............................... জল, গুহামুখ
জল তুমি গড়িয়ে পড়ো চৈত্রদাহ রোদে
দেখো আমার চিবুক রাখা বৃষ্টির ঠোঁটে
আরো কিছুদিন তোমার চোখের গোপনতা
দেখতে যাব
যে যা-ই বলুক, অতশত আমি বুঝি না
কোথায় বাঁধল রহস্যদানা
জল তুমি উড়ে এসো শ্রাবণধারায়
বাধা দেব না


তুমি যাও দূরে
ওই দূর বনস্পতির দেশে
আমি তো বেশ আছি, ভালো আছি—
ডুমুর সেজে
স্মৃতি যত পাথরচাপায় দুলছে ডালে-ডালে
তবু স্মৃতির নিকট হয়ে গেছি বিমর্ষ তালগাছ
তাই প্রতিমুহূর্তে মুখ লুকাই গুহার ভেতর
দৃশ্য-অদৃশ্য
বিচিত্র দৃশ্য অন্যত্র গিয়ে ফের এসেছে নিকটে
নিকটজন যেমন ফেরে ঝেড়ে দীর্ঘশ্বাস
শৈশবস্কেলে স্মৃতির মাপজোক 
আহা রে বোধের দাস!
ভবিষ্যরঙের রূপগুলো পাশজানালায় ঠাস খেয়ে
                         নামছে অবসরে 
আর আমি তাদের রঙ মেখে
সন্ধান করছি আমার শুভ্রপ্রিয় কথা
বলি দেহের আঁচে জেগে ওঠো তুমি সন্ধেছায়া
নিকটজনের টোকায় টোকায়
দৃশ্যগুলে অদৃশ্য পথের কাছে ঋণী অন্য মজমায়
***


টিপস্
ফিরে যাব, ওই তো দেখা যাচ্ছে রূপান্তর
অনতিদূরে চুষে রাখছ চোখে আশা ও আর্শীবাদ
আরেকটু দেরিতে ফিরে পেতে পারো দীর্ঘনিঃশ্বাস সহ
হারানো বিশ্বাস
আশা-নিরাশার মাঝখানে কী অদ্ভুত পরিবর্তন!
ক্লান্তিগাছের বিরলে আমিও ধরে রাখি উপস্থিতি
বার্তাসহ জ্বালাহাড়ের গুটিকয় নীরব আর্তি
নিরালা আশায় দাঁড়িয়ে করছি দ্যাখো স্বপ্নাহরণ
গোপনে টানছ, সময়শাসন!
এভাবে কি গড়িয়ে নামবে জোড় বরফের হিম,
চেষ্টা ও দখল
ধাবন
সেও জানে কার জন্য তাড়া প্রতিদিন
কার ইশারায় গোপনতমা বাঁক পেরোলেই বন
                             শব্দের গর্জন
সারাদিন আমাকে জড়ায় স্বপ্ন ও মন
কার তাড়া আমার পিছে করছে
***


প্রিয় অন্ধকার
এই অমারাত্রিই আমাকে পুরোটা গিলে খাবে
এইখানে থেঁৎলে গেছি মৃত্যুর কিংখাবে
এখানেই নিজেকে খুঁজে ফিরি বারবার
স্মৃতিকথারাও খায় চেটেপুটে স্বপ্ন সুভদ্রার
অন্ধকার মিশে আছে রক্তে-মাংশে আমার
সে কি জানে কেমন বাদ্য এই নীরবতার?
ঘোরের ভেতর ঘনঘোর আমি বসে রই অনিবার
নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু নাচে এই সংসার 
উদ্ভুত হয়ে বিলীন হবার খুঁজছি বিপুলা দ্বার 
পথে পেয়ে গেছি শ্রীমতী আঁধার সুনন্দ সমাচার
অতঃপর আছি জীবনে ব্যাকুল জোৎস্নাসারাৎসার
গ্রীবাতৃষ্ণায় পেরোচ্ছি এই পৃথিবীর পারাপার
*** 

ভারাক্রান্ত দেহ
তবু অশ্রুতে পোড়ে ভারাক্রান্ত দেহ
তাই স্মৃতিতাড়িত ভোর হলে চারপাশে
ছড়িয়েছিটিয়ে দেই আলো—
তুমি ক্ষরণটুকু এঁকে দাও রোদ্দুরের তাপে
ক্রমশ শঙ্কিত হই;
ম্লান চোখে চেয়ে
প্রসারিত করো চোখ
          পয়মন্ত রোদে
ভারাক্রান্ত দেহ পুড়বে না কভু, সহে যাবে—
কাকপক্ষী জানবে না, তুমি পোড়ালে
***
আমি আর ছায়া
আমি আর ছায়া একই স্মৃতি মাড়িয়ে একসাথে হাঁটি 
আমি আর ছায়া জঙ্গলবাড়ির আর্শীবাদে ধূলি ও খুঁটি
সে আর আমি আগুন পোড়ানোর গল্প লিখে যাই
সুখের পেছনে হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত আমি আর ছায়া
ছায়ায় হাত দিয়ে দেখি, সে আর আমি একই কায়া
***

কাঙ্ক্ষা
তুমি নীল আকাশে চেয়ে থাকো অবিরত
আমি মেঘের গর্জনে কান পেতে বসি
ধুলোরঙে হাওয়া বয়ে চলে—তবু বৃষ্টি হয়নি
তাই দরজার পাশে দাঁড়ানো একমুঠো রোদ
পেখম মেলে
যদি ঘুম ভেঙে যায়, তারা গুনে জমা রেখো হাতেস্তুতি 
বেদনার পাশে দীর্ঘ পথ হাঁটা যায়
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে কথা বলা যায়
অভিমান করে কয়দিন কথা না-বলে থাকা যায়
বেদনাকে পাশে নিয়ে ঘুমানো যায় না
পরস্পর
প্রাণকে ধারণ করে যে-গাছ
গাছকে ধারণ করে যে-মাটি
সে-মাটিতে রাখছি আমাদের 
                    পা
জলে মাছের বসবাস 
নীলাকাশ পাখপাখালির
এইখানে মাছপাখির স্বতন্ত্র চাষ
গাছ ও মানুষ নির্ভর পরস্পর 
 ***

 
আড়াল
মানুষের মুখের দিকে তাকালে মায়া লাগে
কিন্তু চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না 
চোখের দিকে তাকালে স্মিতহাস্য কারো মনখারাপ থাকে
কথা বললে কারো কপালে ভাঁজ পড়ে
কেউ-বা দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয় বিরক্তিতে
কষ্ট বুকে চেপে জানতে চায় কেমন আছি
অথচ চারপাশেই মুখের দিকে তাকিয়ে 
চোখে চোখ রেখে মানুষ কীভাবে মিথ্যা বলছে 
রাজনীতিবিদ থেকে মুদিদোকানদার
সব্জি ও মাছ বিক্রেতা ভোক্তাকে ঠকাচ্ছে
আমি মাটিচোখে কথা বলি আর
মুখোশের আড়ালে বুঝতে পারি না 
তুমি আসলে কার?
***


ধাঁধা
চক্রাকারে ঘুরে কেউ যদি ফিরে আসে 
ধাঁধায়
তাকে বারণ কোরো না—
অন্তত বাস্তবতাটুকু বুঝে-ওঠার আগে
সেও নিয়ে আসতে পারে
চায়ের-পেয়ালায়-ধরে-রাখা
শাদা কিছু স্বপ্ন কিংবা শাদা সমাধান
কেউ যদি না-ফেরে তাকে ফেরাতে যাবে না, কারণ
দেহের প্রণোদনা লুকিয়েছে অহঙ্কার, ছায়াবাঁধা মন
ক্রিস্টাল
চুপর্চচায় পেয়েছিলাম অসভ্যভাষণ
ক্রিস্টালের গলায় ঝোলানো অনাসক্ত শোষণ
প্রস্তুত রাখো তোমার জলহীন
ঠোঁটের আলোড়ন!
***

 

ধাবন
সেও জানে কার জন্য তাড়া প্রতিদিন
কার ইশারায় গোপনতমা বাঁক পেরোলেই বন
শব্দের গর্জন
সারাদিন আমাকে জড়ায় স্বপ্ন ও মন
কার তাড়া আমার পিছে করছে ধাবন!
***

পরের পাতা   সূচীপত্র

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার