নব আলোকে বাংলা
পাঠক পরিষদের কথা (১)
|
||
প্রকাশের জন্য প্রদত্ত পান্ডুলিপি পড়ে
মতামত দেওয়ার জন্য সম্পাদক কর্তৃক নিযুক্ত হয়েছেন দু'সদস্যের পাঠক পরিষদ।
প্রদত্ত পান্ডুলিপিটি পাঠক পরিষদের অন্তত একজন সদস্যের মতে প্রকাশযোগ্য
বিবেচিত হলে তা সম্পাদকের দপ্তরে পাঠানো হবে। সম্পাদক তার গ্রহণযোগ্যতা বিচার
করবেন।
সাহিত্য কি?
সাহিত্য এমন একটি পেশা যেখানে ভাষা এবং
সমাজ বিজ্ঞানের বিদ্যালব্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন ব্যবহৃত হয় মানবাত্মার
সামগ্রিক কল্যাণ সাধণের জন্য। এই কর্ম পদ্ধতি বিবিধ পন্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে
বিবিধ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারান্তে পরিশীলিত এবং পরিশুদ্ধ হয়। একজন
ভাষাবিজ্ঞানী এবং একজন সাহিত্যিকের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো একজন আবিষ্কার
করেন , অন্যজন তা ব্যবহার করেন। দুজনের মধ্যে একটা নীরব সহযোগীতা থাকে - তার
অবর্তমানে ভাষার অধঃগতি প্রাপ্তি হয়।
সাহিত্যে কলুষ নিরোধ বলতে কি বোঝায়?
খাবার জলে যেমন ধাতু প্রাবল্য অনভিপ্রেত
সাহিত্যে সেরকম ভাষা ও বিষের অপব্যবহার অনাকাঙ্খিত। খাবার জলে অসংখ্য কলুষ
পদার্থের আধিক্য যেমন খাবার জলকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত করে তোলে সেরকম স্থুল
ভাষা এবং অশালীন বিষয়ও সাহিত্যকে বিষাক্ত করে তোলে। প্রসঙ্গত প্রশ্ন আসে
বিষাক্ততার সংজ্ঞার্থ কি? এই বিশ্বে এমন কি আছে যা বিষ নয়? বিষাক্ততা আসলে
মাত্রা নির্ভর। এই মাত্রা নির্ণীত হয় জনস্বাস্থ্যের
নিরিখে ও সচেতন জনমতের
বিচারে। অনুরূপভাবে সাহিত্যে শালীনতা নির্ণীত হয় একটি মাত্রার সাপেক্ষে। এই
মাত্রার বিচারক অবশ্যই নির্ম্মল হৃদয় পাঠক।
সাহিত্যে পেশাদারিত্ব
পেশা এমন একটি পদস্থান যেখানে অন্ততপক্ষে
কলা অথবা বিজ্ঞানে প্রাগ্রসর শিক্ষা আবশ্যক। যেখানে কায়িক নয় বরং মানসিক
শ্রমই প্রয়োজনীয়। এই সংজ্ঞা, পেশার তালিকা থেকে বর্জন করেছে ক্রীড়াবিদ, পুলিশ,
দমকল কর্মী, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা এবং সৈন্যদের। পেশাদারিত্ব হতে পারে
বিদ্যালব্ধ বা অন্যথা অর্জিত। বিদ্যালব্ধ পেশাদারিত্ব তালিকাভুক্ত করেছে
চিকিৎসা, আইন এবং ধর্মতত্ত্ব। ১৭০৯ সন অব্দি সাহিত্য পেশাদারিত্বের মর্যদা না
পেলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম এ মর্যাদা মেলে। সাহিত্য , শিক্ষকতা, এবং
এঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যালব্ধ পেশা না হলেও পেশা।
|
|
সত্যিকার পেশাকে সংজ্ঞাবদ্ধ করা যেতে পারে সাতটি বৈশিষ্ট্য
দিয়েঃ
১। পেশাগত সিদ্ধান্ত রচিত হবে সেইসব
সাধারণ বিধি , তত্ত্ব অথবা প্রস্তাবনার মাধ্যমে যা একটি নির্দিষ্ট বিবেচনাধীন
ঘটনা নির্ভর নয়।
সাহিত্যে প্রতিষেধ অতএব প্রধানত সুস্থ চিন্তা এবং ব্যবহার নির্ভর। নিরাপদ, রুচিসম্মত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয়া জরুরী। একজন সত্যিকার সাহিত্যিক তার লেখার পাঠযোগ্যতা সম্বন্ধে ধারণা রাখেন একজন পাঠকের চেয়ে বেশী। পাঠের অযোগ্য লেখা পাঠক পড়ছে বলেই লেখক লিখতে পারেন না। কারণ তা হবে পাঠককে বিভ্রান্ত করা। জেনেশুনে অন্যায় করা । স্বার্থপরতা করা। লেখক পাঠকের থেকে এক পা’ আগেই চলবেন কারণ সাহিত্যের দ্বারা লোকশিক্ষা হয়, সমাজ বিবর্তন হয় আর হয় সুস্থ মনোরঞ্জন।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
(২) |
|
|
|
|
|
|
|
সময়ের সাথে সাথে সভ্যতার বিবর্তন ঘটে আর রূপান্তর ঘটে প্রকাশের অর্থাৎ ভাষার। মনের ভাবপ্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা। সুতরাং ভাষার বিবর্তন বলতে বুঝতে হবে ভাব প্রকাশেরও বিবর্তন যা কালক্রমে নিয়ে এসেছে জটিল থেকে সহজ সাবলীল প্রকাশভঙ্গীর উপস্থাপন। ভাষার ব্যবহার যত সাবলীল, তা মানুষের কাছে ততই গ্রহনযোগ্য। এই সাবলীলতার ব্যাপ্তি ঘটে তখনই যখন ভাষার শব্দভান্ডার হয়ে উঠে সমৃদ্ধশালী। শব্দভান্ডারের প্রসার বিস্তৃত হয় যদি কিনা একটি ভাষা তার উৎপত্তি সময়কালের গন্ডী পেরিয়ে নতুন রূপ লাভ করে। বিদ্যাসাগর, সঞ্জীবচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে নজরুল, জসীমুদ্দিন বা শরৎচন্দ্রের হাত ধরে কল্লোল যুগের পরিশোধনাগার থেকে যে ভাষা আমরা পেয়েছি তা আরও সাবলীল ও সহজবোধ্য হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন হয় একটি ভাষার সাথে অপর একটি ভাষার আদান প্রদান। তার মানে এই নয় যে নিজের ভাষার শব্দসমূহ বাদ দিয়ে শুধু অপর ভাষার শব্দসমূহকে স্বাগত জানানো। বরং অন্য একটি সমৃদ্ধ ভাষার শব্দগুলো বা তার শব্দার্থ বা সেই ভাষার ভাবার্থ প্রয়োগের কৌশলগুলো নিজের ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব ভাষায় বহুমাত্রিক শব্দশৈলীর উপস্থাপন ঘটানো। যে এতে যত বেশী পারঙ্গম হবেন, তার ভাষাও হবে তত শ্রুতিমধুর। আর এই শ্রুতিমধুরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নিজ ভাষার ওপর যথাযথ জ্ঞান, পাশাপাশি
|
|
অন্য ভাষাকে জানা এবং তা থেকে সুন্দরতম শব্দ ও ভাবার্থ প্রয়োগের কৌশলগত জ্ঞান লব্ধ করা। ফরাসী, জার্মান, রুশ বা যেকোন ভাষায় যদি বাংলা সাহিত্যের চর্চাকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাভাষার ছন্দময় শব্দশৈলীর প্রয়োগ উক্ত বিদেশী ভাষাগুলোকে আকৃষ্ট করেছে। কালক্রমে ঐসকল ভাষার মাঝেও বাংলা লেখনীর স্টাইল খুঁজে পাওয়া যাবে। ঠিক উলটোটিও ঘটতে পারে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে। এমনিতেই বাঙ্গলা ভাষা বিভিন্ন ভাষার প্রভাবধ্বনীত্বে উর্বর।ভাষার বিবর্তন অপ্রতিরোধ্য। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে ভাষার অনুশীলন সময়ের প্রয়োজনে হয় অপরিহার্য। অনুশীলনে যদি ছেদ পড়ে তখন আবির্ভাব ঘটে স্থবিরতার। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে স্থবিরতা ভাষার গতিশীলতাকে রুদ্ধ করে দেয়। সে কারণেই আজ সবিনয়ে এই আশাই ব্যক্ত করি যেন, স্থবিরতার দোষে আড়ষ্ট না হয়ে ভাষার ব্যবহারে পরিশীলিত ও সংবেদনশীল হয়ে সবাই নিদ্রোত্থিত হয়ে ওঠে। সবাই হোক ভাষা চর্চায় শক্তিশালী, শব্দের খেলায় সমৃদ্ধশালী, অধিক গতিময়, তারও চেয়ে অধিক ছন্দময়। শুভলগ্না শোয়ারা অক্ষাংশ: ৫০.৯৪৩০০০৭৯৩৫ দ্রাঘিমা: ৬.৯৫৮৪১৯৭৯৯৮১ ৩১ শে অগাস্ট, ২০০৭
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|