.............................. ইতি-অবসরে
পাতার সবুজ প্রেম, প্রাণে ক্লোরোফিল
কার কাছে কে বাঁধা থাকে বলো চিরকাল
আমার হাতে বেঁধে রাখো তোমার নাকফুল

তুমি কি জানো, কারা ছিঁড়েছে সুতো কারা সেজেছে কবিয়াল
মানুষ মানুষের কাছে বাঁধা র'বে আর কতদিন কতকাল

দেখে নেয়া যেত তুমি ফিরে এলে—
ইতি-অবসরে কোথায় গড়িয়েছে কোথাকার জল
***

তালু
সর্বস্ব গোপন রেখেছ হাতের তালুতে
তাই দ্বিধাদ্বন্দ্ব যত সাতপাকে ঘুরে
ফিরে এলে খুলে দেবো মুঠোহাত
দেখব কীভাবে তুলে নাও পূর্ণতা
ছেঁকে নাকি চেটে;

তুমি তো মুখ ফুটে কিছু বলোনি
দাঁড়িয়েছ সরোবরে দূরত্ব রেখে
মনে হয় দূরদেশে

সর্বস্ব গোপন রেখেছি; তাই দেহ পুড়ে শিহরণ তোলে;

ফিরে যাব না বলে গুনে রাখি পথ, গেঁথে রাখি ছায়া
তোমার আউলা চুলে; কার সৌরভে বিমোহিত হলে
ছুঁয়ে দিলে হিমদেহে বরফ গলে
এই শীতবরফের দেশে
***

পাথরস্মৃতি
আমি পাথর কুড়াতে জানি
পাথর খোদাই করতে জানি না
পাথরের মতো দুঃখকে শক্তপোক্ত করে রাখি
দুঃখকে পাথর বানাতে পারি না

শুনেছি পাথর ঘষলে নাকি পাথরও ক্ষয় হয়ে যায়
কিন্তু পাথর থেকে আগুন তুলে নেয়া যায় না

পাথর-অন্তরে আছে অগ্নি নিরবধি—

যারা অগ্নিভীত, ভুলেও যেও না তারা পাথরখনিতে
আমিও যাব না আর পাথর কুড়াতে
***

সন্তাপ
কী রকম স্তব্ধতা ছুঁয়েছে কুয়াশার রাত
যত বিষণ্ণতা ঝিলিক দ্যায়—জেগে-থাকা দূর্বাঘাসে
আমাকে আত্মনিবেদিত করে চেনা ফুল—
হাস্নাহেনার ঘ্রাণ

কতটুকু চতুরতা পেলে
দেহমিনারের সাথে কথা কয় কুয়াশার রাতে
অসংখ্য সন্তাপ
***


জিজ্ঞাসা
নিয়তি আমাকে প্ররোচিত করে হরহামেশা
জীবনের করাতকলে বেঁধে—
শব্দ আর ভাষার রকমারি প্যাঁচে আজো
রয়ে গেছি আমি অবোধ বালক

ওগো প্রত্নতাত্ত্বিক, মাটি খুঁড়ে বের করো
অজ্ঞাত করোটির কিছু পাথর ও শিলা
ওগো হৃদরমণী, হৃদতাত্ত্বিক ভাষা দিয়ে
হৃদয়ের দাবীটুকু আজো কেন ফোটাতে পারোনি
***

পাখিপালক

অবশেষে যারা চলে গেল
তাদের ছায়াপালকে নির্মাণ করি তৃণ
দেখি ক্ষতচিহ্নগুলো লেগেছে কার গায়

দূরে দাঁড়ালে দেখি দৃষ্টিহীন চোখে
স্মৃতি তড়পায়
পুনর্বার ফিরে এলে দেখি—
পাখিপালকে তোমার কায়া চৌকাঠে দাঁড়ায়
কাঙ্ক্ষা
তুমি নীল আকাশে চেয়ে থাকো অবিরত
আমি মেঘের গর্জনে কান পেতে বসি

ধুলোরঙে হাওয়া বয়ে চলে—তবু বৃষ্টি হয়নি
তাই দরজার পাশে দাঁড়ানো একমুঠো রোদ
পেখম মেলে

যদি ঘুম ভেঙে যায়, তারা গুনে জমা রেখো হাতে
***

বিষফল
তলিয়ে যাবার ভয় নেই, তবুও জলকলহের আগে
খুঁটে-খুঁটে তুলে নাও আরো কিছু জল

জ্বলেপুড়ে তাপভস্মদেহ—
তোমাকে ছুঁলে বৃষ্টি শুকিয়ে হবে মৃতদেহ কঙ্কাল
তাই রোদফুল কুড়াতে যাব কী না ভেবে জাগে কৌতূহল

আমাকে জাগিয়ে তোলে শতবর্ষের বেদুইন সকাল
হাতে তুলে রাখি আধোজাগা স্বপ্ন;
তুমি ফিরবে না কেবল...

ঘোর বৃষ্টিদিনে চোখে জল নেই;
দিকে দিকে ছড়িয়েছে বিষফল
***



পরের পাতা      সূচীপত্র

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার