁহারে--
অশ্রু গাঁথিয়া রচিয়াছি কত মালিকা,
রাঙিয়াছি তাহা হৃদয়-শোণিত-বরনে।
বসন্তের রক্ত লাল রোমাঞ্চ যখন আকাশে বাতাসে মুখরিত হতে
চাইছিল ঠিক তখন? তখন এই ছুটি কে চেয়েছিল! কে চেয়েছিল হাতের কাজ খুইয়ে ঘরে বসে
ছুটি কাটাতে? কে কবে ভেবেছিল এই ছুটি অনন্ত কাল ধরে পেটের জ্বালার দুশ্চিন্তার
সঙ্গে সহবাস করবে? তবুও গৃহবন্দী জীবন এখনও চলেছে তাই মাঝে মাঝেই মনে হয় দীর্ঘ
অপেক্ষার পর এই ছুটির খুব দরকার ছিল, দরকার ছিল ছেলেবেলার খেলাঘরে ফিরে যাওয়ার …
এতদিন পরে ছুটি আজ ছুটি,
মন ফেলে তাই ছুটেছি;
তাড়াতাড়ি ক’রে খেলাঘরে এসে জুটেছি।
বুকভাঙা বোঝা নেব না রে আর তুলিয়া,
ভুলিবার যাহা একেবারে যাব ভুলিয়া—
যাঁর বেড়ি তাঁরে ভাঙা বেড়িগুলি ফিরায়ে
বহুদিন পরে মাথা তুলে আজ উঠেছি।
এতদিন পরে ছুটি আজ ছুটি,
মন ফেলে তাই ছুটেছি।
তাড়াতাড়ি ক’রে খেলাঘরে এসে জুটেছি।
এই বসন্তে ফুলের সমারোহ চোখে পড়তে না পড়তেই ফুটেছিল
বিষ বিপদের ফুল –করোনা। সেই থেকে ঘরবন্দী মন হুতাশনে ডুবে আছে…
কত ফুল নিয়ে আসে বসন্ত
আগে পড়িত না নয়নে--
তখন কেবল ব্যস্ত ছিলাম চয়নে।
মধুকরসম ছিনু সঞ্চয়প্রয়াসী;
কুসুমকান্তি দেখি নাই, মধু-পিয়াসী--
বকুল কেবল দলিত করেছি আলসে
ছিলাম যখন নিলীন বকুল-শয়নে।
দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘেরায় আছে শরীর আর মন ছুটে চলেছে
দিকবিদিক জ্ঞ্যান শুন্য হয়ে কিন্তু সেই জাগতিক চাহিদার ফর্দ ভুতের রাজার মত নাচছে
। জাগতিক বাস্তব পিছু ছাড়েনা। জোর করে কিছু পাওয়া যায়না তাই ওপরে ওঠার সাধ
দিয়েছি জলাঞ্জলী , ঠিক তখনইমন ছুটে চলেছে দূর দুরান্তরে…
দূরে দূরে আজ ভ্রমিতেছি আমি,
মন নাহি মোর কিছুতে;
তাই ত্রিভুবন ফিরিছে আমারি পিছুতে।
সবলে কারেও ধরি নে বাসনা-মুঠিতে,
দিয়েছি সবারে আপন বৃন্তে ফুটিতে--
যখনি ছেড়েছি উচ্চে উঠার দুরাশা
হাতের নাগালে পেয়েছি সবারে নিচুতে।
আপাতত ত্রিভুবন আমার পিছে না আমি তার পিছে এই ভাবনা আমার
মাথায় ঘুরছেনা। ফিরে দেখা খুব দরকার। নিজের কাছে ফেরার সময় পেয়েছি লক ডাউনের
দীর্ঘ দিনগুলি জুড়ে। মনের আয়নায় রিফ্লেক্ট বা প্রতিফলন অবচেতনে। এর মধ্যেই নতুন
ভাবনার জন্ম। নতুন মননেরও। মন দে’য়া নে'য়া অনেক না করলেও করেছি তাই লাট্টুর
লেত্তির ছেঁড়া সুতো কোথাও কি অবহেলায় পড়ে নেই? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিনি কখনও…
যা আমাকে ভাবাচ্ছে তা’ মারাত্মক এক দুশ্চিন্তা। হাল
ছেড়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই যতদিন না আবার চলাফেরা স্বাভাবিক হচ্ছে।তাই এই অলস
শিথিল সময়ের পিঠে চেপে বসে পড়ি। নতুন কিছু করি যা আগে করিনি। ঘরে থেকে লক ডাউন কে
স্বল্পায়ু করে তুলি...
***
*
এবারের ই-বুক
প্রবন্ধ
নবমী
গল্প বিংশতি
মুহূর্তমন্দিরা -কাব্যসঙ্কলন
*
*
আর্কাইভ
***