কবিতা ভাবনা

মূলঃ এজরা পাউন্ড অনুবাদঃ তারিক টুকু

 

 

 

  

  

 

[ এজরা পাউন্ড (১৮৮৫-১৯৭২) কবি, সমালোচক, সম্পাদক, অনুবাদক হিসেবে বিশ শতকের আমেরিকান ও বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। তার সময়ে ইংলিশ ও আমেরিকান সাহিত্যের আধুনিকতা, সাহিত্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা , অ-পশ্চিমী এবং প্রাচীন সংস্কৃতির নানাদিককে কবিতায় নিয়ে আসা এবং প্রথা-জাড্যকে নির্মমভাবে অস্বীকার করার প্রধান প্রবক্তা ছিলেন তিনিই। ছোট ছোট কবিতাগুলো থেকে মাস্টারপিস বলে খ্যাত ‘ক্যান্টোস’ পর্যন্ত তার নিরীক্ষা কখনও থেমে থাকেনি এবং এক্ষেত্রে তার সাফল্য ও স্বার্থকতা বিশ্ববিদিত। একজন সমালোচক ও সম্পাদক হিশেবে পাউন্ড এমন অনেককে আবিষ্কার করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন যাদের অনেককেই বিশ্বসাহিত্যের একেকজন দিকপাল হিসেবে আজ আমরা জানি। এদের মাঝে জেমস জয়েস, টি.এস.এলিয়ট, রবার্ট ফ্রস্ট ও আর্নেস্ট হেমিংওয়ে উল্লেখযোগ্য। একজন প্রাবন্ধিক হিশেবে আমরা তার কাছ থেকে কবিতার আঙ্গিক, শৈলী ও বিষয় নিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান মন্তব্য পেয়েছি। নিচে অনুদিত তার লেখাটি ডেভিড লজ সম্পাদিত ‘টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ইংলিশ ক্রিটিসিজম’ গ্রন্থের ‘আ রেট্রস্পেক্ট’ নামক প্রবন্ধের নির্বাচিত অংশ। মূল প্রবন্ধের নাম ‘আ রেট্রস্পেক্ট’ হলেও এতে মূলত উনিশ শতকের কবিতা নিয়ে পাউন্ড যা বলতে চেয়েছেন তার চেয়েও বেশি মূল্যবান মনে হয় কবিতা সম্পর্কিত তার ভাবনাগুলো। এ কারণেই অনুদিত গদ্যটির নাম কবিতাভাবনা হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়েছে- অনুবাদক]


১৯১২ সালের গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আমরা তিন বন্ধু কবিতা রচনার বিষয়ে তিনটি প্রতিজ্ঞায় একমত হই:

১. বিষয়ীগত বা নৈর্ব্যক্তিক যাই হোক না কেন, কবিতায় সবকিছুকেই সরাসরি উপস্থাপন করতে হরে।
২. এমন একটি শব্দও ব্যবহার করা যাবে না, যা ঐ কবিতায় কোনও তাৎপর্যপূর্ণ অর্থবোধকতা তৈরী করতে অক্ষম।
৩. কবিতায় প্রয়োগকৃত ছন্দকে হতে হবে ধ্বনিময়, অর্থদ্যোতক শব্দের পরম্পরা, পর্ব গুনে গুনে লেখা নয়।

‘না’ বলতে হবে যেসবকে :

একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে বুদ্ধি ও আবেগের যে দিব্য-সংশ্লেষ, তা-ই চিত্রকল্প। আমি এখানে সংশ্লেষ বলে যাকে বোঝালাম, তা মূলত চলতি সময়ের মনোবৈজ্ঞানিকদের কাছে থেকে নেয়া। একে আস্বাদনের পর আমরা হঠাৎ যেন মুক্তি পেয়ে যাই, তাকে বলা যায় টাইম লিমিট এবং স্পেস লিমিট থেকে মুক্তি- যা শুধুমাত্র শিল্পসাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম নির্মাণগুলোর মধ্যে উপলদ্ধি করি।

সারাজীবন ধরে একজন শিল্পী যে বিশাল পরিমান কাজ রেখে যান, তার চেয়ে একটি মাত্র চিত্রকল্প রেখে যাওয়া অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য ও কার্যকর।

এসবকিছু নিয়েই নতুন কবিতা কীভাবে লেখা হবে, তার বিতর্ক শুরু হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, কবিতায় যা কিছু করা যাবে না, তার একটি তালিকা তৈরি করা।

শুরুতে উল্লেখ করা সেই তিনটি প্রতিজ্ঞার কথা মনে করুন, এরা কিন্তু কোনো রকমের অন্ধবিশ্বাস থেকে উঠে আসেনি। এসব বিষয়ে কোনও মতামতকেই অন্ধবিশ্বাস প্রসূত বলে ধরে নেয়া ঠিক নয়, অধ্যবসায় না থাকলে এরা কবি-মনে জায়গা পেতে পারে না। বরং অন্য কারো ধ্যানের ফসল হলেও তারা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

সেসব ব্যাক্তিদের কবিতা নিয়ে কথাবার্তা বা সমালোচনার কোনও মূল্যই দেয়া যাবে না, যাদের স্বার্থক কোনও সৃষ্টিশীল কাজের প্রমান আমাদের হাতে নেই। এক পাল্লায় রাখুন গ্রীক কবি ও নাট্যকারদের প্রাতস্মরণীয় সৃষ্টিগুলোর কথা, আরেক পাল্লায় গ্রীক/রোমান ব্যাকরণবিদ, শিল্প বিষয়ে মতামতদানকারী পণ্ডিতদের কথাগুলো রাখুন। দেখবেন, স্বার্থক গ্রীক শিল্পীরা সেসব উপদেশকে কোনও পাত্তাই দেননি।

ভাষা বিষয়ে :

কবিতায় এমন একটি শব্দও ব্যবহার করা ঠিক নয়, যা পাঠককে নতুন কোনও উপলদ্ধিতে পৌছাতে সাহায্য করে না। যেমন একটি পংক্তিকে ধরুন: ‘শান্তির অনুজ্জ্বল ভূমি’- একে আমরা একটি নিস্প্রভ চিত্রকল্প বলতে পারি। এটা বিমূর্ততার পানে মূর্ততাকে জঘন্যভাবে মিশিয়ে দিতে চায়। এমন চিত্রকল্প সেই কবির পক্ষেই রচনা করা সম্ভব, যিনি এখনও বুঝে উঠতে পারেন নি যে, প্রাকৃতিক যে কোনও উপাদানই, কবিতার জন্য, হতে পারে পর্যাপ্ত প্রতীক।

বিমূর্ততাকে সবসময় সমঝে চলা উচিৎ। মাঝারিমানের কবিতায় তা কখনওই বলার চেষ্টা করা উচিত নয়, যা ভালো গদ্যে বলা হয়ে গেছে। ভালো গদ্য লেখার অকথ্য কষ্টকে এড়িয়ে যখন কেই সেই বাক্যগুলোকেই পংক্তিতে সাজানোর চেষ্টা করবে, তার এমনটা ভাবার কোনও কারণই নেই যে, সে এই কাজের জন্য বিদ্বজনের চোখে ধরা পড়বে না।

অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আজ যার সৃষ্টিকর্ম বিদগ্ধ পাঠকের বিরক্তি সঞ্চার করবে, আগামীতে অবশ্যই তা সাধারণ পাঠকের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠবে।

এটা কল্পনা করাও উচিত হবে না যে, কবিতা সৃষ্টিকরার কাজটি সঙ্গীত সৃষ্টি করার কাজ থেকে সহজতর, অথবা একজন উচুমানের সঙ্গীতস্রষ্টা তার সঙ্গীতের পেছনে যতটুকু সময়, অধ্যবসায় নিয়োজিত করেন একজন কবি তার চেয়ে কম সাধনা করে বিদগ্ধ পাঠকের মন জয় করতে পারবেন।

যত বেশি সম্ভব মহৎ শিল্পীদের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়া উচিত। কারও প্রভাব আপনার উপর পড়লে চেষ্টা করতে হবে সেই ঋণটুকু মনে রাখার অথবা সযত্নে তাকে গোপন করার। প্রভাবকে ছেটে ফেলা মানে কখনওই শুধু এই নয় যে, সেই কবির ব্যবহৃত শব্দ নিজের কবিতা থেকে বাদ দিয়ে দেয়া।

হয় কোনও অলংকারই ব্যবহার করা যাবে না অথবা করতে হলে ক্লিশে অলংকার ত্যাগ করতে হবে।

ছন্দ বিষয়ে:

অত্যাবশ্যকীয় নয় যে, কোনও কবিতাকে তার অন্তর্গত সুরের উপরই শুধু নির্ভর করতে হবে। যদি তা নির্ভর করেও বা, তাকে এমন হতে হবে যাতে, কবিতার মনোযোগী পাঠকেরা এক পড়ে উদ্ভাসিত বোধ করেন। কোনও বিষয়, যাকে নিয়ে গদ্য লিখতে গেলে খোদ গদ্যটিই পাঠকের কাছে নিস্প্রভ ঠেকবে, সে বিষয়টিকে গদ্যে লেখা গেল না বলে কবিতায় লিখতে হবে- কখনওই এমনটা ভাবা যাবে না।

কবিতা দর্শন নয়- ওটা আপনি দার্শনিকদের হাতেই ছেড়ে দিন। কবিতা চিত্ররূপময় হবারও কোনও দরকার নেই। মনে রাখবেন, একজন চিত্রকর আপনার চেয়ে বেশি ভাল করে কোনও চিত্র বর্ণনা করতে পারেন এবং তিনি এও জানেন, ছবিটাকে নিয়ে তাকে কী কী করতে হবে।

ধরুন সাবানের কথা। একজন বিজ্ঞানী কীভাবে তাকে আবিষ্কার করেন আর একজন বিজ্ঞাপনদাতা কীভাবে তাকে দ্বারে দ্বারে পৌঁছান। একজন বিজ্ঞানী মহান বিজ্ঞানী হিসাবে তখনও স্বীকৃত হন না, যতক্ষণ না তিনি ধারনাতীত কোনো কিছু আবিষ্কার করে বসেন। তাকে আগে জানতে হয়, অদ্যাবধি কী কী আবিষ্কৃত হলো, তিনি সেই বিন্দু থেকেই ভবিষ্যত সম্ভাবনার দিকে যাত্রা করেন। তিনি আশা করেন না, তার বন্ধুরা তার শিক্ষানবিশী কাজের প্রশংসা করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, কবিতায় যারা শিক্ষানবিশ, তাদের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীতে ফেলে আলাদা করে রাখার কোনও উপায় নেই। এরা বনে যান কবি বাজারের সদস্য! এই গোলমেলে অবস্থাও, বিস্মিত হবার কিছুই নেই, সাধারণ মানুষের কবিতার প্রতি উদাসীনতার একটি কারণ।

কবিতার পংক্তিশেষের সময় তাকে এমনভাবে শেষ করা উচিত হবে না যেন, সেই পংক্তির সুরধারা ওখানেই শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী পংক্তিটিতে পূবোক্ত পূর্ববর্তী পংক্তির বহমান সুরধারা ছোয়াতে চেষ্টা করুন, তাকে বয়ে যেতে দিন।

সোজাকথা, সংগীতস্রষ্টার মতো আচরণ করুন, একজন উচুদরের সঙ্গতি স্রষ্টার মতো নিজের সৃষ্টিকে সাজান। আপনার রচিত শিল্পকে কোনও উচু জায়গায় দেখে যেতে চাইলে অবশ্যই তাকে উচুমানের সঙ্গীতের সমতুল্য হতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই, যে সুর সৃষ্টি করবেন আপনি কবিতায়, সেই সুর যেন শব্দের ধ্বনিগত সুরসাম্য এবং তাদের সহজাত ধ্বনিবোধ এবং অর্থবোধকতাতে কোনও ধরনের বিপত্তি তৈরী না করে।

একজন সঙ্গীতস্রষ্টা সঙ্গীতসৃষ্টির সময় সুরের বিভিন্ন মাত্রিক প্রক্ষেপের উপর নির্ভর করতে পারেন। যা, কবিতায়, আপনি পারেন না। ঐকতান (harmony) শব্দটি কবিতার ক্ষেত্রে ভুলভাবে প্রয়োগ করা হয়। ঐকতানের মানে বিভিন্ন স্বরগ্রামের সুর একসাথে মিলতে পারা। সার্থক কবিতাগুলোতে সুরের অবশিষ্টাংশ পাঠকের কানে লেগে থাকে- যা তাকে চালিত করে, যা কম বেশি সুরযন্ত্রের মতোই কাজ করে।

যে কোনো ছন্দ ব্যবহার করতে চাইলে তাকে এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত যেন তা পাঠককে কিছু না কিছু বিস্মিত করে। কবিতায় ছন্দ ব্যবহার করতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই কিন্তু করতে চাইলে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে বিজ্ঞ ও পারদর্শী কবির মতো।

আমার বিশ্বাসসমূহ :

ছন্দ: ছন্দ তা-ই, যা কবিতায় ঘনবদ্ধ আবেগ বা আবেগের ঘনবদ্ধ ছায়া হয়ে আসে। কোনও কবি যখন কোনও ছন্দ ব্যবহার করবেন তা অন্যের কাছে অনুধাবনযোগ্য হতে হবে (কেন এ ছন্দ ব্যবহার করা হল), তার সুর হতে হবে কবির নিজের সৃষ্টি যা অন্য কারো নকল নয় বা যাকে ভবিষ্যতে নকল করা যাবেও না।

প্রতীক: আমি মনে করি, সত্যিকারের যে কেনো প্রতীকই প্রাকৃতিক এবং আমদের আমাদের বোধগম্যতার জন্য সহজাত, যথার্থ এবং পর্যাপ্ত। কেউ যখন কোনও প্রতীক ব্যবহার করবেন, তা যেন কোনো অবস্থাতেই আরোপিত বা যথেচ্ছচারী বলে মনে না হয়। মানে, কোনও পাঠক যখন পাঠ করতে যান, যদি তিনি সে প্রতীকের যথার্থ্য অনুধাবন করতে না পারেন- তার কাছে যে, ঐ প্রতীকটির জন্যেই কবিতাটি যেন তার মর্যাদা না হারায়।

টেকনিক : টেকনিককে আমি বলবো কবিতার প্রতি সততার বা আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। রীতিগতভাবে যখন এটা নিরুপনযোগ্য, রীতিনীতিগুলোকে মাড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যা মূল রীতিটিকে বাধাগ্রস্ত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে অথবা আবেগকে তা নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করে।

আঙ্গিক: আমার মনে হয়, সারবস্তু দুই প্রকারের হয়। প্রথমত: যাকে আমরা সরাসরি অনুধাবন করি, দ্বিতীয়ত: যাকে আমরা অনুধাবন করি আর না করি কিন্তু যা আমাদের মধ্য দিয়ে অন্তশীলভাবে বয়। কবিতারও আঙ্গিক বলে কিছু একটা থাকতে পারে, একটা গাছের যেমন আছে, যেমন আছে একটা টইটুম্বুর পুকুরের। প্রতিটি চেনাজানা আঙ্গিকের কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহার আছে। তাই বস্তু পৃথিবীর অনেক আঙ্গিক আছে, যাদের সেই চেনাজানা, শুদ্ধরূপ আঙ্গিকের ভেতর প্রকাশ করা যায় না।

আমার মতে, একজন শিল্পীকে শিল্পের আঙ্গিক, শৈলী এবং ছন্দে প্রচণ্ড দক্ষ হতে হবে। ভালো কবিতা লিখিত হবার আবশ্যকতা রয়েছে কিন্তু এটা কোনো বিষয় নয় যে সেটি কার দ্বারা রচিত হলো।

কোনো শিল্পীকে আমি তখনই অশিক্ষিত বলবো, যখন দেখা যাবে তার শিল্পরুচির ও শিল্পরীতির ভিত বেশ নড়বড়ে এবং নিজস্ব সৃষ্টিধারার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার শিল্পচর্চার উন্নতি বেশ অনুল্লেখনীয়, একরৈখিক ও মামুলি। হিপোক্রাটিসের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে রাখতে হবে, ‘ জীবন অনেক ছোট কিন্তু শিল্পদক্ষতার পথটি বেশ বড়’।

প্রভাব সম্পর্কে : প্রাচীন সমস্ত গুরুস্থানীয় শিল্পীরা তাদের ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন মাস্টারপিস ছবিগুলো নকল করার এবং তারপর ধীরে ধীরে নিজস্ব শৈলীর দিকে এগুবার।

প্রত্যেকেরই একজন প্রিয় কবি আছে, এবং মানুষ কবিতা সম্পর্কে যত বেশি জানবে, ততই মঙ্গল। আমার মনে হয় যারা কবিতা লিখতে চান, তাদের সবারই কবিতা লেখা উচিত, যারা গান করতে চান তাদের সবারই সঙ্গীত সাধনার দিকে যাওয়া উচিত কিন্তু অপরিণত অবস্থায় কারোরই নিজের গানবাজনা অন্যকে শোনানো উচিত নয় কিংবা আধা-কবিত্ব নিয়ে উচিত নয় কবিতা প্রকাশ করা।

ধরুন কোনো বিষয়ে কোনো ধারনা/সিদ্ধান্ত প্রাচীন আটলান্টিস বা আর্কেডিয়ায় খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে কিংবা ১২৯০ খ্রীষ্টাব্দে চালু ছিল। সেগুলো কিন্তু আধুনিকের উপযুক্ত নয়; আধুনিক একে বহন করে বয়ে যেতে পারে না। আগেকার যুগের দিকে আমার নজর পড়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। তারা সৃষ্টিশীলতার কতটা পথ অতিক্রম করেছে, কতটা পারেনি এবং সেখানকার অকর্ষিত সম্ভাবনাগুলোতে আমাদের কাজ করার জায়গা কতটা রয়ে গেছে- আমার দৃষ্টি মূলত, সেদিকে। আমি জানি, সেখানকার অনেক বড় ক্ষেত্রেই কোনো কাজ হয়নি, মানে, সে সম্ভাবনাগুলো এখন আমাদের হাতে। যদি আমরা আমাদের সৃষ্টিশীল সত্তা দিয়ে সেই জায়গাটুকু আবিষ্কার করতে পারি, যাকে অনুভব করে হাজারো শিল্পী এই পথে এসেছিলেন; সেই আবেগটুকু, এটা নিশ্চিত যে, আমাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নরকমের, এ দুটির তারতম্য বেশ সূক্ষ্ম পর্যায়ের এবং আলাদা আলাদা বুদ্ধিবৃত্তিক ধাপের।

উনিশ শতকের কবিতাকে, এর সমস্ত পাওয়া-না পাওয়াকে সম্মান জানিয়েই আমার মনে হয়, দিশাহীন এবং বিভ্রান্তিমূলক, আবেগে মাখামাখি এবং প্রথানুগ কবিতা। কোনো রকম হামবড়াই থেকে নয়, একথা আমি স্বীকার করতে চাই ব্যাক্তিগত অতৃপ্তি থেকেই।

তাহলে কেমন কবিতা দেখতে চাই বিশ শতকে বা সামনের দিনগুলোতে? আমার মনে হয়, কবিতায় আগড়ম-বাগড়ম বলা থেকে একে বিরত থাকতে হবে, এ হবে অন্তর্গতভাবে শক্ত ও লক্ষ্যভেদী, কোনো রকম ধাতু-দৌর্বল্য থাকবে না এর, এটি হবে মজ্জার কাছাকাছি। গ্রানাইটের মতো হবে এর গঠন, এর শক্তি লুকিয়ে থাকবে এর অন্তর্গত সত্যে, পাঠককে দিয়ে সত্য উপলদ্ধি করিয়ে নেয়ার ক্ষমতায়। থাকবে না বাগাড়ম্বরের কোনও ঢক্কানিনাদ বা উপরিতল-শায়ী কোনো ভাঙ্গাগড়া। অন্তত আবেগের-থানইট হবে না তা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।