........................

কৌতূহল
ধরিনি টেনে হাঁটছে যারা, শুধু গুনে রাখছি গোড়ালির শব্দ,জোড়-পা। বিবশ চোখে বাড়ছে আগ্রহ। কতদূর বোঝা যাচ্ছে না,
নিঃশব্দে বাড়ছে বিভেদ, অসহ্য যন্ত্রণা। জানার আগ্রহ কীভাবে কমাই? ত্রিমুখী রাস্তা। কৌতূহলী মানুষ পাশাপাশি দাঁড়ানো,
দাঁড়ানো যাত্রীছাউনি, বসার জায়গা। যে-কোনো জায়গায় বসে থাকতে বাধা নেই আমার। শুধু ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছটফট
ভালো লাগে না। একমাত্র তোকেই বলি গোপন কথা—হাঁটছে যারা, তাদের হাঁটার ফাঁকফোকরগুলো যে আমাদেরও চেনা!
যারা হাঁটছে, ভালো না-লাগলেও হাঁটবে অনন্তকাল ধরে, একটাই জীবন, চলছে এবং চলবে যেমনখুশি নড়েচড়ে; মৃত্যুর
পরও কি চলবে এভাবে হাঁটার কোলাজ?


সহনশীলতা
কিছুই দেখার ছিল না আর। তোমার ছায়ার আখরে খাড়া হতে হতে কখন যে ছায়াও পড়ে গেল ঘাসের উপর! আর ঘাস
থেকে ওঠে এল দ্বিধালগ্ন সহনশীলতা। চাপাকলি, তোমাকে বলা যাবে না কিছুই, শবস্পৃহায় কাঁপছে
অধিকার, স্মৃতিকাতরতা আমার। দশ ইয়ার্ড দূর এরূপ দর্শনে বন্ধ রাখি চোখ, নিজমুখ, গোপন বেদনা। শ্বেতাঙ্গিনী,
শারীরিক প্রণোদনায় ছুঁড়তে দাও দেহভাঁজের গোপন আভা। চাপাকলি, বলব না কিছুই। কেবল দেহপাঠ শেষে নিয়ে নাও
অধিকার। ছড়াও লাবণ্য, সময়ের ললিপপ! আকাঙ্ক্ষামাত্র জাগবে কি তোমার রাত্রিপোশাক?


মুহূর্তচোখ
গতকাল কি ঘটল মনে রাখতে চাই না। বেদনার গন্ধ পাই।মনে রাখলে বেদনাও বেঁচে থাকতে চায় ত্রিশফুট উচ্চতায়।
প্রতিটি বেদনার একটি কারণ থাকে। তাই কালেপার্বণে দোলা দেয় মুহূর্তচোখ। আগামীকাল আমাকে তাড়ায়, দৌড়ায়,
বোকা বানায়। ইদানীং ঘৃণাকে অধিক মমতায় নীল মলাটে সাজাই। ঘৃণার চেয়ে কষ্টের তীব্রতা এত গাঢ় যে কারো চোখের
দিকে তাকাতেই পারি না, ঘৃণা যদি পূর্ণতা পায়! তোমার মুখের দিকে তাকালে আমার ধারণা কষ্ট পায়; চেহারায়
তাকিয়ে কষ্টের রঙ বোঝা গেল না। ফলে নানা বাহানা সহ্য হয় না; সহ্য হয় না আলাদা মোহে তাকিয়ে থাকা। কেউ কি
জানে, হাসির আড়ালে কেন খুঁজি অনুপ্রেরণা? পড়শি, এই নাও তোমার অধীনে অতীত সময়; যত্নে রেখো, কখনো নামতে
দিও না দায়মুক্তি, আরাধনা। এই যে আমি, দ্যাখো, সকল আয়োজনে সময়কে ধরে রাখতে পারি না। নাবালক বয়সের
সঙ্গে পায়ের ধুলা স্থির থাকল না বলে চেনা মুখের ভিড়ে আজো অচেনা। চেনামুখ, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিও না


রক্ত ঝরাও, রক্ত গড়াও
কাঁপছে বাতাস। রোদে পাতো হাত। ছায়ার বুকে হাত রেখে আমি আরও গহীনে যাব, প্রকাশ্যে তুমিও এসো গহীন বনে।
আমাকে কাঁপাও, বন্ধু, শুধু কাঁপিও পুরনো ক্যাকটাস। কুড়িটি আঙুলের তোলপাড় ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ো ফায়ারবক্সে; আমাকে
সারিয়ে তোলো পুরনো অসুখ! অপেক্ষা, বাতাসে উড়াও, বাতাসে দাঁড়াও। দশটি আঙুলে আলতা পরাও বাকি দশআঙুলে
জমাও অনুভব। জিজ্ঞেস করো কতটুকু ছুঁয়েছে পাতালের জল? পাতো হাত, যাপন করি আঙুলের হাড়গোড়, আয়নার
বিপরীতে খুঁটি উষ্ণ নির্যাস। হাত না-নাড়ালেও রক্ত সঞ্চালন হয়। হাত কাটলে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণা করে, এমনিতেই
শুকায়। এটাই সহজ অভ্যাস। রক্ত ধরে নিজের কথা ভাবছি। কাঁপছে বাতাস কুড়িটি আঙুলের শ্বাস। কেবল রক্ত ঝরাও,
রক্ত গড়াও


স্বপ্নপূরণ
ইচ্ছেগুলো স্বর্গ থেকে নেমে আসেনি বলে কাদায় বসে আছে জল; জলের উপর স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে রোদ লুকোচুরি খেলে।
দাবিদাওয়া আর কত! সরো, সরো তো দেখি, আরো দূরে সরে দাঁড়াও! অপেক্ষা পেরিয়ে যাব বলে এখনও নির্দিষ্ট গতি
ফিরছে না। গাঢ় স্বপ্ন থেকে ঘনত্ব বাড়ছে। বাড়ছে মোহসম স্বপ্নপূরণ, কল্পনা। একমাত্র চোখই জানে ভেতরচোখের
রহস্য কত। ছুঁলে গহ্বর থেকে সেও টেনে তুলে ভেদ-করা সর্বরহস্য। কোনো চিহ্ন রাখোনি বলে সমীপবর্তী দাঁড়াই,
কৌতূহলে খেলি। আমার ক্লান্তি নাই। ক্লান্ত হাতে মিশে থাকে কাটাছেঁড়া
দাগ। চোখের ভেতর ওড়ে হাওয়া, হাওয়ার ভেতর ওড়ে চুল। ধারণাহীন দূরত্ব লুকিয়ে গেল ভয়ে

পরের পাতা   সূচীপত্র

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার