প্রকৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিপ্র রঞ্জন ধর (বিপ্রতীপ)

 

www.amaderprojukti.com                                          http://blog.biprodhar.com/about/

 

 

পৃথিবী পাল্টাচ্ছে, নতুন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পালটে যাচ্ছে প্রকৌশলের চেহারাও। এসব নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রকৌশলীদের কর্মকান্ডকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিককালে প্রকৌশলের গবেষনায় যুক্ত হয়েছে একটি নতুন ধারা,যার নাম ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে জ্যামিতিক মডেল সহ বিভিন্ন টুলের সাহায্যে সিমুলেশন, অনুকূল পরিবেশ নির্বাচন, সিদ্ধান্ত গ্রহন ইত্যাদি কাজ খুব সহজেই করা যায়। সাধারনত এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে কেন্দ্র করে একটি সমগ্র প্রজেক্টটির কৃত্রিম আবহ তৈরি করা হয় যা বাস্তবতাকেও হার মানাতে সক্ষম!

‘সিমুলেশন’ শব্দটির সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। অনেক দিন ধরেই প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখার গবেষনায় সিমুলেশন ব্যবহৃত হচ্ছে। বাস্তবে একটি বস্তু তৈরি না করেও এ প্রক্রিয়ায় একটি বস্তুটির মডেল বানিয়ে তা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সাধারনত মডেলটি মূল বস্তুর আনুপাতিক হারে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ঠ্য বহন করে। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকটা সিমুলেশনের মতোই। তবে এই প্রক্রিয়াটিকে শুধু সিমুলেশন বললে অবিচার করা হবে। সিমুলেশনের চেয়ে ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক বেশি আধুনিক।একটি ছোট্ট উদাহরন দেয়া যাক। ধরুন, একটি বাড়ির সবেমাত্র নকশার কাজ শেষ হয়েছে, এখনও বাড়িটি তৈরির কাজই শুরু হয়নি। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে বাড়িটির ত্রিমাত্রিক চিত্র চোখের সামনে ফুঁটিয়ে তোলা যাবে এবং আপনার মনে হবে আপনি সেই তৈরি হবার অপেক্ষায় থাকা বাড়িটির ভেতর দিয়ে হাঁটছেন। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যে ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করে, যা একেবারে বাস্তবের মতোই। ফলে ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা অনেক বেশি সাহায্য পাবেন যা হয়তো প্রচলিত সিমুলেশন প্রক্রিয়াতে সম্ভব নয়। তাই বলা যাক, ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো খুবই উন্নত মানের সিমুলেশন প্রক্রিয়া। আসুন এবার দেখে নেয়া যাক ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান প্রধান সুবিধাগুলো-

১। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে কেন্দ্র করে একটি কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে যার ফলে অনেক ত্রিমাত্রিক জটিল তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় যা ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার, প্লান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প পরিচালকের কাজ অনেকখানি সহজ করে দেয়। এছাড়া এতে প্রকল্পের বাস্তবায়নেও সময় অনেক কম লাগে।
২। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি প্রকল্পের প্রকৌশলগত বিভিন্ন সমস্যার সহজ সমাধানের পাশাপাশি অনুকূল পরিবেশ নির্বাচন, দাম নিরীক্ষণ, কর্ম তালিকা প্রনয়ন সহ প্রকল্পের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহনেও সাহায্য করে।

বিভিন্ন ধরনের সিমুলেশন সফটওয়্যারের ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরও সফটওয়্যার মতো রয়েছে। তেমন একটি সফটওয়্যারের নাম ভিই-সুইট (VE-Suite)।এই উন্মুক্ত সফটওয়্যারটি তৈরি করেছেন আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্স গ্রুপ। ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী প্রকৌশলীরা ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে এই সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এছাড়াও এই সাইট থেকে সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ওয়েব ঠিকানাঃ



এক কথায় বললে, ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং একজন প্রকৌশলীকে একটি প্রকল্পের প্রায় সব অংশ নিয়েই কৃত্রিম পরিবেশে কাজ করার সুযোগ এনে দেয় যা একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুধু সহজই করে না প্রকল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও সমস্যা সম্পর্কে একটি দিক নির্দেশনা দেয়। এর ফলে সমগ্র বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিদ্যূত কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্পে এটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম । এছাড়াও গবেষকরা জানিয়েছেন ভার্চুয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব বিদ্যূত উৎপাদন কেন্দ্র ডিজাইন করা সম্ভব।

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০৮