.......................... দূরত্ব
স্নানঘর সম্পর্কে আমার কৌতূহল খুব আর জল পড়ার শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে; কখনো বৃষ্টির শব্দ ঘুম পাড়িয়ে দেয়,
অনিচ্ছায়...কখনো বৃষ্টি আর জল পড়ার শব্দ নৈঃশব্দ্যে বাজে। যখন ভাবি বালতি আর মগের জলব্যবধান
আড়াই ফুটের বেশি হবে না, আর ঝরনার চোখগুলো আমার দিকে চেয়ে আছে টলমল চোখে, কিন্তু জল আর আমার দূরত্ব
মাত্র দেড়ফুট


আঙুলের শাসন
আমার রক্তকণিকা থেকে খুলে নাও পরাজয় সহ মৃত কম্পনগুলো। টানাপথের বেদনা বড়ই অভিমানী হলে না- দেখারা
পুরো দেহ ঠুকরে ঠুকরে খায়। আর সীমানা পেরিয়ে ঝরে সমবোধ। মৃত রক্তরা বলছে ইচ্ছে করলেই তাদের সাথে কথা
বলা যায়। কীভাবে বলবে? শুধু বলার ভঙ্গি জানা দরকার। হাত কাটলে গড়িয়ে-পড়া রক্তের ফাঁকে স্থিরদৃষ্টি রাখি, দেই না
দাওয়াই। বরফ কাটতে কাটতে হাতের এমনই অবস্থা যে বরফ কাটলে হাতে আর জল লাগে না। আঙুলের ফাঁকগুলো
ফেটে গেলে কলম ধরতে না পারার বেদনায় রক্তাপ্লুত হই, আঙুলের শাসনে তখন হয়ে ওঠে কম্পমান। আরো কিছুদিন
যদি এভাবে যায়, আরো কিছুদিন যদি দৃষ্টিসীমার রঙ তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, তবে আমার দূষিত রক্তকণিকা খুলে নিতে পারো।
প্রবাহিতা, বিরক্ত কোরো না


প্রীতিকাল
স্বপ্নঘোরে এই আমি, দেখো এ কেমন প্রস্তুতি! করস্পর্শে সর্বাঙ্গে কী বাজছে! ঝাপসা চোখে সবই দেখি, যেমন—
ইচ্ছাহত্যা, লুকানো ফুসফুস, জলীয় স্মৃতি সহ আত্মবিদ্যা ছাড়িয়ে মানুষকে চেনার! তুমি সবই জানো, শুধু শেখাও ভণিতা,
সমগ্রচিন্তা। প্রীতিকালে সহজেই মেলে অস্থিরতা, সময়চিতা। গত বর্ষায় ভেজা স্মৃতি জ্বলে, না-ওঠা রোদ আর খাড়াদুপুরের
পাশ দিয়ে হাঁটো, অকারণে আলো নিয়ে বাঁচো আর ঘুরে ঘুরে মেটাফর তৈরি করো, অপেক্ষা আর কত? আলাভোলা মোহ
তাতে আছে যত দরজা খুলে দাও। ঠোঁট ছোঁবার আগে নিজস্ব সময় ধরে রাখতে চাই। যদি বলি রাখছ কি মনে অর্ধেক
নিয়মে ধরে হৃদয়নির্মাতা। উৎসাহ ওকল্পনা ধরে রাখো; নিঃসন্দেহে মিলে যাবে দেখো সঞ্চয়। গভীর রোমাঞ্চ রীতিনীতি
সহ আরো কিছু ত্রুটি মর্মে গাঁথো, গাঁথো আরো গভীরে গ্রহণশক্তি। জল খুলে দেখো, ওপারে তাকাও, দেখতে পাও কি
রাত্রিবহর? প্রীতিকাল, কীভাবে তোমাকে লুকাই দেহের ভিতর!


নিদ্রাসংশয়
আত্মহননের পর কী হবে, ভাবতে ভালো লাগে না; ক্লান্ত লাগে অবসরে, দু-চোখ মেলিয়া ধরো, দেহাবেগ ঘিরিয়া রাখো;
তবে এ-ও জেনেছি, যে-কোনো উপাখ্যান মেপে বিপথে ঘুরে নষ্ট চোখে দিনদিন বাড়ছে ঘুমের বয়স। আগুন আমাকে ছুঁতে
পারে না, জলও পারে না আলাদা ভাবতে, 'পাপ জেনেও স্পর্শ করি'...পাপ কেন আগে করিনি? ভাবলেও পতনের ব্যাখ্যা
কেউ চায়নি! মিথ্যা জেনেছ কী? নিদ্রাসংশয়, অস্থিরতা ঠেলে যাব; নষ্ট চোখে আর কত জেগে থাকে নিদ্রাসংশয়!


সন্দেহ খুলে নাও
বড় সন্দেহপ্রবণ হলাম কারো লাবণ্য চোখে, বাঁধন আপাত তুলে রাখা থাক আসঙ্গমূলে। নিশ্চেতনায় মৃতকফিন যে
কার দেহকারুকাজ দেখে উড়ছে চাপা অভিমানে! চাপা অভিমান, এসো এ-পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হই, বিরহদিনে আমরাও
পালাই। যদি চলে যাই, সন্দেহ, একা দাঁড়াতে পারবে তো? স্বপ্নসঞ্চয়, স্বপ্নগাহন না-মিললে দিগদর্শন আশ্বাসে ফোটে;
সেখানে আমাদের কেউ পাবে না খুঁজে, দেহও জানবে না দীর্ঘশ্বাস ছুঁলে। চাপা অভিমান চলো, চলো মঙ্গলে, নতুন সংসার
বানাই।আমাদের সন্তানসন্ততিরা পাবে তো আশানন্দ পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকার? তুমি কি পেয়েছ জলালিঙ্গন, নাকি পেলে
পাতার-আড়ালে-যাওয়া হাওয়াসর্দারি? তবে আমার আলজিভে হননস্পৃহা এতটা গভীর যে, কোনো নিয়ম জানো না,
জলেও বিসর্জন জ্বলছে, তুমি টেনে নিয়ে যাও সহার্জন; সন্দেহ খুলে নাও দু-হাত ছুঁয়ে

পরের পাতা    সূচীপত্র

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার