|
|
|
|
|
অধরা মাধুরী (বর্ণময় অন্তরালে ) ধারাবাহিক উপন্যাস
পর্ব-৫ |
|
|
বেশ অনেক দিন বিভিন্ন কাজের মধ্যে অধরাকে নিয়ে ভাবা হয়নি। না ঠিক তা’ নয় ভাবনাগুলো এসেছে কিন্তু আকার পায়নি। আজও সুবুদ্ধির অনেক কাজ। তবুও আজ বেশ কয়েকবার পড়াতে পড়াতে বা কাজ করতে করতে বার বার অধরার জীবন ঘুরে ফিরে এসেছে তার ভাবনায়। আজ ড্রাইভার নেই। নিজেই গাড়ি চালিয়ে ফিরছিল। বেশ কয়েকবার অন্যমনস্ক হয়ে সিগন্যাল জাম্প করতে করতে বাঁচিয়েছে। সুবুদ্ধি সারা জীবন নিজেকে অনেকটা হাঁসের মত রেখেছে। কত মানুষের সঙ্গে মিশেছে কিন্তু কাউকে সচেতন ভাবে ব্যাথিত করেনি বা কারও মনের সাথে জড়ায়নি। কাউকে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেনি। এমনকি শ্রী’র ওপরেও সে প্রথাগত স্বামীত্ব ফলায়নি। ওঁর দেখা বা জানা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখেছে খুব শক্ত করে সম্পর্কের বেড়াগাছ গুলোকে বাঁধতে গেলে হয় শিকড় থেকে উপড়ে যায় আর নয়তো শুকিয়ে যায়। শ্রীকে সুবুদ্ধি চেনে আজ প্রায় তিরিশ বছরের ওপর। আজও একটা নতুনত্ব আছে ওদের মধ্যে – তার কারণ বোধহয় ওদের মধ্যে শাসনের বেড়াজাল খুব একটা নেই। দু’জনে দু’জনকে মেনে নিয়ে চলে।
গাড়ি চালাতে চালাতে সুবুদ্ধির দিদিমার কথা মনে পড়ে যায়। ‘জীবনে সুখ পেতে হলে কাউকে বা কোনও কিছুকে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধিসনা পরে খুব কষ্ট পেতে হবে। নিজের ওজন রেখে চল, শ্রদ্ধাবনতঃ হয়ে চল, শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধিসনা। বাঁধলে কষ্ট দিবি অন্যকে আর পাবি অনেক বেশী।’ সুবুদ্ধি নিজের ওজন বজায় রেখে চলতে জানে। কত প্রলোভন জয় করেছে সে এই পাঁচ দশকের ওপর চলার পথে। কত রকমের চরিত্র দেখা হল! সেই পনের বছর বয়েসে ঘরের বাইরে পা’ রাখা, তার পর কত কি করতে করতে এই ব্যাঙ্গালোর শহরে এসে স্থিতি। স্থিতি কি হয়? ঐ আর কি কোনও ষ্টেশনে কম সময় দাঁড়ান আবার কোনও ষ্টেশনে দীর্ঘ বিরতি। কথাটা ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে এসে সুবুদ্ধি গাড়ি থামাল। মন বিড়বিড়াল, ‘কাল থেকে কথা হয়নি, শ্রী বাইরে। আজ কি ও দিল্লিতে?’
ওর মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন মা বলতেন ‘তুই কি করে একা একা থাকিস? শ্রীমা (বৌমাকে আদর করে ডাকা নাম) সারাদেশ ঘুরে বেড়ায় আর তুইও। এরকম করে কি চলে? সুবুদ্ধি মায়ের কোলে মাথা রেখে বলত, ‘এটাই তো পরীক্ষা মাগো। আমিও তো সারা পৃথিবী ঘুরেছি এক সময় তখন শ্রী কি করে একা থেকেছে বল? আসলে কি জান মা বিয়ে একবারই হয়। মনের সম্পর্ক একবারই হয় । তুমি আর বাবাও তো সারাজীবন একসাথে...’। কথাটা বলেই মায়ের চোখের জল দেখেছিল আর তক্ষুণি অপরাধীর মত মাকে জড়িয়ে ধরেছিল। সুবুদ্ধির বাবা চলে গেছেন অনেক বছর আগে। মা বাবার একসাথে থাকা পঁয়ত্রিশ বছরেরও ওপর – তার পর একদিন হঠাত বাবার চলে যাওয়া। এগার বছর মা একা ছিলেন তার পরে। মায়ের সেই যন্ত্রণা সুবুদ্ধি বুঝত। মা বাবার সাথে ওর এখন ধ্যানের মধ্যে, ঘুমের মধ্যে, নীরবতায় কথা হয়।
অধরার কথা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। শ্রী’র বা কন্যার শুভার কথা দিনের মাঝে অনেকবার আসে মনে। কিন্তু এই প্রথম কেউ যে ওর কেউ নয় তাকে নিয়ে এত ভাবে সুবুদ্ধি। এটা কি ঠিক? বেঠিক কিছু নজরেও তো পড়েনা তার! অনেক জীবনের কথা ওর কলমে প্রাণ পেয়েছে এর আগে। কিন্তু এই প্রথম কোনও চরিত্র ওকে এতটা ছুঁয়ে আছে। লেখকদের কি সবার এমন হয়! চাবি দিয়ে দরজা খুলে সুবুদ্ধি ঘরে ঢুকল। বুঝল ঘরের শ্রী ফিরে এসেছে। একদিন শ্রী না থাকলে বাড়িটা যেন কেমন শ্রীহীন হয়ে পড়ে। বাড়ি ফিরে দেখে আরেকটা স্পীডপোষ্ট এসেছে। টেবিলের ওপর দূর থেকে দেখেই বুঝল কার। ঠিক তখনই শ্রী কিচেন থেকে উঁচু গলায় বলে উঠল তোমার নতুন উপন্যাসের রসদ এসেছে। টেবিলের ওপর আছে। শ্রী জানে সবই। ‘তুমি কি দিল্লি থেকে এলে’? শ্রী’র কাছ থেকে তৃতীয়ার তারে উত্তর এল, ‘না চন্ডিগড় থেকে’। খামটা খোলার এক অদম্য ইচ্ছে হল। কিন্তু সুবুদ্ধি নিজেকে সংযত রাখল। স্নান করে চা খেতে খেতে শ্রীকে বলল, জান ‘অধরা মাধুরী’ একটা উপন্যাস নয়। এটাকে কি বলা যায় বলত? এই সৃষ্টিতে আমার নিজস্ব কিছু আছে কি? অধরার পাঠানো রসদ আমি সাজাচ্ছি।’ শ্রী স্বগোতোক্তি করল। তুমি একটু ডিস্টার্ব আছ বলে মনে হচ্ছে! এই হল শ্রী। সব বুঝে ফেলে, বা বুঝে নেয়। নাহ ঠিক তা নয়, আমার কেবল মনে হচ্ছে আমি কেন লিখছি অধরাকে নিয়ে! সুবুদ্ধি এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে চায়ে চুমুক দিল। এরকম তো কত মেয়ের জীবন হতে পারে। শ্রী উঠতে উঠতে বলল, “তুমি মেয়েদের সমস্যা, তাদের জীবন নিয়ে ভাব। তাই তুমি লিখছ। এটা আমিতো তোমার শত্রু হলেও অস্বীকার করতে পারবনা। তোমার ‘কলানবমী’ পড়ে আমি এই বুড়ি বয়েসে তোমার প্রতি আবার আকৃষ্ট হয়েছি অন্য মেয়েদের তো প্রথম বার...” কথা বলেই তাকাল শ্রী তাকাল সুবুদ্ধির দিকে। পড়ল সুবুদ্ধির চোখের ভাষা। ‘এই লাবন্যময়ীকে তুমি বুড়ি বল?’ একটা প্রচ্ছন্ন অহঙ্কার নিয়ে শ্রী রান্না ঘরের দিকে গেল। সুবুদ্ধির হঠাত মান্না দে’র সেই পুরোন গানের কলি মনে পড়ে গেল। বিড়বিড়িয়ে বলেই ফেলল, ‘তুমি একজনই শুধু বন্ধু আমার, একজনই তুমি শত্রু হে, তাই তোমাকেই ভাল লাগে...।’ শ্রী সামনে এসে নীরবে দাঁড়াল। চোখের কোণে হাসিতে এক সরল প্রশ্ন, ‘গাইবে নাকি?’ সুবুদ্ধি জানে শ্রী সুরে সরস্বতী আর সে নিজে সুরে অসুর। সুবুদ্ধি হেসে বলল, পাগল না কি? আমার বাড়ি ছাড়ার কোনও ইচ্ছে নেই! বলেই দুজনেই হেসে ফেলল। ‘একটা কবিতা শোনাবে?’ শ্রীর এই আবদার মহার্ঘ সুবুদ্ধির কাছে “...পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থী, আমরা দুজনে চলতি হাওয়ার পন্থী...” সুবুদ্ধিকে থামিয়ে দিল শ্রীর মিষ্টি হাসি। ‘তুমি এত লেখ কিন্তু তোমার আমার কাছে আসার সালতি কিন্তু সেই রবীন্দ্রনাথ...!’ সুবুদ্ধির নীরবতা বলে দিল, ‘তা আর বলতে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস, তাই না শ্রী?’
এবারে স্পীডপোষ্টে আসা খামটা খুলে পড়তে লাগল। কম্পিউটারে বসার আগে শ্রী একবার এসে সুবুদ্ধির দুই কাঁধে হাত রেখে আলতো করে চাপ দিয়ে বলল ‘তুমি লেখ আমি আমার কিছু কাজ করি...আজ রাতে বাইরে খাব কিন্তু...’।
প্রথমেই অধরা একটা কবিতা লিখেছে চার লাইনের –
‘সম্বোধনে কি লিখি তা নিয়ে দ্বিধা নেই হে আমার আরাধ্য এটাযে ফ্যানমেইল নয় জানেন, আপনার সময় আমার প্রারব্ধ সকালে নাগপুর উনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ভেতরে হাঁটছিলাম নিজেরই অগোচরে আপনার কথা ভেবে এলিয়ে হাসছিলাম’
আপনি ভাল আছেন আশা করি। আপনার সাজান সংসার ও নিশ্চয়ই খুব ভাল আছে... আসলে আপনার মত মানুষের সব কিছুই ভাল।
বিক্রম আমাকে খুব ব্যঙ্গ করছে আজকাল। কেন জানেন? বলে কিনা, ঠিক সময়ে সিনেমায় নামলে কাজে দিত। আর এখন এক বৃদ্ধের কলমে তুমি নায়িকা হবে বলে এইসব ছাইভস্ম লিখছ আর স্পীডপোষ্ট করছ! কথাগুলো বলেই ও বলল আমি যেন এই সব কথা আপনাকে না বলি। কিন্তু আমি বলে ফেললাম। কেন জানেন? আমি জানিনা। আমি নিজেই বুঝতে পারিনা। আমার কথা সব এইভাবে লিখে আপনাকে বলা উচিত হচ্ছে কিনা! কিন্তু এই লেখার সিদ্ধান্ত তো আমার নিজেরই। আপনি তো নিষেধ করেছিলেন শুরুতে। বলে ছিলেন নিজের কথা নিজের কাছেই রাখতে হয়। জানেন আমার না মাঝে মাঝে মনে হয়। আমি কি বিক্রমের শাসক ব্যাক্তিত্বের সামনে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছি? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি? জানিনা।
বর্ণময় অন্তরালেই আমি ছিলাম। আছি। থাকব কিনা জানিনা। সেটা আপনি জানেন। তাই এই সব আঁকিবুকি ভর্তি কাগজ পাঠালাম।
আমি বাড়ি ছেড়ে আসার পর বেশ কয়েক মাস আমার মা বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনেরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন আমাকে নিরস্ত করার জন্য। আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আমার বিয়ের জন্য তখনও সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে গোপনে। আমাদের বিয়েটাকে বেআইনি বলে প্রমান করার জন্যে সব রকমের চেষ্টা হচ্ছে তখনও! ভাবতে পারেন? বিয়ের পর আমরা দুজন অনেক দিন বিক্রমের বিভিন্ন বন্ধু ও আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়েছি। কারণ প্রায়ই বিক্রমের বাড়িতে পুলিশ আসত বিভিন্ন ছলাছলে। আমাদের কাহিনী ঈদানিং কালের রিজওয়ানুর রহমানের প্রেমোপাখ্যানের থেকেও অনেক বেশী বেদনাদায়ক ছিল কিনা জানিনা, তবে আমি খুব মিল খুঁজে পাই। আমাদের পরিবার সেরকম গোঁড়াও ছিলনা বলেই জানতাম। আমরা তো ধর্মান্তরে বিয়ে করিনি কিন্তু... নাহ এসব বিতর্কিত কথা থাক।
বিক্রম সারাক্ষণ কেবল দুশ্চিন্তায় কাটাত। আমারও সারাক্ষণ খুব দুশ্চিন্তা হত। বিক্রম আমাকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বাইরে যেত। তার দুটো কারণ ছিল। এক, আমার মা বাবার পাঠান পুলিশ খোঁজখবর নিতে এলে যাতে বাইরে থেকেই চলে যায়। আমাকে বলা ছিল, আমি যেন সারাদিন জানালার পর্দার ফাঁকে চোখ রাখি। কিছু গন্ডগোল দেখলেই বিক্রমকে স্টুডিওতে ফোন করে সাবধান করি। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হত। দুই, বিক্রম জানত যে তার খুবই কাছের কিছু লোক ফিল্ম লাইনের দু’একজন নানা অছিলায় আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবে। বিক্রম আমার রক্ষাকর্তা হিসেবে এই দ্বিতীয় কাজটা করত। কেউ এলেই আমি ওকে আমি ওকে স্টুডিওতে ফোন করে বলতাম আর ও কোনও বিশ্বস্ত কাউকে সন্ধ্যের পর পাঠাত আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে। তারপর সেই রাতটা কোনও বন্ধু বা ওর কোনও দিদির বাড়িতে কাটানো, সে যে কি অনিশ্চয়তা! সেই সময় আমার যে কি অবস্থা, কি বলব! দুটো মাত্র শাড়ি। মায়ের কাছ থেকে আমার নিজের জামা কাপড় ও জিনিস আনতে গিয়ে সাধুমামা প্রায় চাকরীটাই খোয়াতে বসেছিল। আমার মা যিনি সংগীতে সরস্বতী, যাঁর সুচারু মন থেকে কত সুন্দর গান সৃষ্টি হয়েছে তিনিই বলেছিলেন, ‘এ বাড়ি থেকে একটি কুটোও আমি পাবোনা।’ শীতের রাতে বিক্রমের ছোড়দির দেওয়া পাতলা শাল গায়ে আমি ঠক ঠক করে কেঁপেছি আর দিদি বলেছেন কাল বাড়ি গিয়ে যেন শালটা ফেরত পাঠাই। আমি আমার বাবার আদরের দুহিতা যার জামা কাপড়ের আলমারি রাখার জন্য আলাদা দুটো ঘর ছিল। সেই বস্ত্রাভাবে সলজ্জ সম্ভ্রম বজায়ে রেখেছি বিক্রমের সাথে বিয়ের পর। আমি সব সয়েছি মুখ বুজে। সব দেখেছি ধৈর্য ধরে শুধু এক আশাতে, আমার প্রেম আমাদের প্রেম যেন সার্থক হয়। কিন্তু কি হল!
আমাদের বিয়ের বেশ কয়েক মাস পরেও বিক্রমকে এই থানা, ঐ হেডকোয়ার্টার, অমুক এসিপি বা ডিসিপি কত রকম জায়গায় ডেকে নিয়ে ওকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। আর আমি সব জায়গায় বিক্রমের সঙ্গে গিয়েছি শুধু ও যাতে বিপদে না পড়ে। যাতে বিক্রমের গায়ে একটা আঁচড়ও না লাগে। কিন্তু কেন? আমার অবক্ত্য যন্ত্রণার কথা আমি কাকে বলব? যার প্রেম স্বীকার করে আমি বাড়ি ছাড়া, যাকে বিয়ে করে আমি আমার মা বাবার কাছে ব্রাত্য সেও কি আমার কাছে স্বচ্ছ ছিল? আমাদের বিয়ের আগে ও পরে বিক্রমের পরনারী সম্পর্কে কৌতুহল বা তারও বেশি কিছুরই তো অভাব ঘটেনি বিক্রমের। বিক্রমের জীবনে আমি একমাত্র নারী নই। বিক্রমের নারীদের মধ্যে এমনও কেউ আছে যার কথা আমি জানলেও কাউকে বলতে পারবনা ভেবে লজ্জায় সিঁটিয়ে থাকব! আমার হাইপারটেনশন মানে ব্লাড প্রেসার বাড়ল। ধরা পড়ল বিয়ের পর পরই। সেই থেকে আজও আছে। আমি ওষুধ খাই বা না খাই সে খবর কেউ রাখেনা। আমি আশাও করিনা। একজন খুব স্বল্পকালের জন্য এসেছিলেন আমার জীবনে যার সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক হয়েছিল বা আছেন হয়ত আজও কিন্তু তাঁকে আমি আজও দেখিনি। তিনি আমাকে কত করে বুঝিয়ে ছিলেন কেন আমার নিয়মিত ওষুধ খাওয়া উচিত। কি অসাধারণ ধৈর্য ওনার। আমাকে সব এত সহজ করে বুঝিয়ে ছিলেন যাতে আমি নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যাই। সেই উনিও চুপ আজ কত দিন ধরে! আর আমি তাকেই লিখছি এই চিঠি যাতে উনি আমার কথা লেখেন! কি আশ্চর্য! তাই না?
আজ আমি এই যে লিখছি এটাও তাঁর আবিষ্কার। তিনিই হয়ত এই লেখাকে প্রাণ দিতে পারবেন। আমি তো কাদা মাটি বালি জল এক করে রাখছি। হঠাত মনে হল একটা কথা। বলেই ফেলি এখানে। আমি জানি এ আমার কষ্ট কল্পনা তাও বলি। সেই পরম আরাধ্য মানুষটি যদি সময় মত আমার জীবনে আসতেন তবে কেমন হত আমার জীবন! কেমন হত সেই কবি ও প্রেমিক মানুষটি যদি আমার স্বামী হতেন বা আমার বন্ধু বা আমার প্রেমিক তাহলে আমার এই লেখার কোনও প্রয়োজন হত কি? আমার জীবন নিয়ে কি অন্য কিছু লেখা হত? সেই লেখা কি আমার পরম আরাধ্য মানুষটি লিখতেন? কে জানে! এই দেখ, মানস ভ্রমনে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কোথায় ব্যাঙ্গালোরের ব্যাপ্ত জীবন আর কোথায় নাগপুরের নকল নেতি দিনযাপন! ধ্যাত!
আসলে প্রাপ্তব্য তো মাধুকরী। আমার আজ তো আমার গতকালের ফসল। ঠিক যেমন আমার আগামীকাল আমার আজকের ভবিষ্যত।
বিক্রমের টালিগঞ্জের বাড়িতে আমার গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয়নি। আমার শ্বশুরমশাইয়ের আমার প্রতি একটা নীরব স্নেহ ছিল কিন্তু বাড়িতে তাঁর কথা খুব শোনা যেত বা হত না।
বিক্রমের ভীষণ দাপুটে প্রভাব ছিল বাড়িতে। দিদিদের প্রথাগত উপদেশ ছাড়া বাড়ীর আর সব আমার সহ্যের সীমার মধ্যে এসে গিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। আমি নিজেই জানতাম না যে আমি এত সইতে পারি। দিদিদের দাদাগিরি প্রায়ই সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যেত কিন্তু আমি আমার নতুন আয়ত্ব করা স্থীতধীশক্তি কাজে লাগিয়ে তাদের বেশ হাসি মুখে বিদায় জানাতাম। হয় টেলিফোনে নয়তো সামনা সামনি। আমি বড় হয়ে গেলাম হঠাতই। কেমন করে একা একা সব সামলাতাম। শোবার ঘর, রান্না ঘর, সংসার, বিক্রমের মেজাজ, তার বন্ধুদের, তাদের মধ্যে কিছু সম্ভ্রান্ত হায়নার দলে পড়ে, বাড়িতে পার্টি থাকলেই আমার গা শিউরে উঠত। বিশেষত প্রবাদ প্রতিম কিছু পরিচালক বা প্রযোজক আসার কথা থাকলে আমি কেমন আধমরা হয়ে যেতাম। কিন্তু আমি মা কালীর ভক্ত। আমার শক্তি আমার মা কালী। শক্তি বললে কম বলা হবে, আমি মনে করি মা কালী যা চান তাই হবে। এই বিশ্বাস আমি অর্জন করেছি সেই ছোট্টবেলা থেকে। আমাদের বাড়িতে ঘটা করে মা কালীর পুজো হত। তার মূল হোতা ছিলেন আমার বাবা ও সাধু মামা।
আমার কথা সব খাপছাড়া। মানিয়ে নেবেন দয়া করে নিশ্চয়ই। বাড়ি ছাড়ার দিনও আমাদের বাড়ির পরিচারিকা মানদা মাসি আমার বিছানা গুছিয়ে রেখেছে। আমার আদুরে জীবন সচল ছিল সেদিনও! আমার জামাকাপড় সবই কেউ না কেউ এগিয়ে দিয়েছে। আমি খুব আদরে মানুষ হয়েছিলাম। সব ভালই কি জীবনের প্রথম পর্যায়ে পেয়ে গেছি আমি? তাই কি...? কে জানে!
জানেন? আমি শিউরে উঠি! আমি আমার মেয়ে তিতলীর কথা ভাবি আর শঙ্কিত হয়ে উঠি। আমার মেয়েরও সব গুণ আছে। পড়াশোনায় খুব ভাল। গান গায় খুব ভাল। কিন্তু ভীষন অবহেলা করে নিজের গলাকে। কথায় কথায় বদমেজাজী বাবার হাতে মার খায়। সেই মার আমি কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও খাইনি কোনও দিনও। এই চন্ডালের রাগের সামনে আমার মেয়েটা রাক্ষসের হাতের মুঠোয় এক সদ্যজাত শালিকের বাচ্চার মত। বাবার কাছে মার খেয়ে তিতলী যখন আমার কোলে মাথা রেখে কাঁদে তখন আমার গাল বেয়ে গরম বিষাক্ত গলানো শীসে নেমে আসে। কেবল ভাবি, আমার জীবনের মত কি আমার মেয়ের জীবনটাও...? নাহ। সে আমি মেনে নিতে পারবনা। আমি বিক্রমকে কতবার বলেছি, মেয়ে বড় হয়েছে। এই ভাবে কেউ মেয়ের গায়ে হাত তোলে। তার উত্তরে যা যা শুনি তা আর আমি এখানে লিখতে পারবনা। আমিও বাদ যাইনি সেই চন্ডালের রাগের কোপ থেকে। আমার গায়ে কত চিহ্ন আছে যা বিক্রমের পুরুষকারের নিদর্শন। আমার মেয়েরও। আমাকে আমার মেয়ে বেশ কয়েকবার বলেছে, ‘চল না মা, আমি আর তুমি কোথায়ও চলে যাই। এই অত্যাচার আর সহ্য হয়না।’ আমি তো মেয়ের মা তাই পারিনি। কিন্তু এই অসুরক্ষিত জীবন আর কতদিন...?
|
|
|
পর্ব-৬
|
|
|
সুবুদ্ধি আজ খুব দ্বিধায় পড়েছে। স্বামী
চিন্ময়ানন্দজীর সেই কথাগুলো আবার মনে পড়ে গেল। ‘কাউকে অন্ধকার গহীন বন থেকে
তুলে আলো দেখিয়ে রাজপথে এনে দাঁড় করানো তোমার কাজ হতে পারেনা যদি না তুমি তাঁর
সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন সকালের নব আলোকে তার সাথে পথ চলতে পার’। দ্বিধা হল
এই যে, এত প্রতিভাময়ী অধরাকে সে কি করে আলোতে আনবে!
|
|
|
পর্ব-৭
|
|
|
কান্তকবি সুকান্তের এক কষ্টোক্তি দিয়ে এই অধ্যায় শুরু। বসন্তের কোকিল কেশে কেশে রক্ত তুলবে, সে কিসের বসন্ত? বসন্তের কোকিল হয়ত সে নয়। কিন্তু বরাবরই সে কন্ঠনির্ভর। প্রগলভ নয় তবে সে বিষয়সমৃদ্ধ। কথা, বলার থেকেও ভাবা বেশী। সেটাই তার পেশা। সেই সুবুদ্ধির কথা বন্ধ হয়ে গেছে। কি করে? গলার ওপর অত্যাচার সেই ছাত্র জীবন থেকে। শ্লোগান মুখী শানান সংগীতের মত ঝলক দিয়ে উঠত সেই চোদ্দ বছর বয়েস থেকে। মনের মধ্যে সেই দুর্দ্দাম প্রতিবাদী কন্ঠ এখনও দুন্দুভি বাজায়। প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, প্রতিশোধে কমরেড, গড়ে তোল গড়ে তোল গড়ে তোল ব্যারিকেড,আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, জীবনে মরণে সেকথা কি আমি কখনও ভুলিতে পারি? এই তো সেদিনের কথা। তাই কি? ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ দীর্ঘ পনের বছর সুবুদ্ধি এই নিয়েই দিন কাটিয়েছে। মনের ভেতর একটা চাপা কষ্ট আছে। মনের কষ্ট মনে রেখে সে এখনও কাজ করে যায়। এখন মন মাঝে মাঝে খুব ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ওর থেকে ওর স্ত্রীর মন বেশী ভারাক্রান্ত এই নির্বাক সুবুদ্ধিকে দেখে। ঘর ছাড়া পর ঘেরা জীবন সুবুদ্ধির বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই। তার পর দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের ওপর গড়ে দিনে আট থেকে দশ ঘন্টা ক্রমাগত কথা বলা, পড়ানো, বোঝানো, নীরবতা ছিলনা তার জীবনে প্রায় চার দশক ধরে। কিন্তু আজ সে নীরব। কন্ঠ তাহার রুদ্ধ আজিকে। বাঁশী তো ছিলই না জীবনে কখনও তাই বাঁশী সংগীতহারা হবার প্রশ্ন ওঠেনা। বন্দুকের গুলির আওয়াজ এখন আর তাকে টানেনা, বন্দুকের নলই হল প্রকৃত শক্তির উতস একথা যে ভুল তা সে বুঝেছে বহুকাল আগে। কিন্তু বাকরুদ্ধ সুবুদ্ধির কলমের শক্তি আছে। বাকশক্তিতে সে বিশ্বাস করে এখনও কিন্তু কথা বলতে পারেনা। আজ তার বাকশক্তি নিঃশব্দ নীরব কিন্তু তার কলম রুদ্ধ হয়ে যায়নি। সাময়িক থেমেছিল। তাই আবার কলম ধরেছে সুবুদ্ধি...
ছিঁড়ে যাওয়া তানপুরার তারে
কিছু বুঝলেন? আমার গান বন্ধ করে দেওয়া
হয়েছে। আমি চুপ! বিশ্বাস করি আজও বন থেকে পাখীকে তুলে খাঁচায় রেখে তাকে স্তব্ধ
করে দেওয়া যেতে পারে কিন্তু পাখীর মন থেকে সবুজের ইন্ধনে আর নীলের জ্বালানীতে
জন্ম নেওয়া সংগীত বন্ধ করে দেওয়া যায়না। মানুষকে গান শিখিয়েছিল তো পাখীরাই। তাই
না? তাই আমি চুপ। আমার মন পাখীর গানকে নীরবে উপোভোগ করি আমি। আর ভাবি আবার
একদিন আমি গান গাইব। আমি যে একজনকে কথা দিয়েছি। সে কথা যে আমায় রাখতেই হবে।
বিক্রমের শরীরও ভাল
যাচ্ছেনা। কি একটা নার্ভের প্রব্লেম শুরু হয়েছে। পিঠে ব্যথা হয়। সেটা মাঝে
অসহ্য যন্ত্রণায় পরিনত হয় ও কি রকম বেঁকে যায়। আর সেই সময় বা তারপর ওর আচার
আচরণ সব কেমন পশুর মত হয়ে যায়। এইতো সেদিন রাতে মেয়েকে কি নির্দয় ভাবে মারল।
আমি থামাতে গিয়েছিলাম। তার চিহ্ন এখনও জ্বলজ্বল করছে আমার গলায়। আমি যে কি নরকে
আছি তা বাইরে থেকে কেউ বুঝবেনা। আপনাকেই বা আমি লিখছি কেন? হয়ত কিছুটা হালকা
হবার জন্যে। আপনি এই পৃথিবীকে জানাবেন কি সুন্দর জীবন বর্ণময় অন্তরালে। আমার
শীফন বা ঢাকাই শাড়ীর সাজের আড়ালে যে কি যন্ত্রণা আমি
বয়ে নিয়ে চলি সে কথা কারও জানার কথা নয়। তবু আপনাকেই লিখি। এখন শুধু সংসার
চালান নয় তার সাথে বিক্রমের চিকিতসাও চালাতে হয়। এক এক বার নিউরোলজিষ্টের কাছে
যাওয়া মানে অনেক টাকার ধাক্কা। আমার নিজের গয়নাগাটি যা ছিল তা প্রায় সব গেছে।
তবে তার বেশীর ভাগটাই গেছে বিক্রমের ধার শোধ করতে। এখন শুধু বিক্রমের অনিয়মিত
রোজগার আর আমার কৃচ্ছসাধন করার অপরিসীম ক্ষমতা দুইয়ে মিলে চলেছে। ঠাকুরকে রোজ
ডাকি, যে করেই হোক মেয়েটাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দাও কিন্তু নিজের জন্যে কিছু
চাইনা, চাইতে ভাল লাগেনা। ঈশ্বর তো সব দিয়েছিলেন কিন্তু আমি আজ সব হারিয়েছি...
এমনকি আমার গানও! খুব চেষ্টা করি মনের মাঝে পুরোনো গানের সুর নিয়ে বেঁচে থাকতে
কিন্তু পরিবেশ এমন যে আমার গলায় গুনগুন করা সুরও এখন বেরোতে ভয় পায়। বিক্রম
ভাবে আমি গান গাইলেই অনেকে আমাকে চাইতে শুরু করবে, কি অবিশ্বাস্য রকমের পজেসিভ
তাই না? এই তো সেদিন রান্না করতে করতে, চঞ্চল ময়ুরী এ রাত বঁধু যেতে দিওনা,
কানায় কানায় ভরে থাকা রাত বঁধু যেতে দিওনা... গানটা গুনগুন করে ভাঁজছিলাম, হঠাত
রান্না ঘরে ঢুকে কি সব অশ্রাব্য কথা বলতে শুরু করল বিক্রম। আমার মাথাটা খুব
ঠান্ডা কিন্তু কি যে হল আমিও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে আর পারলামনা। ব্যাস, কি
থেকে কি হল কে জানে ড্রয়িং রুম থেকে কম্পিউটার টেবল থেকে ওয়েবক্যাম এর তারটা
এনে আমার গলায় পেঁচিয়ে ধরে টান মারতে বাকি ছিল। ঠিক তক্ষুণি কলিং বেল বেজে উঠল। বিক্রমের এক পাওনাদার বন্ধু এসেছিল।
আর সেই জন্যেই আমি বেঁচে আছি এখনও। সেই বন্ধুর খুব বিখ্যাত এক শাড়ীর দোকান আছে
গড়িয়াহাটে। নিজের একটা ব্র্যান্ড ও আছে। সেই শাড়ীর বিজ্ঞাপনের
জন্যে এসেছিল। যদি আমি কাজটা করে দিই তাহলে আমার ফীসটা বিক্রমের দেনার বোঝা
কিছুটা কম করে দেয়। সেটা কত তা যদিও বলেনি। আমি কিছুই বলার মত অবস্থায় ছিলামনা।
এখনও নেই। পরে জানাব বলে বিদায় করে দিয়েছিলাম সেই রাত্রে। সহধর্মিনী আমি তাই
স্বামীর সব কাজে, দেনা শোধ করাতে আমারই সিংহ ভাগ। তবে মার খাবার পুরোটাই আমার
আর আমার মেয়ের। কি অবাক লাগে আমার। আমার মা বাবা কোনও দিন আমাকে একটা চড়ও
মারেননি আর আজ আমার অঙ্গেরব ভূষণ হল স্বামীর হাতে মার খাবার চিহ্নসমূহ। আমি কেন আছি এই নরকে? আমার
মেয়েটার যেন কোনও ক্ষতি না হয়, তাই কি? মানুষ বাঁচে তো আশায়! আমি কোন আশায় বেঁচে
আছি? এইখানে এসে সুবুদ্ধির নিজের প্রতিবাদী সত্ত্বাকে অপমানিত বলে মনে হয়। চুপ করে বসেছিল লেখা বন্ধ করে। শ্রী এসে বলল, সুভা আর আমি বসে আছি। চল খাবে চল। নীরবে অধরার চিঠিটা শ্রীর হাতে তুলে দিয়ে চুপ করে বসে রইল সুবুদ্ধি। শ্রীই নীরবতা ভংগ করল। ন্যাশনাল উইমেন্স রাইটস কমিশনের কাছে ব্যাপারটা তোলা দরকার। বলেই তাকাল সুবুদ্ধির চোখে। সেই চাউনির মধ্যে এক নিস্ফল প্রচেষ্টার দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ শুনতে পেল সুবুদ্ধি। যার বাকশক্তি একদিন কত পাহাড় টলিয়েছে আজ তারই জ্ঞানাধীন এক মারাত্মক সামাজিক অপরাধ হয়ে চলেছে কিন্তু সে আজ বাকরুদ্ধ! কি অসহায় অবস্থার মধ্যে সুবুদ্ধি আছে সেটা শ্রী বেশ ভাল বোঝে। তাই আলতো করে ওর কাঁধে হাতের চাপ রেখে বলল, তুমি আবার কথা বলবে, আমি জানি... |
|
|
পর্ব-৮
|
|
|
|
|
|
বরষা এসেছে। আকাশ কালই থাকে বেশির ভাগ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মনের আকাশ? সুবুদ্ধি কেমন আনমনা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর নিজের আবৃত্তির সিডি গুলো নেড়ে চেড়ে দেখে। শ্রী এসে বলে, চালিয়ে দিই একটা এখন? সুবুদ্ধি নীরবে মানা করে। কন্ঠস্বর নিস্তব্ধ হয়ে গেলে মনের সব আনাচে কানাচে কত কি উঁকি দেয়। এটা এত ভাল করে আগে কখনও সে বোঝেনি।
স্বগোতোক্তি
সুবুদ্ধি জানে বন্ধুত্ব কি রকমের পাগল করা রোমান্টিসিজম! তার প্রাণের বন্ধু
সন্টুকে ওরা যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনের কোলাপ্সিবল গেটের মাঝে চেপে ধরে
মাথাটা থেঁতো করে মেরে ফেলেছিল আর সে কিছুই করতে পারেনি। সেই শোকের থেকে আজও
বেরোতে পারেনি। সন্টুকে বাঁচাতে পারেনি। সন্টুর সাথে কথা হয় একান্তে আজও। সন্টু
প্রশ্ন করে,'কেমন আছিস ফাইটার?' সুবুদ্ধির ডাকনাম। সন্টুর শেষ কৃত্যও হয়নি।
মাসীমার সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি গত পঁয়ত্রিশ বছরে। মাসীমা কি বেঁচে আছেন? তাও
জানেনা সে। সপ্রতীভ সুবুদ্ধির আরও কিছু অন্ধকার দিক আছে। সন্টুকে বাঁচাতে এগিয়ে
গেলে সেদিন দুটো প্রাণ যেত। তখন এক একটি প্রাণের প্রয়োজন ছিল ভীষণ। আর
সুবুদ্ধিদের নিঃশেষ করতে আর সেই নতুন প্লাবনকে রুখতে ওরা নেমেছিল সদলবলে
সশস্ত্র সঙ্গে ছিল পুলিশ – নৈতিক ভাবে ওরা হেরে গিয়েছিল অনেক আগেই, পারেনি সেই
প্লাবন রুখতে তাই হত্যালীলা শুরু করে দিয়েছিল। সেই হত্যা লীলার শিকার যারা
হয়েছে তাদেরকে ওরা হালাল করা মুর্গির থেকে বেশি কিছু মনে করেনি সেদিন। তাই আজও
ধিকিধিকি ছোট বড় স্ফুলিংগ জ্বলছে সারা দেশ জুড়ে। যদিও আন্দোলনের চরিত্র বদলে
গেছে। যাবেই কারণ লক্ষ্য এখন অপরিষ্কার। নতুন প্রজন্ম জানেনা সেই আন্দোলনের
ইতিহাস।
|