স্বপ্নের চৌকাঠ
মূলঃ ক্রিস্টিনা পেরি রোসি অনুবাদঃ ফাহমিদুল হক
মেয়েটি কখনোই স্বপ্ন দেখে না। এবং ব্যাপারটা তাকে খুবই বিপর্যস্ত করে। সে মনে করে স্বপ্ন না-দেখার কারণে সে নিজের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। স্বপ্ন দেখলে সে নিশ্চয়ই নিজের সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানতে পারতো। দিনের নিশ্চয়তাগুলোকে প্রশ্ন করার জন্য তার স্বপ্ন দেখা উচিত। অথচ তার কোনো স্বপ্নের দরোজা নেই, যা প্রতি রাতে খুলে যাবার কথা। হয়তো সে-দরোজা দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কোনো কালে চলে যাওয়া যেতো যেখানে সে গভীর জঙ্গলের ডাইনোসর বা বেগবান ঝর্ণার পাথর। সে কেবল স্বপ্নের দরোজার চৌকাঠেই দাঁড়িয়ে থাকে এবং তাকে অনুপ্রবেশের অধিকার না-দিয়ে দরোজা সবসময় বন্ধই থাকে। আমি তাকে বলি যে এটাই একটা স্বপ্ন, হয়তো দুঃস্বপ্নই: স্বপ্নের দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো, ধাক্কাচ্ছো, হাতল ঘোরাচ্ছো, বিল টিপছো, কিন্তু খুলছে না। আসলে সত্যি হলো সেই দুঃস্বপ্নের দরোজার কোনো হাতল বা বেলই নেই; সেটা দেখতে দেয়ালের মতোই বাদামী। সেটা দেয়ালের মতোই উঁচু ও মসৃণ। এমন এক স্থাপনায় তুমি আঘাত করছো যেটা খুবই দৃঢ়, অবিচল, অটল।
সে বলে, দরোজা আছে, অথচ চাবি নেই, এ হতেই পারে না।
তার চোখেমুখে স্বপ্ন না-দেখতে পাবার কাঠিন্য।
আমি তাকে বলি, স্বপ্নের ক্ষেত্রে এরকমই হয়। স্বপ্নে দরোজা খোলে না। স্বপ্নে বহতা নদী শুষ্ক, পাহাড়গুলো সটান না-হয়ে গোলাকৃতির, টেলিফোন হয়তো পাথরের তৈরি। আর সেখানে আমাদের এপয়েন্টমেন্টগুলো আমরা কখনোই রা করতে পারি না। স্বপ্নে আমরা আমাদের নগ্নতা ঢাকতে অন্তর্বাস খুঁজে পাই না। উঁচু দালানের লিফট মাঝপথে আটকে যায় অথবা ছাদমুখী না-হয়ে তা ছাদের সমান্তরালে চলে। এবং সিনেমা দেখতে গেলে দেখা যায় আসনগুলোর মুখ পর্দার উল্টোদিকে ঘোরানো। স্বপ্নে ল্যগুলো কর্মমতা হারিয়ে ফেলে নিজেরাই প্রতিবন্ধকতায় রূপান্তরিত হয়, অথবা তাদের নিজস্ব নিয়মে তারা চলে যা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।
সে মনে করে যে-মেয়েটি স্বপ্ন দেখে না সে জাগ্রত মেয়েটিরও শত্রু। কারণ সে তার নিজস্বতার একাংশকে বঞ্চিত করে। স্বপ্নে মানুষ এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলে যা আগে কখনোই সে জানতো না বা ব্যাপারটা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল। স্বপ্ন না-দেখার কারণে এইসব আবিষ্কারের উত্তেজনাকর অনুভূতি থেকে তাকে বঞ্চিত থাকতে হয়।
সে বিষণ্ন কণ্ঠে বলে, একটি স্বপ্ন একটি উতকৃষ্ট রচনা, একটি সাহিত্যকর্ম যা কীভাবে লিখতে হয় এমনিতে জানা যায় না এবং স্বপ্নই আমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারতো। এটা স্বপ্ন-দেখা সব প্রাণী বা মানুষের জন্যই সত্য।
তাকে ক্লান্ত পথিকের মতো দেখায়, যে দরোজার চৌকাঠে বৃক্ষের মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে।
সান্ত্বনা দেবার জন্য আমি তাকে বলি যে স্বপ্নের দরোজা পার হবার আগেই হয়তো সে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে; হয়তো ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বেই সে স্বপ্ন খোঁজার জন্য এতো সময় ব্যয় করে ফেলে যে, যখন সত্যি সত্যি স্বপ্নেরা এসে হাজির হয় তখন তাদের সে দেখতে পায় না। কারণ ইতোমধ্যে সে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ার কারণে তার চোখের ভেতরে স্বপ্ন দেখার যে চোখ থাকে: বাইরের চোখ জোড়া কেবল আলোর সাহায্যে বস্তুর চেহারা দেখতে অভ্যস্ত; আর এই চোখ জোড়া বুঁজে আসলে স্বপ্নের চোখ জোড়া খুলে যায়। কিন্তু সে এতো সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসে যে সে স্বপ্নের দরোজার চৌকাঠে এসেই থেমে যায়, অবসাদে ততক্ষণে সে অর্ধমৃত, এবং এজন্য সে ওপাশে যেতে পারে না, নদী পার হতে পারে না, সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে না -- কারণ ইতোমধ্যে তার দু-জোড়া চোখই বন্ধ হয়ে গেছে।
আমার মনে হয় আমি চোখগুলো খুলতে পারবো, সে বলে।
মাঝে মাঝে সে আমাকে আমার স্বপ্নগুলো বর্ণনা করতে বলে। আর আমি পরে তার একান্ত নিজস্ব সময়ে যখন করে সব আলো নেভানো থাকে, তখন তার কে মতলব-আঁটা দুষ্টু মেয়ের মতো লুকিয়ে থেকে বুঝতে পারি আমার স্বপ্নগুলো সে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্যের গল্প লেখার চেয়ে অন্যের স্বপ্ন দেখা অনেক কঠিন। এবং এক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা তাকে বিরক্ত করে। সে মনে করে আমার বিশেষ ক্ষমতা আছে যা তার নেই এবং এই ভাবনা তাকে স্পর্শকাতর করে, সে আমাকে ঠেস দিয়ে কথা বলে। সে আমার কপালকে সিনেমার পর্দার মতো দেখে, ঘুমন্ত অবস্থায় আমি কী কী স্বপ্ন দেখছি তা যেন ঐ পর্দায় প্রতিফলিত হবে। যদি আমি ঘুমন্ত অবস্থায় মৃদু হাসি অথবা আমার মুখমণ্ডলে বিরক্তির আভাস ফুটে ওঠে তবে সে আমাকে জাগিয়ে তোলে এবং অতৃপ্তিসহকারে জিজ্ঞেস করে কী মজার কাহিনী বা খারাপ ঘটনা ঘটেছে? আমি তাকে সবসময় সঠিক উত্তর দিতে পারি না; কারণ স্বপ্নগুলো এমন সব ভঙ্গুর উপাদানে তৈরী হয় যে জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো প্রায়ই মিলিয়ে যায়; তারা চোখের পাতায় বা হাতের জালে হারিয়ে যায়। সে মনে করে স্বপ্নের জগত হলো আরেকটা জীবন যা আমার মতো কারো কারো আছে এবং তার আগ্রহ কেবল আধাআধি পূর্ণ হয় যখন তাকে সর্বশেষ স্বপ্নটির বয়ান করি। (স্বপ্নের বর্ণনা করা অন্যতম শক্ত এক শিল্প; তাদের কুহক নষ্ট না করে, প্রতীকগুলোকে তুচ্ছ না বানিয়ে অথবা তাদের খুব বিশ্বাসযোগ্য না করে সম্ভবত কাফকাই কেবল কাজটি করতে পেরেছিলেন।)
সে আমাকে একই স্বপ্ন দু - তিনবার বলার জন্য জোরাজুরি করে; আমি স্বপ্নের একই কাহিনী বলি যেখানে সব অচেনা লোক, অদ্ভূত তার বর্ণনকাঠামো, অবাস্তব সব ঘটনা আমি বয়ান করতে থাকি। এবং দ্বিতীয়বার বলার সময় যদি সেই সংস্করণে কোনো পরিবর্তন পাওয়া যায় তবে -- বাচ্চারা যেমন একটি গল্প সবসময় একইরকম শুনতে পছন্দ করে, কোনো সামান্য পরিবর্তনও বরদাশত করে না, তেমনি -- সে ক্ষেপে ওঠে।
সে যে-গল্পটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে সেটি বড়ো অদ্ভূত, জলবিষয়ক স্বপ্ন সেটা। আমি আমার মাথার ওপরের একটি সরলরেখা ধরে এগুচ্ছি, রেখার নিচে স্বচ্ছ জল; সে-জলের না আছে কোনো ওজন, না পারে তা আমাকে ভেজাতে। সে-জল দেখা যায় না, অনুভবও করা যায় না, কিন্তু আমি জানি জলটা আছে। আমি ভেজা বালির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, আমার পরনে সাদা শার্ট ও গাঢ় রঙের প্যান্ট। মাছেরা আমার চারপাশে সাঁতার কাটছে। আমি পানির মধ্যেই খাচ্ছি-দাচ্ছি, কিন্তু আমি কখনোই সাঁতার কাটি না বা আমাকে ভাসতেও হয় না। কারণ পানিটা বাতাসের মতোই, আর আমি শ্বাসও নিই স্বাভাবিকভাবে। আমার মাথার ওপরে যে সীমারেখা, ওটা আমি কখনোই অতিক্রম করি না। সেটা অতিক্রম করার কোনো ইচ্ছাও আমার নেই।
এটা সম্ভবত একটা পুরনো স্বপ্ন, আমি তাকে বলি। অনেক অতীতের একটা স্বপ্ন, মানুষের বংশগতি তখনও শুরু হয় নি, আমরা তখনও সিদ্ধান্ত নিইনি যে আমরা মানুষ হবো না মাছ হবো।
সে এরপরে হয়তো ওড়ার স্বপ্ন শুনতে চায়। আমি গাছে গাছে উড়ে বেড়াই।
যখন সে ঘুমিয়ে থাকে স্বপ্ন এনে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে আমি তার কপালে আমার আঙুল দিয়ে আস্তে চাপ দিই। সে জাগে না, কিন্তু সে স্বপ্নও দেখে না। আমি তাকে আমার শেষ দেখা স্বপ্নটার কথাও বলি। সেখানে এক লোক ছোট্ট এক কয়েদ-সেলে আটকা আছে; আলো সময় স্থান মনুষ্যকণ্ঠ সবকিছু থেকে সে দূরে অসীম নিরবতা ও অন্ধকারময়তায় ডুবে আছে। দরোজার পাশেই একজন প্রহরী। জরায়ুর ঝিল্লি ভেদ করে যেমন ইনজেকশন দেয়া হয় তেমনি দেয়াল ভেদ করে নল দিয়ে বন্দি প্রহরীর মাথায় তার স্বপ্ন প্রবিষ্ট করে। প্রহরী তার কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় সে তাকে মুক্ত করে দেবে যদি বন্দি সিংহটিকে সে তাড়িয়ে দিতে পারে যে-সিংহটি প্রতি স্বপ্নে প্রহরীকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
মেয়েটি ঠিকই ধরতে পারে, তুমিই সেই বন্দি।
স্বপ্ন হলো বাক্সর মতো, একটির ভেতরে আরেকটি স্বপ্ন বাস করে। মাঝে মাঝে আমরা বাইরেরটি বাদ দিয়ে ভেতরেরটি দেখতে চাই, এবং এটাই আমাদের উদ্বিগ্ন করে। দ্বিতীয়টিতে আমি মেয়েটিকে ডাকি কিন্তু সে কোনো উত্তর দেয় না। সে আমাকে শুনতে পায়না। আমি জেগে যাই এবং তাকে আবার ডাকি। আমি তার দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দিই, কিন্তু আমি জানতাম না আমি প্রথম স্বপ্নেই আছি এবং আবারও সে আমার ডাকে সাড়া দেবে না।
আমি প্রস্তাব করি যে আমরা ঘুমাবার পূর্বে দু-জনে মিলে একটা গল্প নির্মাণ করতে শুরু করবো। নির্মাণ করতে করতে আমরা ঘুমিয়ে পড়বো। ফলে কিছু গল্প বাকি থেকে যাবে। অনির্মিত অংশটা আমাদের ভেতরের চোখে (বাইরের চোখ বন্ধ করলে যেগুলো খুলে যায়) স্থানান্তরিত হবে। এবং এভাবে শেষ পর্যন্ত সে স্বপ্ন দেখতে সম হবে।
আমি তাকে বলি, আমরা পরস্পরকে স্বপ্নের চৌকাঠে নিয়ে যাবো এবং আমরা সেখানে পৌঁছার পর পরস্পরের কপালে চুম্বন দেবার পর আমরা পৃথক হবো এবং দু-জনেই দরোজা অতিক্রম করবো -- আমার এবং তোমার দরোজা আলাদা আলাদা ভ্রমণ শেষে আমরা পরদিন সকালে আবার একত্রিত হবো। তুমি আমাকে বলবে কী কী গাছপালা দেখলে এবং আমি সেই জাহাজের কথা বলবো যেটা আমাকে এমন একটি শহরে নিয়ে গিয়েছিল যে-শহর আমি কখনোই আর দেখতে চাইবো না।
সে-রাতে আমরা যথাসময়ে ঘুমাতে গেলাম এবং আমাকেই দায়িত্ব নিতে হলো গল্পটা শুরু করার যেটা আমাদের একত্রে ইন্দ্রিয়াতীত সেই শুভময় দরোজায় নিয়ে যাবে।
একটি খালি কক্ষে এক লোক। আমি শুরু করি।
সে বলে, পর্দাটা খুবই নরোম, মখমলের তৈরী কিন্তু একদিকে সেটা বাঁধা।
আমি বলে চলি, লোকটি বিছানায় শুয়ে আছে, তার পরনে সাদা শার্ট আর গাঢ় রঙের প্যান্ট।
সে বলে চলে, আমার মনে হয় সে কোনো ব্যাপারে ভীত। সেজন্য সে তখনও ঐ জামাকাপড় পরে আছে।
আমি বলি, তার পাশে একটি মেয়ে। তার ছোট ছোট ব্লন্ড চুল। তার চোখ নীল।
না, সে সংশোধন করে, চোখ দু-টো সবুজ কিন্তু তাতে নীলের ছোপ আছে।
হ্যাঁ, আমি মেনে নিই, সে সুন্দরী, কিন্তু তার ত্বক যারা স্বপ্ন দেখে না তাদের মতো শীতল।
মেয়েটি গোলাপী গাউন পরে আছে। বিছানায় শোবার সময় এধরনের কাপড় পরলে কি সেকেলে দেখায় না?
আমি বলি, না সোনামনি, তোমাকে খুবই মানিয়েছে।
সে বলে, লোকটি ঘুমিয়ে পড়লো বলে।
আমি স্বীকার করি, হ্যাঁ আমার খুবই ঘুম পাচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে সেই দরোজার দিকে এগুচ্ছি যেটা আমাকে আরও সামনে এগিয়ে নেবে।
তুমি ধীরে ধীরে হাঁটছো, তোমার শার্টের আস্তিন গোটানো, তোমার চোখ আধবোজা।
আমার খুবই ঘুম পাচ্ছে।
সে আমাকে অনুসরণ করছে কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই সে অধিক পিছিয়ে যাচ্ছে। তার পদক্ষেপ তোমার চেয়ে হ্রস্ব, এছাড়া সে হারিয়ে যাবার ভয় পাচ্ছে। তুমি কেন পেছনে ফিরে তাকে সাহায্য করছো না?
সে খুবই ক্লান্ত এবং পথই তাকে এগিয়ে নিচ্ছে, চুম্বকের মতো তাকে ঠেলছে।
মেয়েটি বলে, এটা হলো স্বপ্নের চুম্বক।
মেয়েটি অনেক পেছনে। তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। আর এদিকে আমি চৌকাঠের সামনে।
মেয়েটি আবার হারিয়ে গেল। রাস্তাটা অন্ধকার এবং দু-পাশের দেয়াল সরে আসছে। মেয়েটি ভীত। সে একাকীত্বের ভয়ে ভীত।
আমি এই চৌকাঠ আগেও দেখেছি।
কিন্তু আমি সেটা দেখতেই পাচ্ছি না।
যদি তুমি ফিরে যাও, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও, তুমি কখনোই এটা খুঁজে পাবে না।
আমার ভয় পাচ্ছে।
আহ! কী সুন্দর চৌকাঠ! এটা পেরোলেই তুমি আলো জ্বালতে পারো।
আমাকে একা ফেলে যেও না।
আমাকে যেতে হবে। আমি আমার পথের শেষ প্রান্তে, আমার চোখ বুঁজে আসছে, আমি আর কথা বলতে পারছি না ...।
সে বলে, এরপর মেয়েটি নিজেকে সামনে ছুঁড়ে দিল, সে ছায়াচ্ছন্ন পথে চলে যাওয়া লোকটির পদচ্ছাপ থেকে যে অলৌকিক আভা বিকীরিত হচ্ছিল তা অনুসরণ করে এগুলো এবং চৌকাঠ অতিক্রম করার পূর্বমুহূর্তে মেয়েটি লোকটির পিঠে ছুরি বসিয়ে দিল।
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আমার শরীর টলে উঠলো, স্বপ্নের মধ্যে আহত লোকের মতো আমি ঢলে পড়লাম। আর অদ্ভূত কাণ্ড, আমি পিছনে গেলাম, আমার শরীর ভেঙ্গে পড়লো। এখন আমার এক পা চৌকাঠের ওপরে আরেক পা পেছনেই পড়ে রইলো। নিশ্চয়ই আমি এখন দ্বিতীয় স্বপ্নে, কিন্তু আমার পিঠের ব্যথাটা প্রথম স্বপ্নের। আমি মেয়েটিকে ডাকতে চাইলাম, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি সে উত্তর দেবে না। সে সম্ভবত চলে গিয়েছে। আমি জাগার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম এবং রক্তমাখা জমিনে পিছলে পড়লাম।.......
লেখক পরিচিতি:
ক্রিস্টিনা পেরি রোসির জন্ম ১৯৪১ সালে উরুগুয়েতে। মার্কেজ-য়োসা-ফুয়েন্তেস পরবর্তী সময়ে তাকে অন্যতম প্রধান ল্যাটিন আমেরিকার লেখক মনে করা হয়। রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে তাকে ১৯৭২ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তিনি বর্তমানে বার্সেলোনায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার লেখা অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পেরি রোসির সাহিত্য প্রায়ই নারীদের নিয়ে রচিত হলেও তার লেখা কেবল নারীবাদের মধ্যে সীমিত নেই। তার লিখন পরিহাসময়, বিচক্ষণ ও বিমূর্ত। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তার প্রথম গ্রন্থ 'ভিভিয়েন্দো' একটি গল্প সংকলন যার সব মুখ্যচরিত্রই নারী। গল্পসংকলন 'লো মিউজিয়ো এবানডোনাডো' (১৯৬৮) এবং কবিতাসংকলন 'ডায়াসপোরা'-র (১৯৭৩) জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার পান। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হলো 'লা তার্দে দেল ডাইনোসরিও' (১৯৭৬), এল মিউজিয়ো ডি লো এসফুয়েরজো ইনুটাইলস' (১৯৭৩)। 'উনা প্যাশন প্রহিবিডা' (১৯৮৬) এবং 'ফ্যান্টাসিয়া ইরোটিকা' (১৯৯১) গ্রন্থে পেরি রোসির যৌনচেতান বিধৃত হয়েছে। অনূদিত গল্প 'স্বপ্নের চৌকাঠ'-এর (দি থ্রেশল্ড) মূল উপজীব্য হলো স্বপ্ন ও বাস্তবতার এবং চেতন ও ফ্যান্টাসির সম্পর্ক।
গল্পটি রবার্তো গনজালেজ এশেভারিয়া সম্পাদিত 'ল্যাটিন আমেরিকান শর্ট স্টোরিজ' গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। বইটির প্রকাশক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। ১৯৯৯ সালে এটা নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
ইংরেজি অনুবাদ: মেরি জেন ট্রিয়েসিঅনুবাদটি প্রথম আলো সাময়িকীতে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশকাল অনুসন্ধানসাপেক্ষ।
০২.০৫.০৮