...........................................



আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি
চাইলেই সবকিছু হাতের নাগালে আসে কি? যেমন, নোনা জলের স্বাদ...আফাল-বাতাসের ঘ্রাণ... ধ্যানে বসে রাশি
গুনলেই দেখি কোমল বুকের ভেতর কে যেন বসে আছে আনমনে; চোখের পরতে গুছিয়ে রাখছে শেষবারের মতো কারো
দৃষ্টি-অনুভব; তিনকোঁচা শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রাখছে খরাস্বপ্ন, পাথর, ফুল, ঘ্রাণ। কঙ্কনের শব্দ টনটন বাজলেই আমার
বুকে গাঁথে তির। তবুও তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি। আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি, সে কি তা জানে?
চোখের ভাঁজে লুকানো যত স্মৃতিকথা এখন আর পড়ে না মনে


দিনের স্মৃতি খুন হয়
আমাদের বিষণ্ণতা অপরাজেয়, যার জন্য সারাদিনের স্মৃতি খুন হয় একই জায়গায়! আমি যদি দুর্বল হতে থাকি পায়ের
তলায়, বাধা নেই। সময় আমাকে আলাদা ভাবতে শিখিয়েছে, আপন মনের ভেতর মন খুলে ফেলা যায়। শুধু জানতে হয়
একটি আদরচিহ্ন কতদিন বাঁচে জীবদ্দশায়, আর কতদিন সৌরভ ছড়ায়? আমাদের জীবনগ্লানি যেদিন ছুটি পাবে—দেখব
প্রতিশ্রুতি কার নাম লয়। শুধু জানতে ইচ্ছে হয় আদরচিহ্ন কতদিন বাঁচে, চন্দ্রিমা রাতে আমার জীবনগ্লানি মন খুলে নাচে


গোপন স্পৃহাগুলো প্রকাশ করিনি
আমাকে বিদ্রুপ না- করাই ভালো। তারপর বলো—কতটুকু বুঝালে হেলানো দেয়াল ভুলে যাবে? বিদ্রুপ ছুঁড়ে দাও,
দেখো কে বেশি দুঃখে মিশে থাকে, কে বেশি খোঁজে হারানো পদচিহ্ন। আমি তো আছি, না চাইলেও পাশাপাশি। যতদিন
রোদফুল হাঁটাহাঁটি করবে দেয়ালে-দরজায়-জানালায়, তাকানোর ফাঁকে লুকানো র'বে চাওয়া-পাওয়ার গ্লানি; আমার কিছু
কাঙ্ক্ষা ছিল গোপন রাখিনি। এ-জীবন খুবই প্ররোচনাময়; গোপন স্পৃহা প্রকাশ করিনি। করাতকলের পাশে একাই ধরে
রাখি জল-আঙুলের গ্লানি


ঠিক দুপুরও তৃষ্ণা নেয় লুটে
ঠিক দুপুরবেলা হা-হা হি-হি করে নীরবতা পরে নিলো ছায়াগাছপালা। আমি নীরবতার ভেতর খালি পায়ে হাঁটি। মাটির
ঘ্রাণ মেখে ভরে যাচ্ছে প্রাণ, মাটির রস টেনে নিচ্ছে পায়ের পাতা; কতদিন হলো মাটিতে ফেলি না পা! ততদিনে বেড়ে
গেছে মাথার প্রেশার, ডাক্তার বলছে এ-বয়সে তুমুল আড্ডার; এ-বয়সে রক্তচাপ বাড়বে কেন! 'রাতে ভালো ঘুম হয় না'?
সে-কথা ভাবি আর একা একা হাসি হাঁটার পাশাপাশি। আমি হেঁটে গেলেই নীরবতা আমার পেছনে পেছনে ছোটে। আমি
হেঁটে গেলেই ছায়ার ঠিক দুপুরও তৃষ্ণা খায় লুটে


সহজে ঢুকে যাবার কোলাহল
বেরোবার রাস্তা পেলে সহজেই ঢুকে যেতে পারি কোনো কথার ভেতর। আমাকে ক্ষণে ক্ষণে চিনে রাখে দূরের
হাওয়া। কথারা অবিরাম উজান স্রোত বেয়ে যায়। আমাকে জড়িয়ে ধরে কারো হাল্কা-ভারী বেদনা। দুঃখও গুটিয়ে রাখা
যায় আপন মহিমায়। যদি জাগ্রত হয় শক্ত হাওয়া—এই হাওয়ার ভেতর আমি চোখ খুলতে পারি, স্মৃতিস্বপ্ন খুলতে পারি
না। অতি সহজে যদি খোলা যেত দেহের ভাঁজ ও ঘ্রাণ, দুঃখ গুটাত সহসা

 

পরের পাতা  সূচীপত্র

মুহূর্তমন্দিরা - সৈয়দ আফসার